প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
যেখানেই যাই, চেনা বা অচেনা,
পৌঁছে যাবার পর মনে হয়-
যদি ফিরে আসতে না হতো কখনও!
জঙ্গলে গিয়েছি যখন, মনে হতো আমি কেন আরণ্যক হয়ে থাকবোনা বাকিটা
জীবন!
আকাশেও চড়েছি যখন, পাখিদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বসবাস আকাঙ্খা করেছি।
যখন সাঁতারে যাই জলের ভিতর, মৎসকন্যাদের প্রতিবেশী হয়ে থাকতে চেয়েছি!
ভ্রমণের শখ মেটে, রাত কাটে, নতুন জলের ছোঁয়া, স্থানীয় এটলাস-জলবায়ু, মেঘ, লবণাক্ত উষ্ণতার হেরফের-
কিন্তু ফেরার টিকিটটাকে কিছুতেই হারিয়ে ফেলতে শিখিনি-
আজ কাল পরশু
রোজ যেতে হয় নতুন জায়গায়, অথচ ওরা কেউ পুরনো হয় না
একমাত্র মৃত্যু বোধহয় সবচেয়ে পুরাতন স্থান-
ওখানে পৌঁছে গেলে ফেরার টিকিট হারিয়ে যায় সকলের…..
এত আলো তবু থেকে যায় ব্যবহৃত না হয়েই।
নক্ষত্রেরা মরে যায়, জানি।
পুড়ে যায় ওদের হৃদয়, থেমে যায় ছায়াঢেউ, দেবদারু গাছটার সবুজ হারিয়ে যায় মেঘের ভিতর-
আমরা সবাই মরে যাই, তবু এই সন্ধ্যাগুলো, কফিকাপে বৃষ্টি চুমুক আর অপেক্ষার হলুদ চিরকুট-থেকে যায়, নক্ষত্রেরা ফাঁকা রেখে গেলে।
নীলগাই, ধানসিড়ি নদী, পাম ও শিমূল, কন্ঠনীল পাখিদের ঠোঁটে ঝরে যায়-
তারাদের জীর্ণ বহমান!
প্রিয়তমা মেয়েটির ভেঙেপড়া মুখ, চোখ-
আকুল চাহনি সব অন্তরালে গড়ে নেয় স্পর্শ, অভিমান!
আমরা তো কেউ কারও নই, রক্তে বা ঘামে, প্রেমের হরিণী স্নেহ চন্দনকাঠে-
শ্মশানের ধোঁয়া ওড়ে নাভিজ পাতালে!
নক্ষত্রেরা মরে যেতে যেতে তবুও যা কিছু তার দিয়ে গেছে আমাদের দেখে, আমাদের অনর্থক এত প্রেম, অনর্থক রক্ত যুদ্ধ সেরে অবশেষে ভালোবাসা থাকে।
তাই সব মৃতদেহ শেষ বাক্যে শান্তি এঁকে রাখে!
আমাদের আকাশে এইসব মৃত্যু যত নীল, ততই রঙিন আমাদের হৃদয়ের শাদা-
মাটিকে জলের বুকে অবশিষ্ট আশ্রয় খুঁজে দিলে, সহজেই আলোকিত হয় জীবনের প্রায় সব ধাঁধা।
জীবনানন্দ এখন ভূত। জীবনানন্দ এখন ভূতেদের বাস্তুভিটা খু়ঁড়ে পেতেছেন নিওপরবাস।
মধুকূপী ঘাসের ভিতর গাঙচিলের ঠোঁটের ভিজে উপত্যকায় ট্রামলাইনের বুকে পিঠে শেষ যে আর্তনাদ রাখা ছিল, জীবনানন্দ সে সবকিছু হয়তো ভুলেছেন।
লাশকাটা ঘরের ভিতরে জেগে উঠেছিল
কঠিন সেই চোখদুটো। স্থির অচঞ্চল।
প্যারাফিন লন্ঠনে জ্বলছে মহীনের ঘোড়ার বিবর, পিপুলের শাখা আর হরিতকী গাছের শিকড়ে কবি তার সকল নারীকে নিয়ে, ঈশ্বরীর অনুজ্জ্বল ঠোঁটে
নরকের নবজাত মেঘে-
জীবনানন্দ কবিতা পড়ছেন। ভূতেদের পরিপাটি আয়োজন, শেওড়া গাছের মগডালে- প্রাচীন বৃদ্ধা কোনও মেয়ে
আঁচলে পেতেছে সভাঘর।
মদীর আলোর তাপ চুম্বনে বৃষ্টির ছাট আনে, ভিজে বুকে জেগে ওঠে ধূসর পান্ডুলিপি, সাতটি তারায় জড়িয়েছে
ঝরাপালকের গা বেয়ে নেমে আসা সবুজ তিমির, মহাপৃথিবীর।
জীবনানন্দের ভৌতিক খসখসে কন্ঠস্বরে ভেসে উঠছে সিন্ধুসারস, বুনো হাঁস, শঙ্খমালা – নগ্ন নির্জন রাতে মানুষের মৃত্যু হলে এভাবে কবিতা পড়ে কবির
অতীত।
লোকেন বোসের জার্নাল সামনে রেখে
হেঁটে এসছেন সুবিনয় মুস্তাফি অনুপম ত্রিবেদী আর সুরঞ্জনা- ওদের যা কিছু বাকি ছিল মুছে গেছে জীবনের সেই লেনদেন।
জীবনানন্দের দিকে অপলক চেয়ে থাকছেন, যেন অমোঘ প্রশ্ন ছুড়ে রাখা আছে-
কবি, আজ রাতে কবিতা পড়া শেষ হলে তারপর কোথায় যাবেন?
মাছির গানের মত অলস শব্দগুলো রূপশালি ধানের চোখে কার্তিকের কুয়াশার পাশে হেমন্তের হিমঘর রেখে
শুনতে চাইছে যেন অপার্থিব অবসরের গান।
ঘাইহরিণীর স্তনে রূপালি আলোর ঝিকমিক, শিশিরের ঘ্রাণে গর্ভবতী ধানের কলস-
বিয়োতে এসেছে সব ধাত্রী নক্ষত্রেরা-
জীবনানন্দের কন্ঠ ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে ভূতেদের সাজঘর থেকে সদ্যজাত বোধের ভিতরে-
আবহমানের নীলজলে, অনাবিল কোলাহলে ট্রামচাকা, মৃগনাভী – মাতাল চাঁদের দেহছালে জড়িয়েছে মৃতপ্রেমিকের ঠোঁটে লাগা মহুয়া পলাশ আর জ্যোৎস্না- আঁচিল।
কবি মারা গেলে তবুও থামেনা জেনো।কবি সম্মেলন-
জীবনানন্দের চোখে মহাকাল ঝুলে আছে, অবচেতনের শোকে সুখে অধিবাসী পরাবাস্তবতা-
ভূতেরা গড়েছে পিরামিড, মিশরের আদল মেনেই-ছায়ার ভিতরে গলে
নির্বাক সাঁঝবাতি-
সিংহল মালাবার মালয় সাগর আর সুন্দরী কলকাতা, কলুটোলা লেন-
জীবনানন্দের পাঠ প্রায় শেষ হয়ে এলো, সভাঘরে ছেয়ে গেছে মেঘলা নাটোর-
কবিকন্ঠে শেষতম কবিতা নিজেই আসছেন-
এতদিন কোথায় ছিলেন বলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গেল- বনলতা সেন।
নৈঃশব্দ্যের অন্য পিঠে বসে আছে প্রাচীন নিষাদ। জলের উপর দিয়ে একা একা হেঁটে যাচ্ছে চাঁদ। হিরণ্য আলোর চোখে গলে যাচ্ছে নাগরিক বাঁধ।
জলের উপর দিয়ে নির্বিবাদে হেঁটে যাচ্ছে চাঁদ!
জলের ভিতরে ফাঁদ, মৎস্যজীবী নৌকাঘাটে ভিড়িয়েছে ত্রিধারা বিভ্রাট।
মুখোমুখি বসে আছে তারাদের প্রতিবিম্ব জলে, দিশাহারা নদীর ভিতর অজান্তেই ভ্রমর কৌশলে।
নৈঃশব্দ্য ভিতরে ভাঙে, গাঢ় কালো মধ্যযামে জ্যামিতিক রেখা সন্দিহান।
অসম্পূর্ণ ইশারায় রাখা আছে আমাদের ভয়।
অসমাপ্ত প্রণালীতে কুড়ে কুড়ে মাথা খোঁড়ে অনাদি অক্ষয়।
পাখির পালক নয় কখনোই পাখির হৃদয়, প্রকৃত গানের কন্ঠ বারোয়ারি স্নানঘরে ওড়ে, ভ্রষ্ট সুরে ঘাস পোড়ে, পাখি মরে রাতের নিবিড়ে।
জীবন সরিয়ে রাখে আবেগ ও মিশ্র অনুতাপ যত দৃঢ়তায়, স্বতন্ত্র কখনো নয় দ্বিধাগ্রস্থ পথিকের স্নান।
প্রতিটি নক্ষত্রেরই জানি ঘুমোবার বিছানা একার, শোকার্ত শরীর মেলে ধুয়ে যায় আলোর উচ্চারণ।
নাভির ভিতর থেকে আজন্ম ভাসানে বয়ে গেলে আত্মহত্যা করে পলিমাটি।
প্রতিটি একার জন্য গড়ে ওঠা স্নান ঘরে রাখা থাক আত্মগত নিঃসঙ্গ দর্পণ।
পাখির প্রকৃত অর্থ সেখানে সঞ্চিত হয় অস্থির অভিমানে, আকাশের বিষণ্ণ সব ক্ষয় জলের গভীরে ঝোঁকে আহত নিক্কন।
কখন যে কি করেছি কখন যে তোর কাছে রেখে গেছি অসম্ভবের শেষ
জন্মক্ষণ!
মেঘাচ্ছন্ন স্নানঘর, নিহত পাতালঘর- প্রেমিকার নিহত চিবুক-
ভিতর বৃষ্টি এলে সেরে ওঠে প্রকৃত অসুখ।
পাখির তো রোদ-ঢেউ ডানায় মাখা নয় শুধুশুধু, পাখির তো কান্না চিনে পালকিতে খুঁড়ে চলা মরুভূমি, নিঃস্ব শুষ্ক ধুধু-
পাখি এক সুখী গৃহবধূ, যদিও সে সুখ হল নিঃশব্দে শিশির মাখা চিরকুটে ঝরে পড়া মায়ার ওষুধ।
পাখির চোখের নীড়ে নিখিলের মুমূর্ষু বুদবুদ।
পাখির ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে বয়ে আসে জীর্ণ কলতান-
নৈঃশব্দ্যের সব পিঠে ঝরে যায় নষ্ট বহমান।
মর্কট খ্যাপাটে বৃদ্ধ মাতাল কবিটির ডাইরি পড়ে আচমকাই সামনে বসে যায় তিনটি পাহাড়। সেখানে যে ভুতুড়ে সরাইখানা, মাথায় ধূসর রঙের শিশিরমাখা তালপাতার ছাউনি পাহাড় তিনটির গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে লাল মদ, শুক্ররস, হিমঘরে ঘাপটি মেরে থাকা অর্ধমৃত মৎসকন্যা, প্রায় একশো আট। আর আছে কিছু নিষিদ্ধ গাছের ফল।
তখন খুব শীত, তাই হয়তো আমাদের শরীরে খুব ভারী জহর কোট। আস্তাবল থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসা বৃদ্ধ মনসুর মিঞার একমাত্র প্রিয় ঘোড়াটির ছাইছাই রঙা শরীরে চাপানো পশমের কম্বল। খুব যখন গরম, আমাদের শরীরে কিছু না রাখাই যায়-তখন বিবসনা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেবদাসীদের এমন করে আমি সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি।
যখন বোদলেয়ার, গোদার্ড, অ্যানা ফ্রাঙ্ক আর আলবেয়ার কাম্যুর সামনে বসেছে আমার যৌবনের আঠেরশো ভুল চিঠির নষ্ট অক্ষরেরা, আশ্চর্য লেগেছে ঠিক তখনই। এইচ জি ওয়েলসের টাইম মেশিনটা কি তাহলে আসলে একটি কবিতাই। একটি কবিতাই তো এইভাবে পারে আমার প্রিয় উপাস্য প্রেমিকাদের আর আমার মাঝখানে একটি চীনের প্রাচীরের মত দুর্ভেদ্য সংশয়ের আকাশচুম্বি অদৃশ্য দেওয়াল গড়ে দিতে।
আরো আরো বেশি করে নেশাড়ু ঈশ্বরী আর কবিতার মেয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে গেছে। ওরা যে অদ্ভুত চুম্বনস্পৃষ্ট প্রাসাদে বাস করে, তার পিছনের ঐতিহাসিক দরজা দিয়ে বেরোলেই খেয়াল করা যায়- একটি বিরাট মাঠ একান্ত নিজের মতো শুকনো ঘাসে আগুনপাখির অসহায় দৃষ্টিকোণে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
ওখানে কখনো যুদ্ধের মৃতদেহগুলো ছুড়ে ফেলে রাখা হতো। ওখানে সমস্ত প্রাচীন অন্তর্বাস, বহির্বাস দলামোচড়া করে ফেলে রাখা হতো।
এমনটা হয় বৃদ্ধদের ভাবলেশহীন চোয়ালের ভাঙা গ্রন্থির শিকড় উপড়ে এলে।
বৃদ্ধদের ডাইরি পড়লে এমনটা হয়।
লাল লাল ঘাস শীতার্ত রাতের ওম থেকে ঝুলন্ত পলাশ কৃষ্ণচূড়া পেড়ে নিয়ে ফিরে আসার সময় চোখ পড়ে, সরাইখানার পাশে আবর্জনা জমিয়ে রাখা ভূষন্ডির মাঠে।
ঈশ্বর আশ্চর্য এক চৌকি পেতেছেন। প্রেমিকা ও ঈশ্বরী আশ্চর্য সেই চৌকিতে পেতেছেন বুকোওস্কির পর্যুদস্ত প্রেমিকাদের বমি, থুতু লালায় আলপনা করা অভৌগলিক মানচিত্র।
হয়তো খেয়াল করলেন আমার প্রিয় পাঠকেরা, এখানে শৈশবে ফেরার খুব ইচ্ছে ছিল। এমনকি কৈশোরে ও যৌবনে আমার যে প্রেমিকারা প্রতিদিন আমার উন্মুক্ত উদাসীন প্রতারক চেহারাটা দেখে তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিত আমার স্বেচ্ছা নির্বাসনের ঠিকানা সেই অন্ধকার নৈঃশব্দ্যের দ্বীপপুঞ্জ।
এবং তার পাশে যে তিনটি পাহাড়ের ধাপে ধাপে চা বাগান, কফিবীজ শুকিয়ে নেওয়ার নিভৃত উপত্যকা-
খুব ভোরে বা বয়স্ক সন্ধ্যায় আমার প্রেমিকাদের স্বরচিত বৈঠকখানায় কালো কফি, কালো চা আর আমার কবিতা-
প্রোফাইলে ফুটে ওঠা রডোডেনড্রণ এবং জিনিয়া ফুল, জানালায় বসে থাকা ইস্টিকুটুম আর বিন্নি ধানের খই-
নিশ্চয়ই দেখলেন, একটি নদীরও নাম নেই।
অথচ একটা নদীর গল্পই ছিল পুরো কবিতাটা।
আকাশ লিখতে হলে যৎসামান্য হলেও জায়গা কিন্তু চাই কিন্তু যখন-তখন যেখানে-সেখানে প্রতারিত প্রেমিকার চোখে মুছে যাওয়া জমাট বৃষ্টিপাত, বৃদ্ধাদের শুকনো ঠোঁটে আর অনুষ্ণ, মিনমিনে যুদ্ধক্লান্ত কোন বৃদ্ধের শিরোনামে নদী ফুটে ওঠে।
নদী স্বয়ম্ভূত হয়, ন্যুনতম আড়ম্বরকেও উপেক্ষিত রেখে।
না থাক জ্যোৎস্না না ভেঙে যাক চাঁদ-
নদী লিখতে হলে কখনোই নদী শব্দটার প্রয়োজন হয় না।
উপেক্ষার সব শিলালিপি পাগল কবির মৃতদেহ অতিক্রম করে করে গেলে আবহমানের কোলে উঁকি দেওয়া বিমুগ্ধতার বিষণ্ণ ক্যানেস্তারা নিঃসঙ্গ গাঙচিলের ছটফটে ইশারায় গুঁড়িয়ে চূর্ণ হয়ে গেলে আচমকাই নদী লেখা হয়ে যায়।
লেখা হয়ে যায় নদী, একটিও নদীর কথা, একটিও নদীর নাম, নদীর ভূগোল বিন্দুমাত্র না লিখেও।
নদী লেখা হয় বৃষ্টির চোখে মরণের বাঁশি খুঁজে খুঁজে।
শাদা মেরুদণ্ডের ভিতরে গৃহপালিত হায়নাদের সুসজ্জিত প্রাসাদ! নির্লজ্জ পাহাড়ের ভিতরে জলীয় সম্ভাবনায় প্রসূতি মেঘেরা যে অসুখ লালন করেছে- পূর্বাভাসে অর্কিডের রক্তহীন সাঁকো তার কোনও বিবৃতি প্রকাশ করেনি ভয়ে।
আমাদের পিতামহ বাস্তিল দূর্গের কথা বলতে গিয়ে বেশি করে বলেছে আইফেল টাওয়ারের কথা।
আমাদের জয়ী ঘোষনা করে, শরীরের বাইরে হৃৎপিন্ড রেখে দেওয়ার কায়দা শিখিয়েছে।
“দি এক্সোর্সিস্ট” এর মতো ভয়ঙ্কর ভৌতিক ছায়াছবি দেখতে বসে ভেবেছিলাম আমাদের টিভি স্ক্রিনে আশ্চর্য ম্যানগ্রোভ গাছ জন্মাবে।
কত ভুল ভাবতে পারে মানুষ।
হৃদয়ে হলদেটে বালিপাথর জমে, পিত্ত লবনের অধঃক্ষেপ-
এত নানা ধরনের রঙ, কলকাতা, প্যারিস, বার্লিনের মেয়েদের রাতপোশাকে তেলরঙের যুদ্ধ এঁকে দেয়-
আমরা জানতেই পারিনা, সমস্ত জয়ের পরে মানুষের মেরুদন্ড লালমাটি বইতে পারেনা।
নিউরোসিল, স্নায়ুযুদ্ধের মৌন টানেল ঈশ্বরের চোখের মতো
ধূসর, মৃতপাখির ঠোঁটের মতো
অবিশ্বাস্য নীল…
জয়ী যোদ্ধারা পরাজিতের মতো শোকাহত হয়ে বাড়ি ফিরতে না পারলে সেই যুদ্ধ কখনোই মানুষের নয়।
সেখানে শুধুই উল্লাস, শহিদের অমরত্ব নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে চকচকে উজ্জ্বল কসাইখানা কফিধোঁয়া আর রাষ্ট্রীয় ফাজলামোর আপডেটেড বাহানা।
(০)
শেষপর্যন্ত::-
আমি এখন লিখতে পারছিনা। মানে লিখতে ইচ্ছে করছে না। মানে ঈশ্বরী ঘুমিয়ে আছে। আর যখন যখন ঠিক এরকম হয়, আগেও হয়েছে ঠিক যখন যখন আমি টুক করে লোকচক্ষু আচমকা এড়িয়ে ভূতের বাজারে ঢুকে পড়ি। এ এক মজার বাজার। বেশী ভীড়ভাট্টা নেই। থরে থরে বিপনী সাজানো। মজার ব্যাপার, কিছু কিনতে গেলে এখানে কোনও টাকা পয়সা বা বিনিময়মূল্য লাগেনা- ডলার পাউন্ড দিনার বা রুপি।
ইচ্ছে যথেষ্ট। ইচ্ছে এখানে গাছ, ইচ্ছে এখানে মাছ, ইচ্ছে এখানে রূপসী তারার দল এবং জলপরি।
(১)
মধ্যবর্তী
কলমটাকে ভোকাট্টা ঘুড়ির ল্যাজে বেঁধে, নৌকার মধ্যে রাখা আমার প্রথম বান্ধবীর চুলের গার্ডার, কলেজ জীবনে বুকের বাঁদিকে হৃদয়ঘটিত হ্যাঁচোড়প্যাচোড় –
গাঙ বলেছে বাঁশিচোর, আঙুলে নীলকন্ঠ পাখির সংবেদ, প্রতিবেশী তন্বী বৌদিদির
দুষ্টু ইশারা-
আমি তো দেখেছি নদী লিখে, তোমাকে হাজারো চিঠি লিখে, তরুণী অধ্যাপিকার নতুন নতুন হেয়ারব্যান্ড আর বার্গেন্ডি রঙের এলেমেলো ঢেউ-
দেবতা টেবতা ভুলে, মাসকাবারী সংসার আর রবিবার রাতে আত্মহত্যার ইচ্ছে দেখেছি- দন্ডায়মান আগামী সপ্তাহের
ভ্রুকুটি ও রক্তাক্ত হরিণীর চটুল ছলাকলা।
(২)
পাগলিনীর অন্তর্বাসে::-
আমাকে জানিয়েছে মৃদবর্তী আলোর।অঙ্কুর, অন্য কিছু চাইছে পাঠক। গ্রে ম্যাটার শুকিয়ে ফেলা বিবাহের গুপ্তব্রতে
দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ফাগুন সমাহার আর তিরিক্ষি ঈশ্বরী। দাঁতে নিমকাঠি, কোষ্ঠকাঠিন্যের কাতর সংলাপ-
(৩)
ভূতপূর্ব ::-
ভূতেরা নির্লিপ্ত তবু, লিখি বা না লিখি- পড়ন্ত উদাস, গেরুয়া নির্যাস, দিগন্তে লীন ষোড়শী যৌবনা কোনও বোষ্টমীর
নোলক তিলক আর একতারা অনামিকা
এমিলির উদ্ভিন্ন ঠোঁটের উষ্ণতম ঘাসে।
ইচ্ছে লিখব, জঠর লিখব, পাঁজর লিখব
ঋতু কামুক চাঁদ-
কেন যে কিপ্যাডে ফাঁদ, স্নেহ মায়ার যৌতুক–
(৪)
ইচ্ছে কিপ্যাড::-
লিখতে লিখতে ভূতপূর্ব সন্ন্যাসী রাজা আমি, প্রতিবেশী বৌদিমণির হাতে গোপন চিরকুট!
ভূতের বাজারে আকাশ কিনতেও ইচ্ছে লাগে শুধুমাত্র ইচ্ছে কিনতে গেলে নিজেকে মারতে হয় নিজের কলমে, নিজেকে কবর দিতে নিজেকেই ঈশ্বরীর চোখ খুবলে হবিষ্যির পোড়ামাটির হাঁড়ি
ঝুলিয়ে দিতে হয় অনিশ্চিত অনন্তের শেষতম পর্যটকের জিভে।
(৫)
অতঃপর শুভ মহরত::-
পড়ে নাও মৃত দূরবীনে ফুটে চলা অন্নপূর্ণা মহাকাল, একমাত্র ইচ্ছের ইচ্ছামৃত্যু ঠেকিয়ে রাখবো বলো অলীক অশনিসংকেত গিলে নিচ্ছি আমার দোয়াতস্তনের অন্ত্যজ পরমে।
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..