প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
– শুনলাম কাল তুই অফিস ছুটি নিয়েছিস?
– হ্যাঁরে, কাল আমার প্রি ওয়েডিং শ্যুটিং আছে।
– বলিস কি ভাই, অনল মিত্তির যাচ্ছে সিনেমা করতে।বিপ্লবের শেষ কথা গুলোতে রসিকতা কম শ্লেষ বেশী।
অনলের রাগ হলেও কিছু করার নেই। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছে সে তাই তার মানসিকতাগুলো কিছুটা সেকেলে। সেকেলে আর রক্ষণশীলতা কি সমার্থক কিনা জানা নেই তার। দু’বছর তার মা মারা যাবার পর তাদের পরিবারের এই রক্ষণশীলতার ভীতটা বেশ এখন আলগা। তার বাবা বৌমাদের আবদারগুলো মোটামুটি মেনে নিয়েছে। তাই তার বিয়েতে সংগীত, প্রি ওয়েডিং ইত্যাদি নতুন জিনিসগুলোর আমদানি হয়েছে। দুই বৌদি ফলো-আপ করে করে হবু বৌয়ের জন্য ভ্যালেন্টাইন গিফ্টও কিনিয়েছে তাকে দিয়ে। অনলের জীবনের প্রথম ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট। কলেজে দু’একজনকে মনে ধরেছিলো, কিন্তু মায়ের ভয়ে মনের সেই বিদ্রোহগুলো কড়া হাতে দমন করেছে।
পাত্রি অনুপমা বসু। পাকা দেখার পর ছোট বৌদি পাত্রির ফোন নাম্বারটা এনে দ্যায়, নিজে থেকে সে ফোন করেনি।
এক রবিবার দুপুরে এলো সেই বিখ্যাত ফোন।
– মিস্টার মিত্র বলছেন?
– বলছি।
– আমি অনুপমা বলছি, আজ সন্ধ্যায় একটু সময় দিতে পারবেন?
– কিন্তু আপনার বাড়িতে কিছু বলতে..?
– মানে? না না ওসব আমি ম্যানেজ করে নেবো। তাহলে ঠিক পাঁচটা গড়িয়াহাট আনন্দমেলার সামনে।
ফোনটা অনলের কাছে একটু অপ্রত্যাশিত ছিলো বটে। সবকিছু হয়ে যাবার পর দ্যাখা করতে যাওয়া। উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার ডুয়েল যেন। তবু মিত্তিরবাড়ির ছোট ছেলে আজ ডেটে যাবে।
দুই.
অনলের জীবনের আজ প্রথম ডেট, অবশ্য সব কিছুরই প্রথম থাকে। আফটার শেভে আর পারফিউমে স্নান করে যথা সময়ে আনন্দমেলার সামনে অনল মিত্র। ডেট হবে না কি ডেথ্ সেটা নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা আছে অবশ্য।
অনুপমা এলো একটু পরেই। না আজ সে সাজেনি, জিন্স সঙ্গে মানানসই টপ, চুলটা বাঁধা, হালকা জ্যাকেট বেশ মানিয়েছে।
– সরি একটু মনে হয় দেরী করে ফেললাম।
– না না ওনলি পাঁচ মিনিট।
– চলুন কোথাও বসা যাক।
– সামনে সি সি ডি আছে ওখানে?
– দুর পুরো কফি ঠাণ্ডা। চলুন বসন্ত কেবিনে বসা যাক।
– কিন্তু সি সিডির কফি তো দারুন, বিনস্গুলো ভিয়েতনাম থেকে আসে।
– তো? আপনি বড্ড গুগুল করেন না? মশাই যেটা ভালো লাগে না সেটা যেখান থেকেই আসুক না সেটা ভালো লাগবে না।
অনল বুঝে গেল এই মেয়ের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
বসন্ত কেবিনে ঢুকে একটা কোণা দেখে দুজনে বসলো। দুটো কবিরাজি আর কফির অর্ডার হোলো। অনল এখনও জানে না এই সাক্ষাতের কারণ।
– ভাবছেন কেন ডেকেছি?
অনল কি বলবে ঠিক বুঝে ওঠার আগেই অনুপমা বললো
– রিজেকশানের কোনো সিন নেই। আপনারটা জানি না আমার আপনাকে বেশ লেগেছে।
অনল মনে মনে যেন একটু আশ্বস্থ হোলো। তার ভালোলাগাটা সে যেন প্রকাশ করতে পারে না।
– কি আপনার ভালোলাগে নি আমাকে?
বাপরে মেয়েটা যেন তুবড়ি ছোটাচ্ছে, মনে মনে ভাবলো অনল। শান্তভাবে বললো
– সেটা কবে বললাম।
– ওকে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন একটু শপিং আছে।
অনল বাধ্য ছেলের মতো তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলো। তারপর দুজনে মিলে গড়িয়াহাটের নানা দোকানে গেল, এ দোকান সে দোকান। কিন্তু কিছুই কেনা হোলো না তাদের। এক ঘণ্টার বিস্তর হাঁটাহাঁটির পর অনুপমা হঠাৎ বাড়ি ফিরতে চাইলো। ট্যাক্সিতে উঠে বসলো দুজনে। অনলের জড়তা বেশ খানিকটা কেটেছে।
– কিছুই তো নিলেন না।
– কিছু কিনতে তো আসিনি। আসলে আমি চাইনি আপনার জিনিসগুলো আমার বাড়ির কিনুক। আপনার পছন্দগুলো নট ব্যাড্।
অনল ট্যাক্সি করে অনুপমাকে তার বাড়ির সামনে নামালো।
– গুড নাইট। আমি কি আপনাকে ফোন করতে পারি।
– পারেন একটা শর্তে, যদি আমাকে তুমি বলো।
তারপর যেন নতুন সম্পর্কের শুরু।
তিন.
প্রি ওয়েডিং শ্যুটের হাজার হ্যাপা। সাতসকালে প্রিনসেফ ঘাট, ময়দান উত্তর কলকাতার নানা অলি গলি। ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় হলকা ঠাণ্ডার আমেজ, তবু দুজনেই আজ বেশ ক্লান্ত। দু’বাড়ির লোকজন সন্ধ্যার দিকে তাদের একটু একলা ছাড়লো। অনুপমা আর অনল হেঁটে চলেছে ফুটপাত ধরে। হলুদ আলোতে রাস্তা ভেসে যাচ্ছে। অনলের আঙ্গুল অনুপমার আঙ্গুল ছুঁয়েছে। বসন্তের আগমনীর সুর বেজে চলেছে দুজনের হৃদয়ে। দুজনেই চুপ করে হেঁটে চলেছে নতুন জীবনের স্বপ্ন সাজিয়ে। অনুপমা আদুরে গলায় বললো-
– পরশু দিনটা কি জানো?
– হ্যাঁ ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারি, প্রেমের দিবস।
– তো কি দিচ্ছো আমায় সেইদিন?
– কি নেবে বলো?
আমরা কিছু দিলে চলবে? জনা চারেক ছেলে কখন তাদের পিছু নিয়েছে তারা খেয়াল করে নি। রাস্তাটাও বেশ ফাঁকা।
– ও মামনি বলো না কি লাগবে। অনুপমার একজন হাতটা ধরলো। অনুপমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।
– এ সব কি হচ্ছে। অনল চিৎকার করে উঠলো।
বাকি তিনজন অনলকে চেপে ধরলো। ওদিকে অনুপমার সাথে ধস্তাধস্তি চলছে।
– প্লিস্ হেল্প, দুজনেই চিৎকার করে উঠলো।
পথ চলতি লোকজন খুবই কম। তবু যারা ছিলো তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।
– কি হচ্ছেটা কি? তোরা আবার এসব শুরু করেছিস? অন্ধকার গলি থেকে দেবদূতের মতো এক অল্প বয়সি ছেলে বেরিয়ে এলো।
– শালা তুই আবার আমাদের মাঝে এসেছিস? পল্টু আজ তোকে ছাড়বো না…।
চার জনের সাথে ছেলেটা একাই রুখে দাড়ালো। না আর কেউ নেই, কারুর টাইম নেই বস্।
– তোরা আমার ছিড়বি। আপনারা কেটে পড়ুন, আমি এদের সামলে নেবো।
অনল কোনোক্রমে সামলে নিয়ে অনুপমা হাত ধরে ছুটতে থাকলো। পিছনে ফেলে এলো ছেলেটাকে। তার যে কি হোলো সে খবর তারা রাখেনি। দুজনেই যে যার নিজের বাড়িতে ফিরে শুয়ে পড়লো। ঘটনার বিহ্বলতা দু’জনকেই দমিয়ে দিয়েছে। রাতে ঘুম পাখী আজ দুজনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে।
চার.
পরদিন সকালে অনলের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো অনুপমার।
– টি ভি টা দ্যাখো অনু।
বাংলা চ্যানেলগুলোতে একটাই খবর আজ্ঞাত পরিচয়ের মহিলার শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে যুবক গুরুতর আহত। তিনজন আভিযুক্ত গ্রেপ্তার; পুলিশ সেই মহিলার খোঁজ করছে, এবং তাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছে।
অনুপমার মধ্যে এক অপরাধবোধ কাজ করছে। অনলকে ফোন করলো সে।
– আমাদের থানায় যেতে হবে অনল। ছেলেটা তো আমাদের বাঁচাতেই…।
– তোমার মাথা গ্যাছে অনু? আমি বাড়িতে কথা বলেছি। সবাই বলছে চেপে যেতে।
– মানে? ছেলেটা আজ আমাদের বাঁচাতে গিয়ে… আমি যাবো, অনল তুমি কি আসবে?
– পাগলামো কোরো না…।
ফোনটা কেটে দিলো অনুপমা, মানুষ এতো স্বার্থপর হতে পারে!
অনলের ফোন করে যাচ্ছে। অনলের কথাগুলো যেন আজ ভীষণ তেতো লাগছে। ঘটনাটা তার বাড়িতে জানতে বেশী সময় লাগলো না। মা বাবাকে সে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা। অনলের বাড়ি থেকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে যদি সে পুলিশের কাছে যায় তাহলে তাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে। অনুপমার বাড়িতে বিশ্রী গুমোট ভাব। টিভি চ্যানেলগুলো শহরের নিরপত্তা আর সেই জনৈক মহিলার উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য চলছে। অনলের হাজার ফোন বা মেসেজের কোনো উত্তর দেয় নি সে। সন্ধ্যাবেলায় অনুপমার মা-বাবা এলো তার ঘরে।
– ওরা বলছে তোর সাথে দ্যাখা করবে।
– কি কারণে?
– জানি না। অনু জেদ ছাড়, খুব সুন্দর ভবিষ্যত তোর।
– আচ্ছা ওই চার জন যদি আমায় তুলে নিয়ে যেত, তারপর ওরা আমায় মেনে নিতো?
– জানি না। যা ভালো বুঝিস কর। মা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল।
সারারাত ঘুম নেই দু চোখে। এক সিদ্ধান্তহীনতা গিলে খাচ্ছে থাকে। একদিকে তার সুন্দর ভবিষ্যত আর অন্য দিকে নিজের সন্মান। সবার বিরুদ্ধে তাকে লড়তে হবে একটা বাইরের ছেলের জন্য। এ সব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দুটো লেগে গ্যাছে জানে না অনু।
পরদিন সকালে বাবার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো তার।
– অনু রেডি হয়ে নে। আমরা আগে পুলিশের কাছে যাবো, তারপর ছেলেটাকে দেখতে যাবো। না রে মা কাল থেকে আয়নার সামনে দাড়াতে পারছি না।
থানায় গিয়ে এফ আই আর করে বাবা-মেয়ে যখন হাসপাতালে গেল, তখন সব শেষ হয়ে গেছে, ছেলেটি মারা গেছে। তবে হাসপাতালে অনলের উপস্থিতি তাদের আবাক করলো। ছেলেটির পাড়ার মানুষজনের সাথে অনল মিশে গেছে। তাদেরকে যেন বললো, গতকাল সন্ধ্যা থেকে সে হাসপাতালে, সারা রাত জেগেছে। না তাকে বাঁচাতে পারে নি সে।
অনু দেখে সে শুকনো হেসে বললো।
– কাল সন্ধ্যা থেকে তোমায় ফোনে অনেক বার ট্রাই করছিলাম। ভাবলাম একসাথে পুলিশের কাছে যাবো। বাঁচাতে পারলাম না অনু…। প্রেমকে বাঁচাতে ভ্যালেন্টাইনরা ফিরে আসে নানা বেশে, নানা রূপে…, তাই না অনু…। আজ এই ভ্যালেন্টাইনের জন্য যতদুর যেতে হয় যাবো।
অনল অনুপমার হাতটা ধরে বললো- অনু তুমি থাকবে আমার সাথে?
অনুপমা শুধু মাথা নেড়ে সন্মতি জানালো।
দুজনের একসাথে এবার এক নতুন লড়াই এর জন্য প্রস্তুত।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..