ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
আজ বিখ্যাত সাহিত্যিক জয়িতা সেনের পঁচাত্তর তম জন্ম দিন।আর আজই প্রকাশ হবে তার নতুন উপন “আত্মোপলব্ধি “। এটাই হয়তো তার লেখা শেষ উপন্যাস। বেশ কিছুদিন লেখা লেখির বাইরে ছিলেন। এক বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদকের তাড়নায় এই উপন্যাস লেখা । ছেলেটার এলেম আছে বাড়ি গিয়ে গিয়ে ফোন করে করে উপন্যাস টি লিখিয়ে ছেড়েছে ।
সারা হল উপচে পড়ছে দর্শকের ভীড়ে । সবাই একবার জয়িতা সেন কে দেখতে চায়। শুনতে চায় তার মুখে কিছু কথা। জয়িতা খুব কম অনুষ্ঠানে যান। আগে যদিও বা যেতেন এখন বয়েসের ভারে কিছুটা ক্লান্ত ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্যোগতারা এক বিশাল কেক নিয়ে এসে হাজির । জয়িতা এসব থেকে দূরে থাকতে চান, কিন্তু উপায় নেই। অনুষ্ঠানের শেষে উদ্যোগতারাই বাড়ি পৌঁছে দেন।
বাড়িতে থাকার মধ্যে বহুদিনের ছায়াসঙ্গী সবিতা। সেই কোন ছোটোবেলায় সবিতার মামা সবিতাকে দিয়ে গিয়েছিলেন তার কাছে। সবিতার যখন বছর কুড়ি বয়েস তখন তার মামা তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয়। বিয়ের সমস্ত খরচ অবশ্য জয়িতা ই দিয়েছিলেন । বিয়ের ছ মাস যেতে না যেতেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় সবিতার বরের। অপয়া আখ্যা দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সবিতা সোজা চলে আসে জয়িতার কাছে । তারপর থেকেই জয়িতা র কাছেই স্থায়ী ভাবে থেকে যায়।
বহু বছর জয়িতা একটা মহিলা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন । ছাত্রী দের সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন। তাদের মনের খবর জানার চেষ্টা করতেন। একাধারে তিনি তাদের অভিভাবিকা হয়ে উঠেছিলেন। তাদের বেশ কিছু জনের সাথে আজও সম্পর্ক আছে।
জয়িতা বরাবরই মেধাবী তার উপর সুন্দরী তাই অনুরাগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই জয়িতার লেখা লেখি শুরু ।সেই সূত্র ধরেই কালচারাল সেক্রেটারি সুজয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা । সুজয় বড়লোকের ছেলে। পাশ করেই নিজেদের ব্যবসায় ঢুকে পরে। জয়িতার বাবার খুব একটা ইচ্ছে না থাকলেও মেয়ের জেদের জন্য সুজয়ের সাথে বিয়ে দিতে বাধ্য হন।
বিয়ের পর এক এক অদ্ভূত সংসারে এসে পরে। যে সংসারে মেয়েদের কোন সম্মান নেই। মেয়রা একাধারে রাধুনি, ক্রীতদাসী আর বাচ্চা উৎপাদনে র যন্ত্র ।
সুজয়ের পর চার বোন। ওদের ছোটো থাকতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। দিনের পর দিন চোখের সামনে দেখে শ্বশুর মশাই উঠতে বসতে শাশুড়ি কে কথা শোনাচ্ছেন । সুজয় ছেলে হয়েও মাকে সম্মান করে না।
কালচারাল সেক্রেটারি সুজয় আর বাড়ির সুজয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ । যে সুজয় মেয়েদের সম্মান নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা দিত সে তার নিজের মা কে সামান্য সম্মান টুকুও দেয় না। তার মেজাজ তার চালচলন জয়িতার মনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। সামনেই বিধান সভার ভোট। সুজয় সেই ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট সংগ্রহের জন্য উঠে পরে লাগে ।দলকে প্রচুর টাকা ডোনেশন দিয়ে শেষ পযর্ন্ত টিকিট হাতে পায়।
তারপর ই শুরু হয় সুজয়ের ব্যস্ত জীবন । যে জয়িতার জন্য সে এক সময় পাগল ছিল তার সাথে কথা বলার সময় টুকু তার নেই। একরাশ অভিমান নিয়ে জয়িতা লিখতে থাকে তার জীবন কথা একটা ডায়েরি তে।
ননদ রা মাঝে মাঝ আসে। এই বাড়িতে তারা তাদের দাদার চেয়ে বৌদিকেই বেশি পছন্দ করে।বড় ননদ বুলার সাথে জয়িতার বেশি ভাব কাছাকাছি বয়েসের জন্য। জয়িতা হঠাৎ দেখে তার ডায়েরি টা আর পাওয়া যাচ্ছে না। তন্ন তন্ন করে খুঁজে ও ডায়েরি টা আর পায় না। মাস দুয়েক পর বড় ননদ একটা বই নিয়ে এসে তার হাতে দেয় । বইটার নাম ” জীবন কথা ” লেখিকার নাম জয়িতা সেন। সেই তার প্রথম উপন্যাস। জয়িতা এক দৃষ্টি তে তার নামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মুখ দিয়ে কথা বেড় হয় না।কোনো বোধ ই কাজ করছে না । বড় নন্দাই কলকাতার বুকে একজন বিখ্যাত প্রকাশক। বড় ননদ তার বৌদির ডায়েরি টা নিয়ে গিয়ে তার বরের হাতে তুলে দেয়। জহূরীর চোখ চিনতে অসুবিধা হয়নি। তিনি তার প্রকশনী থেকে বই টা ছেপে পাঠক দের হাতে তোলে দেন। এখনো ভালো লেখার পাঠক আছে। এই বইটা পাঠক সমাজে সাড়া ফেলে দেয়। এবার সবাই লেখিকা কে দেখতে চায় । তাই প্রকাশনী তাদের প্রকাশনা থেকে যতজনের বই বেরিয়েছে তাদের সকলকে নিয়ে একটা সাহিত্য সভার আয়োজন করে। সুজয় খুবই অসন্তুষ্ট, নেহাত বড় জামাই বড় বোন নিতে এসেছে তাই কিছু বলতে পারলো না।
অনেক অসম্মান নিয়ে পরেছিল শ্বশুরবাড়িতে ।
ভোটে জিতে সুজয় এখন বিধায়ক। অনেক উড়ো খবর তার কানে আসে। যে দিন শুনতে পায় একটা গরীব মেয়ের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে সুজয় তার চরম সর্বনাশ করেছে , সেই দিনই জয়িতা ঠিক করে আর নয় এবার সে এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে। শুধু মাত্র বয়ষ্কা শাশুড়ির জন্য এই বাড়িতে পরেছিলো। যখন সেই শাশুড়ি ই মাথার দিব্যি দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন তখন আর দ্বিধা করেনি জয়িতা। সোজা গিয়ে উঠেছে বাপের বাড়িতে। সেই মুহূর্তে জয়িতা অন্তঃসত্বা। শ্বশুরবাড়ির কাউকে কিছু জানতে দেয়নি। বাপের বাড়িতেই ছেলের জন্ম। সেখানেই নতুন উদ্যোগে পড়াশুনা শুরু । ফল স্বরূপ মহিলা কলেজের অধ্যাপনা। বছর চারেকের মধ্যেই মা বাবা দুজনেই মারা যান।
তারপর থেকেই একলা পথ চলা। সাথে লেখা নাই নাই করে আজ পর্যন্ত চুয়ান্ন টা উপন্যাস লিখেছেন । বেশ কটা ছোটো গল্পের বইও আছে।প্রতিটা উপন্যাস ই যেন বাংলার এক একটা মেয়ের জীবন কথা। তার মধ্যেই সবিতাকে বসেই পড়াশুনা শিখিয়েছেন। খুব চেষ্টা করেছিলেন ছেলেকে নিজের মনের মতো মানুষ করতে। কিন্তু কথায় আছে রক্তের দোষ। বড় হওয়ার পর থেকেই টুকটাক নেশা শুরু করে দেয় ছেলে। কিছু কিছু কথা কানে আসে জয়িতার। তবে বাড়িতে কিছু দেখেন নি। কতটুকুই বা দেখা হয় ছেলের সাথে। চেষ্টা করেছিলেন ছেলেকে বোঝাতে কিন্তু পরেন নি। সেই দিন ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছিল জয়িতা র যে দিন তাড়াতাড়ি কলেজ ছুটি হওয়াতে দুপুরেই বাড়ি চলে আসেন,কয়েকবার ডাকার পর সবিতার সাড়া না পেয়ে ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলেই সবিতার ঘর থেকে একটা গোঙানির শব্দ শুনতে পান। ছুটে যান সেই ঘরের দিকে, গিয়ে দেখেন তার গুণধর পুত্র সবিতার মুখ বেঁধে তার উপর চড়াও হচ্ছে। সেই মুর্হূতে সবিতাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পাড়া প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে যায়। তারপর থেকে আর ছেলের খোঁজ নেন না।
অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে ইজি চেয়ারে বসে বসেই চোখ টা সামান্য লেগে আসে। সবিতার ডাকে উঠে বসেন। সবিতার হাতের তৈরী স্পেশাল চা তার দিদিমনির জন্য।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..