যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে কি
হারিয়েছি আকাশ…
হারিয়েছি মাটির উর্বরতা…
বৃষ্টির উচ্ছলতা
জ্যোৎস্না ভেজা চাঁদ। সত্যিকারের নির্ভীক ভোর।
খণ্ডিত শীর্ষের শিরস্ত্রাণ। সময়ের হৈ-হুল্লোড়।
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে কি
হারিয়েছি নাতিশীতোষ্ণ দেখা-দেখির ঝনৎকার
সাত্ত্বিক পৃথিবী।বাসি উঠোনে বিবাহিত ঘর-সংসার।
তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে কি
হারিয়েছি দু’হাতের সুগন্ধে ঘুম শরীরে ব্যস্ত প্রহর
নিজস্ব ছুঁচ-সুতোর ফোঁড় আগলে নিতে প্রিয় শহর।
তোমাকে কাছে পেতে কাছে যেতে চেয়েছি বলে কি…
জলের তোড় ভেঙে ছুটি খুঁজে নিতে
মেঘ-রোদ-বৃষ্টির অহংকার
আগাগোড়া গুছিয়ে-গাছিয়ে যে পথে তোমার আসা যাওয়া বারংবার।
এখন সত্তর ছুঁয়ে
পৌঁছে গেছি নিঃসঙ্গতার শেষপর্বে।
সোজা ভাবে হাঁটতে বসতে কষ্ট হয়।
বুকের ভেতর যতটুকু জীবন বেঁচে চশমা পড়েও দেখতে পাইনা।
মাথা ভর্তি কৃষ্ণঘন চুল এখন কতটা সাদার শুভ্রতা বুঝতে যাইনা।
ঘরদোর ছুঁয়ে নিতে হাত কাঁপে।
কথা জড়ায় ঠোঁটে।
তোমার কিশোরী স্বভাব কুর্তি ছেড়ে গায়ে জড়ালে শাড়ি
অজান্তে আমার যৌবন ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে নিতো।
তোমার যৌবন লুকোতে আনচান লজ্জার কাঁচুলি বুকভারি
আমার দু’হাত অন্যমনস্কতার ভেতর সরিয়ে নিতো।
হঠাৎ তোমার বিয়ে সারা হল সাত পাক
সানাই শঙ্খ উলুধ্বনির স্তুতির উপস্থনায়।
চোখের থেকে পানপাতায় লজ্জা সরিয়ে
হোমের আগুনে কুলোভর্তি খই ছড়িয়ে,সিঁথির সিঁদুরে ঘর আলো করে।
নতুন সংসারের অভিসারের অগোচরে একান্তসুখ
আমায় বিভোর করেছিল ভালোবাসার ভিক্ষার অসুখ।
চল্লিশ বছর আঁকড়ে আছি তোমার দেওয়া উপহার উষ্ণতার সখ্যতায়।
রবীন্দ্রনাথ, জীবনান্দ, অতুল প্রসাদ, রজনী কান্ত, সুকান্ত, কামিনী রায়
আরও অনেক নামি দামি বই আজও আলমারি ঠাসা।
এখন আর ঠিকমত যত্নআত্তি করতে পারিনা।
কাজের মেয়ে ইতি প্রায় কথা শুনিয়ে যায়।
বাবু! গোছালো বইগুলো খেয়ে যাচ্ছে উইপোকায়।
ঘুণে কাগজ ঝরে পড়ছে। কি হবে এ সব ছেঁড়া বই রেখে? ফেলে দিলেই তো হয়।
এখনও ওজনে বেচলে টাকা হয়। শুধু শুধু ঘর নোংরা হয়।
ঝাড়পোঁছ করতে প্রাণ যায়।
রোজ বইগুলোর উপর আঙুল বুলিয়ে সহজে বুঝি, তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী
মনের উতরোলে তোমার শিহরণ শরীরে বাজনার ঘোর ধরে অভিমান -ভাব-আড়ি।
অনেক দিন ধরে শ্রাবণী বিছানার উপর সংসার সাজিয়ে আধশোওয়া
এ পাশ ও পাশ করতে তার শ্বাস কুলোয় না। কথা বলতেও কষ্ট হয়।
তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় সে অনেককিছু বলতে চায়।
শ্রাবণীর শরীরে প্রাণ বলতে দেখি শুধু তার ঠোঁটের স্মিত হাসি।
ওইটুকু নিয়ে আমার ভোর আমার রাত্রি শুয়ে তার পাশাপাশি।
তোমাকে নিয়ে হল না আর আমার কবিতা লেখা বুঝতে পারি।
আমার একার জীবনে
শ্রাবণীর আকর্ষণে একটু একটু করে রোজ বেঁচে আছি।
তোমার স্পর্শের স্পষ্টতার গোপনে
অন্তঃপুরের অন্তর নিংড়ে মৃত্যুর মুখে অমৃত ধরে আছি। ।
আমি একটা সিঁড়ি খুঁজছি
দেওয়াল টপকে আকাশের কোঠায় যাওয়ার জন্য নয় ।
আমি একটা সিঁড়ি খুঁজছি
বিস্তীর্ণ স্থাপত্যের ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নয় ।
আরও নীচে নামতে চাই
মাটির শিকড় ছুঁতে চাই
দিগন্ত প্লাবিত মাটির গন্ধে দু’দণ্ড জিরিয়ে কবিতা লিখতে চাই।
কতটা তলে তলিয়ে গেলে মানুষ হতে পারি
কতটা উচ্চতা নামিয়ে পাথর ভাঙতে পারি
শ্রমের আনন্দে শরীর চাঙ্গার রঙে রাঙতে পারি।
চাইনা দুর্গা দুর্গা নামে ঠোঁট বাজিয়ে
শক্তির দুর্গতোরণ হাসিল করতে।
চাইনা হাতে ভিক্ষের ঝুলি বাড়িয়ে
ক্ষতের সুখবরণ দিন হাসিল করতে।
আমি শুধু একটা সিঁড়ি খুঁজছি
উঁচু স্থাপত্যের গরিমার পাঁজর তছনছ করে
স্থাপত্যের বিলাসিতার শোকেস থেকে বার করে
ঈশ্বর পরমেশ্বরকে মাটিতে নামিয়ে বলতে পারি
ঈশ্বর এবার খেটে খা। মানুষ হয়ে যা।
শ্রমের দু’হাত তুলে মাটির অরণ্যটবে জল দে
শিকড়ে শিকড় লাগুক মৃত্তিকার কলেবর মেদে।
কবির মৃত্যু নেই
আর কবিতা লিখে উঠতে পারিনা।
তবু লেখার কলম একলা ছেড়ে যেতে পারিনা।
যদিও নিঃশ্বাসের উচ্ছ্বাস বুকের পাঁজর ভেঙে শব্দেরা
উদ্বাস্তু আঙুলের স্পর্শ নিতে আর উৎসাহী নয়।
কবিতার খাঁচার ভেতর আকাশ তেমন নয় বলে…
এক এক করে শব্দেরা ঘর ছেড়ে চলে যায়
নিজের নিজের মৌচাকের বাসিন্দায়
গুঁজে অজস্র সখ্যতার শর্ত বালিশের তলায়।
রোজ দু’বেলা শব্দ খুঁজে বেড়াই …
এখানে সেখানে সাঁজোর বিলাসে। জ্যোৎস্নার আঁচে।
প্রেয়সীর সহবাসের গন্ধে। সকালের অগোছালো বিছানায়।
বাসি কাপড়ের কোঁচড়ে । ঘরদোরের ধুলোঝড়ে । এঁটো বাসনে।
উঠোনে পড়ে থাকা রোদের উত্তাপে। চায়ের চুমুকে। চুপ চুম্বনে।
স্নানের নগ্নতায় । প্রণামের আঙুলে। সংকোচের কাঁচে।
আড়ালে বুকভারি বারবনিতার দোরে। নির্বিশেষে ‘ইউজ মি’ ডাস্টবিনে।
প্রকৃতির দু’হাত ছুঁয়ে যায় আমার কবিতার শেষ পাতা।
রেখে যায় তার চোখের দৃষ্টির ছাপ। স্পর্শটুকুর অধিবাস।
নিঃশব্দতার নির্নিমেষ কোলাহলে জানিয়ে যায় দুর্দিনে
দুর্যোগে প্রতিবাদী হও। না হলে তোমার একদিন সর্বনাশ।
বৃষ্টি এসে ধুয়ে যায় কথার নিমিষহারা সোহাগ।
কবিতারা সুখে আছে। জীবনে আরো কিছু খোয়াক মেনে।
আমি আজও শব্দ খুঁজে বেড়াই কবির মৃত্যু নেই জেনে।
তোমার হাতে
হৃৎপিণ্ড দিয়ে বলেছিলাম…
ভালোবাসা ধারণ করো আগন্তুক মায়ার শুভম ধরে
আমার পতিত পাঁজর বৃষ্টিশূন্য মেঘ খরা-মাটির চরে
জাগিয়ে হৃদয়-ভরা অভয়ারণ্য।
তোমার হাতে
হৃৎপিণ্ড দিয়ে বলেছিলাম…
আকাশ ভোর-ভোর গন্ধ ফুলে
দুর্বার জলজ মাটির স্নিগ্ধ তুলে।
গৃহাগত এক ফালি জমি
লাঙল ফলার আঁচড় শস্য প্রণম্য নমি
দূরত্ব ভেঙে বুকের মধ্যে পৃথিবী।
তোমার হাতে
হৃৎপিণ্ড দিয়ে বলেছিলাম…
জ্যোৎস্না রক্তস্নাত কলমের বর্ণের দাগে
বৈরিতা মৃত্যু-কোষ নিংড়ে সর্বস্ব অনুরাগে।
মরুর প্রান্তরে নদীর স্রোতের আকুলতা
রোদ্দুরের উত্তাপ থেকে নিরাময় আন্তরিকতা।
তোমার হাতে
হৃৎপিণ্ড দিয়ে বলেছিলাম…
দু’হাত খুলে দাও
দিগন্তজুড়ে পাখিদের ওড়াউড়ি আমুদে আকাশ
বৈধ-অবৈধ সংসার-ধর্ম পোড়া ছ্যাঁকার হা-হুতাশ
খুঁজে নিতে দাও
অভ্যাগত বিপ্লব নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব
কবির অবোধ মনে প্রণয়ী কাব্য-চিত্ত।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..