অভিনয়

বিধান জানা
কবিতা
Bengali
অভিনয়

অভিনয়

মঞ্চে ডেকে নেওয়া হল শ্রেষ্ঠ অভিনেতাকে
অসাধারণ অভিনয়, অপূর্ব কন্ঠস্বর তাঁর
বলিষ্ঠ সংলাপে অস্থায়ী মঞ্চের খুঁটিগুলো পর্যন্ত
গরম হয়ে আছে এখনো
উনি মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন করলেন সবাইকে
তারপর সভাপতির হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে
আরেকদফা প্রবল হাততালির তোড়ে ভেসে গেলেন
ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেল মঞ্চের ভিড়
মনে মনে আবার একবার নায়কের অভিনয়ের
তারিফ করে বাড়ির পথে পা বাড়াই
জ্যোৎস্নার ঢেউয়ে রাত মগ্ন দিগম্বরী
হঠাৎ যেন কানের কাছে ফিস ফিস করে কেউ বলল,
‘তুমিও বড় কম অভিনেতা নও হে,
যদিও জীবনে কোনদিন মঞ্চে ওঠোনি
কখনো মৃত সৈনিকের রোলটা পর্যন্ত করোনি তুমি
তবু যখন তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় প্রায়
কাজের আছিলায় কিংবা নির্জন পড়ন্ত বিকেলে
তখন তোমার ভালোবাসার বারান্দা আড়াল করো কোন অভিনয়ে ?
তখন কিভাবে যে স্বাভাবিক থাকো, কষ্ট সব কবরে পাঠিয়ে
সাবলীল ছবি আঁক সারাটা ক্ষণ তা কি কেউ জানে ? সেও নয় ।
তুমি যে ব্যাথা ভেজা চোখে হাসির সুরমা টেনে
ভালো থাকার শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা করে যাও দিনের পর দিন
কেউ তা জানে না’।
কে বলল কথাটা ? আশে পাশে কেউ তো নেই কোথাও
ওপরে তাকাই, দেখি বোকাসোকা চাঁদ জং ধরা কয়েকটা মেডেল
বুকে ঝুলিয়ে আমার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে ।

আঁকিবুকি

আমি কেবল নদীর পাশে পাশে হাঁটতে থাকি
একা এবং একা একা গভীর দিনের অন্তরালে
তুমি তখন ছাতের কিনারে হয়তো রোদ ছুঁয়ে আছো
স্ট্রবেরি পাতার ভিড়ে আনমনে তাকিয়ে
না হয় ছেলেমেয়েদের সাথে খুনসুটি করো খুব
নয়তো অ্যালবামে ঢুকে ধুলো সরাও স্বাদু অতীতের
তোমার কথা ভাবা ছাড়া
আর কোন কাজ ছিলনা আমার
না ছিল ঘরের আঁধারে হঠাৎ আদর
না ছিল অরণ্যে অভিসার
চশমার কাঁচ তুমি মুছে দেবে বলে
তখনো জড়িয়েছিল আহ্লাদী প্রাক্তন ধুলো
গাঢ় নিঃশ্বাসের তাপে পুড়ে যাব বলে
পিচবোর্ডে পেনে আঁকা একলা রাস্তায়
হোঁচট খেয়েও হেঁটে গেছি সহস্র বার
তখনো স্ট্রবেরি পাতার ছাতে, কবিতার আনাচে কানাচে
জিজ্ঞাসু রোদ ফলে আছে তুমি জানো
তুমি সব বুঝতে পারো ঠিক
তবু মনের খাতায় শুধু হিজিবিজি আঁকিবুকি টেনে
বাষ্পছোঁয়া চোখে ধীর পায়ে বাইরে এসে দাঁড়াও ।

 

অবুঝ

চোখে যাতে চোখ না পড়ে
সে চেষ্টায় কোন খামতি ছিলনা তোমার
লোকটিরও
তবু হঠাৎ হঠাৎ
কৌতুহলী চোখ দুটি তুলে চকিতে জরিপ করেছ তাকে
তার ছোট ছোট আন্তরিক তুমিময় প্রগাঢ় কল্পনা
তখনো কি বেঁচে বর্তে আছে
পরখ করেছ বার বার উপেক্ষার আলপিনে
তুমি সঙ্গোপনে পুড়িয়েছ তার ওড়ানো স্বপ্নিল ফানুস
বিষন্ন সেই ছাই পড়ে আছে ছায়াপথে অলিতে গলিতে
একলা অটোয় যেতে যেতে
সানগ্লাসে জানালা ঢেকেছ তুমি
সিগন্যালে থেমে গেলে উল্টোদিকে চেয়ে
শাড়ির বিজ্ঞাপনে আটকে দিয়েছ চোখ
যদিও তুমি শাড়িই পরো না
লোকটি তবু কিছু বুঝেও বোঝেনি, বড় আকাট অবুঝ
কাজল পেন্সিলে আঁকা অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে
অসমাপ্ত কবিতার অন্তরালে একান্তে সে লেখে
“খুব, খুউব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে” ।

 

অপেক্ষায় জেগে

বকুলের গন্ধ মেখে গলি শেষে দোতলার ঘর
বুকের আঁচল ফেলে একা একা আধশোয়া হয়ে
ঝোপে ঝাড়ে অন্ধকার ঢাকা দিয়ে রেখে
স্নিগ্ধ চাঁদের আলো ছাতা মেলে রয়েছে দাঁড়িয়ে

দূরে যেন আধো আধো মেঘ জড়ো হল
বুঝি বৃষ্টি ধুইয়ে দেবে জ্যোৎস্নার বুক
ছাতের আলসে জুড়ে টবে টবে ফলে আছে রঙ
অপেক্ষায় জেগে আছে দুটি ঠোঁট আদরোন্মুখ

অলসতা রাত্রির গায় আতরের মত লেগে আছে
দোতলার খোলা ছাতে আকাশটা নিচু
ছিনিয়ে নেওয়ার মত রাতের উঠোনে
ভালোবাসা থাকবে কি পড়ে অবশিষ্ট কিছু ?

বিধান জানা। কবি। জন্ম ১৯৬৯, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুকে (বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর)। পেশাগত জীবনে তিনি সরকারি চাকুরে। গত দশবছর ধরে কবিতা লিখছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

যাযাবর

যাযাবর

যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..