দৌড়
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
আমার সময়টা হয়ত অচল হয়ে গেছে বা তুমি বুড়ো হয়ে গেছো। বারান্দায় গামছা মেলার অছিলায় আমার দিকে উদাস চোখে চাইতে আর আমি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতাম তোমার অপেক্ষায়। সপ্তাহে একটা দিন আমার কাছে বসন্ত হয়ে উঠত। শুকনো পাতাগুলো অস্থির ভাবে উড়োউড়ি করত আমার সামনে। এতগুলো পায়ের শব্দের মধ্যেও তোমারটা চিনতে কোনোদিন ভুল হয় নি। বাঁ পায়ে ভর দিয়ে চলা, তোমার ছোটোবেলার অভ্যাস। তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?
এই লেখাটির অডিও শুনুন এইখানে-
প্রথম যখন তোমাকে দেখি, তখন তোমার ছয় বছর বয়েস। আমি আরও ছোট। পিঠে ব্যাগ, গলায় ঝোলানো জলের বোতলের জন্য ঠিকঠাক জড়িয়ে ধরতে পারতে না আমায়। তোমার ঠান্ডা লাগতো না? আমার শরীর তো মৃতদেহের থেকেও শক্ত আর মরে যাওয়া মানুষের মনের মতো ঠান্ডা। লোহার চাবি না ঘোরালে, আমি সচল হতে পারি না। একমাত্র তোমার উষ্ণতা আমাকে আরাম দেয়। আজও। শুনতে পাচ্ছ নিশ্চয়ই।
খোলা কলের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েগুলো হুল্লোরে মেতেছে। আজ কেউ পান্তা ভাতের সাথে চপ খাবে, কারুর বর আবার কাজ থেকে ফেরার সময় মুরগির গলা আর মেটে নিয়ে আসবে কিছুটা, নতুন বিয়ে হওয়া মেয়েটার গালের লাল আভা আমার জাগিয়ে তোলে জানো! কানে কানে কিছু একটা বলছিল, তার বান্ধবীকে। আমি শুনতে পেয়েছি। কিন্তু তোমায় বলবো না, বাহ রে আমার বুকে কী সানাই বেজে উঠতে পারে না? টুপ করে একটা কৃষ্ণচূড়া ঝরে পড়লো পায়ের তলায়। তুমি দেখলে?
প্রথম প্রেমের চিঠি বা চাকরির দরখাস্ত, সব আমাকে দেখিয়ে নিতে আগে। তোমার সব লেখাই এস্রাজের সুর তুলতো আমার কানে। একটু তো অভিমান হতোই, সেটা অস্বীকার করবো না। তোমার আঁখি পল্লবের চঞ্চলতায় আমি বুঝতে পারতাম যে কী ধরণের চিঠি তুমি এনেছ, আজকে আমার কাছে। চোখ একবার নামিয়ে আবার যখন পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে, আমি বুঝতে পারতাম যে এই চিঠির সাথে তোমার হৃদয় কাঞ্চন জড়িত। কষ্ট পেয়েছিলাম কি না আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি। কিন্তু সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম জান! যেদিন চাকরি ছাড়ার দরখাস্তটা করেছিলে। বলেছিলে “ আমি আঁকবো লালি, শুধু আঁকবো। আমার পাশে থেক”। তুমি মানো তো যে আমি ছিলাম?
আমার গায়ে একবার তুলি বুলিয়ে দিয়েছিলে, ইসস…কী লজ্জা কী লজ্জা। তোমার তুলির টানে আমি ভিজে গেছিলাম শিল্পী।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। তুমিও যেমন, খেয়াল করো নি কিছুই। শিল্পী, তোমার উদ্দেশ্য কী ছিল বলতো? খুব রাগও হয়েছিল জান?? খুব দুষ্টুমি করেছিলে তুমি। তোমার ভাইবোনেরা কি সাধে তোমায় পাগল বলেছিল সেদিন? তোমার এক বন্ধু তো বলেই ফেলেছিল যে আমাকে নাকি পুরো নতুন বৌ-এর মতো লাগছে। আমি তো স্বীকৃতি চাই নি, আমি তো অন্যের সম্পত্তি ছিলাম শিল্পী। তুমি কি জানতে না?
একলা যাপনের কি বা দিন কি বা রাত। ঘরে ঘরে যখন আলো, আমি তখন দুয়ারে খিল দিয়েছি। পূর্ণিমার রাতে, তোমার বাড়িটাকে জলছবি মনে হতো। ভোরের প্রথম হলুদ কি আমার আগে তোমাকে ছুঁয়ে ফেলত? তোমার জানালা দিয়ে আমাকে পরিষ্কার ভাবে দেখা যেতো না। কিন্তু আমি দেখতে পেতাম তোমায়। স্নান সেরে বেরিয়ে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, দুহাতের আঙুল চালিয়ে দিতে তোমার ভেজা চুলের ভেতর। তারপরেই সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ করে নেমে, খবরের কাগজ কুড়িয়ে আবার দৌড়তে। এবার তুমি উঠছো শিল্পী। তোমার গালের ওল্ড স্পাইসের গন্ধে আমার নেশা ধরে যেতো। তুমি বুঝতে পারতে?
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত কত মানুষ। টুক করে কেউ গায়ে হাত দিয়ে দিত। এটা তো আমার কাজই ছিল, তাই কখনো খারাপ লাগে নি। কারণ সেই সময় তো আমি নির্জীব। দোলের দিন একটা মাতাল এসে, হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল আমার শরীরের ভেতর। দোতলা থেকে দেখে তুমি চিৎকার করে উঠেছিল। এক মুহূর্তের জন্য, চোখের সামনে অন্ধকার দেখেছিলাম। মনে হচ্ছিল, কালো রক্ত গড়িয়ে পড়লো হঠাৎ করেই। আমি কি সেদিন সাবালক হলাম। হ্যাঁ তো। আমার তখন ষোলো আর তোমার বাইশ। কিন্তু আমার শরীরে তো রক্ত নেই শিল্পী। তোমার চিৎকারই কি আমাকে সাবালক করেছিল? কিন্তু অনেকেই তো এইরকম করে চলেছে। আমি আজও বুঝতে পারি নি শিল্পী যে তোমার আপত্তিটা কোথায় ছিল? স্ব-ইচ্ছা আর অন্যের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য তো আমি করতে পারি নি আগে! তাহলে তুমিই কী আমাকে সেদিন শেখালে? আমি সত্যিই শিখতে পেরেছিলাম শিল্পী? পদার্থের শরীর থাকলেও, অপমানিত হওয়ার জন্য তো প্রানের দরকার পড়ে। শুনছ শিল্পী, আমি জন্ম থেকেই সাবালক ছিলাম, সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম শুধু। যার কেউ নেই তারও পায়ের তলার মাটি থাকে শিল্পী। তুমি জানতে না?
ফুলকুমারি ফুলকুমারি তোমার ঘরে কে?
আমার মনে কেউটে সাপে বসত বেঁধেছে।
ছোবলের সাজে বিষের মালা, খোলস জীয়ন কাঠি
শিল্পী আমার ভিত নড়েছে, ঝরে পড়ছে মাটি।
উফফ…কী কাণ্ডটাই না করেছিলে সেদিন। যখন, আমার ভিত নড়িয়ে দেওয়া মাটির ভেতর কার্বলিক অ্যাসিড ঢালছিলে, আমি তো হেসে খুন। মনে মনে কবিতাই বানিয়ে ফেলেছিলাম। কেউটেটাকে আর দেখতে পাই নি। তোমার আর আমার লোহার বাসর সে ভেদ করতে পারে নি। তাই দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে, চলে গেছিল। আর তুমি খুঁড়ে চলেছিলে। অস্তিত্বের সংকট কার হয়েছিল শিল্পী, আমার না তোমার?
নিয়ন আলোটা বড্ড চোখে লেগেছিল জানো, যেদিন সাদা ধুতি পড়ে আমার গায়ে হেলান দিয়েছিলে। ক্লান্ত লাগছিলো তোমায়। তোমার মায়ের মুখটা আমার মনে আছে। তোমার মা, চোখের ভাষা জানতেন। তাই বোধহয় বলেছিলেন যে শিল্পী তুমি জাত প্রেমিক। জড় বস্তুকে ভালবাসা সহজ নয়। তোমার একটা তুলি, কাকে নিয়ে চলে গেছিল, তোমার মনে আছে?? বাড়ির পাশেই গজিয়ে ওঠা অযত্নের নিমগাছটায় রেখে দিয়েছিল। তোমার হম্বিতম্বি শুনে খুব হেসেছিলাম। তারপর কদিন বাদে যখন দেখলে, সেই বাসায়, ছোট্ট ছোট্ট কাকের ছানা মুখ খুলে দিয়েছে তাদের মায়ের সামনে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের যোগান হচ্ছে না… সেই দেখে, প্রতিদিন ছাদে একবাটি ভাত রেখে আসতে। তাদের মা বারবার উড়ে আসতো তোমার ছাদে। বড় হয়ে গেলে, সবাই ঘর ছাড়ে শিল্পী। তোমার তুলির স্থায়ী বাসস্থান এখন গাছের ঝোপে। তুমি কীসের জন্য কষ্ট পাও? তুলি না পাখীর জন্য? উত্তর দেওয়ার সময় আসছে শিল্পী। তৈরী হও।
যাদের ঠিকানার ঠিকানা নেই, তারা আমার কাছে আসে না। আর যাদের আছে, তাদের ঠিকানা লেখা থাকে কোনো এক খাতার পাতায়। আমার ঠিকানা তুমি জানো না কিন্তু আমি তোমারটা জানি। তোমার তুলির টান অটুট থাকলেও, বাকি সবার কলমের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তুমিই বা শেষ কবে চিঠি লিখেছিলে তোমার মনে আছে? আমার আছে, যেদিন তোমার মুঠোয় বাঁধা যন্ত্রটা টিকটিক করা শুরু করেছিল, ঠিক তার আগের দিন। প্রায় ১৫বছর আগেকার কথা। শেষ চিঠি পাঠিয়েছিলে, তোমার দাদার ছেলেকে। বলেছিলে “ সাবধানে রাখবি, চিঠি হয়তো আর লিখবো না”। এখন তোমার ছেষট্টি আর আমার ষাট।সেদিন থেকে আমি ক্ষয়ে চলেছি।
তোমার পাঠানো প্রথম চিঠিটার কোনো উত্তর পাও নি তুমি। তোমার প্রেমিকা, তোমাকে মেনে নেয় নি কারণ তুমি উদাসি ছিলে। তুমি চাকরি করতে পার নি, কারণ তুমি খেয়ালি ছিলে। আমি কিন্তু কোনো শর্ত রাখি নি। তোমার তুলির রঙ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে। সারা শরীরে বার্ধক্য এসেছে আমার। তোমার চামড়াও ঝুলেছে আর আমারটা খসে খসে পড়ছে। আমার সময় উপস্থিত। এতদিনের সম্পর্ক, কিচ্ছু চাই নি শিল্পী, এবার চাইবো। চেয়েছিলাম, তোমার মৃত্যু আগে হোক। কিন্তু সেটা যখন হলো না, তখন আমার শেষ ইচ্ছেটা রাখবে? বহুদিন তোমার স্পর্শ পাই নি, আজকে একটু ছুঁয়ে দেবে?
গামছা মেলতে এসেই চমকে গেলেন শিল্পী। একি!! এমন তো হওয়ার কথা ছিল না? এই বয়সেও, যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি লাঠি হাতে নেমে এলেন। তিনজন লোক এসেছে। পোস্টবাক্সটাকে তুলে নিচ্ছে। বুঝে গেলেন, তার বন্ধুর মৃত্যুর পরোয়ানা উপস্থিত। শেষবারের মতো, ওল্ড স্পাইসের গন্ধটা প্রাণপনে টেনে নিল নিজের মধ্যে, তার নামকরণ করা লালি। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠতে না উঠতেই নিভে গেল আলো। পোস্টবাক্সটাকে উপড়ে ফেলা হলো। অত ভারী বাক্সটাকে ধরে তুলতেই একটু টালমাটাল হয়ে গেল যেন। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী এসে ধরে নিল সেটা। চারজনের কাঁধে চেপে, চুল্লির মধ্যে ঢোকানোর মত করে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো সরকারি গাড়ির মধ্যে। শিল্পী মনে মনে বলে উঠলেন “ বলো হরি হরি বলো”। চিঠি, তুমিও ভাল থেকো।
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
সকালে উঠে মায়ের মমতামাখা মুড়ি ও লিকার চা খেতাম। তারপর দাদু বলতেন, এবার পড়তে বোস।…..
রোজকার সূর্য ওঠার মত বেলি ভোরে উঠে দরজায় সামনে জল দেয়,ঝাঁট দেয়, ফুল তোলে। তারপর…..
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট অফিসের চাকরির ইন্টারভিউয়ে জটিল একটি প্রশ্ন করা হলো। প্রশ্নটি হচ্ছে –…..