অলখে নিরঞ্জন

জয়দেব মাইতি
কবিতা
Bengali
অলখে নিরঞ্জন

অস্তিত্বের জন্য

আন্দাজের তীর ফসকে গেলো,
হতাশায় মরে বাজীগর ভুলের জন্য,
হোঁচট খাওয়া স্বাভাবিক না হ’লেও –
এবড়ো খেবড়ো পথের পথিক যারা,
মাঝে মধ্যে এমন সাজা পাওয়া ভালো।

শকুন শকুনের মাংস খায় সমতলে,
লোনাজলে ভরে বুক সম্ভ্রম লাগি নারী,
মন ম’জে – মারিত গন্ডার লুঠিত ভান্ডারে,
অতি দর্পে হতা লঙ্কা তারই ফল – এমন তো হতেই পারে চোরের মায়ের বড় গলা হ’লে।

‘এখনো সময় আছে বহু’ – আত্মশুদ্ধি চাই,
গোঁফ খেজুরে – ত্যাগ করে আত্মসুখ –
উজাড় ক’রে মন – অন্তরের মাইক্রোস্কোপে
ফেলে দ্যাখো – মেরে ফ্যালো জন্ম নেওয়া
নোংরা কীট যেটুকু ধরা পড়ে সবটাই।

 

অলখে নিরঞ্জন

সমাজের-বৃক্ষ পল্লবিত হয় – দূষিত পরিবেশের নিঃশ্বাসে,
কোন পত্রপুটে মঞ্জরী আসে খোঁজে মুক্ত আলো বাতাস।

কেউ পরিণতি পেয়ে ধন্য – ধীরে বার্ধক্যের ছোঁয়ায় বিবর্ণতা,
তারপর ঝ’রে পড়া বৃক্ষতলে নিঃশব্দে ঠিক সময় হ’লে।

দুর্ভাগ্য যার তাকে খুবলে খায় – ক্ষত-বিক্ষত হ’য়ে অকালে খসে –
অজান্তে বৃহৎ বৃক্ষে জন্মানো কতো চেনা-অচেনা লোভী কীট।

হারিয়ে যায় ঝরা পাতার ভিড়ে – কজনই বা কারন খুঁজে তার,
কিংবা প্রতিকার নিয়ে ভাবে – ভাবে আগামী দিনের কথা।

বুভুক্ষু কীট গুলো বেড়ে চলে সংখ্যায় – উল্লাসে উঠে মেতে,
ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি শাখা বেয়ে অন্য প্রশাখায়।

যেভাবে ভদ্র মুখোশধারী পশুগুলো –
এক সুন্দর জীবন তছনছ করে,
সুযোগ খুঁজে যেভাবেই হোক পেতে –
নতুন নতুন কোন শরীরের গন্ধ।

 

শখের কবি

শব্দগুলো খেলে বেড়ায় মনের ডালে,
ধরতে গেলে দেয়না ধরা পেছনে ফেলে –
লুকিয়ে পড়ে মগডালে পাতার ফাঁকে ফাঁকে,
বোকার মতো কলম চিবাই ডাকি তখন ‘মা’ কে।

ছন্দ খুঁজে পাগল যখন ভাবতে থাকি,
চিন্তার জাল কেটে পালায় ছন্দ-পাখি –
তাল কেটে যায় – মাত্রা সব হয় এলোমেলো,
কোনটা ছাড়ি কোনটা ধরি কবিতা খেই হারালো।

ভাবের ঘরে অভাব হ’লে – পড়লো তালা,
আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকি বিষম জ্বালা –
নাছোড়বান্দা হয়ে লিখি কতো কি হিজিবিজি,
বুঝতে না রি কোনটা বাজে কোনটাই বা কাজী।

দৈন্য-দশায় ভুগে – লেখা মরে অর্দ্ধাহারে,
মুচকি হেসে সরস্বতী চুপিচুপি কলম ধরে –
মা কি পারেন সইতে – এমন ক’রে কষ্টে থাকা,
বলেন – “ওরে পাগল, ইচছে হ’লেই যায়না লেখা”।

 

আরোহিনী

ভালবাসি আজও তাই –
আমি তোমায় নিয়ে লিখি কবিতা।
অসহনীয় তাপ প্রবাহের পর সেদিন সাঁঝে –
বৃষ্টি-ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচতে সে-ই গাড়ি-বারান্দায়
চল্লিশোর্ধ তুমি কাক-ভেজা হ’য়ে দাঁড়িয়ে –
আমি এগিয়ে গিয়ে জিঞ্জাসা করার আগেই
তুমি ব’লেছিলে – “ঠিকই ধরেছো,আমি সেলিমা!”
বাইশ বছর কতো খোঁজার পর তোমায় পেয়ে
আবেগে আনন্দে তোমার হাতটা ধরে বলেছি –
“তুমি শেলী,আমার সেই শেলী!”
নিরুত্তাপ কন্ঠে আলতো হেসে বলেছিলে –
“আজও আমাকে তোমার মনে আছে?”

তোমার পাঠানো চিঠিটা পেয়েছি।
তুমি সেদিন তোমার ঠিকানা না দিয়ে –
আমার ঠিকানা নিয়েছিলে – পাছে চলে যাই
তোমার ঠিকানায় – তোমায় কাছে পেতে।
বাবার চিকিৎসা,ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে
অনেক দূরে গেলে চলে,ভাই আজ বিদেশে,
তুমি দুরারোগ্য এইচ আই ভি নিয়ে নিঃসঙ্গ –
নিজেকে রেখেছো সবার অন্তরালে।
আজও তুমি কতো ভালবাসো তা বুঝেছি –
যদি কাছে চলে যাই – ঠিকানা দিলে না তাই;
আমার লেখা তোমার অবসরের সঙ্গী লিখেছো,
তুমি নিশ্চয়ই এ লেখা কোন একদিন পড়বে –
সেদিন বুঝবে শুধু তোমারই প্রতীক্ষার প্রহর গুনি,
সব লেখা তোমার প্রেরণা,জাতিভেদ কখনো
আমাদের অভিন্ন হৃদয় ভেঙে দিতে পারেনি,
শুধু তোমাকেই আমি চাই – চাই একই বৃন্তে
দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান হ’য়ে হাতে হাত রেখে
দুজনায় ভালবাসতে – অন্তিম প্রহর গুনতে।

জয়দেব মাইতি। কবি।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..