বাংলাদেশের বইমেলায় পশ্চিমবঙ্গের বই-প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক বিতর্ক
বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত একুশে বইমেলা ২০২৩ শেষ…..
“অণুগল্প” কথাসাহিত্যের একটি বিশেষ রূপবন্ধ। স্বল্পকথনে গল্প, যা নান্দনিক, জীবনধর্মী, মৃত্তিকাশ্রয়ী ও মানবিক চেতনার গতিময় শিল্পিত আখ্যান। এক কথায় বলা যায়, যা আকারে ছোট কিন্তু ঘন বুনটে রচিত নান্দনিক ও কিছু শিল্পশর্ত পূরণ করে তাই “অণুগল্প”। Semantics বা অর্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ‘অণুগল্প’ শব্দটি ধারণাগত (Conceptual) বা বোধগত (Cognitive) অর্থকে নির্দেশ করে। আমরা জানি শব্দ খুবই চঞ্চল প্রকৃতির, তার অর্থও চঞ্চল; সময়ের ব্যবধানে শব্দের অর্থ বিচিত্ররূপে বদলায় কিন্তু সব শব্দের অর্থ বদলায় না। সেই অর্থে ‘অণুগল্প’ নামটিরও অর্থ বদল হবে না, এটা আমরা বলতে পারি না, কারণ অর্ধশতক পূর্বের চোঙ্গাগল্প
নামটি পরিবর্তিত হয়ে আজকের ‘অণুগল্প’ হয়েছে।
সাহিত্যের এ রূপবন্ধ আমরা প্রথম দেখতে পাই ঈশপের গল্পে (Fable)। পশ্চিমে বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে সাহিত্যের এই ধারা(Genre) বিশ্ব-সাহিত্যে নয়ারূপে বিভিন্ন নামে এসেছে, যেমন: Flash Fiction, Short Fiction, Micro Fiction, Micro Story; ইত্যাদি। এর ঢেউ এখানে আসলেও একসময় তা থিতু হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কবি, প্রাবন্ধিক, অণুগল্পকার বিলাল হোসেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত “অণুগল্পের অস্তিত্ব আছে” বইয়ে লিখেন, “আমাদের সামনে কোন স্মরণযোগ্য, অনুকরণযোগ্য ব্যক্তি নেই। আমরা ইচ্ছে করলেই কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ করতে পারি না। আমাদের সামনে কোন অণুগল্পকার নেই, যাকে দেখে আমরা বলতে পারতাম- ইহা অণুগল্প, ইনি অণুগল্পকার।”
নদী শুকিয়ে গেলেও নাকি তার রেখা থেকে যায়। কিন্তু অণুগল্পের হালের অগ্রচারী বিলাল হোসেনের মত অণুগল্পকাররা সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীর কোন রেখা খোঁজার চেয়ে সেই অণুগল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ সন্ধানে সদা ব্যস্ত থেকেছেন।
বিলাল হোসেন তরুণতম অণুগল্পকার। তিনি হয়ত সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীর রেখা খুঁজে না পেলেও সাহিত্যের এই শাখাটি একেবারে অর্বাচীন নয়।সাম্প্রতিক “অণু-গল্প” নিয়ে একটা আলোড়ন আছে। তবে এটা নতুন কিছু নয়, প্রায় অর্ধ শতক পূর্বের অনুচ্চ আবর্তন মাত্র। আজ থেকে প্রায় অর্ধ শতক আগে চট্টগ্রামে, ১৯৭২ সালে চৌধুরী জহুরুল হক সম্পাদিত “চোঙ্গাগল্প” সংকলন প্রকাশিত হয়। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার চৌধুরী জহুরল হক আকারে খর্বকায়, মেদ-বাহুল্য বর্জিত রঙ্গাত্মক বক্তব্য দিয়ে চোঙ্গাগল্প রচনা করতেন। ছোট গল্প থেকে চুটকিতে যাওয়ার পথে একটি সিঁড়ি হিসেবে চোঙ্গাগল্পকে বিবেচনা করা হত এবং এর আকার হতো ছোট। তখনকার এ সাহিত্য আন্দোলনে, চোঙ্গাগল্প, সত্তরের দশকের অনেক কৃতিমান লেখক অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন, সবিহউল আলম, সুব্রত বড়ুয়া, দাউদ হায়দার, দানীউল হক, নীলুফার খানম, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, মাহবুবুল হক, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, অনীশ বড়ুয়া, শাহেদা খান, মোহীত উল আলম প্রমুখ।
তাদেরকে খুঁজে বার করতে হয়েছে অণুগল্পের পথ। এবং তৈরী করতে হয়েছে তার পাঠক। আজকে বাংলা সাহিত্যে অণুগল্প একটা বেগবান ধারা। যার পাঠকপ্রিয়তা ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্টিং উভয় মিডিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল।
হাল আমলে অণুগল্প কোন নয়া সাহিত্য আন্দোলন কিনা এ প্রশ্নের অবতারণার চেয়ে জরূরি এটা স্বীকার করা নেয়া যে, অণুগল্প আমাদের কথা সাহিত্যে এক নতুন রসের উদ্ভাস। সমাজ মানে শেষ পর্যন্ত মানুষ। আর মানুষের মধ্যকার বহুমাত্রিক অসংখ্য সম্পর্ক নিয়ে অণুগল্পের ছবি আঁকা, ধ্বনির ক্যানভাসে মেদহীন স্বল্পকথনে সমাজের ভিতরের আন্তঃসম্পর্কগুলি শব্দের তুলির আঁচড়ে তুলে ধরা। এবং এটাই আজকের ‘অণুগল্প’।
অণুগল্পের উপাদন আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, শুধু কুড়িয়ে নিতে হবে। উপন্যাস বা গল্পেও ‘অণুগল্প’ লুকিয়ে থাকে; তার একটি নজির তুলে ধরছি কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক গল্প “বারুদের গন্ধ লোবানের ধোঁয়া” গল্প থেকে।
“মৈথুনরত কুকুর-কুকুরীর পাশে প্রজনন মৌসুমে আরো কুকুর যেমন নিজের পালার প্রত্যাশার লোভে দাঁড়িয়ে থাকে, অন্যান্য জোয়ানদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন তেমনি একবার অপেক্ষা করছিলো, একটি রমণী যখন ৪ জনের শিকার। জোয়ান এবং অফিসার একই আসনে সমাগম। ইসলামী সাম্যের এমন পরিচয় দিতে ক্যাপ্টেন বশির কোনদিন পেছপা হননি।”
এখানে কি নেই, ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিক-বিপর্যয়, লোভ-লালসা, কাম সবই ৪৫টি শব্দে বিবৃত; ‘অণুগল্পের’ সকল লক্ষণ এখানে উপস্থিত। ‘অণুগল্পের’ শৈলী ও সাইজ নিয়ে বিতর্ক আছে এবং থাকতে পারে। ‘অণুগল্পের’ মূল লক্ষণগুলি এভাবে সাজানো যায়।
#ক. প্লট ও চরিত্র কাঠামো ঠিক রেখে আখ্যানের অতিরিক্ত মেদ ও অতিশয়োক্তি ঝেড়ে ফেলা।
#খ. গদ্য হবে ছিলার মত টানটান; পাঠক এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে চায়।
#গ. শুরুতেই চমক দেয়া; যেনো হঠাৎ আলোর ঝলকানি।
#ঘ. গল্পের একাধিক মুখ না থাকাই বাঞ্ছনীয়।
#ঙ. পাঠককে ম্যাসেজটি দিতে হবে; কারণ খালি খাম সকলেরই অপছন্দ।
#চ. গল্পের পরিণতি থাকতে হবে এমন বাধ্য-বাধকতা নেই; পাঠক তার মত করে পরিণতি ঠিক করবে।
শিল্পীকে বৃত্তবন্দী গন্ডির মধ্যে শিল্প সৃজন করতে বলা মানে অনেকটা সারসকে মাটির থালায় পান করতে দেয়ার মতো। শিল্পীর সৃজনের স্বাধীনতা থাকতে হবে। সমাজ আর শিল্প পরস্পরের মধ্যে জড়িয়ে থাকে। কোন একটিকে ধরে এগুনো যায় না। অণূগল্প কোন তথ্য নয়, গল্প আর বাস্তবতা দুটো বিপরীত বিষয়। বাস্তবে দাঁড়িয়ে কোন মানুষ গল্পের মানুষের আচরণ করে না, এখানে কল্পনা এসে ডানা মেলে অসীম আকাশে উড়তে চায়। যার সাথে জড়িয়ে থাকে বাস্তবের অভিজ্ঞতা, আত্ম-প্রতিফলন আর সংশ্লেষণ। তাই ‘অণুগল্প’ নিছক একটি ঝোঁক বা খেয়াল নয়, এটি একটি শিল্প। এবং সাহিত্যের এক অর্বাচীন ধারা।
অণুগল্প আমাদের কথা সাহিত্যে এক নতুন রসের উদ্ভাস এর উদ্বোধন। যদিও সাহিত্যের ইতিহাসবেত্তারা এটাকে সত্তরের দশকের চোঙ্গাগল্পের আবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।
সমাজের মানুষের মধ্যেকার বহুমাত্রিক অসংখ্য সম্পর্ক নিয়ে অণু-গল্প ছবি আঁকে, মানুষের ভিতরের আন্তঃসম্পর্কগুলি ঘন বুনোটে অণু-গল্প তুলে ধরে। এ ধরাটা বহমান থাকুক।
মানবজীবনের রসাত্নাক নির্মেদ খর্বকায় কারুকথাই অণুগল্প।
বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত একুশে বইমেলা ২০২৩ শেষ…..
চিত্তরঞ্জনের গৃহপরিবেশ এত সুখ ও শান্তির ছিল তবুও তার মন যেন মাঝে মাঝে কেঁদে উঠতাে…..
পারসিক সংস্কৃতির দেশ ইরানের মেয়েরা সমানে তাঁদের হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন, চুল কাটছেন। যেন তারা পুরুষতন্ত্রের…..
“ভালোবাসা তোমাকে যেমন রাজমুকুট পরিয়ে দেবে, তেমনি তোমাকে ক্রুশবিদ্ধ করবে। … প্রেম তোমাকে শস্যের আঁটি…..