অনির্বাণ সূ্র্যকান্তের দশটি কবিতা

অনির্বাণ সূর্যকান্ত
কবিতা
Bengali
অনির্বাণ সূ্র্যকান্তের দশটি কবিতা

একবিংশ শতাব্দীতে প্রেমের জন্য রাষ্ট্রকে ভ্যাট পরিশোধ করেছেন তো?

আজই ভ্যাট পরিশোধ করুন
ভ্যাটের রশিদ আপনার প্রেমের দলিল

বুকে হাত দেবেন?
ভ্যাট পরিশোধ করুন

শোবেন?
ভ্যাট পরিশোধ করুন

স্তন মর্দন করবেন?
ভ্যাট পরিশোধ করুন

শুধু মনে রাখুন আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন না
শুধু মনে রাখুন আপনি অধিকার চাইতে পারবেন না
বিপ্লব নিয়ে তর্ক তো নয়ই!

শহরের সব দেয়ালগুলো মেয়ে
শহরের সব পাখিগুলো ছেলে
শহরের সব স্লোগানগুলো ব্যথা
গভীর ভালোবেসে যে দেয়ালে পাখি বসে, স্লোগান ছাপা হয় তাদের ভয় পায় মহামান্য নেকড়ে!

নেকড়ে স্ক্রল করে
আনন্দ বোধ করে
আরো নিচে নামে
আরো
আরো
আরো
তারপর একদিন সে লাগাতে চায় যাতে হরিণ না বোঝেন, যাতে আপনি পাহাড় না বোঝেন,যাতে আপনি “কমরেড” শব্দটির সাথে পরিচিত না হন!

একবিংশ শতাব্দীতে আপনার আত্মহত্যা আপনার কবিতা হয়ে উঠে
একবিংশ শতাব্দীতে প্রত্যেকেই কবিজীবন যাপন করে
একবিংশ শতাব্দীতে সহজেই গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে দেয়াল পাখি ও স্লোগান!

 

দুই.

প্রতিদিন একবার করে বলবো

খুন হও
পতাকা ধরে দাড়াও
ভালোবাসো।

ছাপার অক্ষরে দাড়িয়ে থাকুক জবাফুল, তোমার কুণিনখে সমুদ্র পীড়া,

সমুদ্রেরও আছে গোপন পত্নী
ড্রেসিং টেবিলে জমানো গোলাপজল।

তোমার আঙুলের নিষ্পাপ কমলার জল খেয়ে ঘুমিয়ে যায় ঈশ্বর, উচ্চারণ করে ওঁ!

তুমি ক্যালেণ্ডারে থাকা একবিংশ শতাব্দীর স্বরবর্ণ

তোমাকে শিখছি।

 

তিন.

রাস্তায় মেনে চলিনি উপাসনা

তবুও ভয় উবে যায় যখন মনে হয় ইচ্ছে মৃত্যুর বর নিয়ে ভীষ্ম আসে কুমিল্লা ফেনী পার হয়ে!

আজকাল কত মেলামেশা তবুও অর্ধরাতের পর দরজা খোলা রেখে ঘুমোয় না কোনো প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক!

মানুষ ভায়োলেন্স ভালোবাসে না
হৃদয় ভেঙে দেয়ার চাইতে বড়সড় ভায়োলেন্স আর হয়?

সূর্য উত্তরে উঠে না
তুমি বুঝি রাত জেগে কাঁদো?
সিগারেট খাও?
অন্তর্বাসে লেগে থাকে শ্বাস?
শেষবার কবে বলেছিলে ‘শালা তোকে যে ভালোবাসি, বুঝিস না?’
কোমর ঠোঁট হয়ে উঠলে আমার আর উপাসনা মানতে ইচ্ছে করে না হাবীবা।

সত্যি বলছি, তুমি কাঁদলে কবি হতে ইচ্ছে করে না
ইচ্ছে করে তোমার শারিরীক ও মানসিক বিদ্যার শিক্ষক হই।

চার.

তোমার কোমরে স্বদেশ, বন্দর ছেড়ে গেছে পাখি আর কমরেডদের সভা,

ঘোষনা দিয়ে তোমার বুকে পুতে দেয়া হলো ছত্রিশ রকমের প্রজাপতি। প্রজাপতিরা পাশাপাশি বসে আলোচনা করছে হৃদয়ে কেন হিংস্র কুমিড়ের বাস?

মানুষ কেন গাছ লাগায় না
কেন বর্ষা আসে দেরীতে?
কেন জোয়ার ভাটা চলে গেলে মরুভূমি জাগে?

সমুদ্রকে অবহেলা করতে নেই
তোমার জানালার কাকও বোঝে স্প্যানিশ ভাষা

তোমার আমার দাম্পত্যে তোমার ব্যথা বুঝে আমি একটি একটি গাছ লাগাই

আত্মহত্যার আগে চুমু খেতে দেবে না? আমি জানিনা তোমার বুকের সেল্ফ জুড়ে কোন কোন সমাধিক্ষেত্র

তুমি মা হলে
তোমার সন্তান বোবা হলো
আমি আত্মহত্যা করে আমার কথা রেখেছি

পৃথিবীর শেষ সত্য জানার আগে তোমার গর্ভেই তোমার প্রেমিক হয়ে জন্মাবে কোনো এক প্রজাপতি কমরেডস।

 

পাঁচ.

সকাল বেলা কবরস্থানের গা ঘেঁষে আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করি
অপেক্ষা জিনিসটাই এমন খালি লাফায়, খালি লাফায়

আমার রুপসী গর্ভবতী প্রেমিকা বাড়ি টাঙ্গাইল
তার গায়ে স্বপ্ন এঁকে দেয়ার পদ্ধতি জানার পর অপেক্ষা করি স্কুল ফেরত হারমোনিয়ামের।

আমার মেয়ে অমরাবতী
রতিচক্র,বিবাহপ্রথা, রাজনীতিবিদের হাই জানেনা
তাকে একদিন বললাম মানুষের চিৎকার একা একা ঘুরে খবর দেয় বৈষ্ণবশ্রমনের। নিয়তি খেলে পদার্থ বিজ্ঞানের নির্জনতা।

গালভর্তি জোৎস্না খেয়ে খেয়ে প্রেমিকার বুকে ডায়রী গজাচ্ছে

সে ডায়রীতে সূর্য উঠবে,
আধখোলা পিঠে সূর্যউঠলে স্বাধীনতার সংবিধান লিপস্টিক দিয়ে লিখবো?

 

ছয়.

প্রতিটা ফুলে জোৎস্না বন্দী থাকে
ফুলের নাভিতে গায়ে হলুদের তারিখ লেখা থাকে

ফুলের ডাকঘর খুলে দিলে সূর্য উঠে
সূর্য চুমু খায় লাল পাড়ের অন্তর্বাসে

চিকচিক করে তোমাকে খোলার আনন্দ
আমি পূর্বজনম খুলি
ডায়রি খুলি
খুলি ফুলেদের অর্গাজম

তোমার ওম খুলতে গিয়ে দেখি ফুলেরা হাঁস আর মুগ্ধ পাহাড় হতে পছন্দ করে।

সাত.

এই যেমন ধরো যেদিন তোমার বুকে ব্যথা হয় খুব
সেদিন কৃষ্ণনগর লোকাল আসেনা

সেদিন নুন চিনি এসবের কথা মনে পড়ে না
সেদিন স্টেশন থাকে না
পরিচিত যে দু চারজন হাই হ্যালো করে তাদের সাথেও কথা বলিনা

কি যে কান্না পায় আমার! যেদিন তোমার বুকে ব্যথা হয়
আমার ভেতরে ১ টা, ২টা, ৩টা বাজে

এই যে সেদিন যখন কেউ অর্ধেক নারী,চুমু খাওয়া থইথই রোদের কথা যখন লোকে বলে, কি যে বিরক্ত লাগে!

জানো তো গুলি খেয়ে আমি পেন্সিল কুড়াতে পারি
আমি চিৎকার করে ঢোক গিলতে পারি
আমি দিস্তায় দিস্তায় ব্লেড দিয়ে ফালাফালা করে ফেলতে পারি শহরটা কিন্তু ভালোবাসতে পারিনা।

এই যেমন ধরো যেদিন তোমার বুকে ব্যথা হয় খুব
সেদিন কৃষ্ণনগর লোকাল আসেনা।

[ কবিতাখানি বাসব রায়’কে উৎসর্গ করা হলো]

 

আট.

হরিণটাকে জামিন দেয়া হয়নি,

এবারের বর্ষায় তোমার নাভিতে আফিমের গন্ধ নাচছে,অথচো তোমার স্বামীর মৃত্যুর পর তোমার ঘরে নেতা উপনেতায় ভরে গিয়েছিল, তারা কেউ কেউ বলেছিলো তোমার বাগান তাদের পছন্দ!

তুমি যখন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিলে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ তোমার বুক জুড়ে যে নার্সিংহোম ছিলো তা ভাঙার আদেশ দিয়েছে শহরের মেয়র।

আমার ইচ্ছে ছিলো তোমার চুড়িতে ২১ টা চুমু খাই
আমি বি এ পাস করিনি, তোমাকে ভালোবেসে তোমার ব্লাউজে লাগানো যাবেনা শেক্সপিয়ার বায়রন সেটা তো কোথাও উল্লেখ নেই।

স্লিভলেস রোদ মেখে আমি তোমার দিকে আসছি
হরিণটাকে জামিন দেয়া হয়নি
দরজা খোলো, বুকের
দরজা খোলো বাগানের।

 

নয়.

মানুষের রোল নাম্বার ভুলে গেলেই আত্মহত্যা করতে হয়।

 

দশ.

ক্ষুধা লাগলে মা অথবা প্রেমিকার ওড়না খেয়ে নাও।

অনির্বাণ সূর্যকান্ত। কবি। জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। লেখাপড়া করেছেন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে। মূলত: কবি, কবিতাই তাঁর প্রাণ। কবিতা দিয়েই তিনি পৃথিবীকে জানতে চান। বোহেমিয়ান জীবনে হেন কোন কর্ম নেই করেন নি! কৃষক হয়েছেন, মুদি দোকানের কর্মচারী হয়েছেন, হোটেলের কর্মচারী হয়েছেন,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..