করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
ভূতুড়ে এবং অতিপ্রাকৃত কাহিনী শুনতে আমরা কে না পছন্দ করি? ছোটবেলায় মা, ঠাকুমা, দিদিমা দের মুখে শোনা মেছোভূত, শাঁকচুন্নি, রাক্ষসীদের গল্প দিয়ে আমাদের অতিপ্রাকৃত জগতের রহস্যময়তায় বিচরণ শুরু। আরেকটু বড় হলে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার, অশরীরি প্রেতাত্মা, জিন্দালাশ ইত্যাদি বিষয়ক বই পড়ে গা ছমছমে ভাব নিয়ে রাতে বিছানায় শুতে যাওয়া (অবশ্যই রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেখে)! এসব স্মৃতিতো সহজে ভুলবার নয়। তবে আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন একটু বেশি ভাগ্যবান (সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য সে বলতে পারবো না), যারা এইসব ভূতুড়ে কিংবা অতিপ্রাকৃত ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী। তাদের চাক্ষুষ প্রমাণের কারণে অন্যান্যরা জ্বিনে ধরা কিংবা অশরীরি দেখার মত অলৌকিক ব্যাপারসমূহকে সহজে ‘ফুঁহ’ বলে উড়িয়ে দিতে পারে না।
কথা হচ্ছে, যারা দাবি করেন নিজের চোখে ভূত-প্রেত দেখেছেন তাদের মধ্যে সবাই না হলেও কেউ কেউ আসলেই সত্যি কথা বলছেন। তবে এক্ষেত্রে তারা যেটাকে অশরীরি জাতীয় কিছু দেখার বা অনুভব করার দাবি করছেন সেগুলোর আসলে বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যা আছে। সত্যি কথা বলতে কি, এদের বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাগুলো মূল অশরীরি দেখার কাহিনীর থেকেও বেশি চমকপ্রদ। যেমন-
১. ইডিওমোটর এফেক্ট (Ideomotor Effect)
‘ওইজা বোর্ড (Ouija Board)’ এর কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। ওইজা বোর্ডের মাধ্যমে জীবিতরা মৃত মানুষদের আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এর অস্তিত্ব বহু পুরনো হলেও মুলত ১৮৪০ কিংবা ১৮৫০ সালের দিকে এটা স্পিরিচুয়ালিস্টদের মাধ্যমে আধুনিক মানুষদের নিকট ব্যাপক পরিচিতি পেতে শুরু করে। ওইজা বোর্ডের মাধ্যমে মানুষজন তাদের প্রিয় মৃত মানুষদের সান্নিধ্য পেতে স্পিরিচুয়ালিস্টদের শরণাপন্ন হতে থাকে। এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় এই বোর্ডের ধারণাটা খুবই সরল। বোর্ডে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর, নাম্বার, এবং ‘হ্যাঁ-না’ জাতীয় উত্তরবিশিষ্ট কিছু শব্দ থাকবে। মানুষেরা একটা কাঠজাতীয় বস্তু, যেটাকে ‘প্ল্যানচেট’ নামে ডাকা হয়, সেটার উপর হাত রেখে অশরীরিদের ডাকবে। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই অশরীরি আসার পরে তাকে জীবিত মানুষেরা কিছু প্রশ্ন করবে। সেই প্রেতাত্মা তখন প্রশ্নের জবাব দিবে ঐ প্ল্যানচেট নামক কাঠের বস্তুটাকে এক অক্ষর হতে আরেক অক্ষরে সরিয়ে নিয়ে নিয়ে বানান করে করে।
আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে ‘Table Tilting’ বা টেবিল ঝাঁকুনি পদ্ধতি। এতে কয়েকজন একটা টেবিলের উপর দুই হাত স্থাপন করবে। তারপর গভীর ধ্যানের মাধ্যমে তারা একজন মৃত ব্যক্তির আত্মাকে আসতে আমন্ত্রণ জানাবে। সেই মৃত আত্মা আসামাত্র টেবিল নিজে থেকেই ভয়ংকরভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠবে। কখনোবা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এটা কিছু সময়ের জন্যে এক পায়ের উপর ভর করে বাকিটা মেঝে হতে শূণ্যে উঠে যাবে। পরিস্থিতি বেশি বেগতিক হলে এটা সারা রুমে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াবার মত দাবিও করা হয়েছে।
শুরু থেকেই অনেক প্রতারক এইসব ধাপ্পাবাজির সাথে জড়িত ছিলো। কিন্তু সবাই-ই কি ধাপ্পাবাজ?
এই প্রশ্নের জবাব পেতে পাঠকদের নিয়ে যাচ্ছি সরাসরি বিজ্ঞানী ‘মাইকেল ফ্যারাডে’র কাছে। চমকে উঠলেন? না, প্ল্যানচেট করে জনাব ফ্যারাডের ভূতকে আমাদের পেইজে নামিয়ে আনা হয়নি! ইন্টারনেটে ভূতে আছর করা পেইজ দেখতে কেউই পছন্দ করে না! বরং আমরা এই ব্যাপারে তার জীবদ্দশায় করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করছি। তিনি অতি বুদ্ধিমত্তার সাথে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন- টেবিলের এই নিয়ন্ত্রণহীন নড়াচড়ার মূল কারণ হচ্ছে আসলে ‘ইডিওমোটর প্রভাব’। এটা হচ্ছে সেই অবস্থা যখন ‘অটোসাজেশান’ ক্ষমতার প্রভাবে আমাদের অবচেতন মন বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ গ্রহণ করতে শুরু করে এবং সেই সাজেশান অনুযায়ী অবচেতন মন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নড়াচড়া করতে নির্দেশ দেয়। এই নড়াচড়া অবচেতন মনের নির্দেশে হয় বিধায় এটা পুরোপুরি অনৈচ্ছিক।
প্ল্যানচেট শুরুর আগেই লোকেরা ধরে নেয় টেবিল নড়াচড়া করবে। সেটা মনের অজান্তেই অটোসাজেশানের মত করে অবচেতন মনে পৌঁছে যায়। যখন অবচেতন মনের সাজেশানের ফলে এরকম চার-পাঁচজন মিলে পেশীর অনৈচ্ছিক নড়াচড়ার শিকার হয়, তখন সেই পাঁচজনের দশটা হাতের অনৈচ্ছিক নড়ন-চড়নে টেবিল যে উড়ে গিয়ে জানালা দিয়ে রুমের বাইরে পড়ে না এটাই বেশি! ১৮৫৩ সালের এক পরীক্ষায় দুই দল ভলান্টিয়ারদের একদলকে গোপনে বলা হয়েছিলো টেবিল বামদিকে নড়বে। আরেকদলকে বলা হয়েছিলো টেবিল ডানদিকে নড়বে। দুই দলকে একসাথে বসানোর পর ‘সেশন’ শুরু হবার অনেকক্ষণ বাদেও দেখা গেলো অশরীরির কোন পাত্তা নেই। টেবিল কোনদিকে নড়ে না। এর কারণ হলো, বামদিকের আর ডানদিকের বলপ্রয়োগ সমান হয়ে যাবার কারণে টেবিল স্থির হয়ে ছিলো। কিন্তু যখন সবাইকে বলা হলো টেবিলটা শুধু ডানদিকে নড়বে, তখনই দেখা গেলো অশরীরি এসে হাজির হয়েছে আর টেবিল ঐ নির্দিষ্ট দিকে তার কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে।
একই নীতি প্রয়োগ করা যায় ওইজা বোর্ডের ক্ষেত্রেও। কাঠের যে নির্দেশিকাটা আমাদের আসরের ‘মিডিয়াম’ ধরে রাখে, তার পেশীর অনৈচ্ছিক নড়াচড়ার কারণেই অবচেতন মন হতে কাল্পনিক সব নির্দেশ পেয়ে সে বানান করে করে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে থাকে।
২. অটোম্যাটিজম (Automatism)
আত্মাদের সাথে যোগাযোগের আরেকটা উপায় হলো ‘চ্যানেলিং’। এটাই সম্ভবত মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতি যেটা দিয়ে আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করা হতো। চ্যানেলিং এর ব্যাপারটা হলো- একদম পরিচ্ছন্ন, নির্ঝঞ্জাট মনে ধ্যাণে বসতে হয়। মহাজাগতিক চেতনায় নিজেকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে হয়। তখন বহু শতাব্দী আগে মারা যাওয়া কারো আত্মা এসে সেই জীবিত মানুষের শরীরে ভর করে। প্রাচীণ সব ধর্মের পুরোহিতরা দাবি করতো মৃত আত্মাদের সাথে তাদের যোগাযোগের ক্ষমতার। লাইভ টিভি শোতেও অনেকে এই ধরণের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। J.Z. Knight নামক এক মিডিয়ামের দাবি তিনি ‘রামথা’ নামক এক ৩৫,০০০ বছরের পুরনো আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, যে কিনা হারিয়ে যাওয়া নগরী ‘আটলান্টিস’ এর বাসিন্দা ছিলো। যথারীতি এখানেও ধাপ্পাবাজদের অভাব নেই। কিন্তু যারা প্রকৃতই এটার চর্চা করে থাকেন তারা? তাদের এই ক্ষমতার ব্যাখ্যা কি?
ব্যাখ্যা হলো ‘অটোম্যাটিজম’, যেখানে তথাকথিত ভূতে ভর করা ব্যক্তি কি বলছে বা কি করছে সেটার প্রতি কোন খেয়ালই তার নেই। যখন ‘সাইকিক’ তার ধ্যানে বসেন তখন শুরুতেই তিনি সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনকে প্রস্তুত করে নেন সেখানে এক অশরীরি এসে ভর করার জন্যে। প্রচলিত ধারণা হলো অশরীরি এসে তার ভেতর ভর করবে এবং তাকে জগতের গোপনীয় সব জ্ঞান প্রদান করবে। বাকি সবাই মনে করবে এটা আসলে অন্য স্তরের কোন অস্তিত্বের মারফতে আসা জ্ঞান।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেটা ঘটছে সেটা হলো- সাইকিক বা মিডিয়াম তার অবচেতন মনের অতি অতি গহীণে হারিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষেরা সবসময় এত সহজে মনের এত গহীনে ডুব দিতে পারেনা। কিন্তু একবার যদি কেউ ডুব দিতে পারতেন তবে দেখতেন সেখানকার চিন্তা-ভাবনা কত বিচিত্র। কতবার আপনি জীবনে প্রায় শূণ্য হতে উড়ে আসা একেকটা আইডিয়া হতে অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন? হিসাব নেই। এমনো হয়েছে সেইসব আইডিয়া মনের ভেতর আসার আগপর্যন্ত আপনি এমন কোন ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিতই ছিলেন না।
বাস্তবে আসলে আপনি উঁচুস্তরের কোন অস্তিত্বের মারফতে নতুন ধ্যান-ধারণা পাচ্ছেন না। আসলে আপনি আপনার মস্তিষ্কের অবচেতন অংশটাকে ঘাড় ধরে বসিয়ে অফিসে ওভারটাইম করাচ্ছেন।
৩. পরিচলন (Convection)
আপনি একটা ভূতুড়ে বাড়ীতে গেলেন গভীর রাতে। সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় আচমকা গায়ে একটা ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা লাগলো। আপনি চমকে সেখান হতে একটু পাশে সরে গেলেন। দেখলেন এখানকার বাতাসটা ঠিকই আছে। আগের স্থানটার মত অতটা ঠান্ডা নয়। প্যারাসাইকোলজিস্টরা এটাকে বলেন ‘কোল্ড স্পট’। ভূত শিকারীদের মতে কোল্ড স্পট হলো “পুকুরের নির্দিষ্ট অংশে ছিপ ফেলে মাছ ধরা”র মত ভূত ধরার জায়গা। যখন প্রেতাত্মারা অলস সময় কাটায় তখন হাতের কাছে শিকার পেলে তারা শূন্য হতে আমাদের জগতে আবির্ভূত হয় আর ঐ বেচারা মানুষটাকে ভয় দেখিয়ে মজা পায়। এই শূন্য হতে আমাদের জগতে আবির্ভূত হতে শক্তি বা energy’র প্রয়োজন। তাই ভূতেরা যেই জায়গায় আবির্ভূত হয় সেই স্থানের তাপ শোষণ করে ফেলে।
এটাতো গেলো প্যারাসাইকোলজিস্টদের ‘বিজ্ঞানভিত্তিক (!)’ মতবাদ। এবার আসুন শুনি, বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানভিত্তিক মতবাদ। বিজ্ঞানীরা যেমন বোরিং মানুষ, তাদের তত্ত্বগুলোও তেমন বোরিং। তাদের মতে এটা ‘বায়ুর পরিচলন’ প্রক্রিয়া ব্যতিত আর কিছুই নয়। অনেক ‘শীতল স্থান সম্বলিত’ বাড়িই ঘুরে দেখা গেছে সেখানে কোন ঘুলঘুলি কিংবা চিমনির মত জায়গা আছে যেটা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ভিতরে প্রবেশ করছে। যেহেতু ভিতরের পরিবেশ নিস্তব্ধ, গুমোট- তাই বায়ুর পরিচলন অতি সামান্যমাত্রায় হয়ে থাকলেও সেটা ধরা পড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু পুরোপুরি বদ্ধ রুমের ভেতরে এটা কিভাবে সম্ভব? সেটাও সম্ভব। প্রতিটা বস্তুর আলাদা আলাদা তাপমাত্রা আছে। কোন কোন বস্তুর পৃষ্ঠদেশ অন্য কোন বস্তুর পৃষ্ঠদেশ হতে কোন কারণে একটু বেশি উত্তপ্ত হয়ে থাকতে পারে। তখন ‘কক্ষ তাপমাত্রায়’ নেমে আসার জন্যে সেই উত্তপ্ত পৃষ্ঠ তাপ ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে। বায়ুর পরিচলন প্রক্রিয়ায় গরম বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে পড়ে এবং ঠান্ডা বাতাস মাটির কাছাকাছি নেমে আসে। একইভাবে যখন অনার্দ্র বা শুকনো বাতাস কোনভাবে একটা আর্দ্র বাতাসসম্পন্ন বদ্ধরুমে প্রবেশ করে, তখন সেই অনার্দ্র বাতাসটা মাটির কাছাকাছি চলে যায় এবং বাতাসের আর্দ্র অংশটা চলে যায় উপরে ছাদের কাছাকাছি। এর ফলে আপনি টের না পেলেও ঐ বদ্ধরুমেই বাতাসের একটা মৃদু ঘূর্ণন শুরু হয় যেটার সংস্পর্শে এলে ঠান্ডা, গা শিরশিরে অনুভূতি হয়। সুতরাং এরপর হতে ঘরে এমন ‘কোল্ড স্পট’ খুঁজে পেলে ভূতের আছর দূর করতে তাবিজের বদলে রুম হিটারের ব্যবস্থা করুন!
৪. বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশান (Electric Stimulation)
যারা ভূত দেখার ঘটনার সাক্ষী তারা সবাই স্বীকার করেন ছায়ামূর্তির মত অবয়ব দেখার। এই ছায়ামূর্তিরা চোখের কোণায় কিছু মূহুর্তের জন্যে দেখা দিয়েই এরপর হাপিস হয়ে যায়। অনেকে মনে করেন এই ছায়ামূর্তিরা হচ্ছে পিশাচ। কেউ মনে করেন এরা সময় পরিভ্রমণকারী, পরিভ্রমণের মাঝে একমুহুর্তের জন্যে শুধু দেখা দিয়ে গেছে। আর কারো কারো মতে এরা সব হচ্ছে এলিয়েন!
কিন্তু ছায়ামূর্তি দেখে শক খাবার পেছনের বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাটাও যথেষ্ট শকিং। সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক এপিলেপ্সিতে (Epilepsy) আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশান দেয়ার সময় তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়া ছিলো ভয়াবহ। সেই রোগী জানালেন তিনি তার সামনে ছায়ার মত একটা অবয়ব দেখতে পাচ্ছেন যে কিনা সেই রোগীর প্রতিটা নড়াচড়ার হুবহু অনুকরণ করছে। যখন রোগী উঠে বসছেন তখন সেই ছায়ামানবটাও উঠে বসছে। যখন তিনি সামনে ঝুঁকে হাঁটু স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন তখন ছায়ামূর্তিটাও তাই করছে। বিজ্ঞানীরা তখন রোগীকে একটা কার্ড দিয়ে সেটার লেখাগুলো পড়তে বললেন। কিন্তু তখন রোগী দেখলো ছায়ামূর্তিটা তার হাত হতে কার্ডটা টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে!
আসলে যা ঘটেছিলো তা হলো, বিজ্ঞানীরা সেই রোগীর মস্তিষ্কের বামপাশের টেম্পোরোপ্যারাইটাল জাংশান (Left Temporoparietal Junction)-এ স্টিমুলেশান দিচ্ছিলেন। সহজ কথায় বলতে গেলে, এটা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের সেই অংশ যেটা পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে আমাদের শরীরের অবস্থান কোথায় এবং কি অবস্থায় আছে সেই তথ্য প্রতি মূহুর্তে আপডেট করে থাকে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে এটা আমাদের আপন অস্তিত্ব এবং অপরের অস্তিত্ব বুঝাতে সহায়তা করে। যখন বিজ্ঞানীরা এই অংশটায় স্টিমুলেশান দিচ্ছিলেন তখন এর পুরো কার্যপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে লাগলো। ফলে রোগী তার নিজের শরীরকে বুঝতে ব্যর্থ হলেন আর একই সময়ে তার দৃশ্যপটে একটা ছায়ামানবের জন্ম হলো যে কিনা ঐ রোগী যা করে সেটারই অনুকরণ করে চলে।
বিজ্ঞানীরা বর্তমানে উপলব্ধি করেছেন এই পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে শুধু সুস্থ মানুষদের ভূত দেখাই ব্যাখ্যা করা যাবেনা, বরং স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা কেন তাদের আশেপাশে উদ্ভট সব জিনিসের অস্তিত্ব অনুভব করে সেটাও উপলব্ধি করে সেই অনুযায়ী তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে।
কথা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় সুস্থ মানুষদের ভূত দেখতে হলেতো প্রাকৃতিকভাবে বাইরে হতে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশানের প্রয়োজন। কারণ তাদের মস্তিষ্কতো আর স্কিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের মত স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেখানে সেখানে ভূত দেখার জন্যে তৈরি হয়নি। এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র আসবে কোথা হতে?
তাহলে চলুন পরের পয়েন্টে।
৫. ইনফ্রাসাউন্ড (Infrasound)
আপনি কি জানেন- এই পর্যন্ত যেসব স্থানে ভূতের দেখা পাওয়া গেছে দাবি করা হয়েছে, সেই সবকটা স্থানেই বিজ্ঞানীরা যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রচন্ড প্রতিক্রিয়াশীল তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন? এইসব ক্ষেত্রের উৎস কি সেটায় যাবার আগে ভূত দেখার আরেকটা কার্যকারণ উল্লেখ করে নেই। সেটা হলো ‘ইনফ্রাসাউন্ড (Infrasound)‘।
গবেষক ‘ভিক ট্যান্ডি’ তার ল্যাবরেটরিতে একাকী কাজে ব্যস্ত থাকার সময় হঠাৎ একটা ধূসর রঙের ছায়ামূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন তার ডেস্কের কিনারা ধরে। প্রথমে তিনিও ধরে নিয়েছিলেন তার কর্মক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ভূতের আছর হয়েছে। তাই সেদিনকার মত কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে একলাফে সিঁড়ি এবং পরের লাফে তার গাড়িতে গিয়ে উঠলেন। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ায় তিনি ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই পরদিন তিনি তার অফিসে গিয়ে কক্ষটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। তখনই একটা ব্যাপার তার চোখে পড়লো। গবেষক ভিক ছিলেন ‘ফেন্সিং (Fencing)’ খেলার ভক্ত। তিনি তার ফেন্সিং খেলার স্টিলের তরবারিটা দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তিনি খেয়াল করে দেখলেন সেটা নিজে থেকেই কেমন যেন কাঁপছে। তখনই পুরো ব্যাপারটা তার মাথায় ‘ক্লিক’ করে উঠলো। তিনি উপলব্ধি করলেন যে বলের কারণে তরবারিটা কাঁপছে, সেই বলের কারণেই তিনি ভূত দেখতে পেয়েছিলেন। ভিক আসলে ইনফ্রাসাউন্ডের কারসাজির শিকার!
আমাদের মানুষদের শ্রবণক্ষমতার সীমা নিম্নে ২০ হার্জ হতে উপরে ২০,০০০ হার্জ পর্যন্ত। ২০ হার্জের নিচের কোন শব্দই আমরা শুনতে পাইনা। এই সীমার নিচের শব্দকেই বলে ইনফ্রাসাউন্ড। আমরা ইনফ্রাসাউন্ড শুনতে পাইনা, কিন্তু সেটার কম্পন ঠিকই অনুভব করতে পারি। ইনফ্রাসাউন্ড প্রতিনিয়ত আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অতি মৃদু কম্পনের কারণে হঠাৎ বিষন্নতা হতে শুরু করে অস্থির অস্থির লাগা পর্যন্ত অনেক কিছুই ঘটতে পারে আপনার সাথে। ইনফ্রাসাউন্ডের কারণে অনেকে গাড়িতে চড়ার সময় বমি করে থাকেন। ডঃ রিচার্ড ওয়াইজম্যান বলেন, “আমরা এই তরঙ্গগুলোকে অনুভব করে থাকি সবসময়, বিশেষত আমাদের পাকস্থলীতে, এবং এর ফলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া যেমন ঘটতে পারে (কোন কারণ ছাড়াই মনে ফূর্তিভাব চলে আসা) তেমনি নেতিবাচক অনুভূতিও হতে পারে (হঠাৎ অস্বস্তি লাগতে থাকা)। যদি আপনার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উপযুক্ত হয় তবে এই তরঙ্গরা আপনার মনে হঠাৎ তীব্র আতংকের সঞ্চারও করতে পারে”।
ইনফ্রাসাউন্ড প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হতে পারে ঝড়ো আবহাওয়া হতে (ভূত দেখার পারফেক্ট সময়), বিজলী চমকানো হতে, দমকা বাতাস হতে, এমনকি নিত্য ব্যবহার্য আসবাবপত্র হতেও! চলুন ফিরে যাই ভিক ট্যান্ডির ঘটনায়। তিনি যখনই ইনফ্রাসাউন্ডের ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন তখনই তিনি খুঁজতে লাগলেন অফিসকক্ষে নতুন কি সংযোজন করা হয়েছে যার ফলে হঠাৎ এই তরঙ্গের আগমন। তিনি খুঁজে পেলেন একটা নতুন পাখা ভেন্টিলেশন সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি এই পাখাটার ব্যাপারে জানতেন না। যন্ত্রপাতি দিয়ে মেপে দেখলেন পাখার কারণে ঠিক ১৯ হার্জ সমমানের তরঙ্গ উৎপন্ন হচ্ছে, যা কিনা আমাদের নিম্নতম শ্রবণসীমা হতে মাত্র এক হার্জ কম। এই কম্পনাংকের তরঙ্গ ট্যান্ডির চোখকে মৃদু মৃদু কাঁপাচ্ছিলো যার কারণে তিনি চোখের সামনে উদ্ভট ছায়ামূর্তি দেখতে পাচ্ছিলেন। যখন ট্যান্ডি মেইন্ট্যান্যান্সের লোকজন ডাকিয়ে পাখাটাকে বন্ধ করালেন তখন অনুমান করুন কি ঘটেছিলো? আর কোন ভূতের অস্তিত্ব নেই!
একইভাবে ডঃ ওয়াইজম্যান বিশ্বাস করেন এই কম্পনগুলোই আসলে প্যারানর্মাল বা অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলীর জন্যে অধিকাংশে দায়ী। উদাহরণস্বরুপ,আন্ডারগ্রাউন্ডের দুইটা ভূতুড়ে জায়গা পরিদর্শন করতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখলো দুই জায়গাতেই টানেলের উপরের রাস্তার গাড়িঘোড়ার চলাচলের কারণে ইনফ্রাসাউন্ডের ব্যাপক উপস্থিতি।
৬. কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া (Carbon Monoxide Poisoning)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ‘উইলিয়াম ভিলমার (William Wilmer)’ ১৯২১ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অব অফথালমোলজি’তে একটা আজব ধরণের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। সেই গবেষণাপত্রে তিনি একটা পরিবারের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। সঙ্গত কারণেই তিনি পরিবারটির নাম প্রকাশ করেননি। তিনি তাদের পরিবারকে সম্বোধন করেছিলেন ‘এইচ (H)’ আদ্যাক্ষর দিয়ে।
তো আমাদের এই ‘এইচ’ পরিবার যে বাড়িতে বসবাস করছিলেন সেই বাড়ি কিভাবে কিভাবে যেন ভূতের আড্ডাখানা হয়ে গিয়েছিলো। তাদের বাড়িতে দরজা-জানালা অযথাই ধড়াম ধড়াম শব্দ করে বন্ধ হয়ে যেত। রুমের আসবাবপত্রগুলো নড়াচড়া করতো। আর সবচেয়ে বড় এবং বিরক্তিকর ব্যাপার যেটা সেটা হলো বাড়ির খালি কক্ষগুলোতে কারো হাঁটাচলার এবং দৌড়াদৌড়ির শব্দ পাওয়া যেত। ঐ পরিবারের এক শিশু একবার স্পষ্ট অনুভব করেছিলো তার কোলের উপর কে যেন বসে আছে। আরেকবার এক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য দেখলেন অপরিচিত কে যেন তাকে মারতে তেড়ে আসছে! এক রাতে ঐ বাড়িরই এক মহিলা সদস্য দেখলেন তার বিছানার পাশে একজন পুরুষ এবং আরেকজন মহিলা যুগলবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু খানিকবাদেই তারা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
মানুষ যেরকম একটা হাসির ব্যাপার দেখে শুরুতে খুব হাসলেও এক পর্যায়ে ব্যাপারটা একঘেয়ে হয়ে দাঁড়ায়, ভয় কিংবা আতংকের ব্যাপারটাও তেমনি। আপনি কোন একটা জিনিস দেখে যতই ভয় পাননা কেন, ঘন ঘন দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে সেটাও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এইক্ষেত্রে সাথে বোনাস হিসেবে পাবেন হতাশা এবং বিষন্নতা। আমাদের সেই ‘এইচ’ পরিবারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। এক পর্যায়ে পুরো পরিবার বিষন্ন এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু তারা এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছিলো না।
ঠিক এমন সময় তাদের হতাশাগ্রস্ত জীবনে আলো হয়ে এলো একটা ছোট্ট আবিষ্কার। পরিবারের একজন দেখলো তাদের বাড়ির ফার্নেসটাতে মারাত্মক ত্রুটি আছে। ফার্নেসটার কাজ ছিলো বাড়ির ভেতরের সব বিষাক্ত গ্যাসকে চিমনি দিয়ে বাইরে বের করে দেয়া। কিন্তু এর বদলে সে গ্যাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো সারা বাড়ি। দেখা গেলো আমাদের পুরো ‘এইচ’ পরিবার কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার শিকার!
কার্বন মনোক্সাইড (CO) হচ্ছে গন্ধবিহীণ, বর্ণবিহীন বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ। উন্মুক্ত পরিবেশে এই গ্যাসকে সহজে শনাক্ত করা যায় না। আমাদের মানবশরীরের রক্ত যত সহজে অক্সিজেন শোষণ করতে পারে ঠিক তত সহজেই কার্বন মনোক্সাইডও শোষণ করে ফেলতে পারে। এর ফলে দেখা দেয় শারিরীক দূর্বলতা, বমি বমি ভাব, দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদির মত উপসর্গ। রক্তে এই বিষক্রিয়ার মাত্রা সামান্য একটু বেশি হলে মানুষ মারাও যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা সেটা হলো মৃত্যুর দিকে আগানোর সাথে সাথে এই বিষক্রিয়ায় আপনার ভেতরে হ্যালুসিনেশানের মাত্রাও বাড়তে থাকবে।
১৯২১ সালে কোন একটা জার্নালে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়াজনিত ক্ষমতা প্রকাশ পাওয়া আর ২০১৫ সালে মঙ্গলে বহমান পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া একইরকম চমকপ্রদ ঘটনা। কারণ রোগীর পশ্চাৎদেশ দিয়ে তামাকের ধোঁয়া প্রবেশ করানো সেই আমলের ডাক্তারদের নিকট খুবই জনপ্রিয় চিকিৎসা ছিলো! অনেক ডাক্তার রোগীদের ধূমপানের ব্যাপারেও উৎসাহ দিতেন।
যাই হোক, রসিকতা ছেড়ে মূল বক্তব্যে ফিরে যাই। এখন প্রশ্ন হল- কার্বন মনোক্সাইডের উৎস কি কি হতে পারে? উপরেতো একটা পেলেন যে ত্রুটিপূর্ণ ফার্নেস হতে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে। আরেকটা হচ্ছে সিগারেট। এছাড়াও আরো হতে পারে ডিজেল এবং পেট্রোলচালিত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি, গ্যাসের চুলা এবং লাকড়ির চুলা। একটা দরকারী তথ্য হচ্ছে- যে চুলায় আগুনের শিখা নীল সেই চুলার থেকে হলুদ আগুনের শিখাবিশিষ্ট চুলা সাধারণত বেশি কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে থাকে। এর মানে এই নয় যে নীল শিখার চুলায় কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয় না। অবশ্যই হয়, কিন্তু পরিমাণে কম।
২০০৫ সালে একজন মহিলা ৯১১ তে ফোন দিয়ে বললেন তার বাথরুমে নাকি তিনি ভূত দেখতে পাচ্ছেন। পরে খুঁজে দেখা গেলো বাথরুমের ওয়াটার হিটারে লিক আছে যেটার মাধ্যমে পুরো ঘর কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে ভরে যাচ্ছিলো।
সুতরাং এরপরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিংবা কোন খালি বাড়িতে কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে যদি ধুপধাপ লাফালাফির শব্দ, প্রেতাত্মাদের রক কনসার্টের বাদ্য-বাজনার শব্দ শুনতে পান আর ছুরি হাতে কাউকে তেড়ে আসতে দেখেন, তাহলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার আগে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড জাতীয় বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। আর জেনে রাখুন- “ধুমপান জ্বিন-ভূত দেখার জন্যে উপকারী”!
৭. ফসফিন (Phosphine) এবং মিথেন (Methane)
যারা গ্রামাঞ্চলে থাকেন তারা ব্যপারটা ভালো জানেন। রাতের আঁধারে টর্চ নিয়ে পুকুরে আর ডোবার কিনারায় কিনারায় ঘুরছেন মাছ ধরার জন্যে। কিংবা মাছ ধরা নয়, এমনিতেই বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন কোন কাজে। হঠাৎ দেখলেন ডোবার ধারে জঙ্গলের মত জায়গায় এক টুকরো আলো ভেসে বেড়াচ্ছে। সেটা এদিক সেদিক বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিশ্চয়ই পরীর কাজ! যারা সাহসী তারা একটু এগিয়ে গেলেন পরীটাকে ধরতে। কিন্তু দূর্ভাগ্য, কাছে যেতেই আপনার উপস্থিতি টের পেয়ে আলোটা নিভে গেলো। পরী আপনাকে দেখে উড়ে চলে গেছে!
ইংরেজিতে এই আলোটাকে বলে ‘Will-o’-the-wisps’. বাংলায় ডাকা হয় ‘আলেয়া’ নামে। এর আগে একটা ভূতুড়ে ঘটনার ব্যাখ্যায় আপনাদের নিয়ে গিয়েছিলাম মাইকেল ফ্যারাডের কাছে। আজকে চলুন যাই ‘আলেজান্দ্রো ভোল্টা (Alessandro Volta)’র সাথে দেখা করতে। ১৭৭৬ সালে আলেজান্দ্রো ভোল্টা সর্বপ্রথম মিথেন গ্যাস আবিষ্কার করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সন্দেহ করেছিলেন আলেয়ার আলোর মত ভূতূড়ে ঘটনার পেছনে মিথেন গ্যাসের হাত আছে। তাঁর সেই তত্ত্বই পরে আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণা দিয়ে আরো নিখুঁত ও পরিশোধিত হয়েছে।
পৃথিবীর সব গাছপালা, পশু-পাখি, মানুষ মূলত জটিল হাইড্রোকার্বন জৈবযৌগের সমন্বয়ে গঠিত। এইসব জৈবযৌগের মূল উপাদান কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। এইসব জৈবযৌগ যখন উন্মুক্ত পরিবেশে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পঁচতে থাকে তখন বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হয় পানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কিছু পরিমাণ তাপ। কিন্তু যখন এইসব জৈবযৌগ পঁচার সময় উন্মুক্ত পরিবেশের অক্সিজেন পায় না তখন? ধরুন এরা খোলা বাতাসে পঁচার বদলে কোন পুকুর বা ডোবার পানির নিচে পঁচছে- সেই ক্ষেত্রে কি হবে? তখন বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হবে মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, ফসফিন ইত্যাদি।
প্রত্যেকটা দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেই এইসব আলেয়ার আলো নিয়ে অনেক বিচিত্র কিংবদন্তী ও গল্প প্রচলিত আছে। সবকটাতেই এই আলোর বিশাল অলৌকিক ব্যাপার-স্যাপারগুলো বেশ চটকদারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু আলজান্দ্রো ভোল্টার মত রস-কষহীন বিজ্ঞানীরা এসে যথারীতি পুরো ব্যাপারটার অলৌকিক মাহাত্ম্যকে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলেছেন।
৮. গণহিস্টেরিয়া (Mass Hysteria)
২০১৩ সালে বাংলাদেশের গাজীপুরের এক ফ্যাক্টরির প্রায় ৩০০০ গার্মেন্টসকর্মী কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলো। তারা বেতন বৃদ্ধি কিংবা বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে কোন আন্দোলনের কারণে রাস্তায় নেমে আসেনি। তারা রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলো কারণ তাদের ফ্যাক্টরির ‘মহিলা টয়লেটে’ ভূতের উপদ্রব হয়েছিলো! একটা ভয়ংকর রাগী ভূত নাকি মহিলা টয়লেটে ঢুকে সেখানকার মহিলাদের উত্যক্ত করে যাচ্ছিলো। কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরেও এই ‘ইভ টিজার’ ভূতের বিরুদ্ধে তারা কোন আইনী উদ্যোগ নেয়নি। নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের দূরের কথা, নিদেনপক্ষে একটা ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁক করানোরও প্রয়োজনবোধ করেনি। ফলে যা হবার তাই হলো। ৩০০০ শ্রমিক রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর শুরু করলো! পরে দাঙ্গা পুলিশ দিয়ে বহু কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছিলো।
এই মিথেন এবং ফসফিন গ্যাস যখন পানি ছেড়ে বুদবুদের মাধ্যমে ভেসে উঠবে এবং খোলা বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসবে তখন মিথেন গ্যাস ফসফিনের সাথে বিক্রিয়া করে নীল আলো উৎপন্ন করবে যেটাকে দেখা যাবে আশেপাশের বাতাসে ভেসে বেড়াতে। ফসফিন হচ্ছে দাহ্য গ্যাস যেটা বাতাসের সংস্পর্শে এলে স্বতস্ফূর্তভাবে জ্বলে উঠে। যখন ফসফিন বাতাসে জ্বলতে থাকে তখন এটা সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। ফলে সেই নীল আলোর চারপাশে একটা ধোঁয়ার মত অবয়ব চোখে পড়াও বিচিত্র কিছু নয়। যখন কেউ সেটাকে ধরতে যাবে তখন তার উপস্থিতিতে মিথেন এবং ফসফিন গ্যাসের মিশ্রণটা চারপাশে ছড়িয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে আলোটাও হারিয়ে যাবে। সুতরাং পরী ধরতে না পারার জন্যে দুঃখ করার কোনো কারণ নেই!
কাছাকাছি আরেকটা ঘটনা ঘটেছিলো থাইল্যান্ডের ফুকেট প্রদেশের পাতং নামক এলাকায়। সেখানে একসাথে ২২ জন ছাত্রছাত্রীকে মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিলো কারণ তারা সবাই একটা মহিলার অশরীরি প্রেতাত্মাকে দেখতে পেয়েছিলো। বাংলাদেশের ঐ ফ্যাক্টরি মালিক পরে তাবিজ-কবজ দিয়ে বাথরুম বন্ধ করে দিলেওথাইল্যান্ডের ঐ ঘটনার সুরাহা কি হয়েছিলো তা আর জানা যায়নি।
উভয়ক্ষেত্রেই যেটা ঘটেছিলো তা হলো- আসলে সবাই গণহিস্টেরিয়ার শিকার হয়েছিলো। এই ধরণের ঘটনা ঘটে শুধুমাত্র সেইসব পরিবেশে যেখানে সবাই প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধন্যবাদ জানাতে হয় এখানকার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে ১২-১৫ ঘন্টা শিফটিং ডিউটির জন্যে। আর থাইল্যান্ডের ঐ ঘটনায় ধন্যবাদ প্রাপ্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া কঠোর নিয়ম-কানুনের জন্যে। এই মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে শুরু হয় মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং হঠাৎ করে মেজাজ চড়ে যাবার মত উপসর্গের। সেই সাথে যোগ করুন এক মুঠ ধর্মীয় এবং সামাজিক বিশ্বাস, বহির্জগত হতে বিচ্ছিন্ন এক কর্মপরিবেশ আর এক চিমটি গুজব ও কানকথা। তারপর ভালোমত ঘুঁটা দিলে যে জিনিসটা দাঁড়ায় সেটাই হলো গণহিস্টেরিয়া।
বাংলাদেশের ঐ ফ্যাক্টরীর ঘটনায় পরে তদন্তে জানা গিয়েছিলো ৩০০০ শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক মানুষই টয়লেটে ঐ ‘ইভ টিজার’ ভূতটাকে দেখেছিলো। এমনকি যেই মহিলা শ্রমিকটা প্রথম ভূত দেখে আতংক ছড়িয়ে সবাইকে রাস্তায় নামিয়েছিলো সেও পরে স্বীকার করেছিলো যে ভূতটাকে সে নিজের চোখে দেখেনি। সে বাথরুমে গিয়ে কোন কারন ছাড়াই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলো। পরে যখন তাকে সেখান হতে উদ্ধার করা হলো তখন সেই সবাইকে জানিয়েছিলো- এটা আসলে কোন জ্বিনের কাজ (জ্বিন হলেও একটু ‘লুচ্চা’ টাইপের জ্বিন, শুধু মহিলা টয়লেটে ঢুকে নারীদেরকে হয়রানি করে- এই আর কি)! কিন্তু সেই জ্বিনতত্ত্বই এত শক্তিশালী হয়ে সবার মাথায় বাসা বেঁধেছিলো যে আরো দুই একজন পরে বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে সেই তত্ত্ব ভিত্তি পেয়ে যায় এবং আতংকে এক বিশাল জনগোষ্ঠী হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাস্তায় নেমে ভাংচুর শুরু করে।
সৌভাগ্যক্রমে পরবর্তীতে শুধু তাবিজ দিয়ে ঐ ফ্যাক্টরির বাথরুম বন্ধ করেই রক্ষা পাওয়া গিয়েছিলো। মহামতি লুসিফারের উদ্দেশ্যে কোন পশু কিংবা নরবলি দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি!
৯. আয়ন (Ions)
আয়ন হচ্ছে পদার্থের অণু যেটাতে প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের সংখ্যা ভারসাম্যাবস্থায় নেই। যদি কোন অণুতে অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন যোগ হয় তবে সেটা ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়। আর যদি অনু তার ইলেক্ট্রন হারায় তবে সেটা ধ্বনাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়।
কোনো পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত আয়নের উপস্থিতি ঘটলে সেখানে ভূতুড়ে সব ঘটনা ঘটতে থাকে। যেমন- অশুভ কোনকিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া হতে শুরু করে আচমকা একটা ছায়াকে ঘরের কোণায় সরে যেতে দেখা হয়ে বিচিত্র সব আওয়াজ শুনতে পাওয়া পর্যন্ত যেকোন কিছু।
এই ব্যাপারে প্যারাসাইকোলজিস্টদের ‘বিজ্ঞানভিত্তিক(!)’ ব্যাখ্যা হচ্ছে- ভূতেরা হলো আসলে এক প্রকার এনার্জি বা শক্তি। তারা যখন অন্য জগত হতে আমাদের দৃশ্যমান জগতে আবির্ভূত হয় তখন তাদের শনাক্ত করা যায় সেখানকার পরিবেশে আয়নের সংখ্যা গণনা করে। আর এই কাজে প্যারাসাইকোলজিস্টরা ব্যবহার করেন ‘আয়ন কাউন্টার (Ion Counter)’। সব প্রফেশনাল প্যারাসাইকোলজিস্টরাই এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভূতুড়ে সব জায়গায় অতি উচ্চমাত্রার আয়ন শনাক্ত করে অশরীরিদের উপস্থিতি প্রমাণ করে থাকেন।
এখন চলুন শুনি গবেষকদের কথা, যারা ল্যাবরেটরিতে নিয়মিত ‘আয়ন’ এবং ‘আয়ন মাপার যন্ত্র’ নিয়ে কাজ করে থাকেন। তাদের মতে– এসব যন্ত্রপাতি হচ্ছে ল্যাবে বৈজ্ঞানীক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে। ভূত-প্রেত শনাক্ত করার জন্যে নয়। যুক্তি হিসেবে বলা যায়, অতিমাত্রায় আয়নের উপস্থিতি যদি অশরীরিদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে থাকে তাহলে বৈজ্ঞানীক গবেষণাগারগুলো হলো সব ভূতেদের আখড়া। আর সেই হিসেবে ‘সার্ন (CERN)’ এর ল্যাবরেটরি হওয়া উচিৎ ভূতেদের হেডকোয়ার্টার।
মূল ব্যাপার হলো প্রকৃতির সবখানেই এসব আয়ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও কোথাও বিশেষ কোন কারণে আয়নের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সেটা খারাপ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই হোক কিংবা ফুটো হয়ে যাওয়া ওজোনস্তর দিয়ে বিকিরিত ক্ষতিকর সব সৌররশ্মির অনুপ্রবেশের কারণেই হোক। অনেকসময়রেডনের মত নিষ্ক্রিয় গ্যাসের কারণেও প্রকৃতিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়নের উৎপত্তি ঘটতে পারে।
বিজ্ঞানযাত্রার পাঠক হিসেবে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব আয়নের একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার কথা গোপনে জেনে রাখুন। এরা সর্বদা আপনার মন-মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে। যে পরিবেশে ঋণাত্মক বা নেগেটিভ আধানের সংখ্যা বেশি সেখানে সাধারণত আপনি বেশি ফুরফুরে ও শান্ত মেজাজে থাকবেন। আর যে পরিবেশে ধ্বনাত্মক বা পজিটিভ আধানের সংখ্যা বেশি সেখানে আপনি মাথাব্যথা হতে শুরু করে সহজেই তীব্র অবসাদে আক্রান্ত হবেন। এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বড় যুক্তি যে- কেন ভূতুড়ে বাড়িতে বসবাসকারীরা সবসময় তীব্র মাথাব্যথা, অস্থিরতা এবং অবসাদে ভোগেন।
১০. স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis)
জীবনে কতবার ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখেছেন একটা বীভৎস শয়তানের মত কিছু আপনার বিছানার পাশে বসে আছে আর সেটা শক্ত করে আপনাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছে? আপনি নড়তে পারছেন না, এমনকি মুখ ফুটে শব্দও বের হচ্ছে না। কেউ হয়তো একবার, কেউ দুইবার বা তিনবার জীবনে এই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। কেউ কেউ আবার এইধরণের ঘটনার নিত্যদিনের সাক্ষী। যারা পরের ক্যাটাগরিতে পড়েন তাদের দশা একপ্রকার করুণই বলা চলে। তাদের গলায় পাঁচ পদের, হাতের বাহুতে সাত পদের আর কোমরে তের পদের তাবিজ-কবজ সর্বদা বয়ে নিয়ে চলতে হয়।
কিন্তু এই ঘটনা ঘটার কারণ কি? কেন হঠাৎ জ্বিন-পরীরা আপনার প্রতি এত আকৃষ্ট হয়ে পড়লো? ঘটনা আর কিছুই না- স্লিপ প্যারালাইসিস।
যারা স্লিপ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু প্যারালাইজড অবস্থায় থাকার সময় বিছানার পাশে দুই-চারটা জ্বিন-পরী বসে থাকতে দেখেননি তাদের সংখ্যা ‘পুরোপুরি শূন্য’। পৃথিবীর প্রত্যেকটা স্লিপ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিই তার মাথার কিংবা পায়ের দিকে অশুভ কিছু একটা বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকার অস্তিত্ব অনুভব করেছেন।
আসল ঘটনায় যাবার আগে আমরা কিভাবে ঘুমাই সেটা একটু বলে নেই। আমরা যতক্ষণ জেগে থাকি এবং কাজ করি আমাদের শরীরে ‘এডেনোসিন (Adenosine)’ জমতে থাকে এবং আমরা একটু একটু করে ক্লান্ত হয়ে পড়তে থাকি। যখন আমরা ঘুমাই তখন মূলত এই এডেনোসিনগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হতে থাকে। আমরা যখন ঘুমাবার জন্যে শুই তখন শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘মেলাটোনিন (Melatonin)’ হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর কাজই হলো পুরো শরীরে তন্দ্রাভাব এনে দেয়া। আবার যখন শরীর জাগতে শুরু করে তখন মেলাটোনিন সরে গিয়ে সেখানে ভীড় করতে শুরু করে ‘কর্টিসল (Cortisol)’। এই হরমোনের কাজ হলো শরীরকে জানান দেয়া যে ঘুম মোটামুটি ফুরিয়ে এসেছে।
ঘুমের সময় আমাদের শরীরকে প্যারালাইজড করে রাখা হয় আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই (আপনার পাশে যিনি শুয়ে আছেন তার নিরাপত্তাও এইক্ষেত্রে বিবেচ্য)। এই ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক চক্রাকারে পাঁচটা ধাপ অতিক্রম করে। স্টেজ-১, স্টেজ-২, স্টেজ-৩, স্টেজ-৪ এবং রেম স্লিপ (Rapid Eye Movement Sleep)। এর মধ্যে স্টেজ-১ হলো সবচেয়ে হালকা ঘুম। আর স্টেজ-৪ হলো সবচেয়ে ভারী ঘুম। এই স্টেজের ঘুমে থাকা মানুষগুলোকে জাগানো খুব কঠিন।
স্লিপ প্যারালাইসিস ঘটে তখনই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শরীর জাগার আগেই আমাদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি জেগে উঠে। যখন সে টের পায় শরীর এখনো জেগে উঠেনিতখন শুরু হয় হ্যালুসিনেশান। শরীর কেন জেগে উঠেনি সেটার ব্যাখ্যা দাঁড়া করাতে সে ঘোরের ভেতরে থেকেই জ্বিন-পরী-ভূত ইত্যাদি আপনার আশেপাশে পয়দা করতে শুরু করে। কিন্তু যখনই আপনার শরীরে অনুভূতি ফিরতে শুরু করে তখনই দেখবেন এইসব ভূতেরা একে একে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।
অনেক সময় স্লিপ প্যারালাইসিসের উলটো ঘটনাও ঘটে। এটাকে বলে ‘হিপনিক মায়োক্লোনিয়া (Hypnic Myoclonia)’। এইক্ষেত্রে মস্তিষ্ক পুরোপুরি জাগার আগেই শরীর জেগে উঠে। ফলে দেখা যায় সেই অশুভ আত্মারা আপনার হাত কিংবা পা ধরে হ্যাঁচকা টান মারছে, বিছানা হতে টেনে ফেলে দিচ্ছে, কিংবা আদর করে(!) মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। সর্বনিম্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনার মনে হচ্ছে কেউ আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, অথচ আপনি বিছানার উপরেই শুয়ে আছেন। অর্থাৎ স্টেজ-৪ এর ঘুমে থাকার সময় শরীর আচমকা জেগে ওঠার ব্যাপারটা অনেকটা কোন গাড়ি সরাসরি চতুর্থ গিয়ারে স্টার্ট করার মত। যারা গাড়ি কিংবা বাইক চালান তারাই ব্যাপারটা বুঝবেন।
যেহেতু এখন স্লিপ প্যারালাইসিস সম্পর্কে জানলেন সুতরাং এটা নিয়ে এখন আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক একটা ঘটনা। কিন্তু যারা একটু বেশি ভুগছেন এই ধরণের সমস্যায় তারা জলদি ডাক্তার দেখান। এটা আপনার ঠিকমত ঘুম না হওয়াজনিত সমস্যা।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..