অ আ ই ঈ

ইমেল নাঈম
কবিতা
Bengali
অ আ ই ঈ

এভাবে ছুঁয়ে থাকা যায়। একটু প্রলোভন এঁকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে সত্যের অন্বেষণে। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে কাল্পনিক সুখ।

অথচ কেউ বলেছিলো, এখন শব্দ নয়, কেবল চুপচাপ অপেক্ষায় থাকো। সেই থেকে বৃক্ষের জীবন যাপন।

আকাশ দেখতে দেখতে বটবৃক্ষ নই, হয়ে গেছি বনসাই, তা না হলে কারো বাগানের শখের ক্যাকটাস। অনাহারী চোখের কাতরতা শেখাতে গিয়ে জীর্ণশীর্ণ শরীরে ফিরে আসি আপন কক্ষপথে, সে খবর কেউ রাখে না।

দৈনন্দিন জীবন আঁকড়ে নিয়ে ছুটে যাই দূরের বৃত্তে, কক্ষপথ এড়িয়ে যাই। শুরুতেই আঁকি সমাপন বিন্দু।

অটোসাজেশনে নিজেকে জানাইঃ
থেমে যাও…
শুদ্ধ হও…
পূর্ণ হও…

ভুলে যাচ্ছি মায়ার খেলা, এখানে চুপসে যায় আমাদের চাওয়া পাওয়া, গোপন সব হিস্যা।

কিছু হাহাকার! বুকের গহীনে চাপা দীর্ঘশ্বাস।
অলক্ষ্যে শুনি, সাদাকালো জীবনের হাসিখেলা—

ছড়িয়ে যায়, মায়া পেরিয়ে হেসে যাই আমরা প্রত্যেকেই। নীরবতাকে ছুটি দিয়ে ফেলে আসি পিছনের দরজায়। ভালোর আধার নিয়ে ছুটে চলা কৃত্রিমতার গাঙে। রূপকথা ফিরে আসে মলাটবদ্ধ কিছু গল্পের ভাঁজে।

উষ্ণতা আঁকছি। তোমার শরীরের ভাষা পাঠ শেষে দেখি, অপঠিত এক শীতকাল দাঁড়িয়ে গভীর শূন্যতা নিয়ে। দুর্নিবার আকর্ষণ আর মিথ্যে প্রলোভন— এ’দুয়ের হাতছানিতে বারবার আহত হচ্ছি মায়ায়।

খুলে দাও বুকের সকল গোপন জানালা,
দেখো সেখানটায় শালিকের আবাস—

ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি জীবনের সকল আয়োজন মিথ্যের প্রপাতে। উষ্ণতার মাপকাঠিতে উড়ে যায় শ্বেত বক। ডানা উড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তির শহরে।

এই শহরের বুকে চিহ্ন নেই প্রেমের
মরীচিকা গ্রাস করেছে স্মৃতি স্মারক…

ভুলের প্রাচীর ফেলে ছুটে যাই সামনে। ভয়ের মনস্তাত্ত্বিক খেলা শেষে জেগে থাকে দুটো মানুষ। তারা ব্যস্ত ভাঙনের খেলায়। সুশৃঙ্খল সবকিছুকে আঙুলের তুড়িতে নাচিয়ে চুপিসারে সটকে যায়। খেলাঘর ভাঙলে অদৃশ্য। খেলা শেষে বোঝা যায় আদত খেলার নামে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা।

বৃদ্ধ শহরে চুপিসারে নেমে আসে জীবনের নানান অধ্যায়, নানা ধাপ শেষে এখনো ভোরের অপেক্ষায় জেগে থাকে রাত। গল্প জমতে জমতে বিশাল স্তূপ আর স্মৃতির রোদ পোহানো শেষে মিশে যায় কুয়াশা প্রাচীর ফেলে দূরে। ফলত নীরবতা এখানে চুপিসারে পালিয়ে যায়।

মায়া ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে বারোয়ারি মেঘ, সেখানেও কানে ভাসে কেউ কারো নয়। আমাদের উপমাগুলো ব্যর্থ কিছু সংলাপ মাত্র। কমিটমেন্টের গায়ে ধুলো পড়ে বর্তমানে বালুর টিলা। বেশি সুখ স্মৃতি জমাট নেই স্মৃতির পাতায়, বিভ্রমের কোটায় ছেয়ে গেছে হৃদ-জমিন।

সরিয়ে ফেলছি মুখ, নির্বাক সময় দৌড়ে যায় খেলাচ্ছলে, এড়িয়ে যাচ্ছি ধৈর্যের সীমারেখা। অপেক্ষায় একদিন তুমুল ঝড় হবে, ভেসে যাবে ভালোবাসার ডিঙা। আমরা কেউ কারো জন্য অপেক্ষায় থাকবো না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্মরণ করবো না মুহূর্ত যাপনের খণ্ড চিত্র।

তোমাকে পড়াবো মধ্য দুপুরের বর্ণমালা

দূরত্ব যাপন শেষে পালায় ছায়া
সকাল খেলছে লুকোচুরি খেলা—

নিঃসঙ্গ হবো— খুঁজে পাবো না পথ—
বাড়ি ফেরার তাড়া গ্রাস করবে
ভিতরের দৃশ্যপট, শুধু হাতড়াবো…

গ্রহণ লাগবে— ঝাপসা হবে চারপাশ—
বৃক্ষরা শীতে জমে যাবে বৃদ্ধদের মতো,
বাড়বে আমাদের অলিখিত ঋণ

দর্জি বাড়িতেও রেখেছি চোখ,
রিফু করে নিবো বুকের ক্ষতস্থান—

তোমাকে পড়াবো মনকেমনের নামতা
শেখাবো পাড় ভাঙার মর্মর শব্দ,
কান পাতলেই শুনবে ভিনদেশী গান

তুমি অপেক্ষায় থেকো—
রিফু করে রেখেছি বুকের ক্ষতস্থান
তোমাকে শোনাবো নদীর শব্দ
বুকের গহিনে পাখির কলতান…

স্থগিত করে এসেছি। থমকেছে ইন্দ্রিয় অনুভূতি।
হঠাৎ স্তব্ধ হয়েছে পৃথিবী, নিজেকে আবিষ্কার
করি ভুল মানুষের সান্নিধ্যে, হতাশা চাপড়ে
জানান দিই নিজেকে। জীবন অ্যামিবার মতো…

পারুলের বন পেরোলে কিছুই বাকি থাকে না,
নিঃসঙ্গতার শেষ বিন্দুতে আদিম ঘ্রাণ থাকে
কান পেতে করুণ সুর বোঝার সময় এটাই,
চুপিসারে গল্পের ভাঁজে জমাট কিছু মায়াঋণ।

জলের ফোঁটায় লিখছে চোখ, তার ইতিহাস
মলিনতা ভেঙে জানান দেয় বাঁচার ইঙ্গিত
জীবনকে বয়ে নেওয়াতেও আনন্দ আছে

পুড়ে যাবার পরেও হাসে মানুষ। কী অশ্লীল!
পৃথিবী পুড়ছে, মুখোশের আড়ালে মুখ
ওদিকে বাড়ছে উষ্ণতা, বয়স্ক ঘোড়ার মতো
ক্লান্ত, নিষ্প্রভ পৃথিবী দেখছি প্রতিদিন।

সুশীলতার আবরণে ঢেকে ফেলেছি সব,
ভালো থাকার মন্ত্র শিখে অসুখে সবাই,
নিজেদের শেষ লিখছি। আগাম এপিটাফে
মৃত পৃথিবীর জন্য লিখে রাখছি এলিজি…

ইমেল নাঈম। কবি। জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬। বসবাস চট্টগ্রাম শহরের হালিশহরে। পড়াশোনা: বিবিএ, এমবিএ শেষ করে বর্তমানে সিএ পড়ছেন। তার পাশাপাশি কর্পোরেট জবও করছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি। প্রকাশিত বইঃ দেয়ালের ও'প্রান্ত পেরিয়ে (২০১৫, চৈতন্য প্রকাশনী), দূরবীন চোখ (২০১৮, চৈতন্য প্রকাশনী), সুদূরে শূন্যস্থান (২০১৯, স্বরচিহ্ন প্রকাশনী)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ