প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
অভ্যাসমত সেদিনও দক্ষিণ মৈশুন্ডী বড় মসজিদ ভোরের ডাক দেয় স্তব্ধতা ভাঙা সুরে। নিয়মমাফিক এ ডাকাডাকি শুরু হয় বৃষ্টিচ্ছন্নতায়। গতরাতের ভ্যাপসা যে ভাবটা সবকিছু গুমোট করে রেখেছিল ওটা কেটে গেছে অনেকটাই, ভোরের কাছাকাছি এসে। ব্যত্যয়বিহীন কর্মযজ্ঞ হয়ে হররোজ এ সময় এলাকায় ছড়িয়ে যায় প্রার্থনার আমন্ত্রণ ও করণীয় বিষয়ক উপদেশ ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’। বড় মসজিদের প্রায় সাথে সাথেই বাকি মসজিদগুলোও খোলাকণ্ঠে ডাকতে থাকে নিজস্ব প্রাতভ্রমনেচ্ছু অতিথিদের। পুনঃ পুনঃ ভেসে ওঠা এই আওয়াজ লালমোহন সাহা স্ট্রীটের চারপাশ জুড়ে শোনা যেতে থাকে অন্তত মিনিট পাঁচেক।
পেছনের বাড়িগুলোয় পৌঁছাবার সময় শব্দবন্ধটুকু অন্তত বার তিনেক খানাখন্দে ভরা গলিপথে বাঁক বদল করে। বৃষ্টির বাঁধা ঠেলে আগাতে থাকে কষ্টে সৃষ্টে। কানাগলির চারদিকে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য অশ্লীল কাচা, আধপাকা অথবা পাকা বাড়ি, প্লাস্টার বিহীন রংচটা দেহেই আওয়াজের বিস্তার রুখে দিতে চেষ্টা করে। নানামুখী উপদ্রব ও বৃষ্টির বেহায়া রকম বাড়াবাড়ি ভেদ করে প্রার্থনার উদাত্ত আহ্বান সমৃদ্ধ সুরেলা শব্দবন্ধের আগানো খুব সুখকর হয় না।
এসব প্রতিবন্ধকের সাথে সঙ্গত দেয় মেসবাড়ির সার বেঁধে সমান্তরাল দাঁড়ানো, প্রবল হয়ে ওঠে সম্মিলিত প্রতিরোধ। দোতলার জুবুথুবু টিনের ঘরগুলোয় আওয়াজ পৌছাতে পৌছাতে কেমন ম্লান হয়ে আসে। শেষরাতের তুলনামূলক ঠাণ্ডায় নিদ্রার গভীরতর স্তরে নেমে যাওয়া কাউকে জাগিয়ে তোলার শক্তি থাকে না ওই শব্দে।
সে কারণেই লোকটার কানে যাওয়া আযানের ধ্বনি, চড়ে ওঠার আগেই বিলীয়মান সুরের মত মৃদু, ক্ষীণ হয়ে ওঠে; ঠিক যেন অতিলৌকিক, দূর থেকে ভেসে আসা কোন আওয়াজ। মরে যাওয়া রোদে বিকেলের পীঠে রাত অনেক আদরে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিলেও, দিন কিন্তু ঠিকই অসুখী পরাজয়ে পিছিয়ে আসে; তেমন করেই এই মৃদু শব্দের ছন্দময় আওয়াজও লোকটার জন্য বড় এক অস্বস্তি বয়ে আনে।
আলী হায়দারের বা হাতটা মাথার ঠিক পেছনে, অভ্যাস মতই। হাতের নীচে তেল চিটচিটে বালিশে শুয়ে আছে একটি মধ্যবয়স্ক মাথা আর ডান হাতটি নেমে চলে গেছে এমনকি নাভিদেশ ছাড়িয়েও।
নেতিয়ে পড়া শিশ্নটা মুঠোর মাঝে একটু আলগা করে ধরে রাখা, অন্ধকারের কাছ থেকে ওটাকে আড়াল করার জন্যে হয়ত। ঊরুতে ছড়িয়ে লেগে আছে স্খলিত বীর্য। কাছে পীঠে কেউ থাকলে মুহূর্তমাত্র আগেও শুনতে পেত বড় বড় শ্বাস ফেলার শব্দ। লোকটার পরনের লুঙ্গিটা পায়ের নীচে দলা পাকিয়ে আছে। ধাক্কা লেগে উল্টে যাওয়া জগের অবশিষ্ট পানির মৃদু চলনে ভিজে যাচ্ছে লুঙ্গিটা।
কালো মেঝেতে পাতা আঁশটে গন্ধের তোষকে শোয়া লোকটার শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। মেঝের নোংরা ফরাসের পাশেই একটা পায়া ভাঙা খাট। এক পাশে হেলে আছে যেন বা মাত্রই ধ্বসে পড়বে বর্ষাহত ঢালু টিলাদেশের ছাঁচ নিয়ে। আলী হায়দারের চোখজোড়া স্থির উপরের দিকে, কালশা পরা পাখার ঘূর্ণনহীন ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে। ‘বিদ্যুৎ’ নামের মহাত্মন এমনকি রাতের বেলাতেও স্থির হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে ফিরে আসে; অনেক যাবার মাঝে। গত আধঘণ্টা যাবৎ তার দেখা নেই।
তবু এর মাঝেই নির্ঘুম আলী হায়দারের শরীর জাগে, রক্তধারার উষ্ণপ্রবাহ পৌঁছে যায় নিম্নদেশে। আর অনেকটা সময় চেষ্টার পর বীর্যস্খলন ঘটে এ ঘরটার একমাত্র বাসিন্দার, আযানের মাত্র মিনিট পাঁচেক আগে। পতনের স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার আগেই চলে আসে আযানের শব্দ।
কেমন বেখাপ্পা একটা চেতনা তৈরি করে আলী হায়দারের মাথায়, দূর থেকে মনে হয় অস্বস্তি আর অনুশোচনার মাঝামাঝি কিছু একটা ভর করেছে লোকটার মুখে, যাকে অপরাধবোধ বলেও অভিহিত করতে পারে কেউ কেউ। পায়ে বাধিয়ে লুঙ্গিতে টান মারে আর শিশ্নের উপর তুলে দিয়ে কোনমতে গুপ্তকেশ ঢাকে। ভেজা লুঙ্গির স্পর্শে ঊরুর ওপরের কিছু লোম দাড়িয়ে যায়…
আজকাল এইসব নিঃসঙ্গ, হতাশাময়, প্রলম্বিত মৈথুন তাকে যাবতীয় একাকীত্ব আর দুঃসহ সময়ের মাঝেও কেমন একধরণের পূর্ণতার স্বাদ দেয়; আশ্চর্য হলেও বিষয়টা সত্য। মজার ব্যাপার জৈবিক তাড়নার কাছে সাড়া দেবার এই সময়টুকুতে ফ্রেমের পর ফ্রেম জুড়ে চলতে থাকে একই ঘটনাক্রমের পুনঃ পুনঃ প্রকাশ, প্রায় প্রতিবারই কাজ শেষে খুব একঘেয়ে কিছু ছবির দেখা মেলে; এ যেন অমোঘ বিধানের কাছে অবশ্য সমর্পণ।
আলী হায়দার অসম্পূর্ণ বেঁচে থাকার দীর্ঘ সময়টাতে ভোগ করে আসা দুর্ভাগ্য, নিজস্ব দুর্বলতা আর পুরনো দিনের আলো স্মৃতির কথা ভাবে। হয়ত ভাল লাগে ভাবতে। সে ভাবে। ভাবে আর হাহুতাশ করে। মাঝেসাঝে ফুঁপিয়েও কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎই আবার হেসে ওঠে নিজের মনে।
পঞ্চাশের কোঠা পার করা লোককে এসব মানায় না, জানে আলী হায়দার। কিন্তু তবুও কেন সে এমন করে, বোঝা মুশকিল।
হয়ত এই ভাবনাই সুখ দেয়। তাকে মুখোমুখি করে ভুলতে বসা জীবনের। যে জীবন অর্ধেক সত্য আর কিছু উচ্ছ্বাসের, যে জীবন বেভুল যৌবনের আর কিছু ভাগ্যের পরিহাসের!
অনেক দামে কিনে আনা স্মৃতি সুখটুকু এই নৈঃশব্দ্যে সে উপভোগ করে।
সে ফিরে যায় ছায়া কিংবা স্বপ্নের কাছাকাছি দিনগুলোতে। যেখানে আটরঙা রংধনুতে বাসা বাঁধে খড়কুটো সংসার, অনেকে আবেশে ভেসে থাকে আটপৌরে দিনগুলোর খুনসুটিগুলো। সেখানে আলী হায়দারের আদরের কালো পুতুলটি গান মুখে হাসি নিয়ে বসে থাকে অপেক্ষায়, মন চাইলে গান গায় কার্তিকের জ্যোৎস্নায়; কিংবা পাশাপাশি শুয়ে থাকে হেমন্তের অগুনতি নক্ষত্রের রাতে…
তখন জীবন বর্ণিল। রমিছার জীবনে সে এক ও অদ্বিতীয়।
সে ছাড়া আর কোন পুরুষ নেই, কোন মানবী নেই এমনকি কোন ঈশ্বরও নেই হয়ত। রমিছার সমস্তই তার, সেও রমিছার।
যৌথতার নবীন আলতা রাঙানো সূত্রে তখন ওদের হাতেখড়ি, জীবনে জীবন লেগে প্রতিদিনই চলতে থাকে আরও কোন এক সম্পূর্ণ জীবন গড়ে তোলবার চেষ্টা। হাতে লেগে থাকা মেহেদীর দাগ মোছার সুযোগ একটি দিনের জন্যেও মুছে যায়নি সেভাবে তখনও। রমিছার ছিল রক্তরঙের উষ্ণতায় হাত রাঙানোর শখ, তাই সময় হলেই কোথা থেকে যেন জোগাড় করে ফেলত মেহেদী পাতা।
ওর হাতে বসে যাবার জন্যই যেন জন্ম এই পত্রপল্লবের, আশ্চর্য রকম গাঢ়, টকটকে লাল হয়ে বসে যেত। তখন ওদের জীবন হাসি-গান, দেয়া-নেয়া, সুখে-অসুখে কেটে যেত ছিমছাম।
লোক দেখানো বিত্তের বৈভব না থাকলেও সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। হয়ত গাড়ি কেনার পয়সা আসেনি হাতে কিন্তু দুজন মিলে রিকশায় চড়ে দুটো বাদাম তো খাওয়া যেত কিংবা ধরা যাক—রমনায় গাছের ছায়ায় বসে ফুচকা খাওয়া।
ভাবনার বিস্তারে সময় গড়ালে সে অনেক দূর চলে যায়। চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পায় আলো আঁধারির খেলার মাঝে খাটেও খেলছে দুজন নর নারী—নগ্ন অথচ কি ভীষণ রকম নিষ্পাপ।
সঙ্গমকালীন লাজুক হাসি দেখা যায় কালো ভ্রমরের ঠোঁটে আর পুরুষটির চোখে ভাসে সব শেষে মৃত এক বৃশ্চিক হয়ে পরে থাকার আশ্চর্য সুখের ছবি। এখনো কানে বাজে সেইসব গানের মোহ সঙ্গীত। প্রায়শই আলী হায়দার শুনতে পায় মাথার ভেতরে, কিছু অস্পষ্ট অথচ সুখ প্রকাশক ধ্বনির পৌনঃপুনিক ওঠানামা; পৃথিবীতে আরেকটি প্রাণের আগমনের জন্য দুজন নর নারীর অনিঃশেষ প্রার্থনা।
বহু পালনে আচার হয়ে আসে প্রথার মত, এমনকি নিতান্ত ব্যক্তিগত অভ্যাসও। সেই অভ্যাসে আজ রাত্রে অযাচিত এক ছেদ নেমেছে বলে কেমন শূন্যতা অনুভব করে আলী হায়দার। বারো বাই দশ ফুটের ছোট্ট এই ঘরটাতে ঢুকলে নিঃসঙ্গ লোকটাকে যতটা বোঝা যায়, নিজের ভেতরে তার চেয়েও ঢের বেশী একা। লুঙ্গির ভেজা অংশের সাথে সাথে অস্বস্তি কিংবা অনুপুঙ্খ অপরাধবোধ কুঁচিতে ফেলে কোমরে প্যাচ কষে আড়াল করে নেয়। তারপর জলসেচন করে শুদ্ধ হবার উদ্দেশ্যে ঘরের দরজা খোলে।
বহু পুরনো আর প্রায় ক্ষয়ে আসা কাঠের সিঁড়িটা বেয়ে সে নীচে নামে।
বৃষ্টির বেগ থেমে এসেছে প্রায়। ঝিরঝিরিয়ে ঝরছে অল্পস্বল্প করে হালকা বাতাসের সাথে। একসার ঘরগুলো থেকে ডান দিকে গেলে সবচেয়ে ছোট খুপরি ঘরটার অনতিদূরে একটা পায়খানা আর গোসলখানা। আলী হায়দার বদনা হাতে বেশ কয়েকটা ফুটো মারা টিনের দরজাওয়ালা পায়খানা ঘরে গিয়ে দেখতে পায় দরজা বন্ধ। এই অবস্থায় অপেক্ষা করা কঠিন বলেই সে হাঁক দেয়—
ভিতরে কেউ আছে নাকে ভাই?
ভেতরে এলাকার বুড়ো চৌকিদার নুরুল হুদা। লোকটার বয়স হয়েছে তিন কুড়ির থেকেও বেশী, পেশার সাথে তার দৃষ্টিশক্তির সাযুজ্য নেই তেমন; চোখে মোটা চশমা। প্রায়সময়েই সে অযাচিত ভাবে বাড়ির পেছনের দিকে ভাঙা পাচিলের অংশ দিয়ে বেয়ে ঢুকে পড়ে। মলমূত্র ত্যাগের উদ্দেশ্য প্রায় রাতে কেন এখানেই আসতে হবে—এর উত্তর খুঁজে পায়না বাড়ির লোকেরা। বাড়িওয়ালা চাচাকে বহুবার বলা সত্ত্বেও উনি গা করেননি, বরং লোকটাকে প্রশ্রয় দেন। কি স্বার্থ তা শুধু তিনিই জানেন। দুটো ইট দিয়ে উঁচু করা পাদানিতে পা রেখে ল্যাট্রিনে বসে হাগতে হাগতেই বুড়ো চৌকিদারটা গলা বাড়িয়ে উত্তর দেয়—
অই ক্যাডারে, আলী হায়দার নিহি?
হ নুরু ভাই। উত্তর দিতে গিয়ে লোকটার মুখ বেকে যায়, বিরক্তিতে।
চৌকিদার লোকটা স্বগতোক্তি করে কিন্তু ওপাশের কেউ শুনুক তা চায় না।
আব্বে, কি জমানা ভি আইলো, লুকে ছালাম আদাব দেওন ভুইলা গেছে মনে অয়।
ভাই, সালামালাইকুম।
বাইরে থেকে সালাম শুনে নুরুল হুদা অপ্রস্তুত হয়ে বলে ওয়ালাইকুম…
তা আইজকা এত ছকাল ছকাল উঠছস। কেল্লেগা, নমাজ পরবার লেইগা নাকি? আল্লায় তরে এতদিনে আকল দিছে তাইলে।
এই আর কি। বিব্রত আলী হায়দার উত্তর করে।
কতক্ষণ লাগব আপনের?
আর কইসনা হালার, পাতলা হাগায় ধরছে। কাইল ছন্দার ছুমায় হুমুন্দির পুত বারেকের হোটেল থিকা বাসায় নিয়া দুইডা ছিংগারা খাইছিলাম। মুখে দিয়াই দেহি কেমুন চুক্কা চুক্কা লাগতাছে। তাও খায়া দিছি, বুঝলি না, বাছি মাল গছায়া দিছে। পয়ছায় কিনা জিনিছ, ঘেরান পাইয়া ভি ফালাইবার পারি নাইক্কা। অহন বুঝবার পারতাছি কামডা ঠিক অয় নাই।
ভিতর থেকে জোরে শব্দ হয়, ফোঁৎ ফোঁৎ
পেটবোমার বিস্ফোরণ শুনে ভেতরটা কেমন গুলিয়ে আসে আলী হায়দারের। সে ঘরে ফিরে যায়, সামান্য টিনের বেড়ার ওপাশ থেকে চলতে থাকে পেট খারাপের বয়ান…
চক্ষে দেহিনা ভাল তায় আবার চারিদিক আন্ধার। পায়খানাডাও মুনে হইতাছে কালা কালা। আবার হালার ডাক্তরের কাছে যাওন লাগবো নাকি বুঝবার পারতাছি না। কি যে ব্যাক্কলের মত কামডা…
বুড়ো চৌকিদারের কথা শেষ হবার আগেই হাঁটা ধরে লোকটা। ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে দেয়। বাসন কোসন ধোয়ার জায়গায় ট্যাপ খুলে মুখটা ধুয়ে নেয়।
মেঝেতে এক কোনে রাখা পাতিলে রয়েছে ফুটানো পানি। গত সন্ধ্যায় আধঘণ্টা ধরে জ্বাল দেয়া হয়েছে। পাতিল থেকে জগে পানি ঢালে আলী হায়দার। একটু মুখে নিয়ে বিরক্তিতে মেঝেতেই ওয়াক থু বলে ফেলে দেয়। পানি থেকে বিশ্রী গন্ধটা এখনো যায়নি। বিরক্তিতে বলে ওঠে,
অন্যমিক্ষে বাসা চাওন ফরিবদে, ইবা একখান জায়গা হইল্ না, হাবিয়া দোজখত যন। হ্যাডার কোম্পানি আমলত তন গোডা শহরর গু এন্ডের তুন বুড়িগঙ্গাত যার, আজিয়া পর্যন্ত জলত গুয়ের গন্ধ ছরাইত ন পারে বালের নারিন্দা’।
এতক্ষণ ফুটানোর পরেও পানি থেকে গুয়ের কষা গন্ধ এলে কি করা উচিত ভেবে না পেয়ে পুরো মহল্লার পিণ্ডি চটকে দেয় লোকটা। প্রতিমাসে একেকবার ঘর-বদলের কথা মনে এলেও সে চিন্তা বাস্তবায়নের জোরদার কোন চেষ্টার দেখা মেলে না। তাই রাত হলেই আবার সেই ভাগাড়ের মত মনে হওয়া এলাকাতেই ফিরে আসতে হয়, অনেকটা বিপন্ন কোন ডানা ভাঙা পাখি হয়ে।
হয়ত কোনরকম বসবাসের এই ঘরটা, বিশ্রী গুয়ের গন্ধে ভরা পানির দুর্গন্ধ বা প্রতিবেশীদের করে যাওয়া কুটচাল নিয়ত সয়ে যাবার পিছনে দায়ী আলী হায়দারের পায়ে বাঁধা অদৃশ্য কোন শেকল, যার একটিই কাজ—দক্ষিণ মৈশুন্ডীর এই আজাবখানায় তাকে সময়মত ফিরিয়ে আনা। হয়ত তার যাবার জায়গা অনেক আছে যত্ন-অযত্নের বিপুলা পৃথিবীতে কিন্তু তা খুঁজে নেবার প্রেরণা হিসেবে কারো দেখা পাওয়া হয়ে ওঠে না তার।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, আলো আসছে একমাত্র জানলাটির পর্দা ভেদ করে। আজ আর লোকটার ঘুম হবার সম্ভাবনা নেই। রোজ অন্তত আধঘণ্টা হলেও রোজনামচা লেখার অভ্যাস লোকটার। আজ রাতে কেন যেন বসা হয়নি কাগজ কলম নিয়ে। একটু আগে সে কথাই মনে ওঠে, তাই চশমার খোঁজ করে। চোখে দিয়ে হ্যারিকেনটা জ্বালিয়ে নেয়।
কাগজে দাগ পড়ে, খসখস শব্দ হয়। আনকোরা কিছু কথা লেখা হয়, অনুচ্চারিত শব্দমালায় গেঁথে থাকে পাওয়া না পাওয়া। দক্ষিণ মৈশুন্ডীর মেসবাড়ির দোতলার ঘরটাতে কেউ একজন নিজেকে লিখে রাখছে মাঝে মাঝে আসা আলো আর হতাশায়। বিষয়টা জানে এই ঘর, এই টেবিল, ভ্যাপসা গরম রাত কিন্তু যারা পড়তে পারে এই দুঃখবোধের কথা, তারা কেউ জানে না, জানবার চেষ্টাও করেনি কোনদিন।
আলী হায়দারের ডায়েরির পাতায় নৈঃশব্দের মুহূর্তগুলোর অলৌকিক বিন্যাস আর কিছু দীর্ঘশ্বাস একাকার হয়ে যায়…
ফেলে দেয়া এমন অনেক দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস জানে না সময়। জানে না এমন অগুনতি আলী হায়দারদের দিনান্তের সংগ্রাম, সংসার-সমাজের নানাবিধ ঘাত প্রতিঘাতের গল্প।
হতাশার উৎকট হাহাকার আজীবন বয়ে বেড়ায় এরা আর হয়ত বুকের গহীনে লালন করে যায় নিরবচ্ছিন্ন কয়েকটা স্বপ্ন। সমস্ত বেদনার্ত বয়ানের শেষেও লিখে রাখে আরও দু চারটে আনকোরা শব্দ বা কথার আড়াল।
শব্দ আসে, চলে যায়, হারায় কিংবা ধরা দেয়; এইসবের মাঝেই চলতে থাকে লোকটার একার সন্ন্যাস।
মাঝে মাঝে সমস্তই অর্থহীন বলে মনে হয়, মনে হয় সবকিছু নিয়ে যদি ডুবে যাওয়া যেত কোন কৃষ্ণবিবরের সুমহান কালোয়। রাস্তার ধারে জ্বলে থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলোও চোখে জ্বালা ধরায়, কেমন অসহ উজ্জ্বলতা বলে মনে হয়। নিঃসীম অন্ধকারের খোঁজে নিশুতি রাতে কেমন চন্দ্রভুক ‘কিছু একটা’ হয়ে ওঠে।
অন্ধকারের গোলক নৃত্যের কাছে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে পায় আরও আলো, ধাঁধা লাগিয়ে দেয়া বেহায়া আলো; হোক ল্যাম্পপোস্টের বাতিতে বা রাতভর জ্বলে থাকা বিজ্ঞাপনে।
আলী হায়দার আজকাল, না ঠিক আজকালই না; অনেকদিন ধরেই দিনের আলোকে রীতিমত অবিশ্বাস করে। রাতকে যতটা আপন করে নেয়, দিনের বেলায় ব্যাপারটা ততটাই কঠিন। প্রতিটি সকাল, ঝকঝকে সূর্য যেন মানুষের ভণ্ডামিগুলো ঢেকে দিতে নানাবর্ণের মুখোশ নিয়ে উদিত হয় আর শেষ বেলা পর্যন্ত পশ্চিম অব্ধি অকাতরে বিলায় সেসব অসভ্যতা।
যেন এক নগ্ন বাস্তবতা, সমস্ত মিথ্যে, সমস্ত আরোপণ, সমস্ত লোকদেখানো আদিখ্যেতার কাছে, ঠুনকো দেখালপনার কাছে সমর্পণ করে বসে আছে সমগ্র মানব জাতি।
এই কৃত্রিমতা, অভিনয় আর ভদ্রতার নামধারী মুখোশের পেছনে লুকিয়ে রাখা আদিতম খেলাগুলো দেখতে বড্ড ক্লান্ত লাগে। আর তাই লোকটা প্রায়ই রাত খোঁজে, পছন্দসই একটা রাত। খুব দরকার, বহুদিনের চাওয়া—একটা নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারের রাত…
আলী হায়দার হাটে, চেনা অচেনার বেড়াজাল ভেদ করে—হাঁটে ছোটখাটো কানাগলি আর নগরের বিশাল চৌরাস্তার মোড় বা এভিনিউয়ে। বর্ষাদিনের ভেজা পথ, মাটিজলের সোঁদা গন্ধ রাতে কিংবা বিষাদী নভেম্বরে রাত বাতাসের একটু কাঁপন ধরা গোপন কানাকানির মাঝে। অসহ্য গরমের ভ্যাপসা রাতে সে হাঁটে, হাঁটে নিষ্ঠুর এপ্রিল, নগ্ন হুংকারময় কালবোশেখির রাতেও। সে রাত জাগে, সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেয় একলা থাকার গাঢ় কিছু অসুখ। মাঝে মাঝে কি করে যেন জোগাড় করে ফেলে কয়েক ছিলিম গাঁজা, তাতে দম দিয়ে পথহাটায় একটা ফুরফুরে অনুভব খুঁজে পায়। ব্যাপারটা অদ্ভুত…
রমিছা ছেড়ে চলে যাবার পর গাজার নেশাটা খুব চরেছিল ওর, সারাদিন গাজায় দম দিয়ে পড়ে থাকত সে। এখন অবশ্য সিদ্ধির নেশা কমেছে অনেকটাই, কালেভদ্রে বিগার উঠলে মাথা ঠাণ্ডা করতে কম দামী সিগারেটের সাথে আয়েশ করে মিশিয়ে খেয়ে নেয়।
রমিছা যখন স্বামীকে ফেলে চলে যায়, আলী হায়দারের তখন অবিশ্বাস্য রকম ব্যস্ততা। দেশের শীর্ষ দৈনিক চোখের আলোর অর্থনীতির পাতা সম্পাদনার দায়িত্ব তখন তার কাঁধে। চোখের আলোতে ওটাই প্রথম বছর, সামনেই আবার বাজেট অধিবেশন সংসদে, সবকিছু মিলে খাওয়া ঘুমের সময় মেলাই দুষ্কর। প্রায়ই ঘরে ফিরতে দুপুর রাত, বাজার করবার সময়ও মিলত না সেভাবে। এইসব অস্থিরতায় রমিছা’র রাগ বা অভিমান আর মানসিক অবস্থার খোজ নেবার সময় ছিল না আলী হায়দারের।
আরতো কটা দিন, রমিছা’র রাগ নেমে যাবে দূরত্বের উপশম ক্ষমতায় আর এর মাঝেই হাটে জমে থাকা কাজও শেষ হবে; তখন যেভাবেই হোক, বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসা যাবে খালার বাড়ি থেকে। বাপের বাড়ি, খালার বাড়ি, ভাইয়ের বাড়ি এইভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকে হিস্টিরিয়া-গ্রস্ত রমিছার কিন্তু সেদিন আসেনি কখনো, আর ফেরেনি তার নিজস্ব নারীটি। যখন ফিরিয়ে আনতে যাওয়া, যায় ততদিনে রমিছার ভাইয়েরা বিচ্ছেদের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে, বোনকে বিয়ে দেবার জন্যেও উঠে পড়ে লাগে। অদৃষ্টের খেলায় দু দুটো সন্তানকে অকালে হারায় আলী হায়দার-রমিছা খাতুন দম্পতি। শোকে পাগলপ্রায় রমিছা সমস্ত কিছুর জন্য আলী হায়দারকে দায়ী করে। সংসারের প্রতি অবহেলা, কাজের কথা বলে ঘরে না ফিরে পরনারীর কাছে যাওয়া এইসব বলে প্রতারণার জন্য মামলা করার হুমকি দেয় রমিছার ভাইয়েরা। আলী হায়দারের তাই রমিছার সাথে সেই শেষ দেখা, আর কখনো হয়নি কথা রাখা প্রেমের চুম্বন বিনিময়।
পৌনঃপুনিক রাত ভ্রমণের এই একাকী আলী হায়দারের কথা হয়ত জানে কুকুরগুলো, এলাকার চৌকিদার আর অনেক রঙের নিস্তব্ধতা। রাত মানেই খাঁ খাঁ শূন্যতা ভেবে যারা ঘুমিয়ে কাটায়, তারা দেখে না অন্ধকারের বিচিত্র প্রচ্ছায়া। প্রায়ই লোকটার কপালে জোটে রাতের ঢাকা দেখার সুযোগ, এ এক অগ্রন্থিত আলেখ্য। কর্মযজ্ঞের হরেক রূপ, জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার উদার হয়ে খুলে বসে আনকোরা গপ্পের ডালা, দিনে যারা নিজেকে আড়াল করতে লেপ্টে রাখে নানান রঙের মুখোশে।
ছেলেছোকড়াদের বেহায়াপনা আর চরিত্র নিয়ে সারাটা দিন হাহুতাশ করা বহু লোকই রাত খোঁজে গণিকা’র কাছে, শুয়ে আরাম নেয়। আলী হায়দার দেখে আর শেখে কে কিভাবে গিয়ে নিজেকে খদ্দের বানায়—ট্রাক ড্রাইভার থেকে শুরু করে মাঝবয়সী লোক, টুপি মাথায় দিনের ভদ্রলোক থেকে উঠতি বয়সের বখাটেরা; এমনকি চামড়ায় ভাঁজ চলে আসা বয়স্ক লোকটাও আপন পুংদণ্ডের আস্ফালনের কাছে অসহায়। ঘরের বউ বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া প্রেমিকার নিয়ন্ত্রিত ভালোবাসায় ঠিক পোষায় না ওদের।
রাস্তার ধারে খদ্দেরের অপেক্ষায় অস্থির পায়চারিরত নিশিকন্যাদের ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশী থাকে রাত এগারটার পর থেকে এক বা দেড়টার মধ্যে। আলী হায়দার খেয়াল করে দেখেছে এরপর মোটামুটি শুনশান নীরব রাস্তা, নিশিকন্যারা খদ্দের নিয়ে নিজ নিজ ডেরায় ফিরে যায়। পরিপূর্ণ ভাবে এইসব বারবনিতার মনের খবর জানার প্রবল আগ্রহ আলী হায়দারের। যদিও তা জানার সুযোগ সীমিত, কেননা ওরা ওদের খদ্দেরদের কাছেও অপরিচিতা।
ওদের সাথে সুখ দুঃখের আলাপের চেষ্টা চালিয়েছে আলী হায়দার বিভিন্ন সময়ে। মানুষের কাছে দেহে বিকিয়ে চলায় যারা অভ্যস্ত, তারা চোখের ভাষা পড়তে পারে মুহূর্তেই। চাউনি দেখেই তারা বুঝে ফেলে কে খদ্দের আর কে ম্যান্দা মারা পথিক মাত্র। এমনকি টাকার বিনিময়েও ওরা কথা বলায় কেউ আগ্রহী নয়। একবার কপালে জুটেছিল কড়া ধমক, সর্দারনী গোছের এক মধ্যবয়সী মহিলার হাতে। ঘরে যেতে দেরি দেখে চোখ গরম করে সে বলছিল—
ডাইন আতে টাহা দিবাইন আর বাম হাতো খাটো নিবাইন। হেয়ার পর কি করবাইন হেইডা আম্নের বেপার। অত কথা কন ক্যারে!
জোরা ভুরু নাচিয়ে, ভারী শরীরটা ঝাঁকিয়ে কাজলমাসী এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলতে থাকে আলী হায়দারকে উদ্দেশ্য করে—
আর যদি আঙ্গর মাইয়াগোরে টাইম নষ্ট করেন তয় কলাম খবর কৈরা ছারমু। যেইহানে থাহোইন না যেন, বাডি চালান দিবাম ধইরা আনার লাগি। কাজলমাসীর নাম বেবাকতে জানে বুঝছুইন। টেংরি ভাইংগা আতো ঝুলাইয়া দিবাম বুঝছুইন…
রাতের হাঁটাহাঁটি, ঘোরাফেরা, অনেক জীবনের গান শোনা আর উপলব্ধি—অমূল্য অভিজ্ঞতাগুলো টুকে রাখার ব্যাপারে আলী হায়দারের আগ্রহ নেই মোটেই। থাকলে কি হত সেটা না ভেবে বরং বহতা সময়ের কাছে ওসব ছেড়ে আমরা সামনে আগাই। আলী হায়দার রাত দেখে, শরীর বিনিময়ের চুক্তি করা দেখে আর দেখে অফুরান পেট পূজার খেলা। শহরের এই অংশে রেস্তোরাগুলো আশ্চর্য রকম ব্যস্ত—সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা তো আছেই স্বাভাবিক আহারের উদ্দেশ্যে, মাঝরাত বা ভোরেরও বিরাম নেই। আলী হায়দার বিশ্বাস করে এখানে এলে যে কারো মনে হবে, মানুষের জন্মই হয়েছে যেন শুধু খাওয়ার জন্য। দুপুর রাতেও কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট আর কাবাবের মত গুরুপাক খাবার খেয়েও কেন লোকগুলোর তৃষ্ণা মেটে না, এ প্রশ্নের সমাধান খোঁজে লোকটা।
রাতভর ঘোরাফেরা, একা একা হেঁটে চলার ঝক্কিও কম না, ছিনতাইকারী আর পুলিশ দুপক্ষই ধরেছে বেশ ক’বার। ছিনতাইকারীর হাতে মার খেয়ে যেমন বিছানা নিতে হয়েছে তেমনি কয়েক রাত হাজতবাসের অভিজ্ঞতাও মিলেছে। তবে এসব ঠুনকো বিষয় বলে উড়িয়ে দেয় সে, একাকীত্ব উপভোগের সময় কিছু উটকো ঝামেলা সহ্য করতেই হয়।
আলী হায়দারের ব্যর্থতায় শেষ হওয়া সেদিনের ভোরের আগেও ছিল একটা বিচিত্র রাত আর তাতে সে ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় কান্দুপট্টির ওদিকে। ওদিকে মনের ভুলে চলে গেলেও কাজল মাসীর কোঠায় তার মন যেন আটকে থাকে। যদিও মহিলা এভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা মোটেও পছন্দ করে না, এমনকি মাঝে মাঝে গালাগাল দিয়ে বের করে দেয়। কি মনে করে যেন সেদিন রাত দেড়টার দিকে আলী হায়দার ওদিকে গিয়েছিল বলতে পারবে না। শুরুতে লোকটা আধাপাকা ঘরগুলোর বাইরে পায়চারি করছিল ইতস্তত, যেন খুঁজছে কাউকে। একটু পরে কাজল মাসী লোকটার উপস্থিতি টের পায়। শরীর দুলিয়ে হাসে আর বলে ওঠে—
অমন বিলাইয়ের লাহান বাইরে বইয়া ঘুরঘুর করতাছুইন ক্যালা?
আমনের সমস্যা কি, আবার আইছুইন? ভিত্রে আহেন গেটোত খাড়ায়া না থাইকা…
বেশ একটা জড়তা নিয়ে লোকটা পা বাড়ায়, সামনে খোলা জায়গায় দাড়িয়ে দেখতে পায় কাজল মাসীকে। ভারী শরীরে তার জমকালো কোটা শাড়ি, মুখে কড়া মেকআপ। কণ্ঠেও একটা সুখ সুখ ভাব। গলায় আমোদ ঢেলে সে আলী হায়দারকে বলে—
আঙ্গর দেহনের এত শখ? এত শখ…
এত দেইক্ষা কি করবাইন, যদি কামডাই না করছুইন।
আলী হায়দার বিব্রত হয়। হাতে থাকা গামছাটা গলায় ঝুলিয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে যায় খানকী পাড়ার সর্দারনী। দরজা বন্ধের আগেই আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে খোঁচা দিয়ে জানায়, টাকার কথা ভাবতে হবে না; ওর জন্য সমস্তই খোলাবাজার।
আলী হায়দারের প্রতি কাজল মাসীর দরদ হঠাৎ উথলে ওঠার গাছপাথর মেলাবার আগেই লোকটা টান মেরে মহিলার ব্লাউজটা খুলে নেয়। নিত্য পুরুষের এমন দলাই-মালাইয়ের পরেও বুনি জোড়া বেশ টানটান আছে দেখে অবাক হয় সে। এই বড় স্তন দিয়ে মহিলা আলী হায়দারের মুখে চেপে ধরে ঘসতে থাকে। একতাল মাংসের মাঝে ডুবে থাকতে লোকটার বেশ ভালোই লাগে যদিও কিছুটা দমবন্ধ অনুভূতি হয় উষ্ণ স্তনের ঘামে…
একটু পরে লোকটা মহিলার কোমর ধরে দ্রুত উপুড় করে ফেলে, মুখের দিকে তাকাতেই মনে হয় যেন রমিছা যেন ফিরে এসেছে। মুহূর্তে মাগীটার ঠোঁট চেপে ধরে শক্ত করে, পান চিবিয়ে স্বাভাবিক রং হারানো জিহ্বাটা ভিতরে চালান করে। একটু পরে মুখের নোনতা স্বাদ আর আদার গন্ধ আলী হায়দারের মন বিষিয়ে তোলে। ওর মনে পড়ে, রমিছার মুখ থেকে কখনো নোনতা স্বাদ আসত না, আসত লবঙ্গের ঘ্রাণ। কেমন করে যেন দুজনার ওষ্ঠাধর এক হত, ওটা আর কারো সাথেই তুলনা করা সম্ভব নয় লোকটার পক্ষে।
মহিলাটাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানার উল্টো দিকে ঠেলে দেয় আলী হায়দার। উত্তেজনার জারণে পাগল প্রায় হবার কাছাকাছি সময়ে এমন প্রত্যাখ্যানের অপমান, ঠিক যেন আহত বাঘিনীর খাবার কেড়ে নেয়া। কষে থাপ্পড় দেয় কাজল মাসী, আলী হায়দারের গাল বরাবর।
শুরু হয় গালির বন্যা।
একেবারে অশ্রাব্য ভাষায়। লোকটা শুনে যায়।
চড় বা গালি খেয়েও কিছু বলা হয় না তার। কাজল মাসীর সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাকে আঘাত করার, মেনে নেয় সে। কোনমতে লুঙ্গিটা কোমরে জড়িয়ে খালি গাঁয়ে চলে আসে বাইরে। অবদমনের কাছে পরাজিত শরীরের গাঁথা নিয়ে রাত ভোর করে ঘরে ফেরা লোকটার মন বিদ্রোহ করে আর পরাজিত হয় খুব স্বাভাবিক নিয়মে…
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..