ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
আজ অজিতেশ আর নন্দিনীর চল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী। পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো। ছেলে অমিত আর বৌমা মৌ সমস্ত অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে।
অজিতেশ বহুদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। বছরদুয়েক হলো অবসর নিয়েছেন। উনি এসব অনুষ্ঠান একদম পছন্দ করেন না। প্রথমদিকে নন্দিনীর চাপে আর এখন ছেলে বৌমার চাপে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। একেএকে বিশিষ্ট অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। এলাহী খানাপিনার ব্যবস্থা। নন্দিনী ছেলে আর বৌমা সবকিছু দেখাশুনো করছে।
কদিনধরে অজিতেশের মনটা খুব খচখচ করছে। দিনচারেক আগে বন্ধু কমলের সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ কমল একটা ছেলের গল্প করে। ছেলেটা নাকী বছরখানেক হলো হাইকোর্টে প্র্যকটিস শুরু করেছে, এরমধ্যেই বেশ নামডাক করেছে। এরআগে ছেলেটা নদিয়ার জজকোর্টে প্র্যাকটিস করতো। পরে কমল অজিতেশের হোয়াটসঅ্যাপ-এ ছেলেটার ফটো পাঠায়। ফটো দেখেই অজিতেশ চমকে ওঠে। মনেরমধ্যে ঝড় বইতে থাকে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই খুব ক্লান্ত। যে যার ঘরে শুয়ে পড়েছে। অজিতেশের বহুদিনের অভ্যাস বেশ অনেকরাত পর্যন্ত লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার। অজিতেশ গিয়ে ঢুকলেন লাইব্রেরিতে। কিন্ত কিছুতেই বইয়ে মন বসাতে পারছেন না। মনটা পিছিয়ে গেছে প্রায় বিয়াল্লিশবছর আগে।
নদিয়া জেলার একটা অখ্যাত গ্রামের ছেলে অজিতেশ। বাবার কিছু জমিজমা আছে। তাতে চাষবাস করেই সংসার চলে। অজিতেশরা দু’বোন এক ভাই। অজিতেশই বড়। পড়াশোনায় খুব ভালো। গ্রামের স্কুলের মাস্টারমশাইদের অনেক আশা তাকে নিয়ে। ওই স্কুল থেকেই দূর্দান্ত রেজাল্ট করে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করেছেন। খুব ইচ্ছে ল পড়ার কিন্ত কলকাতায় রেখে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানো বাবার ক্ষমতার বাইরে।
পাশের বাড়ির সুদাম কাকার মেয়ে বুলির অজিতেশের প্রতি একটু দূর্বলতা আছে সেটা অজিতেশ বুঝতে পারে। তার স্থির লক্ষ্য উচ্চাশা পূরণের। অন্যদিকে তাকানোর সময় তার নেই। মা-হারা বুলির অবাধ যাতায়াত ওদের বাড়িতে। বাড়ির সকলেই খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে।
বাড়ির সবার মন খুব খারাপ, ছেলের আশা পূর্ণ হবে না। সেইসময় সুদাম কাকা এসে একটা বাক্স বাবার হাতে তুলে দেয়, এতে বুলির মা’র গয়না ভরা। একটাই আশা অজিতেশ পাস করে এসে যেন বুলিকে বিয়ে করে। ওই গয়না বিক্রি করেই অজিতেশ ল-কলেজে ভর্তি হয়। ছুটি কাটাতে বাড়ি আসে কৃতজ্ঞতাই হোক বা যৌবনের ধর্মেই হোক আস্তে আস্তে বুলির সাথে মেলামেশা শুরু করে। বাড়ির সকলেও খুব খুশি। বিয়ে তো হবেই তাই আর বাঁধা দেয় না।
দারুণ রেজাল্ট করে ল পাস করে একজন নামকরা সিনিয়রের আন্ডারে কাজ করতে শুরু করে অজিতেশ। স্যারের খুবই প্রিয়পাত্র। ওই স্যারের মেয়েই নন্দিনী। চোখধাঁধানো সুন্দরী, তেমনি সবদিক থেকে তুখোড়। আস্তে আস্তে অজিতেশের বাড়ি যাওয়া বন্ধ হতে থাকে। বছরদুয়েক পরে নন্দিনীর সাথে বিয়েও হয়ে যায়। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। নিজের মেধা আর শ্বশুরের প্রভাবের জোড়ে খুব তাড়াতাড়ি সুনাম অর্জন করে ফেলে। টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে কোনদিনই সংসারের দিকে মন দেওয়া হয় নি।
নন্দিনী ও তার বন্ধু-বান্ধব কিটি পার্টি নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত। অজিতেশের সাথে শুধু টাকার সম্পর্ক। এরইমাঝে ছেলে অমিতের জন্ম। ছেলেকে মানুষ করার সময় কারুর নেই। তাই ছেলেকে দেরাদুনের হোস্টেলে পাঠানো।
কিন্তু ফটোর ছেলেটা হুবুহু তার মতো দেখতে। অজিতেশ যা ভাবছে সেটাই কী সত্যি?
পরেরদিন সকলে বন্ধু কমলের বাড়ি গিয়ে হাজির হয়। কমল এখনো কোর্টে প্র্যাকটিস করে। অজিতেশ কমলের হাত দুটো ধরে নতুন ছেলেটার সমন্ধে সব খবর জোগার করতে বলে। দু’দিন পরেই কমল ফোনে জানায় ছেলেটার নাম শুভাশীষ, বাড়ি নদিয়ার এক গ্রামে। এখানে বেহালায় একা একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকে।
কোনোদিক চিন্তা-ভাবনা না করে পরেরদিনই বেহালার উদ্দেশে রওনা হয় গাড়ি নিয়ে। তখন প্রায় বেলা দশটা হবে। কলিংবেল বাজতেই একটা ছেলে এসে দরজা খোলে। অজিতেশ চোখের সামনে নিজের অতীতকে দেখতে পায়। শুভাশীষ আসুন বলে অজিতেশকে আহ্বান জানায়। অজিতেশের মাথাটা একটু টলে যায় শুভাশীষ ধরে তাকে সোফায় বসায়। সুন্দর ছিমছাম সাজানো ঘর। শুভাশীষ একগ্লাস সরবৎ করে এনে মুখের সামনে ধরে। এক চুমুকে গ্লাস শেষ করে অজিতেশ ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। টেবিলের ওপর বড় করে বাঁধানো একজন মহিলার ফটো, তাতে টাটকা রজনী গন্ধার মালা দেওয়া। অজিতেশের বুলির ফটো চিনতে একটুও অসুবিধে হয় না। অজিতেশের শরীরের অবস্থা দেখে শুভাশীষ পাশে গিয়ে বসে অজিতেশের হাতটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলে ‘আপনি এবার বাড়ি যান’। সেই স্পর্শে অজিতেশ হু-হু করে কেঁদে উঠে। সারাজীবন অনেক অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছেন, এবার তার শাস্তি পাবার পালা। বাচ্চার মতো শুভাশীষ এর হাত দুটো ধরে বলতে থাকে সে যেন তাকে শাস্তি দেয়, আদালতে তার নামে মামলা করে।
আদালত নতুন করে কী বিচার করবে? শুভাশীষ বলে বহুদিন আগেই আপনি মায়ের আদালতে ক্ষমা পেয়ে গেছেন। আমার ওপর নির্দেশ আছে ‘আমি যেন কোনো দিন আপনাকে অসম্মান না করি’। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। অজিতেশ ফাঁসির আসামীর মতো টলতে টলতে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
সম্পাদনা: জোবায়েন সন্ধি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..