আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
শেষ যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছে অনেক যুগ আগে,
আহ্লাদী ধানের শিষের মত নুয়ে পড়ে –
যুদ্ধপরাধী জানায় – পুরোনো বাড়িঘর নিয়ে বেশ আছি।
বেয়নেট নামিয়ে রেখেছে গ্রামের বাড়িতে,
মরাকপালীর মা কেচে রেখেছে অযত্নে সামরিক ভূষণ।
লান্সনায়েক বাঁহাতে হাল চেপে ধরে কামানের মত,
‘আরেকটা যুদ্ধ হলে বেশ হয়’ –
ভাবতে ভাবতে দেখে স্নিগ্ধ বিকেল কাঁপছে থিরথির করে।
কে হেরেছে, যে জিতেছে – এই সব আলোচনা হয় পাড়ার মোড়ে মোড়ে,
বঁইচিঝোপের আড়ালে কোন বালক খুঁজে পেয়েছিল পরিত্যক্ত গ্রেনেড,
ছন্দহীন গানে যুদ্ধের দামামা – আর বাজিও না বাদক; কেন না;
শান্তি কামনায় ওড়ানো পায়রাগুলো সব মরে গেছে বয়সের নিয়মে।
হে ঈশ্বর,
আমি রোজ গোধূলি-প্রনামে আপনাকে দেখতে পাই,
আপনার ঈষৎ লোলচর্ম, দৃষ্টিতে আগের মত গ্রীষ্মকাল দেখি না,
কেমন যেন মুখ-লুকোনো ভাব, প্রায় নিঃস্ব ধমনী-জাগা অসাড় অসাড় ছিদ্রমুখ।
আপনার মাথার পিছনের আলোকবলয়ে শেষ গোধূলির রং,
প্রায় প্রতিদিন একটু একটু করে; হিসেব কষে, ফিকে হয়ে আসছে।
আর আপনার ছায়া বড় হচ্ছে একটু একটু করে।
এখন কিছু চাইতে ভয় পাই আপনাকে; বিষণ্ণ করতে চাই না;
বিশ্বাস করুন।
আমি জানি একদিন শেষ গোধূলি অথবা গোধূলির শেষে;
আপনার ছায়া আপনার চেয়ে দীর্ঘতর হবে; ঢেকে দেবে আপনাকেই।
এরপর নতুন কাউকে খুঁজে নেব; ঈশ্বর বা ঈশ্বরী;
নয়ত নিজেই হব ঈশ্বর পদপ্রার্থী।
শিকে ছিঁড়লে আমার মাথার পিছনেও গজাবে আলোকবর্তিকা।
হুহু করে কমে আসছে মানবশিশু,
(ঘুম না আসলে) ভাবি – কার অভিশাপ!
শেষ কে দেখেছিল এক শালিক; অথবা;
মরতে যাওয়ার আগে কাকে কে ডেকেছিল পিছন থেকে?
যাত্রাভঙ্গ হয় তৎক্ষণাৎ।
(কবিতা না আসলে) ভাবি – এবার একটা রাজসূয় যজ্ঞ করলে হয়,
হোম, শান্তি, স্বস্ত্যয়ন, বেদপাঠ, সামগান, উপনিষদ অধ্যয়ন।
সব দিকেই আজকাল মধ্যবয়সীদের ছড়াছড়ি,
কাশফুল নেই, তাই কি অপুদূর্গারা ট্রেন দেখে না, অবাক হবার ছলে!
(হাতে সময় থাকলে) ভাবি – ষাটের ওপারে গেলেই নিধন করব।
শিশু আনতে হবে, শিশু,
টেস্ট টিউবে কিংবা ফ্যালোপিয়ানে; তবে তেমন উর্বর নারী কই!
নারী নিষ্পেষণে কি আর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়! জন্মায় বড়জোর।
তুমি তো বলেই খালাস –
বিশ্বাসযোগ্যতার অপর পিঠটাও চিনে নেওয়া দরকার।
দায়হীনতা, ভালোবাসা, দারিদ্রতার অন্য পিঠ? অন্য দিক? সামান্য উল্টে?
দেখাতেই তো পারতে মহীনদা।
না হয় দেখাতে অবজ্ঞা, অসহ্য মাথাব্যথা আর ক্রোসিনের ভুমিকা।
বাঁধা ছাদ, টুকরো বারান্দা আর জলকাদাময় রান্নাঘরের বিপরীতে,
কী ছিল মহীনদা?
হয়ত জবাব চাই না, আকাশে মেঘ দেখি না কত দিন জানো?
শুধু প্রতিহিংসা ছাড়া কি এক আধটা সংসার দিতে পারতে না আমায়?
আমাদের ঘরটাই না হয় হত আসন্ন সন্ধ্যার তারামণ্ডল।
ভালোবাসার বিপরীতে কি ছিল মহীনদা? সুনামী না তৃতীয় রিপুর অবস্থান?
তবু,
উপভোগ স্রোতের অপর নাম, যেমন দৈনিক পত্রিকার অপর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা;
আর একটা সন্তান (খুব বেশী চাইছি কি?) কি পরমাণু বিস্ফোরণের নামান্তর?
তবে বেশ,
যারা অনেকটা স্বপ্ন দেখে, অনেকটা সুঠাম জীবন করে অভিলাষ,
তাদের সামান্য ব্যয়ভার বহন করার তোমার অন্য পিঠের নাম দিলাম – মহীনদা।
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..