আপনি কি ঝগড়ুটে

চিরঞ্জীব হালদার
কবিতা
Bengali
আপনি কি ঝগড়ুটে

আপনি কী ঝগড়ুটে।
কারো প্রতি চাপা প্রেমানুভূতি আছে।

মক্কা গাছে ফুল এলে টিয়া পাখিদের মন্থরা হয়ে ওঠেন।
এবার বলুন কোন স্টপেজে নামালে বেস্পতিবারের ধুনো ঠিকঠাক গোল্লা পাকাবে।
হতে পারে আপনার মশারীটিকে শুশ্রূষা না দেওয়ার হেতু আপনার কারুচিন্তা কিঞ্চিত বিঘ্নিত।
তাহলে কামান দাগা নির্ভেজাল প্রেমিকটির সাথে
মাঝ রাস্তায় ঝগড়া জুড়ে দেবেন।

ওই যে আয়না দেখছেন
তোতলা পুরুতকে মাইক্রোফোনের কাছে নিয়ে
আপনি কি বলাতে পারবেন
আমি আপনাকে ভালবাসি।
তাহলে জেনে নিন হিমাচলের সব আপেলবৃক্ষ
আপনার সামনে নতজানু হয়ে
আজীবন খিদমদগারিত্ব যাচ্চা করবে।

 

দুই

কোন ন্যাকাপাদ্রীকে আমার নাভি আগলাতে বলিনি।
কোন জাঁহাবাজ সন্দেহপ্রবণ বান্ধবী
প্রজাপতির লোভ দেখিয়ে নিশাগ্রামের ট্রেনে
উঠিয়ে দেবে আর আমি পথ ভুলে যাবো
এমন ভেড়ুয়া কি আমি।
শয়তান শয়তান দেখতে প্যান আর ভোটার কার্ডের ছবি দেখিয়ে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী পকেটে
শুয়োপোকা ভরে দিচ্ছে।
সেই থেকে চুলকে চলেছি আমার লিঙ্গ।

মা বলেছিল একদিন রেশমশিল্পীদের গ্রামে তোকে
হৃদয়বর্ণের সুতো ফিরিওলার ভূমিকায় দেখা যাবে।
কল্পনাদি তার কোন এক গৃহের পিয়ানোবাদক।

এইসব ভাবতে ভাবতে মা কখন সিন্দুক হয়ে উঠছে টের পাইনি।

বুনিয়াদি তালপাতার পুঁথি ভালো আছো।
ভালো আছো চুনি মাস্টারের বেত।
নগ্ন দুপুরের ডাঁসাকুল তোমরা কতক্ষণ
মৃত সহপাঠির কোঁচড়ে প্রেমিকের মত
আত্মগোপন করবে।

এই দ্যাখো বাগদেবীর হাঁস আর চিনে গাঁদা
কেমন ঝগড়া শুরু করেছে।
চুরি করা খিচুড়ির ভাগ কম পড়বে বলে।
জহর স্যারের বাঁশিতে কে এঁটো কুলের দানা ভরে দিয়েছে, সেই থেকে তার ভীষণ গোঁসা।

এই হৃদয়দস্যুরা ঢুকে পড়তেই
সরস্বতীর সব মন্ত্র ওলোট পালোট।
তুমি দেবী নও হিংসুটনী…
সেই রাগ পুষে রেখে আমাকে আজও
কোন হৃদয়ের অধিকর্তা হতে দিলেনা।

 

তিন

প্রেমিকাটি বলিলেন পরিচয়পত্র দেখাইলে
ছাড়পত্র মিলিবে।

প্রথমে আমি জেব্রার ডাক ডাকিলাম।
তারপর একে একে ময়ূর আর তৃষ্ণার্ত হরিণের।
প্রহর খতম।
তবু চিচিং বন্ধ।
আমার বাঁদরের কথা মনে আসিল।

ঈশ্বর করুণাময় আমি তাহার ভাষায় কথা বলিতে
বলিতে বলিতে বুঁদ নক্ষত্র কক্ষে প্রবেশ করিব করিবো।
এমতাস্থায় দেখি আমি আলিবাবাতে রূপান্তরিত।

হা ঈশ্বর
চিরঞ্জীব প্রাপ্তিতে কে যেন স্থগিতাদেশ শুনাইয়া
সেই যে অদৃশ্য হইলেন
ভাবিতে থাকি।

 

চার

এই বয়েসে আতা গাছে উঠবো তা কী খুব মানান সই হবে।
সাম্প্রত এমন একটি আতা গাছ বন্ধুত্বের আবেদন জানালে পরিবারের দিকে পারসু করে দি।

বস্তুত এ অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব।
প্রতি গাছই চায় তার ডালে প্রতীক্ষায় থাকুক অসংখ্য মেহগনী তিতির।
বিশুদ্ধ আয়রনহীন জলের অধিকর্তার রসালাপে ভরে থাকবে তার অপত্য ভূমি।

দাঁতের বয়স হেতু পিয়ারা অপেক্ষা আতা গাছের
বন্ধুত্ব উপাদেয় মনে হলেও প্রকৃত এড়িয়ে গেছি।
তবুও আমার আপাতগ্রাহ্য দ্বিতীয় ভ্রমনে ভুন্টির সাথে কচি আতাদের কাকু ডাক এড়াতে পারি কই।

এই জীবনে আতা গাছ ও তোতা পাখির সান্নিধ্য
বেশ লাগিল।
আমি ধন্য।

 

পাঁচ

আত্মহত্যার আগে ডাকপিয়নকে মায়াকোভক্সি জিজ্ঞেস করেছিল গাববেডিয়ার ঠিকানা।
জাহিরবাবুর কলিগ লোলিত স্যার যেখানে নাটকের মহড়া দিতো তার ঈশান কোণে
নাইন এমএম পিস্তলটা গোর দিতে বলেছিলেন
তার প্রিয় পাঠিকাকে।
ধরুন তার নাম এক্স।
তার প্রেমিকের নাম ওয়াই।

ঘটনাচক্রে তার প্রেমিকটি পিস্তল বিষারদ।
সেবছরে গঙ্গাসাগরে এক নৌকাডুবির ঘটনা
সমাপতন ছিল কীনা গবেষণার বিষয়।
তখন মেয়েদের কদাচিত নাটকে দেখা য়েতো।
আমরা জানতাম না এক বিদেশিনী কীভাবে
লোলিত স্যারের নাটকে আততায়ীর ভূমিকায়
মহড়া দিতেন।
জাহির স্যার এখনও জীবিত।
তাকে মাঝে মাঝে প্রম্পটারের ভূমিকায় দেখা যেত।
অঙ্কের স্যার হলেও দাঁতে নখ খুঁটতে খুঁটতে
সাইবেরিয়ার ভূগোলে ঢুকে পড়তেন।
আমি যতবার সেই বিদেশিনীর নাম জিজ্ঞেস করেছি তিনি উদাস হয়ে
বলতেন ক্লাস আজকের মত ডিজলভ।

কারা যেন লেকটাউনের সরোবরে ছাতায় তলায় বসে থাকা বৃদ্ধের ডান হাত কেটে নিয়ে গেছে।
তিনি কী একশ বছরের আগ্রহায়নের শিশির মুখে
মেখে রাজনৈতিক নাব্যতা মাপেন।
জাহির স্যার সব অঙ্কের উত্তর আপনার জানা।
কাল সুপ্রভাতের আগে এই উত্তরটা জানালে বড় উপকৃত হই।

চিরঞ্জীব হালদার। কবি। মূলত ক্ষুদ্র পত্র -পত্রিকার লেখক। জন্ম- ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬১, গাববেড়িয়া; দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পড়ালেখা করেছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা। লেখালেখির শুরু গত শতাব্দীর আশির দশক। শুধু কবিতা আর ভালো কবিতাই তাঁর আরাধ্য। এপর্যন্ত নির্মিত কাব্যগ্রন্থ ষোলটি। প্রকাশিত সাতটি। যৌথ সংকলন একটি। সম্পাদিত কবিতা...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..