অভিজিৎ দাশগুপ্ত’র কবিতা

অভিজিৎ দাশগুপ্ত
কবিতা
Bengali
অভিজিৎ দাশগুপ্ত’র কবিতা

জীবনকথন

শুকনো মাটির বিছানায়
গরম পিচের মোটা আস্তরণ,
কালো পিচের কবরে চাপা
শতশত কণিকার ফুঁপিয়ে কান্না,
প্রাচীন হাহাকারে
সজীবতার তির্যক ছোঁয়া।
নির্বাক মাটির নির্বাক ইতিহাস,
কান পেতে শোনা যায়
হারিয়ে যাওয়া গল্পকথা।
এ গল্পকথা
তোমার আমার,
আমজনতার।
এর মধ্যে বাঁচা, এর মধ্যেই মরণ,
বাঁচা মরার দোলাচলে জীবনকথন।।

 

অন্তর্জলি যাত্রা

মৃতদেহগুলো শুয়ে আছে মাটিতে,
পচন ধরে নি, মৃত্যঘ্রানে বাতাস ভাসে নি;
জানি কিছুক্ষনের মধ্যেই
জেগে উঠবে লাশগুলো,
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অবিকল
জ্যান্ত মানুষের মতো বলবে…
তোমরা যা শিখিয়েছিলে
সব আত্মস্থ করেছিলাম আমরা।
এখনো মরা কোষে সে শিক্ষা বেঁচে আছে।
শেখানো যতটা সহজ,
শেখা আরো অনেক বেশি কঠিন ছিল।
তবে তোমরা ভুল শিখিয়েছিলে,
আর আমরাও ভুল শিখেছিলাম।
মৃত্যু-চিতার কাঠে শিক্ষার অন্তর্জলি যাত্রা।।

অদৃশ্য সেতু

মৃত্যু কারুর সাথে বিভেদ করে না,
নিঃশব্দে, নিশ্চুপে, গুটি গুটি পায়ে
সকল বিভেদ ভুলিয়ে চলে যায়…
অথচ জীবনের চাঁদে বিভেদের কলঙ্ক।
অথচ জীবনের গানে বিচ্ছেদের বলয়।
বলয়ে যত্রতত্র কান পাতলেই
শোনা যায় বিসর্জনের মন খারাপের সুর।
মন ভালোর দেশ যেন
হঠাৎ পাওয়া একটুখানি অলীক সুখ।
ভাঙা আয়নার শত টুকরো মাঝে
অতৃপ্ত নয়ন আস্ত শরীর খোঁজে;
এপারে বিষাদের ধ্বনি,
ওপারে আগমনীর বার্তা,
আর মাঝবরাবর মৃত্যুর অদৃশ্য সেতু।।

 

রক্ত

তোমার হাতে এতো রক্ত কেন?
তুমি কি মানুষ মেরেছো না পশু?
হাত পরিষ্কার করো অন্য কোনো রক্তে?
কালচে রক্তে টুকটুকে লাল রক্তের প্রলেপ,
প্রলেপে প্রলেপে হাতের রেখা বিস্মৃত।
রক্ত নিয়ে খেলছো…
এ রক্ত যেন তোমার রক্ত নিয়ে না খেলে।
রক্ত বড়ো সাংঘাতিক বস্তু।।

 

কোথায় আলো?

দেখো, শহরের মধ্যে খণ্ডখণ্ড শহর
ভালোবাসার শহরটা খুঁজছি, পাচ্ছি কই?
হৃদপিন্ড হারিয়ে যাওয়া শহরটার
বাইরে আলোকবৃত্ত, ভেতরে ঘোর আঁধার।
আমরা সবাই আলোকবৃত্তের দিকে হাত বাড়িয়ে,
কিন্তু মুশকিল হলো…
আলোকবৃত্তের ওপারে কেউ হাত বাড়িয়ে নেই।
হাত ধরে ওপারে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।
তাই নিশিযাপনকেই আলো ভেবে বিভ্রান্ত।

 

অভিজিৎ দাশগুপ্ত। কবি। অভিজিৎ দাশগুপ্তের জন্ম ১৯৭৬ সালে কলকাতায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। এখন কবি কলকাতাতেই বসবাস করছেন। পিতা অরুণ কান্তি দাশগুপ্ত পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পিতার অনুপ্রেরণায় বর্তমানে কবি শিক্ষকতার মহানব্রতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। কবি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ