অমিতের মধ্যবিত্ততা

সুপ্রিয় সাহা
গল্প, পডকাস্ট
Bengali
অমিতের মধ্যবিত্ততা

অমিতের আজকাল ক্যামন ভাব নেশাচুর। নেশাচুর – নিশাচুর- নিশাচর। অদ্ভুত সব শাব্দিক মিল- কাকতালীয়! চালশের সাথে আরো নানান শারীরিক ঘুণ কিলবিল চল্লিশের পথে। মাঝে মাঝে শব্দহীনতা। এই সব অক্ষর ভাসছে, কিন্তু গ্যাছে হারিয়ে যেনবা। এই সকালের কফের সাথে দুটুকরো রক্ত যা বিকেলে ফর্সা। অদ্ভূত- তাই না? খবরের কাগজ সকালে নয়, অফিসে তার টাইম- গিন্নী এরকমটাই বলেন। অমিত সেসব জানে। জেনেশুনেও ছোঁ ছোঁ ভাব। কাটানো দায়। মাথার মধ্যে কিলবিলিয়ে বাজার ফর্দ, তালগোলে নোটপ্যাডটা বাঁচিয়ে দেয়। মোবাইল যুগান্তকারী। ভাবনা- নোটপ্যাড থেকে নোট বাদ। অক্ষয়কুমার একা নয় ওরকম প্যাড না হোক অন্তত দু চারটে প্যাডেল অমিতরাও ঘোরাতে পারে। মানে পারত। কিন্তু জাঁতাকল বড়ই নির্মম। যাগগে। আর তো দুই কুড়ি বড়জোর- বরাতজোর। তবে মানুষের আয়ু বৃদ্ধমান, বাড়ন্ত নয় চালের মতো, সে এক চিন্তা।

নোটপ্যাডকে ফাঁকি দেওয়া মজার। কিছুভি মালুম পড়ে না তার। চা-বিস্কুট এর এন্ট্রি সেখানে না থাকলেও অমিত তা সাবড়ে দ্যায় দোকানে। প্যাড বিলকুল বেকুব। হা হা। কাউকে তো বোকা বানানো যায়। কব্জি উল্টে সময় গোনে। টাইম আজকাল ‘জি’ তে চলে। ‘জি’ তে নাকি দেশও চলে। তাতে আর অমিতদের কি! হামলোগ গরীব নয় মধ্যবিত্ত আদমি আছে সাবজী।

চিন্তা ছোঁয়াচে। কদিন আগে এক সাউথ মুভিতে এই মধ্যবিত্ততা নিয়ে বেশ ভালো ডায়ালগ ছিল- পেঁয়াজের দাম চারটাকা বেড়ে যাওয়ার খবরে আমরা মানে মধ্যবিত্তরা এক্সট্রা কয়েক কেজি পিঁয়াজ কিনে রাখি বা পেট্রোলের দাম কয়েক পয়সা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে  মাঝরাতের আগেই লাইন লাগিয়ে ফুল ট্যাঙ্কি- এই ভয় এই ভবিষ্যৎ নড়ে যাওয়ার চিন্তা আমাদের জীবন জুড়ে বিরাজ করে। এসব ছোঁয়াচে। অমিত এই ডায়লগের মধ্যে আরাম খুঁজে পায়, মানে নিজেকে পায় আরকি! সব্জিওয়ালা তাগাদা মারে, বাবু আর কী দেব? সম্বিৎ ফিরে অমিত আবার ‘প্যাডনোটে’ ডুব লাগায়।

শিল্পী: রিয়া দাস

(২)

মেয়েটা মাঝেমধ্যেই আসে। ফিকে রং। ফড়িং ফড়িং চঞ্চলতা। ডুব সাঁতারু।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জ অমিত কখনও যায় নি। সে বুদ্ধদেব গুহ ও নয়। তার কোন প্রেমিকাও নেই। বুকে হু হু বাতাস খেলেনা তবুও কী যেন ক্যামন করে যেন মেয়েটা আসে যায়।

ইতিহাস বইছে। ক্লাশ টেনের ঘরে সামান্য চঞ্চলতা। মহেঞ্জোদারো এক মৃতের স্তূপ। সেভাবে দেখলে সমস্ত প্রাচীন নগরীই এক একটি মৃতভূমি। অমিত পড়ায়- একদিন টিকালো নাক, ঘোড়ায় টানা রথ নিয়ে আর্য় নামক এক জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে এই সিন্ধু সভ্যতায়। ধ্বংসলীলা শুরু হয় ইন্দ্রের নামে। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে তারা। রক্তের মিলন ঘটে দ্রাবিড়ের সাথে এক বৈদেশিক ভাষাভাষীর।

সেদিন একটু জলদি ফিরে স্কুল থেকে। বাড়িতে এখন কেউ নেই। একা সে। বউ ছেলেকে নিয়ে গেছে টিউশনি। অন্তত ঘন্টাখানেকের একটা স্লট এখন অমিতের। নিজস্ব। দ্রুত জানালা গুলো আটকে জামাপ্যান্ট খুলে ফেলে। বেডরুমের আলমারির লম্বা আয়নাটা ওকে কভার করে। অন্য এক সত্ত্বা। অমিত ওর নাক দেখে, টিকালো নাকি ভোঁতা? ওর গায়ের রং কি ফর্সা? নাকি দ্রাবিড়ীয়? আর্য় দের কি ভুঁড়ি ছিল? হয়তো তখন ছিল না, পরবর্তীতে এটা অভিযোজন। এবার নিজের যৌনাঙ্গের দিকে তাকায়। ও তাকাতেই ওটার মধ্যে হালকা প্রবাহ। কোন কারন নেই। নাকি আছে কিছু সাবকনসাসীয় কারন? নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে এসে যাওয়া সাইজের লোক কি আর্য় হতে পারে? বুঝে উঠতে পারে না ও।

আয়নায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মাথার মধ্যে নানান ভাবনা কিলবিল করে। এ দেশীয় মেয়েদের কি আর্য়রা লুটে নেয় নি? শুধুই কি বৈবাহিক বন্ধন, কোথাও কি কোন জোর খাটেনি, কেউ কি কাউকে তুলে নিয়ে যায়নি? নিশ্চই গেছে এবং তারপর দিনের পর দিন সুখ উপরে নিয়েছে- ওর মনে হয়। এসব মনে হতেই লিঙ্গ টানটান। ও মেয়েটাকে খোঁজে। অন্তত মুখটা মনে করার চেস্টা করে। কিন্তু মনে আসে না। মানুষ স্বপ্ন মনে রাখতে পারেনা বেশিদিন।

(৩)

সন্ধ্যা গুলো বড্ড একঘেয়ে। গোঙানির শব্দ ভেসে আগে। সিলিরালের নায়ক তার পুরোনো প্রেমিকাকে খুঁজে পায়।

অমিত নিজেকে ঘর বন্দী রাখে। এত দ্রুত মানসিক বার্ধক্য কড়া নাড়ে- সে ভয় পায়। আগামীর দিকে তাকালে একটা ডায়ালিসিস রুম ভেসে ওঠে। আজকাল মাঝেমধ্যে ঘুমের বড়ি নিতে হয়। মেয়েটা মাঝে মাঝে উঁকি দেয়। ওর সাথে একদিন হারিয়ে যাওয়া যায় না? সারাদিন , গোটা একটা দিন পালিয়ে লুকিয়ে বেড়ানো। মেয়েটার কোলে মাথা রেখে তার ঠোটের দিকে তাক করা চোখ। কিমবা ম্যাটিনি শোয়ে ব্যালকনির চাপা অন্ধকার কর্নার। কিভাবে প্রেমিক হয়ে উঠতে হয় সেসব ওর আর কোনদিন শেখা হয়ে উঠবে না।

ওর এক কলিগ এসব শুনে কিছুদিন আগে বলেছিল, তোর সেস্কুয়াল স্যাটিসফেকশন নেই। প্রত্যেক পুরুষের এটা হয় একটা সময়। তুই অন্য কিছু ট্রাই কর। কিছু না করতে পারলে স্বমৈথুন-ই ট্রাই কর। আর এটা খারাপ নয়। প্রোস্টেটের প্রবলেম থেকে বাঁচতে আর কিছু বছর পর তোকে মাঝে মাঝে এর উপরেই ভরসা করতে হবে। তা তুই সেটা নাহয় একটু আগে থেকেই চালু কর। এতে ক্ষতি তো নেই কোন। বরং  স্বমৈথুন-ই বেষ্ট।

এসব শুনে ও কৈশরে ফিরতে চায়। ছোপদাগওয়ালা হাফপ্যান্ট। স্যাঁতস্যাঁতে লজ্জা। প্রথম হাত মারার দিনগুলো মনে পড়তে চায় না। অ্যালঝাইমার্স! নাকি গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব! বাথরুমে উঠে যায়। শ্বাস টেনে নিয়ে ভুঁড়িটা না কমালে লিঙ্গ হাপিস। বুক ভর্তি চুল। কিছু পাক ধরা। চিন্তা দানা বাধে না। ছোটবেলার পাশের বাড়ির মেয়েটাকে মনে পড়ে। বাথরুমের জানলায় উঁকি মেরে ওর স্নান দেখা। তারপর মেয়েটির চিৎকার আর সারা পাড়া মাথায়- নাহ, লাইন গুলিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছে। এরপর ওর নিজের বাড়ির কাজের মেয়েটির কথা- মাঝে মাঝে বুকের মাংস ব্লাউজ ভেদ করে- কিন্তু মুখে গুটকার পিক কিলবিল করে। স্কুলে নতুন জয়েন করা দিদিমণি- কোনো কোনোদিন টাইট সালোয়ারের উপর নকশিকাঁথা ব্রা’র উঁকিঝুঁকি- সেও তো নতুন জয়েন করা ফিজিক্স এর ছোকরাটার বাইক আঁকড়ে থাকে। ক্লাশ ইলেভেনের ফর্সা মেয়েটা…নিজের ভাবনাতেই চমকে ওঠে ও। কোথা থেকে কোথায় নেমে যাচ্ছে। নেমে যাওয়াই তো বলে একে নাকি! কে জানে! এই গোপন মুহূর্তে কে যে কাকে নিয়ে ভাবে সে একমাত্র ভগায় জানে। বৃথা চেস্টা চালায় একবার। ধুর! রাস্তা দিয়ে রামনবমীর একটা মিছিল উৎপাত করতে করতে বেরিয়ে যায়। বাথরুমের জানলা দিয়ে ওদের গেরুয়া পতাকা গুলো অন্ধকারে কালো লাগে। অমিত বেরিয়ে আসে। এভাবে হয় না, হবে না।

পাশের ঘর থেকে ছেলের প্রাইভেট টিচারের গলা আসে- এই ভারতবর্ষ ছিল হিন্দুদের। আমাদের উদারতার জন্যেই আমরা আজ মরছি। এখন আমরাই সংখ্যালঘু। এই গান্ধীজীর জন্যেই এই অবস্থা। তখনই যদি এটাকে হিন্দু রাস্ট্র ঘোষণা করা হত…অমিতের ইচ্ছে করে উঠে গিয়ে ছেলেটার গালে টেনে দুই থাপ্পর মারতে। একটা বাচ্চা ছেলের মাথাটা খাচ্ছে। কিন্তু ও বসেই থাকে। গিন্নীর আবার এই টিচারকে খুব পছন্দ। ছেলেটা নাকি খুব ভালো, এবং পড়ায়ও ভালো। অথচ অমিত নিজে ইতিহাসের লোক হওয়া সত্ত্বেও নিজের ছেলেকে পড়ানোর নাকি যোগ্যতা নেই- অন্তত বউ এর ভার্সন অনুয়াজী।

বারান্দায় উঠে গিয়ে দাঁড়ায় ও। প্রতিবাদ শব্দটার সাথে ওর বিচ্ছেদ ঘটেছে অনেক বছর নাকি কোনদিন তৈরীই হয়নি সম্পর্ক- মনে আনতে পারে না।

(৪)

জীবনে ভালো থাকার জন্য কিছুটা স্বার্থপর হওয়া জরুরী- অনেকেই বলেছে ওকে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবে। একা বেড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে যায়। কিন্তু ইচ্ছেটা ইচ্ছেই রয়ে যায়। সবাই মিলে যাওয়ার প্ল্যান করেও ভেস্তে যায় বারবার- এই ছেলের পরীক্ষা নয়তো টাকা পয়সার টানাটানি নয়তো এরকম কিছু একটা। সরকারী চাকরি মানুষকে গন্ডীবদ্ধ করে ফেলে। একটা ছোট্ট সীমারেখা। তার বাইরে যাওয়া মানা। পা বাড়ালেই ভিক্ষুকের ছলে রাবনের অনুপ্রবেশ।

স্কুলের স্টাফরুমটাও দিনদিন কেমন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। নবীন-প্রবীন ভাগাভাগি জোরদার। সেই ঘুরেফিরে আলোচনা ছুটি আর ডিএ তেই সীমাবদ্ধ। এখানেও অমিত বেশীরভাগই চুপ। ইউনিয়নের চাঁদা ঠিকঠাক দিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন আলোচনাতে সে নেই। মাইনে বাড়ুক সেটা তো সব্বাই চায়, কিন্তু তাকে বাড়ানোর জন্য আন্দোলনে রাস্তায় নামবে সে সাহস বা ইচ্ছে কোনটাই ও করে উঠতে পারেনি। অবশ্য বেশিরভাগজনই তাই। যত বীরত্ব সব এই অফিস রুমের চারদেওয়ালের ক্ষেত্রফলেই সীমাবদ্ধ।

কী অদ্ভূতভাবে সেই চিরাচরিত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও- ভাবে মাঝেমধ্যে। স্কুল, সংসার আর বাড়ির চৌহদ্দি এই তার জীবন। এর বাইরে যে ও ভাবেনি তা নয়। কলেজে পড়ার সময় ইচ্ছে ছিল ইউনিয়নের জিএস হবে, একবার বইমেলা ঘুরতে গিয়ে মনে হয়েছিল লেখক হবে, এক বন্ধু ফাইন আর্টসে একটি প্রদর্শনী দেখাতে নিয়ে গেলে মনে হয়েছে ছবি আঁকবে ও নিজেও, নিজের পুত্র জন্ম নেওয়ার পর মনে হয়েছে ওকে ডাক্তার তৈরী করবে, বিয়ের আগে ভেবেছে বৌকে নিয়ে চুড়ান্ত রোম্যান্স করবে, প্রতিবছর তিনবার করে বেড়াতে যাবে, সিনেমায় প্রতিবাদী নায়ককে দেখে মনে হয়েছে কাল থেকে রাস্তায় বেড়িয়েই সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠবে ও নিজে- কিন্তু মনে হওয়া আর হয়ে ওঠা এই দুটো শব্দের পার্থক্য সে নিজে এখন খুব ভালো করে বোঝে। তাই এখন আর কিছুই সে হতে চায় না।

অমিত একটু চেপে বসে অটোর পিছনে। একটা বছর বাইশের মেয়ে উঠছে। মেয়েটার গা দিয়ে হালআমলের মায়াবি পারফিউম ছড়ায়। অমিত হাত দুটোকে নিজের কোলে গুটিয়ে সেঁটে বসার চেস্টা করে। আজকাল বাসে বা অটোয় কোন মেয়ের পাশে বসতে বা দাঁড়াতে ওর ভয় করে। কোন কারনে যদি গায়ে গা লেগে যায় আর যদি মেয়েটা চিৎকার জুড়ে দেয়, এবং প্রত্যেকটা মানুষ যদি ওর দিকে আঙুল তুলে তাকায়- কী অদ্ভূত সব ভাবনা। আসলে এই ভাবনাটার কারন আছে। কদিন ধরে অমিত এটা ভেবেছে। ভেবে দেখেছে ওর মন অদ্ভূত ভাবে দুটো ভাগে বিভক্ত। একটা মন ওকে বলছে দূরত্ব বজায় রাখো। আর সাথে অন্যমন বলছে মেয়েটা যখন খোলামেলা পোশাকে তোমায় কিছু দেখাতেই চায় তবে তা দেখলে অন্যায় কোথায়?বা একটু ছোঁয়া লেগে গেলেই বা ক্ষতি কি? কিন্তু প্রথম মনের জোর বেশি সর্বদাই। তবুও অমিত মাঝে মধ্যে যে দেখে না তা নয়। এই যেমন এখন মেয়েটার হাটু থেকে উন্মুক্ত গোপালী পা, ক্লিভেজ থেকে হালকা কস্তূরীয় ঘ্রাণ, চুল দুএকটা উড়ে ওর মুখ ছুঁয়ে…ওর মনে পড়ে সেই কলিগের কথা যে বলেছিল তোর সেস্কুয়াল স্যাটিসফেকশন নেই। সত্যিই কি নেই? হয়তো তাই। দাম্পত্য এখন এক সিস্টেমের অংশমাত্র।

(৫)

মেট্রো থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টিটা শুরু হয়। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দুহাতে ছাতা খোলে। ছাতা সমেত হাতটা তিরতির কাঁপছে-টের পায়। পাশ দিয়ে ক্রমশ বহমান ব্যস্ত মানুষের ভীড়। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে সেই কলিগের পাঠানো এসএমএস টায় থাকা নাম্বারে আর একবার নজর বুলিয়ে কল করে। রিং শুরু হয়। অমিত ফুটপাথের ফাঁকা জায়গাটায় নেমে আসে। তখনও রিং হয়ে চলে। ওর অধৈর্য লাগে। বুকে ক্রমশ হাতুড়ি পেটা। হটাত ওপাশ থেকে অচেনা স্বর বড় আপন করে ডেকে নেয় ওকে- অমিত তো? তোমার ফোনের জন্যেই বসে ছিলাম এতক্ষন। তোমার তো আরো একটু আগে আসার কথা ছিল, তাই না?

ধুকপুকুনিটা গলা বেয়ে অন্দরে তলিয়ে গেলে অমিত স্বাভাবিক হওয়ার চেস্টা করে, হ্যাঁ, একটু লেট…

-হ্যাঁ ঠিক আছে, রাস্তাঘাটে তো একটু লেট হয়েই থাকে। শোন তুমি রাস্তাটা পাড় করে সোজা গলিতে ঢুকে, ডানদিকের দুটো বাড়ি ছেড়ে ইয়েলো কালারের একটা বাড়ি পাবে। ওর সামনে এসে একটা মিসড কল দাও, আমি নামছি।

ফোনটা ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। সামনের রাস্তাটা বড্ড ঘোলা ঘোলা আবছা। বৃস্টি আরো জোরে নেমেছে। ওর মনে হয় যেন ভাসিয়ে নিতে চাইছে এই জাগতিক মোহ। পা গুলো যেন ডুবে যাচ্ছে কাদার মধ্যে। নিজেকে কোনমতে এগিয়ে নিয়ে রাস্তা পার হয় অমিত। একটা ,দুটো বাড়ি ছেড়ে ওই তো দেখা যাচ্ছে ফ্যাকাশে হয়ে আসা এক হলুদ রং। কাঁপা কাঁপা পায়ে সে এগিয়ে চলে সেদিকে। মাতাল এক নেশাভেজা ঘ্রাণ । ভেসে আসে রঙ্গিং সুর। অমিত মোবাইল বার করে…

মেয়েটা মাঝেমধ্যেই আসে। ফিকে রং। ফড়িং ফড়িং চঞ্চলতা। ডুব সাঁতারু।

[ এই গল্পের অডিও শুনুন এখানে ]

জন্ম ১৯৮৭, দেবগ্রাম। পেশা - বিশ্ববিদ্যালয়ের অশিক্ষক কর্মচারী। সম্পাদিত পত্রিকা – ‘অলিন্দ’ এবং ‘ব্ল্যাঙ্ক স্পেস’। একমাত্র গল্প সংকলন ‘ঈশ্বর অথবা যৌনতার গল্প’ ২০১৫ সালে ‘নতুন শতক’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..