অথ নারীকথা

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
নারী, প্রবন্ধ
Bengali
অথ নারীকথা

নারীর কথা লিখতে বসেও আমাদের সেই অতি প্রাচীন অথচ চিরনবীন পুরুষ কবি রবীন্দ্রনাথকেই মনে পড়ল,

আমার যে রূপ আছে, সে কথা ভুলতে তোমার বেশিদিন লাগে নি। কিন্তু, আমার যে বুদ্ধি আছে, সেটা তোমাদের পদে পদে স্মরণ করতে হয়েছে। ঐ বুদ্ধিটা আমার এতই স্বাভাবিক যে তোমাদের ঘরকন্নার মধ্যে এতকাল কাটিয়েও আজও সে টিঁকে আছে। মা আমার এই বুদ্ধিটার জন্যে বিষম উদ্‌বিগ্ন ছিলেন, মেয়েমানুষের পক্ষে এ এক বালাই। যাকে বাধা মেনে চলতে হবে, সে যদি বুদ্ধিকে মেনে চলতে চায় তবে ঠোকর খেয়ে তার কপাল ভাঙবেই।

আমি নির্বোধ – এই স্বীকারোক্তি ব্যতীত সংসারে বুঝি মেয়েদের ঠাঁই নেই। তাই “স্ত্রীর পত্র”-এ পুরুষশাসিত সংসারে নারীর রূপ বনাম বুদ্ধির প্রতিষ্ঠিত মাপকাঠির মূল্যায়ন করছে মৃণাল। নারীর বুদ্ধি সংসারের বিপরীতগামী গতি। নারী হবে রূপে গুণে লক্ষ্মীস্বরূপিনী। সেই রূপের মধ্যে বুদ্ধির ঘনঘটা এক বিষম বিপদ। উনিশ শতকের প্রথমেই রামমোহন রায়কে বলতে হয়েছিল, “মেয়েদের বুদ্ধির পরীক্ষা কোনোদিন না নিয়েই সংসার তাদের নির্বোধ বলে দেগে দিয়েছে”। আর তাই পুরুষের সেই আরোপিত আদর্শে নারীর বুদ্ধির অস্তিত্ব, তার চেতনাচিহ্নের স্থান নেই সংসারে। অথচ সুদূর অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই ব্রিটিশ লেখক জেন অস্টেনের লেখা, “Persuasion” উপন্যাসের পাতায় চোখ পাতলেও শোনা যায় এক বুদ্ধিমতী নারীর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও তীক্ষ্ণ সমাজ বিশ্লেষণ, যিনি দেখেছিলেন এই সমাজে নারী ও পুরুষের অবস্থান-

Captain Harville-I do not think I ever opened a book in my life which had not something to say upon woman’s inconstancy. Songs and proverbs, all talk of woman’s fickleness. But perhaps you will say, these were all written by men.”

Anne Elliot- Perhaps I shall. Yes, yes, if you please, no reference to examples in books. Men have had every advantage of us in telling their own story. Education has been theirs in so much higher a degree; the pen has been in their hands. I will not allow books to prove anything.

মেয়েদের বিদ্যেবুদ্ধির কথায় একটা ব্যক্তিগত গল্প মনে পড়ল, তখন আমার যৌবনে প্রথম ধরেছে কলি; আকুল প্রাণ অকারণে চঞ্চল। তো সেবার যখন ফাগুনের রং ধরেছে দিকে দিকে, বাড়ির উঠোনে কৃষ্ণচূড়াটায় রঙের ঔদ্ধত্য শুরু হয়েছে, যৌথপরিবারের সকলে মেতে উঠল আবীরে রাঙানো দোল উৎসবে। যখন ভরা ফাগুনের ছড়ানো আবীরে মাদল বাজল, দালানের ছোটঘরটায় মাদলের আওয়াজ বুঝি পৌঁছল না। সেখানে মলিনমুখী নতুনকাকিমা। আমি তাঁর হাত ধরে টেনে আনি রঙের এক্কেবারে মধ্যিখানে। তাঁর সাদা থান কাপড় যখন রঙে রঙে মাতাল ঠিক তখনই বেজে উঠল আমার বট্‌ঠাকুমার কাংস্যনিন্দিত কণ্ঠস্বর,

-ছি ছি, বিধবামাগির রকম দ্যাখো! নেকাপড়া শিখে তো আমার খোকাকে খেলি, এখন আবার রং মাখা! মানসম্মান সব খেলো গো!

হ্যাঁ, আমাদের নতুনকাকিমা বিদুষী, বিয়ের পূর্বে বি এ পাশ। নতুনকাকা কিছুতেই মূর্খ মেয়ে বিয়ে করতে চাননি। তাই নতুনকাকিমা এ বাড়ির প্রথম বিদুষী বধূ। কিন্তু বিধি বাম। মেয়েদের সুখে মানুষ তো কোন ছার, দেবতারও চোখ টাটায়। তাই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুনকাকার মৃত্যু হল পথদূর্ঘটনায়। আর সেই দূর্ঘটনার সমস্ত কারণ বর্তালো বেচারি নতুনকাকিমার ওপর। ঠিক যে নতুনকাকিমার ওপর তাও বলা যাবে না, দোষ পড়ল তাঁর বিদ্যেবুদ্ধির ওপর। অকারণ এই দোষারোপের কারণ স্ত্রীশিক্ষা ও বৈধব্যের মধ্যে অমোঘ সম্পর্কের প্রচলিত কুসংস্কার, যা রবি ঠাকুরের তির্যক কলম লিখে রেখেছিল “খাতা” নামে ছোটগল্পের মোড়কে,

স্ত্রীশক্তি এবং পুংশক্তি উভয়শক্তির সম্মিলনে পবিত্র দাম্পত্যশক্তির উদ্ভব হয়। কিন্তু লেখাপড়া শিক্ষার দ্বারা যদি স্ত্রীশক্তি পরাভূত হইয়া একান্ত পুংশক্তির প্রাদুর্ভাব হয়, তবে পুংশক্তির সহিত পুংশক্তির প্রতিঘাতে এমন একটি প্রলয়শক্তির উৎপত্তি হয় যদ্‌দ্বারা দাম্পত্যশক্তি বিনাশশক্তির মধ্যে বিলীনসত্তা লাভ করে, সুতরাং রমণী বিধবা হয়।

এ সেই সময়, যখন অক্ষয়কুমার চৌধুরীর স্ত্রী শরৎকুমারী দেবীর প্রতিবাদী কলম লিখছে ‘শুভবিবাহ’ উপন্যাস, সমাজের প্রচলিত বিশ্বাসের দিকে আঙুল তুলেছেন, শুনিয়েছেন বিয়েবাড়িতে মা-মেয়ের কথোপকথন,

-ওলো সুহাসিনী, তুই যেন দই খাসনি, কোলে কচি

-কেন মা, ওই দেখো নবদুর্গা খাচ্ছে, ওরও তো কোলে কচি

-ওর যে মেয়েটা। মেয়ে নাড়িতে সব সয়, তোর যে খোকাটি। বেটাছেলে সুখী শরীর, সর্দি হবে যে।

না, শুধু শরৎকুমারী দেবীই নয়, ঊনবিংশ শতাব্দী জুড়েই শুরু হয়েছিল নারীজাগরণের কাহিনি। যেমন ফরিদপুরের সীতানাথ শিকদারের স্ত্রী রাসসুন্দরী দেবী, যিনি কর্তার ঘোড়ার সামনেও একহাত ঘোমটা টেনে বলতেন, ‘ঘোড়ায় আমাকে দেখলে, যে বড় লজ্জার!’ তিনিই বাংলা সাহিত্যের সেই প্রথম মহিলা যিনি লিখলেন আত্মজীবনী, “আমার জীবন”। যদিও অক্ষর পরিচয় ঘটেছিল শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে উনুনের পাশে একগলা ঘোমটা নীচে। তিনি শুধু একা নন, দেওয়ান রামকমলের পুত্রবধূ সারদাসুন্দরী দেবী, রেভারেন্ড কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভগিনী নিস্তারিণী দেবী, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ভগিনী প্রসন্নময়ী দেবী, মাইকেল মধুসুদন দত্তের ভাইছি মানকুমারী দেবী, বৌবাজারের শ্রীনাথ দাসের পুত্রবধূ কৃষ্ণভাবিনী দেবী, প্রথম বাঙালি মহিলা অনার্স গ্র্যাজুয়েট কামিনী রায় আর ঠাকুরবাড়ির সেই আধুনিক মনস্ক মহিলার সারি, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, কাদম্বরী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী, সরলাদেবী ইত্যাদি। সর্বব্যাপী পুরুষতন্ত্রের আনাচে কানাচে শোনা গিয়েছিল নারীর চাপা দীর্ঘশ্বাসের কাহিনি। সামাজিক নিয়মকানুন মেনে নিতে নিতেই তাঁরা সমাজবিধানের ওপর অনাস্থার প্রশ্নটি তুলে ধরেছিলেন তাঁদের রচনায়। প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন নারী পুরুষমানুষ হতে চায়নি, একটা পুরো মানুষ হতে চেয়েছে। ভালোবাসতে চেয়েছে মানুষকে মানুষের মতো। স্ত্রীজাতি এ জগতে জ্ঞানবুদ্ধিহীন হয়ে কেবল দাসত্ব করার জন্যই সৃজিত হয়নি। পুরুষের ক্রীড়ার নিমিত্ত তারা গঠিত নয়। আত্মসচেতনতাই আধুনিকতার আর এক নাম। বিধিনিষেধের সীমাহীন বর্বরতা, নিদারুণ বঞ্চনার গ্লানি আর নারীজীবনের দুঃসহ অপমান তাঁদের পীড়িত করেছিল। চিকের আড়াল থেকে শঙ্কিত দৃষ্টি মেলে সমাজকে দেখেছিলেন নিজস্ব উপলব্ধির আলোয়। আর সেই উপলব্ধ জ্ঞানে পথনির্দেশ করেছিলেন- মেয়েদের লড়াইটা করতে হবে নিজের সঙ্গে, না হলে সে কোনোদিন জিততে পারবে না।

সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর নারীজাগরণ বিংশ শতাব্দীতে রূপ নিল নারীবাদ নামে এক দর্শনে যা মানব সভ্যতায় নারী ও পুরুষের সমতা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আর এই নারীবাদকে তাত্ত্বিক ও দার্শনিক রূপ দেয়ার প্রয়াসে উদ্ভুত হল নারীবাদী তত্ত্ব। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারী পুরুষের সামাজিক ভূমিকা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য বিশ্লেষণ এই তত্ত্বের উদ্দেশ্য।

তত্ত্বে যাবার আগে একটা গল্প বলি। গল্পটা আমার নয়, বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলনের পুরোধা সীমন দ্যা বোভেয়ার-এর “The Second Sex” বইটির ভূমিকায় জুডিথ থারম্যান লিখছেন, তখন তিনি সবেমাত্র একদিনের শিশু। তাঁর অবিবাহিত মাসি এসেছেন তাঁকে দেখতে। তিনি দেখেন শিশুকন্যার দোলনায় যে ট্যাগটি লাগানো তাতে লেখা আছে “It’s a Girl”. আর তাঁর পাশের বেডে অন্য একটি শিশুপুত্রের দোলনা রয়েছে, যাতে লেখা “I’m a Boy” তো এই ‘male subject’ আর ‘female object’ এর খেলা শুরু হয়ে যায় জীবনের জন্মলগ্নেই; পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রদত্ত মেয়েদের প্রথম ললাটলিখন আর এই মর্মেই বোভেয়ারের কাছে পাচ্ছি আমাদের সমাজে মেয়েদের অবস্থানের সংজ্ঞা,

“the situation of woman is that being, like all humans, an autonomous freedom, she discovers and chooses herself in a world where men force her to assume herself as Other: an attempt is made to freeze her as an object”[1]

আর এক নারীবাদী কবি শিলভিয়া প্লাথের “The Applicant” কবিতায় দেখছি সেই একই ‘object’ এর খেলা। পুরুষের কাছে সে একটি উপযোগী বস্তু মাত্র, তাই ‘she’ নয় ‘it’- এই সমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে কবির তির্যক ও তীক্ষ্ণ শ্লেষ,

A living doll, everywhere you look.
It can sew, it can cook,
It can talk, talk, talk.

It works, there is nothing wrong with it.
You have a hole, it’s a poultice.
You have an eye, it’s an image.
My boy, it’s your last resort.
Will you marry it, marry it, marry it.

এই ‘male subject’ আর ‘female object’ এর উৎস সম্ভাবত লুকিয়ে আছে প্রাচীনকালের গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের দর্শনে। তাঁর সুবিখ্যাত “Generation of Animals” ভ্রূণতত্ত্বের ওপর পৃথিবীর প্রথম বৈজ্ঞানিক দর্শন, যেখানে তিনি মানব প্রজনন প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে গিয়ে পুরুষের বীর্যকে ‘efficient cause’ এবং নারীর ঋতুস্রাবের রক্তকে ‘material cause’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং এর ভিত্তিতেই পুরুষত্ব ও নারীত্বের বিভাজন active ও passive হিসেবে। তদানিন্তন বিজ্ঞান অনুযায়ী অ্যারিস্টটলের জানা ছিল না প্রজনন প্রক্রিয়ায় ‘X’ ও ‘Y’ ক্রোমোজমের সমান ভূমিকার কথা। কিন্তু তাঁর এই নির্দোষ বৈজ্ঞানিক দর্শন লুফে নিল তদানিন্তন সমাজের আইন প্রণয়নকারী ও ধর্মের ধ্বজাধারীরা। চার্চের ক্যানন আইন নারীকে “শয়তানের প্রবেশদ্বার” হিসেবে চিহ্নিত করল। গ্রীক মাইথোলজির হাত ধরে পৃথিবীর প্রথম নারী প্যান্ডোরার হাত দিয়েই বিশ্বে প্রথম ছড়িয়ে পড়ল মানবজাতির যত রোগশোক, দুঃখকষ্ট; যা মানুষের প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতার স্বভাবকে কেবলমাত্র নারীচরিত্রের সঙ্গে জুড়ে দেবার চক্রান্ত মাত্র।   হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে সামাজিক ও ধর্মীয় আইনকানুনের সর্বোচ্চ আসনে বসল খ্রীষ্টপুর্ব ১৭০-১৫০–এ রাজা পুষ্যমিত্র শুঙ্গের রাজত্বকালে রচিত মনুসংহিতা, যেখানে নারীর জন্য আইন প্রণয়ন হল, “পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে/ রক্ষন্তি স্হবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি”– অর্থাৎ কুমারী অবস্থায় পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের ছত্রছায়ায় নারীর বাস। স্বাধীনতায় নারীর কোনও অধিকার নেই। তো মনুর কলমের আঁচড়ে কেবল যে খর্ব হল নারীস্বাধীনতা তাই নয়, মানুষের দুঃশ্চরিত্রতাকেও স্থাপন করা হল কেবলমাত্র নারীর স্বভাবে- “অবিদ্বাংসমলং লোকে বিদ্বাংসমপি বা পুনঃ/প্রমদা হু্যৎপথং নেতুং কামক্রোধবশানুগম্‌” – অর্থাৎ সংসারে সকলেই কাম ও ক্রোধের বশীভূত। তাই বিদ্বানই হোন বা মূর্খই হোন নারী তাদের অনায়াসে বিপথগামী করতে পারে।

অথচ হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মানে কেবল মনুসংহিতার কিছু প্রক্ষিপ্ত সূত্র নয় বরং বৈদিক দর্শন এক উপলব্ধির ধর্ম- প্রকৃতি ও ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় আর মানুষ সেই অনন্তেরই এক রূপ; সেখানে নারী পুরুষ আলাদা নয়; অনন্তের প্রেক্ষাপটে যখন সে নিজেকে স্থাপন করে তখন তার উত্তরণ ঘটে এক অতীন্দ্রিয় বোধে। প্রকৃত ধার্মিক বিশ্বজীবনের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারে; তার আনন্দ ও বেদনার অনুভূতি দেহের সংক্ষিপ্ত সীমানা ছাড়িয়ে, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার গণ্ডি পার হয়ে যেখানে প্রতিটা জীবের, সে নারী হোক পুরুষ হোক কিংবা মনুষ্যেতর প্রাণী, সমস্ত জীবের অস্তিত্ব ও শুভাশুভ বিরাজ করে, সেই অনন্ত বিশ্বজনীনবোধে তার উত্তরণ। এই বিশ্বচৈতন্য থেকে বহু দূরে আজকের অহংসর্বস্ব সমাজ, ধর্মের অন্ধভক্তের দল আজ নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে বৈদিক দর্শন বিকৃত করে অথবা কাব্যশরীফের প্রক্ষিপ্ত অংশগুলোকে প্রধান করে তোলে, পুঁথিকাব্য লেখে,

পতিভক্তি কর সদা থাকিতে জীবন
পতিভক্তি সতী সাধ্বী করে প্রাণপণ
সতী সাধ্বী অবলার এইত ধরম
পতিকে সেবিয়া করে সার্থক জীবন

যেখানে স্বামী ও স্ত্রী নিকটতম সান্নিধ্যে দিনে দিনে একে অন্যকে প্রভাবান্বিত করে আপন রুচি, অভ্যাস ও মতবাদের দ্বারা, পরস্পরকে সৃষ্টি করে পলে পলে, দেওয়া নেওয়া, ভাঙা গড়া চলে সকলের অলক্ষ্যে, অজ্ঞাতে আর অনেকটা অবিসংবাদে; সেখানে এই পুঁথিকাব্য পড়িয়ে ক্রীতদাসী তৈরি করতে চায়, সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করতে চায় মূর্খ সমাজ। কিন্তু কেন? কী লাভ হল তার। তাই নারীর বিদ্রোহ ধর্মের বিরুদ্ধে নয় বরং ধর্মের ধ্বজাধারী সমাজের বিরুদ্ধে; যারা উপলব্ধির ধর্মকে নামিয়ে এনেছে উন্মত্ত মৌলবাদের নিকৃষ্ট পন্থায়; যারা প্রশাসনে আপন আসনের ভিত শক্ত রাখার প্রচণ্ড লোভে মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দেয়; যারা ধর্মান্ধতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে চায় নারীর সহজ ও স্বাধীন চলন সেই সমাজ ও ধর্মের সীমাবদ্ধতা নস্যাৎ করে গর্জে ওঠে নারীর কণ্ঠ, বাংলাদেশের নারীবাদী কবি তসলিমা নাসরিনের প্রতিবাদী কলম,

তুমি মেয়ে
তুমি খুব ভালো করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমায় আড়চোখে দেখবে
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে শিস দেবে
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমায় চরিত্রহীন বলে গাল দেবে
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছো, যাবে

পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে গৃহপালিত সম্পদ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের এই ইতিহাস, অবদমনের এই সামাজিক স্মৃতি আজও বয়ে চলেছে মানুষের ডি এন এ। নারী এখানে কোনো স্বতন্ত্র স্বশাসিত অস্তিত্ব নয়, বরং আপেক্ষিক, যেমন বোভেয়ার বলছেন, “Humanity is male, and man defines woman, not in herself, but in relation to himself; she is not considered an autonomous being.” যুগ যুগ ধরে নারীর এই পুরুষসাপেক্ষতা আজ তার কণ্ঠে দিয়েছে প্রতিবাদী স্বর। প্রাচীন যুগ থেকে সর্বংসহা রূপে গড়ে দেওয়া হয়েছিল যে নারীর ভাবমূর্তি, আজকের নারী তা অস্বীকার করে। “রাঁধার পরে খাওয়া আবার খাওয়ার পরে রাঁধা” সংসারের এই চাকায় জীবন জুতে দিতে চায় না যে নারী; যে নারী্র কণ্ঠে বেজে ওঠে রবিঠাকুরের মৃণাল, “আপন ইচ্ছে মতো দস্তুর দিয়ে জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চেপে রেখে দেবে, তোমাদের পা এত লম্বা নয়”, সেই নারীর ব্যতিক্রমী সমাজবোধ, সাহসী ও গভীর অন্তর্নিহিত জীবনবোধ ধরে ফেলল আপাত শান্তির মুখোশে ঢাকা ধর্মচর্চার ভণ্ডামিগুলো। নারীর বিরুদ্ধে পুরুষতান্ত্রিকতার ষড়যন্ত্র তার মনের গহীনে ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গড়ে তুলল। সামাজিক অন্যায় আর নির্যাতন সেই নিরালা দ্বীপগুলোর মধ্যে বোধের সেতু বাঁধল ধীরে ধীরে। সেই সেতু জুড়ে জুড়ে বুকের মধ্যে যন্ত্রণাগুলো একটু একটু করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল। তারপর প্রচণ্ড লাভার স্রোতের মতো উৎসারিত হল তার নারীবাদ,

One is not born, but rather becomes, woman. No biological, psychic, or economic destiny defines the figure that the human female takes on in society; it is civilization as a whole that elaborates this intermediary product between the male and the eunuch that is called feminine. Only the mediation of another can constitute an individual as an Other.1

যেখানে সত্য, শিব ও সুন্দর আরাধনার চেয়ে অস্তিত্বের প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠে, সেই সমাজে সে নারী হয়ে জন্মায় না বরং জন্মমুহূর্ত থেকে সমাজের আঁচে একটু একটু করে নারী হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে ‘Other’ নিজস্ব পরাধীনতার উপলব্ধি করতে করতে হাত পা মাথা গুটিয়ে শামুকের মতো সামাজিক খোলসে আবৃত হয়ে নারীর শঙ্কিত চলনে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা যুগ। সময় এগিয়েছে ইথার থেকে আন্তর্জালের তীব্র গতিতে কিন্তু সমাজের মানসিকতা হাঁটেনি এক পাও। তার শিক্ষা তার সংস্কৃতি তার নারী আন্দোলন সবই তাকে পায়ে নূপুর পরিয়ে পুরুষের প্রাচীরের সীমানায় বেঁধে রাখে। তাই তসলিমাকে বলতে হল, নারী বড় বোকা, অশিক্ষিত মেয়ের থেকে বিদ্যেধরী আধুনিক ক্রীতদাসীতে পুরুষ আরো মুগ্ধ ও তুষ্ট- এই ছলনাটুকু বুঝে ওঠার মতো বোধ তার নেই। নারী হাতে বালা, নাকে নোলক, গলায় হাঁসুলি, পায়ে নূপুর পরে কীভাবে নিজেকে শৃঙ্খলিত করে তারই সরস বিবরণ দিয়েছিলেন কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাত্রী, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের সেই বাঙালি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন,

কারাগারে বন্দীগণ লৌহনির্মিত বেড়ি পরে, আমরা স্বর্ণরৌপ্যের বেড়ি অর্থাৎ মল পরি। উহাদের হাতকড়ি লৌহনির্মিত, আমাদের হাতকড়ি স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্মিত চুড়ি।। বলা বাহুল্য লোহার বালাও বাদ দেওয়া হয় না। কুকুরের গলায় যে গলাবন্ধ দেখি উহারই অনুকরণে বোধহয় আমাদের জড়োয়া চিক নির্মিত হইয়াছে। গো-স্বামী বলদের নাসিকা বিদ্ধ করিয়া ‘নাকদড়ি’ পরায়। এদেশে আমাদের স্বামী নোলক পরাইয়াছেন।[2]

বোভেয়ার বর্ণিত “Other” এর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে নারী সাহিত্য পুরুষের কলম থেকে কতটা দূরে এবং কীভাবে আলাদা তা বিশেষ আলোচনার দাবী রাখে। নারী চিরকালই পুরুষের কাছে এক কল্পনাতীত রহস্য, তার প্রকৃতি অচেনা, অনাবিষ্কৃত এক “wild zone”, এক বনঅংশ, যেখানে পুরুষেরা পা রাখতে সাহস করে না। সেই নারীরই আছে বলার মতো একটা গল্প। মার্কিন ফেমিনিস্ট ও সাহিত্য সমালোচক এলেন শোআল্টর নারী সাহিত্যে গাইনোক্রিটিক নতুন শব্দটি আবিষ্কার করেছিলেন, যা বর্তমানে ফেমিনিস্ট ক্রিটিকের পরিবর্ত, যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন,

In contrast to an angry or loving fixation on male literature, the program of gynocritics is to construct a female framework for the analysis of women’s literature, to develop new models based on the study of female experience, rather than to adapt male models and theories. Gynocritics begins at the point when we free ourselves from the linear absolutes of male literary history, stop trying to fit women between the lines of the male tradition, and focus instead on the newly visible world of female culture.”[3]

পুরুষ ও নারীর সাহিত্য আলাদা হবার পিছনে গাইনোক্রিটিসিজমে যে কারণগুলোকে উল্লেখ করা হয়, তা হল শারীরবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, মনোবিশ্লেষণ ও সাংস্কৃতিক। কবিতায় অলঙ্কারের স্বার্থে চিরকালই নারীশরীর বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রাচীন মহাকবি কালিদাসও বাদ পড়েননি, তাঁর মেঘদূত কাব্যে আমরা সকলেই পরিচিত নারীশরীরের সেই অলঙ্কারে,

তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী
মধ্যে ক্ষামা চকিতহরিণীপ্রেক্ষণা নিম্ননাভিঃ।
শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রা স্তনাভ্যাং
যা তত্র স্যাদ্‌ যুবতিবিষয়ে সৃষ্টিরাদ্যেব ধাতুঃ।

কিন্তু রোমান্টিক পুরুষের এই শৈল্পিক স্তাবকতায় নারী খুঁজে পায় শিল্পসাহিত্যে ফ্যালিক ও ওভারিয়ান থিওরির ছায়া, যাকে সে অমান্য করতে চায়। পুরুষের তৈরি এই সমাজ, তার নিয়ম কানুন, তার ভাষায় পুরুষকবি যে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে নারীকবির তা নেই। সমাজ তাকে শিখিয়েছে ‘দৃষ্টিকে নত করতে শেখো, আগ্রহকে দমন করতে শেখো, জিহ্বাকে সংযত করতে শেখো…’। প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্ত হাজারো বিধিনিষেধের নিগড়ে তার স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে বোঝানো হয়েছে এমনটি হলে ঘরে পরে বলবে সবাই লক্ষ্মী মেয়ে অতি। এই লক্ষ্মী মেয়ে হওয়ার গুনাগার দিতে দিতে কেটে যায় নারীর দুরন্ত কৈশোর, অসহ্য যৌবনের দিনগুলো। ছেলেবেলায় আমার ছোট্‌ঠাকুমা আমার প্রতিবাদে জল ঢেলে দিয়ে বলতেন, ‘দুর পাগলী, এমন করে নাকি? যে সয় সে রয়’। বড় হয়ে বুঝলুম ওটা বিজ্ঞানের জগৎ থেকে ধার করা মতবাদ, ডারউইন তত্ত্ব! এ সমাজে তা অচল। এখানে দুর্বল যত সহন করে ততই বাড়ে সবলের প্রতাপ। এই ফ্যালিক সংস্কৃতির কাছে বশংবদ হয়ে আজকের নারী বিকিয়ে যেতে চায় না। নারী শরীর জ্ঞানকে সামান্য মাপজোকে পর্যবসিত করার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা সে মানতে পারে না বরং চায় দেহ ও মনের সংযোগে মানবিকতায় উত্তরণ,

The female body has far more radical implication than we have yet come to appreciate. Patriarchal thought has limited female biology to its own narrow specifications. The feminist vision has recoiled from female biology for these reasons; it will. I believe, come to view our physicality as a resource, rather than a destiny. In order to live a fully human life we require not only control of our body; we must touch the unity and resonance of our physicality, our bond with the natural bond with the natural order, the corporeal ground of our intelligence.[4]

একই সময়ে একই সংস্কৃতির আবহাওয়ায় থেকেও কীভাবে নারী ও পুরুষের ভাষা, কালচার ও মানসিকতা আলাদা হয়ে যায় তা নিয়ে ১৯৭৫ সালে ব্রিটিশ সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ এডউইন আর্ডেনার ও তাঁর স্ত্রী শির্‌লে আর্ডেনার, যিনি নিজেও একজন নৃতত্ত্ববিদ ও নারীগবেষক, প্রস্তাবনা করেন Muted Group Theory – কী বলে সেই থিয়োরি?

Muted Group Theory is a communication theory, describes the relationship between a dominant group and its subordinate group(s): As the dominant group contributes mostly to the formulation of the language system, including the norms and vocabulary, members from the subordinate group have to learn and use the dominant-made language to express themselves. However, this translation process may result in loss and distortion of information as the people from subordinate groups cannot articulate their ideas clearly.

তো অবদমিত সেই নারীর কালচারকে, তার নিজস্ব চেতনায় গড়ে ওঠা বাস্তবতাকে শাসক তথা পুরুষের কালচার বুঝে উঠতে পারে না। আর এইখানেই লুকিয়ে আছে নারীর অ্যাডভান্টেজ। নারীর ঋতুচক্র, সন্তানধারণ, প্রসববেদনা, স্তন্যপান করানো ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যগুলোর সম্মিলনে গড়ে ওঠে তার নিজস্ব কালচার, সে জানে মা-এর ভূমিকায় তার নিরঙ্কুশ অস্তিত্বের কথা, আর এইসব বোঝাপড়াই নারীসাহিত্যে রূপকের উৎস, যেখানে পুরুষের কোনো স্থান নেই। আর এটাই নারীর কাছে পার্থক্যের দুর্বলতার পরিবর্তে পার্থক্যের শক্তি হয়ে ওঠে। নারী শরীরের এই প্রাকৃতিক ছন্দের সাথে একান্ত ঘনিষ্ঠ নিজস্ব অভিজ্ঞতায় তৈরি হয় তার নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব মানসিকতা, যেখানে সে নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারে নিজের মা-এর সঙ্গে। অন্যদিকে পুরুষের ইডিপাস কমপ্লেক্স তাকে ছুটিয়ে দেয় সংসার থেকে বাইরে, ফলত বাইরের জগতের স্বীকৃত কালচারেই গড়ে ওঠে তার পুরুষ কালচার। আর এইসব পার্থক্যেই গড়ে ওঠে পুরুষ ও নারীকবির দুই আলাদা জগৎ, আলাদা ভাষা, যাকে স্বীকার করেই নারীর লেখা সাহিত্য বা তার সমালোচনার বিচার করতে হবে।

পুরুষশাসিত এই সমাজে দেখি, হয় নারী নিজেকে আইসোলেট করে নয়তো পুরুষ নারীকে আইসোলেট করে অবহেলা করে। যে নারী এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নিজেকে এমন বিনতার ভূমিকায় মানতে পারে না, তার জাগ্রত চেতনা এই আইসোলেশন এই অবহেলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, বলে সমন্বয়ের কথা;

There are two sexes in the mind corresponding to the two sexes in the body, they also require to be united… a plan of the soul so that in each of us two powers preside, one male, one female; and in the man’s brain the man predominates over the woman, and in the woman’s brain the woman predominates over the man. The normal and comfortable state of being is that when the two live in harmony together, spiritually co-operating. If one is a man, still the woman part of his brain must have effect; and a woman also must have intercourse with the man in her. …a great mind is androgynous. It is when this fusion takes place that the mind is fully fertilized and uses all its faculties. Perhaps a mind that is purely masculine cannot create, any more than a mind that is purely feminine, I thought.[5]

তো শুধুমাত্র পুরুষের সঙ্গে সমান অধিকার, পুরুষের সংস্কৃতির অনুকরণ এটাই নারীমুক্তি আন্দোলনের মুখ্য চাহিদা হতে পারে না, কারণ সাম্যের চেয়ে বড় সমন্বয়। হিন্দুধর্ম শক্তির আরাধনা করে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা রূপে। এই শক্তির দুটো অংশ। এক অংশ ব্যক্ত, আর এক অংশ অব্যক্ত। এক অংশ উদ্যোগ, আর এক অংশ বিশ্রাম। এক অংশ প্রয়োগ, আর এক অংশ সংবরণ। পুরুষ এবং নারী শক্তির দুইদিক। পুরুষ ব্যক্ত, কিন্তু ব্যক্ত বলেই সে মস্ত নয়। নারী অব্যক্ত, কিন্তু অব্যক্ত বলেই সে হেয় নয়। নারী ও পুরুষ তো কেবল পরস্পরের পরিবর্ত নয়, বরং পরিপূরক। সে পুরুষই হোক বা নারী, সামঞ্জস্যবোধের জন্য মানুষের মনের গভীরে আছে এক চিরন্তন তৃষ্ণা। দার্শনিক অম্লান দত্তের কথায় বলতে গেলে, “সমন্বয় ছাড়া সভ্যতা হবে শ্রীহীন, হয়তো রক্ষারও অযোগ্য। সেই সমন্বয়ের আন্দোলনে নারী একা নয়, পুরুষ একা নয়, পরস্পর বিরোধী তো নয়ই। নারীমুক্তি আন্দোলন যদি প্রধানত বিরোধের আন্দোলন হয়ে ওঠে, তবে সমাজ ও সভ্যতার পক্ষে সেটা বিপথ বলেই জানতে হবে”। তাই নারী স্বাধীনতায় দেওয়া নেওয়ার প্রশ্ন নেই। স্বাধীনতা কেউ কাউকে দিতে পারে না। দেনাপাওনার বস্তুই সে নয়। আপনার পূর্ণতায়, আত্মার আপন ব্যাপ্তিতে সে আপনি ধরা দেয়।

রেফারেন্স:

[1] The Second Sex by Simone De Beauvoir

[2] বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন

[3] Towards a Feminist Poetics by Elaine Showalter

[4] Of Woman Born by Adrienne Rich

[5] A Room of One’s Own by Virginia Woolf

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাংলার নবজাগরণের দু একটি কথা

গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাংলার নবজাগরণের দু একটি কথা

একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..