আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
কাল শাহানারা লিখেছে আমাকে “ধর্মদ্বন্দ্ব ছাড়ো”।
গোপা তো আমাকে কেবলই বলে “কবি হে নজর কাড়ো।
তোমার কবিতা তুমি লেখ রোজ আকাশকে নিয়ে লেখ”।
শাহানারা বলে”আকাশের মতো উদার হতে তো শেখো।
আকাশের কোনও জাতপাত নেই ধর্ম মানে না সে”।
গোপা বলল”কবির কবিতা লেগে থাক ঘাসে ঘাসে।
ধর্মধ্বজা সূর্যেরও নেই হাসিমুখে ওঠে পূবে
মেঘ করলেই সেই হাসিমুখ হঠাৎই তো যায় উবে।
আজ পৃথিবীতে মেঘেরা মেঘেরা মিলিত হয়েছে এসে”।
শাহানারা বলে”মেঘের ভিতরে বৃষ্টিও থাকে হেসে।
মেঘকে বৃষ্টি ভালবাসে খুব মানে না ধর্ম-জাতি”।
গোপা বলল”দিকে দিকে করে মানুষই তো বজ্জাতি।
এই যে এত গাছগাছালি পাখিদের কলরব
মানুষই তাদের নাম দিয়ে ভাবে মানুষেরই যেন সব”!
শাহানারা বলে”ওরা মানুষকে কৃপা করে পদে পদে
তফাৎ শুধু দুনিয়াতে আছে নানা নদী নানা নদে”।
গোপা বলল”কবি তুমি লেখ যুদ্ধবিরোধী কথা
কখনও এনো না তোমার লেখাতে শ্মশানের নীরবতা!”
শাহানারা বলে”কবরের কথা নাই লেখ যদি কবি
পৃথিবীতে শুধু মানুষই থাকবে বাদবাকি হবে ছবি!
গাছ যদি থাকে পাখি আসবেই থাকবেই জলাশয়
মানুষের সাথে দ্বন্দ্ব থাকবে থাকবেও পরাজয়”।
গোপা বলল”ধর্ম মানুষের স্বাভাবিকতার রেশ
কলিঙ্গের পরে ধর্ম বাঁচালো অশোকের এই দেশ।
ধর্ম হলো চিরাচরিত মানুষ করেছে বরণ”।
শাহানারা বলে”ধর্মকে কেউ করতে পারে নি হরণ।
ধর্ম থাকুক ধর্মের স্থানে মন্দিরে-মসজিদে
ধর্ম কখনও মেটাতে পেরেছে নিরন্নদের খিদে”!
গোপা বলল”শোন না কবি তুমি মানুষের থাকো
হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদগুলি কেন তুমি গায়ে মাখো”!
শাহানারা বলে”কবিতা তোমার মানুষের কথা বলে
কখনও শুনি নি তোমার কবিতা ধর্মের সাথে চলে”!
গোপা বলল”ধর্মের নামে দ্বন্দ্ব বাড়ায় যারা
তোমার কবিতা পাহারা তো দিক যা আছে মনের পাড়া”।
শাহানারা বলে “কেন থাকো না গো বুদ্ধিজীবীর দলে”!
আমি বললাম কবিকে কখনও ওসব করলে চলে!
আবার একটা প্রেমের কবিতা লিখি
যদিও যুদ্ধ লেগেছে পৃথিবী জুড়ে
যদি কেউ পার কবিতাকে বেঁধো সুরে
বাঁচার যুদ্ধে আমিও তো কিছু শিখি।
পৃথিবী ক্রমে নিরন্ন হয়ে যায়
ভূখা মানুষেরা একা ঘরে হয় বন্দি
আমি কার্ল মার্ক্স-লেনিনেতে যত মন দিই
ততই আমার মন ভরে যায় কান্নায়।
তবুও গোপা-দীপ্তিরা রোজ জাগছে
সোমা-সোনিয়া-স্নিগ্ধারা পায় কষ্ট
পৃথিবী কি আজ সত্যিই দিকভ্রষ্ট
প্রদীপ্ত-অসীম মনে মনে খুব রাগছে!
জীবনের সাথে জীবনের বড় দ্বন্দ্ব
মৌসুমি আর পিয়ালিরা বলে শুনছ
পর্ণালি বলে আকাশকুসুম গুনছ
শ্রমিকের রুটি কৃষকের রুজি বন্ধ।
আমি যেন আজ নিজের সাথেই লড়ছি
পৃথিবীতে আজ আমিও হয়েছি একাকি
তুমি আর আমি দুজনের হবে দেখা কি
পাতার পরে পাতা “যোগাযোগ” পড়ছি।
মানুষে মানুষে তফাৎটা অভিসন্ধি
আইসোলেশনে ভাল নেই আজ পৃথ্বী
চাপা পড়ে যায় মানুষের যত কীর্তি।
এখন তোমাকে কিভাবে বল তো মন দিই!
কবে থেকেই মনটা আমার চাইছ
চৈত্র শেষ অশোকও তো ছুটি চাইছে
কে যেন এখনই বোশেখের গান গাইছে
“এসো হে বৈশাখ” তুমিও এখনই গাইছ!
গাও গাও এখনই প্রেমের গাও গান
আমিও তোমার সঙ্গে না হয় গাইছি
তোমার কাছে যেতেও আমি তো চাইছি
ঘরের বাইরে মানুষের যেন নেই স্থান!
তুমি আর আমি আমি আর তুমি বাঁচব
এভাবেই আজ মানুষ বাঁচতে চাইছে
শুনতে পাচ্ছ ঘরে বসে তারা গাইছে
বলছে ওরাই রবীন্দ্রগানে নাচব।
রাজা পারবে না রঞ্জনকে মারতে
রাস্তায় দেখো রাস্তায় বিশু-নন্দিনী
থাকবে না সীতা রাবণের হাতে বন্দিনী
পারবে না আর ভূখাদের ভাত মারতে!
আজ রা নেই কাল তো ভূখারা বলবেই
ঘরে কান পাতো ভূখারা আঁটছে ফন্দি
বুঝে গেছে ওরা রাষ্ট্রের অভিসন্ধি
আজ বন্দি কাল তো ওরা জ্বলবেই।
জ্বলবে ওরা দাউ দাউ করে নিত্য
দাউ দাউ করে আগুন জ্বালাবে সূর্য
শোন ঘরে ওরা বাজায় রণতূর্য
কার্ল মার্ক্স আর লেনিনের ভরে চিত্ত।
তারপরে তুমি বলবে তো ভালবাসছি
বলবে তো ফের তোমার হারানো গল্প
বোলো না আর সময় হাতেতে অল্প
বলবে তো ফের এই তো আমি আসছি।
তুমি চাইলেই ফের রাত ফুল ফুটবে
তখন দেখবে চাঁদ মিটিমিটি হাসছে
দেখব আমাকে কেউ রাতে ভালবাসছে
তুমি চাইলেই প্রেমের রক্ত ছুটবে।
অনেকের সাথে তোমাকে মেলে না যে
তুমি রয়ে গেছ ঠিক তোমারই মতো
সবাই যদি তোমারই মতন হতো
তোমার সাথে মেলাতে পারি নি সাজে!
যেমন করে সকালেতে তুমি সাজো
যেমন করে স্নান সেরে নাও ভোরে
আজও কি তুমি সিঁথিতে সিঁদুর পরো
আজও কি তুমি প্রেমের জন্য বাজো!
বড় ফাঁকা লাগে বড় একা লাগে জানো
ঘরে ঢুকলেই একা হয়ে যাই খুব
কই দিতে পারি প্রেমের সাগরে ডুব
আজ বলি তবে আমাকে কতটা জানো!
এখনও কি তুমি সমরেশ বসু পড়
রবীন্দ্রনাথ রোজ সকালেতে শোনো
সেই মন আছে দাগ লাগে নি তো কোনও
নিজের হাতেই রান্না কি আজও কর!
তোমার হাতের সব রান্নাই ভালো
তোমার হাতটা আজও কি মিষ্টি তেমন
তেমনই কি বল আগেতে বলতে যেমন
এখনও কি তুমি সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালো!
নতুন বইয়ের গন্ধ কি ভালবাসো
চে গুয়েভারা এখনও তোমার প্রিয়
কাউকে বল কি তোমার হাতেতে কি ও
এখনও কি তুমি তেমন করেই হাসো!
এখনও কি তুমি শাড়িতেই আছ বেঁচে
সন্ধেবেলায় থাকো না কি পথ চেয়ে
আড়ালে এখনও ওঠ বুঝি গান গেয়ে
আনন্দ পেলে ওঠ কি খুশিতে নেচে!
এসব জানার দরকার নেই জানি
তবুও মনটা কেমন গুমরে ওঠে
কতদিন ঠোঁট রাখি নি তোমার ঠোঁটে
তুমি চলে যেতে কত হলো কানাকানি!
কেন চলে গেলে সে কথা গেলে না বলে
জানো ইঙ্গিতে কিছুটা নিয়েছি বুঝে
আরও কতদিন একাকি যাব যে যুঝে
কতদিন মাথা রাখি নি তোমার কোলে!
কতদিন হাত দাও নি রোমশ বুকে
কেমন করে কাটিয়ে যাচ্ছ দিন
আমার মতনই তুমিও কি সঙ্গীন
জানি না কতটা নিজেকে রেখেছ সুখে!
যাবার সময় টিয়েটাকে নিয়ে গেলে
সে কি এখন ছটফট খুব করে
মাঝে মাঝে এখনও কি মাথা ধরে
এখনও কি ঘুমাও ঘুমের ওষুধ পেলে!
আজও কি লোকের কথাতেই মাতো বেশি
আজও কি আমাকে সন্দেহ কর বল
রাগে কি আজও তেমন করেই জ্বলো
আজও কি মানায় থাকলেই এলোকেশি!
কোনদিন তুমি আসবে না আর ফিরে
এসো যদি পারো আমি আছি ঘর খুলে
আবার এসে ফুল গুঁজে নিয়ো চুলে
জাগিয়ো ফের সেই ভালোবাসাটিরে!
আসার আগে নিজেকে তৈরি কোরো
এসো দুজনে দুজনার আগে হই
মন যদি গো দাঁড়াতে পায় না থই
সেই মন হয় অর্বাচীন আর পোড়ো।
তোমার চিঠিটা এই সবে শেষ করে
বিকেলের স্নানে নিজেকে মগ্ন করি
তোমার নামেই আজও সিঁদুর পরি
সমরেশ আজও উঠি নি সবটা পড়ে।
নিয়ম করেই ভোরেরবেলাতে উঠি
আজও কি তুমি ঘুমিয়ে তেমন থাকো
বিছানায় চা দিতে তো কাউকে ডাকো
সে কি মেনে নেয় তোমার সকল ত্রুটি!
ভোরেরবেলায় আজও রবীন্দ্র গাই
চে গুয়েভারা আজও নায়ক জানো
কারোর জন্য বাড়িতে কিছু কি আনো
চায়ের জন্য তোল কি কপট হাই!
কতদিন জানো চুলেতে গুঁজি নি ফুল
এখন বিনুনি কিংবা খোঁপাতে থাকি
ইচ্ছে করে না প্রদীপের আলো মাখি
অভ্যাস তাই কখনও হয় না ভুল।
এসে দেখে যেয়ো সময় যেদিন পাবে
আমি যেন আজও শাড়িতে মানানসই
কতদিন জানো কিনি নি নতুন বই
দেখা হলে বইপাড়ায় নিয়ে তো যাবে!
একটা কথা বলে দিই এই সুখে
চাকরি একটা জুটেছে কদিন হলো
আজও তুমি কি তেমন করেই ভোলো
দরকারি কথা লিখে রাখো নোটবুকে!
সন্দেহটা মেয়েদেরই শোভা পায়
তুমি আজও চুপ ঝগড়া-বিবাদ হলে
তুমি চুপ ছিলে যখন এসেছি চলে
ভাসিয়ে দিলে জনপদ দরিয়ায়!
যায় নি তো ডুবে জনসমুদ্র মাঝে
এখনও আমি আমার মতনই চলি
স্বপ্নে তোমাকে যতটুকু আজও বলি
মিল পাবে না জীবনের কোনও কাজে।
তুমি লিখেছ এখনও আমাকে চাও
আমিও তো ভাবি এখনও আমারই আছ
এখনও কি তুমি আমারই প্রেমেতে বাঁচো
বলতে পারবে ভালবাসাটুকু দাও!
এসব কথা তোমাকে লিখব বলে
চুলেতে তোয়ালে জড়িয়ে এসেছি ঘরে
তোমার সাথে কথা বলছি গো পরে
এমন দশা কি হতো তোমার হলে!
এই দেখো সেই তোমার দেওয়াই শাড়ি
কি ভাবে আছি বলব না চিঠিতে
অনুভব করে নাও দেখি স্মৃতিতে
মনে পড়ে তো দেখলে কেমন মারি!
কেন যে তোমায় খুব বেশি মনে পড়ে
তোমার কাছে আমিও তৈরি যেতে
চিঠিতে বুঝেছি আমাকে চাইছ পেতে
কতদিন কার ভাল লাগে একা ঘরে!
তোমার সাথে ঝগড়া হবে না আর
সন্দেহটা না হয় যাক না থেকে
ভোরেরবেলায় আমাকে নেবে তো ডেকে
স্নানেতে যাব না হয় পূণর্বার!
টিয়াপাখিটা জানো তো তোমায় খোঁজে
এখন ঘুমের ওষুধ লাগে না মোটে
কতদিন ঠোঁট লাগে নি তোমার ঠোঁটে
টিয়াপাখিটাও বিরহ বুঝি বা বোঝে!
সন্তান যদি একটা থাকত কোলে
তাতেই থাকত ব্যস্ততা দিনে-রাতে
আসতে পারতাম বল কোনও অজুহাতে
দেবে সন্তান সম্ভবপর হলে!
এখন আমি বিছানায় আধশোওয়া
হাতের ওপরে বুকের আঁচল খসা
আজ একা আমি নিজের সামনে বসা
ছাড়াতে শিখেছ কমলালেবুর কোয়া!
একলা ঘরেতে শব্দ কখনও হলে
ভেবেছি তুমি এসে গেছ নিশ্চয়
ভুল ভেঙে গেলে মনেতে পেয়েছি ভয়
ফিরে কি গিয়েছ আমায় কিছু না বলে!
আসতে পারতে সব কিছু কথা ভুলে
রাধার মতন মানভঞ্জন করে
আমায় নিতে তোমার মতন গড়ে
গুঁজে দিতে ফুল আমার এলোচুলে।
এসব কথা তোমায় লিখব ভাবি
কাগজ-কলম বিছানায় পড়ে আছে
সখাদসলিলে আমার এ প্রেম বাঁচে
তোমার কাছে আমারও তো আছে দাবি।
আমার মধ্যে নেই কোনও অভিমান
তোমার সঙ্গ আমার সঙ্গে থাকুক
তোমার আগামি আমার সঙ্গ মাখুক
আমিই শেখাব তাকে রবীন্দ্রগান।
নতুন করে আবার মাতব প্রেমে
না হয় আমি চাকরিটা ছেড়ে দেব
তেমনভাবেই তোমাকে জড়িয়ে নেব
এ প্রেম আর যাবে না কখনও থেমে।
একবার যদি আমার কাছেতে আসো
একবার শুধু নাম ধরে ডাকো এসে
আমিও তোমায় ডেকে নেব ভালবেসে
বলব আমায় আর একটু ভালবাসো।
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..