ফ্রেম
দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..
“কবিতা ঠিক যেন অগোছালো প্রেমিকার মতো, চুপিচুপি এসে বেঁধে দেয় চোখ…”
কবিতা-একটি অপূর্ব শব্দ, এই শব্দটি জড়িয়ে আছে আমার জীবনের সঙ্গে ঠিক কবে থেকে, বলতে পারি না। তবে মনে পড়ে বহুকাল আগের কিছু আবছা স্মৃতি । তখন প্রায়শই সন্ধেবেলায় আলো চলে যেত, নিঝুম অন্ধকারে ডুবে যেত এলাকা। বারান্দায় নেমে আসতো চাঁদের আলো রূপকথা হয়ে। মায়ের কোলে শুয়ে-বসে শুনতাম অনেক কবিতা, এইভাবে কখন যে কবিতার প্রেমে পড়ে গেলাম জানি না। সেই শৈশব থেকেই কবিতার সাথে আমার অটুট বন্ধন,এই বন্ধন আমাকে বাঁচিয়ে রাখে,আগলে রাখে।অংশুমালী থেকে যখন শুনলাম একটি গদ্য চাই এই বিষয়ে যে আমরা কবিতা পড়ি এবং লিখি কেন?-তখন ভাবলাম কবিতার সঙ্গে আমার যে আজন্মকালের নিকট সম্পর্ক সেই কথাই বলা দরকার ।
কবিতার কথা বলতে গেলেই বলতে হয় মানুষের শিল্পচেতনার কথা। মানুষ সেই যবে থেকে ভীমবেটকা আর আলতামিরার গুহার দেওয়ালে বাইসনের অপরূপ মূর্তি আঁকলো,তবে থেকেই মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছে পেটের ক্ষুধার সাথে মনের ক্ষুধা মেটানো দরকার। যুগ এগিয়েছে মানুষ লিখতে পড়তে শিখেছে, ,কবিতা মানুষের প্রেয়সী অথবা প্রেমিক হয়েছে ।
“গোধূলির ধূসর রঙে রেঙে নেমে আসে শত শত কথা,আচম্বিতে কথারা হয়ে ওঠে কাব্যমালা”।
কবি কবিতার জন্ম কেন দেন এ এক কঠিন প্রশ্ন। সুতীব্র প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে মা যেমন সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান ,ঠিক তেমনই কোনো অনুভূতির প্রচণ্ড তাড়নায় তাড়িত হয়ে কবি তাঁর সৃষ্টির জন্ম দেন। শোক,তাপ,বিরহ,আনন্দ সমস্ত অনুভূতি কোনো না কোনোভাবে একজন কবিকে প্রাণিত করে।যখন আমরা নিঃসঙ্গ হই,হাহাকার নিয়ে আশ্রয় খুঁজি,ভেতরের সব অনুভূতি ,জমে থাকা কথা বসন্তের রঙবাহারি প্রজাপতির মতো সৃজনশীলতার নানা রঙে স্নাত হয়ে বেরিয়ে আসে ,তখনই কথারা কবিতা হয়। আবার সবসময় সব ভাব কাব্যিক হয়ে ওঠে না থেকে যায় অমর কিছু অক্ষরমালার সমাহার হয়ে।
কবি হলেন মানবতার পূজারি, কবির কোনো দেশ,ধর্ম কিছুই নেই,কবির মন ছুঁতে পারে গঙ্গা থেকে টেমসের নীল জল,কবির ভাবনায় মিশে যায় বাউল গান আর ভায়োলিনের আবেগময় সুর। কবিমন বিশ্বমায়ের পায়ে সমর্পিত। প্রকৃতি আর মনুষ্যত্ব চেতনা কবির কল্পলোকে মিশে যায় ।প্রকৃতির রূপের সঙ্গে মানুষের জীবনের ওঠাপড়া ফুটে ওঠে কবিতার মধ্যে ।কবিকে ভাবায় সমাজ, রাজনীতি, মানুষের জীবনের নিত্য সমস্যা। অতীত থেকে বর্তমান সবসময় আমরা সাহিত্যে তার প্রতিফলন দেখি।কবি সংবেদনশীল, মানুষের দুঃখ তাঁকে প্লাবিত করবেই।
“আহত পাখি কুড়োতে থাকে নির্জনতার ধুলো,শুকতারা স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে প্রেমিকার নাকছাবির মতো,খাপছাড়া কিছু কথা বিষাদজলে স্নাত হয়ে কবিতা হতে চায় …”
কবি হলেন নীলকণ্ঠ, সমাজের অনেক কলুষ নিজ কণ্ঠে ধরে রেখে হয়ে মানুষকে অমৃতের সুধারসে ভরিয়ে তোলেন। কবির কণ্ঠকে রুদ্ধ করার প্রচেষ্টাতে রাষ্ট্রীয় শক্তিকেও দেখা গেছে। কবিকে প্রাণে মেরে ফেলা হলেও তাঁর কলম থামানো যায় না। কালের নিয়মে একদিন কবি চলে যান,থেকে যায় তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডার। বহু কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ যুগে যুগে মানুষকে উৎসাহ যুগিয়েছে অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য।
“সব শব্দমালা মিলিয়ে যায় না অজস্র শব্দের ভিড়ে, নদীর বাঁকে বাঁকে জমে থাকে নুড়ি পাথরের মতো,শিশির হাওয়ায় থমকে যায় অশ্রুবিন্দু।” পাঠকের কাছে লেখক অকপটে সব বলেন, পাঠক লেখকের মনের অন্তঃপুরের কথা জানতে পারেন,হয়তো সমব্যথী হয়ে যান। তাই নিজের কবিতা লেখার প্রসঙ্গে বলি আমি এলোমেলো ভাবনাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করি মাত্র, সেই ভাবনা কবিতা হয়ে ওঠে কিনা অথবা ভবিষ্যতে উঠবে একথা জোর দিয়ে বলতে পারি না। তবু চেষ্টা চালাই নিজের মতো করে। দিনের শেষে যখন অবসন্ন শরীর আর মন নিয়ে নিজের সাথে কথা বলতে বসি,অজস্র অবক্ত্য ভাবনা ভাষা পেতে চায়, একাকীত্বের রঙিন তুলিতে রেঙে সেগুলি সেজে ওঠে ।
সবশেষে বলি কবিতা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনন্ত সম্ভাবনার প্রকাশ।
দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..
বিজয়ের সব মুহূর্তেই… তার অধিকার! কেন্দ্র হোক আর কেন্দ্রাতিগ বলের আসন; কেউকেউ বোরকায় রমনীয় সঙ্গানুসঙ্গের;…..
আমার প্রথম প্রেম কৃষ্ণচূড়া দ্বিতীয় প্রেম হলো ছাতিম। তুমি তবে আমার কী! তুমি যে আমার…..
এগুতে এগুতে দেখি ইচ্ছের বীজতলা অনাবাদী পড়ে আছে বয়সী প্রজাপতির কাছে কিছুই হয়নি জানা বিহ্বলতার…..