অনিকেত দহন, দ্যা অ্যাগনস্টিক ও অন্যান্য

মায়িশা তাসনিম ইসলাম
কবিতা
Bengali
অনিকেত দহন, দ্যা অ্যাগনস্টিক ও অন্যান্য

অনিকেত দহন ২৩

এই মুহুর্তে কারো ধ্যানে নিঃশ্বাস মন্ত্র, শয্যার রতি রূপ
মায়ের বুকে আছে কি নেবুলাইজার, অন্তের খারিজ
প্রেমিকের শীতে ন-এর বিভক্ত খাড়া শির
মাথাটা অর্ধেক পোতা, যেন পুরনো শত্রুর কুফরি তাবিজ

অনিকেত দহন ২৪

ইথার কে
প্রভুকে ডাক দিতে গিয়ে কবির ডাক শুনি
কবি কয় কবির পরই ঈশ্বর হতে হয়
ঈশ্বর আলু ছেলার যুদ্ধে চুলা নেভায়
সাধনার একা ব্যক্তিত্ব কোথায় ইথার?

 

অনিকেত দহন ২৫

অবশেষে সঞ্চালন, ধূম্রবিহীন সংসার
একরোখা, গতিবহীন চর্চার
যে তুমি, বিশেষে আমার দম্ভ
সেখানে প্রতিজ্ঞা নেই অবধারিত

 

অনিকেত দহন ২৬

কিষাণীর বিড়ি খাওয়া তাম্র অধর
ছোট ছেলেটা বায়না ধরে বোয়ালের
একবার জেলে স্বামীটা চিংড়ি ধরে আনলো
লাল রঙে আবার ধূমায়িত ফসল
রান্না করার সময়–
“পেয়াজের বদলে কয়েকটা ইয়াবার বড়ি লইয়া আইতা
ধানে নেশা নাইক্কা, চক্ষে চাউলের বদলে বড়ি দেখতে মুন চায়”

 

অনিকেত দহন ২৭

রাখোনি অর্ঘ্য তুমি সঠিক স্বার্থে
দেবতাদের বাস শুধু সিলিঙের উঠানে
ভালোবাসা ফুল পরায় সোডিয়াম গারদে
তন্দ্রায় আসে ভোর, ভাঙিলে বাতাসের মৌমাছি স্রোত

 

পথসিদ্ধি ২

একবার পথে হাঁটতে হাঁটতে পথেরও পা দেখলাম। উল্টানো গর্ভশিশু! ধীরে হামাগুড়ি দিলাম হাই ফাইভ দিতে।

হাঁত খুঁজতে খুঁজতে চোরাবালি
জরায়ুর গোপন দালানে উল্টো শিশুর জন্ম
মানুষ হয়ে গেলো মানুষটি।

 

বলয়গ্রাস ১৯

প্রিয়তমা অন্ধকার
তুমি আধ্যাত্মবাদ শেখাতে আসলে ভাইয়ের মাথায় সিলিং ঘোরে। সমস্যাটা বাবার আমলে মিটে যেতে পারত কিন্তু মা শিখিয়েছে যুদ্ধ আর ছয়টা তপস্যা। ২১ গন্ধের মসলা দিলে গালি খেতে হয় আর গরু তে প্রিয় সাম্রাজ্যবাদ ধরা পড়ে। বোবার সামনে নাক পাতলে মায়েদের অফিস লাঞ্চ ফ্রিজে পঁচে…একতরফা মিটিংয়ে একটা বিড়াল হয়ে দুধের দেবী খুঁজি, রক্তাবৃত আত্মারা ঘূর্ণনে লাফিয়ে ওঠে কালকূট গুঞ্জনে….

প্রিয়তমা অন্ধকার
নীলের সাথে জড়িয়ে যায় শ্যামাঙ্গ ক্রেতা বিক্রেতা, হাসিমুখ পাখা সঞ্চয়ে দুই শালিক বন্দি হয় না। তেষ্টা পেলে গাছেদের ফিল্টার আছে, সবুজ পানে গলাটাও যদি নীল মত রূপকথা, ফিরে যাব ভোরের পদ্মা-কবচ আমলে…

 

বলয়গ্রাস ১৮

প্রিয়তমা অন্ধকার
আমাদের আরাধ্য সৌরজগত ঘুরে এক পাক
দুই পায়ের গায়েবি স্যান্ডেল
মিশে যায় আমাদেরই পায়ে
রোহিঙ্গা টেবিলে কফি আসলে বুদ্ধদেব দংশায়
ফেরেশতা শয়তান একসাথে হাসে মাড়ির ব্যথায়
তাসনিম বুঝে না কি যে এক কঠিন দাঁত ব্যামো
ইসলাম (দোযখ) বুঝে না কোন পোকায় এনামেল সব চেটেচুটে সাবাড়
প্রিয়তমা অন্ধকার
বাবা তাহাজ্জুদ নামাজে, আরাধ্যর নাক ডাকা নিঃশ্বাস সাথে কথা, মুকুট চক্রে রোহিনী প্রবাহ

 

বলয়গ্রাস ২০

প্রিয়তমা অন্ধকার
বোতলটা তাক করে আছি পিস্তল, মুখা ও ঠোঁট দুরত্বে মেঘ
পা তলে পাহাড়, কুতকুত শিরোনামে অস্থির বিশ্ব
শিক্ষকের দরিদ্র কম্বল, শীত মানে শিক্ষার্থীর খাতায়
বঙ্গবিদ্যার চিনিতে বানানো স্যালাইন, সুঁইয়ে ঢোকে ধীর অশ্ব
লক্ষ লক্ষ তর্জনী ডোবানো ভেন্টিলেশন
টাকায় ও পারফিউমে ভ্রুণ রজনী তীব্র তীব্র
অসহিষ্ণুর ওপারে গভীর পথের শিশু
দুই শিং উঁচু করে পরিচয় দিচ্ছে যীশু
প্রিয়তমা অন্ধকার
চুলের হালকা চাষে আবার সেই প্রিয় ঘোষণা
কাস্তে নিয়ে বাহুহীনেরা, গ্রাসের দাও উপমা।

 

শেষ চুমু

দিনশেষে
জীবনের দমবন্ধ
শেষ চুমুর প্রপাতে

হাওয়াই মিঠা সারারাত
মুখশ্রীদের ব্যর্থ–
কিছু অতন্দ্রা
হলো কি মেঝের দাগে?
দিতে চাই রণবিদ্যা
রাতের আচমকা ভয়
হলো কি শাওয়ারের বিভায়?
ডিমসিদ্ধের জীবন
ধুয়ে যায় খোসা
শেষ চুমুর প্রপাতে

কল্পনা করে রাখা নখের আঘাত।

 

দ্যা অ্যাগনস্টিক-৭ (মদ এবং বুকের পাণ্ডুলিপি)

পৃথিবী একটি ঘূর্ণায়মান কফিন
মৃত প্রজন্মের রাস্তায় শুয়ে থাকা
চোখ পাপড়িতে শূন্যতা স্পন্দন
অপেক্ষা–
কখন অবয়ব রেখে দিবে, কালো আকাশ কাফন…
ধর্ষিত হবার আগে জেনেছিলো
পুরুষের সামুদ্রিক ইবাদত ঢেউ খেলে যায় নারীর বুকের ওড়নায়…!
আবার এই বুকেই কয়েকটা ধর্মান্ধ বুলেট নেওয়ার আগে–
মানুষ নয়, শুধু কোরআন খতম দেওয়া হয়
বুকে দেবতাদের নামে বাঁধাই করা ধ্রুবক কবর
শয়তানের নামে মোনাজাত না ধরলে হাত কেটে নেয়ার ঢং
উপাসনালয় ভেঙে গড়ে ওঠে পানশালা,
দেবতাদের চোখ আগুনলাল–
মানুষ অশ্রু মদের চেয়েও কড়া আতর…

 

দ্যা অ্যাগনস্টিক ৮- (উঠান বাকা)

কাউকে আনতে চাইনি
ঐশ্বর্যের বহুমাত্রিক বায়ু
বয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বিদ্যা রতিভ্রম
অধর যদি মেটায় প্রিয়তমা বৈভব ইশারা দিনমান ব্যর্থ প্রথম বিদ্যা
চাঁদটা বেঁকে, উঠোন বাঁকা পাপড় ভাজা
কলসের শত্রু আছে, হারিকেন জলে
বিপরীত কোণে লবণপানি খেয়ে আসো
খোসাভাঙা জল, নকশী কাঁখে
ঝড়ের লক্ষ্মী শুধু মাটির ছলা কলা, খোসাসুদ্ধ মন্ত্রের কসম
গুপ্তবিদ্যার সাত মোম রাত ৩টার ত্রিনয়নে
মিত্রপক্ষ বৃশ্চিক, কয়েনবিহীন জুয়ায়
ম্যানহ্যাটনে যাচ্ছি, কম্পাসে বৃষ্টির খবর

 

দ্যা অ্যাগনস্টিক ৯- (শৃঙ্গার)

হিস হিস শব্দে কে বাঁচাতে আসে

চায়ের কাপ
উপুড় করে রাখা
শয়তান টুপ করে পড়বে

আর বিশ্বাসটাও
বাতাসের ঢোলে স্থির

শয়তান টুপ করে গিললো

গরম চায়ে ফুঁ
শৃঙ্গারের বেইমানি

বলতে চাচ্ছি ন্যায়ের দিনে
যথেষ্ট পাপ হয়নি
পোড়েনি কাদামাটির রুপালী কলস

যথেষ্ট পাপ হয়নি
বামকাধে চেয়ে আছে হয়রানি

রক্তে পুঁজে গহন বাজুক
কতোটা দুঃসাহসিক দারোয়ান
গান গাচ্ছে লোভে
সুরের দুধ নীলকণ্ঠ জন্মে

কতটা পাপ, যতটা যথেষ্ট নয়

কতটা ঈশ্বর দেখাও
যতটা আমি ঘুষ দিতে পারিনি
সবই শৃঙ্গারের বেইমানি…

হিস হিস করে বাঁচাতে আসে
হিস হিস শব্দে বুলাতে আসে

মায়িশা তাসনিম ইসলাম। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম ও বাস ঢাকা শহরে। অনেকের মতো ছোটবেলা থেকে লেখালিখি শুরু করেননি, তবে দেরিতে হলেও তিনি বিশ্বাস করা শুরু করেছেন কবিতাই প্রথম উপাসনা এবং শব্দের পাঁপড়িতে ফোটা বোধের ফুল। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন কলমের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ