আবছা ব্রেকফেল

স্বপন রায়
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
আবছা ব্রেকফেল

আবছা ব্রেকফেল

জীবনখোলা নদী, আর দেখা হবেনা। নদী বলবে, জল সজল জলতা জলভার এরকম ছোট ছোট গ্রামের কথা। যেদিন রামধনু ওঠে, সেতুর ভাই কেতু ভেসে ওঠে। আমি এদের কেউ না। আমি, কেউ না। দেখি তো, কত কষ্টে আছে মানুষ। নেতা আছে, তবু। আমি আর সে দেখি তরুন নেতার বাইক, খেত পেরোচ্ছে। সাঁকোটা বাঁশের, কেঁপে উঠল। আর সেতুর ভাই কেতু বুলবুলিকে আধার বোঝাচ্ছে, বুলবুলির গায়ে সন্ধ্যাতারার রস।

নায়িকা ইজেরে, গান গাইছে। মিষ্টিআলুর রঙ সেদ্ধ হচ্ছে তার গায়ে। কাগজটা সে আমায় দিল। খেত পেরোবার ফাঁকে, নেতা যখন বুলবুলিকে হাসি দিচ্ছিল। গতি। বাইক। নায়িকা। নেতা তুলে নিল সেই সন্ধ্যার সেক্সি কুয়াশা, চলে গেল, তাইতো নেতা। পাখিরা বাড়ি ফিরবে এবার, তাহলে সমস্ত ডিম গাছে গাছে এবার, এই আশায় আমি এখনো বুলবুলিকে জিগগেস করি, তুই স্কুলে যাস না কেন? তোর ছাইরঙা স্কার্টটার কথা ভাববি না, ও তোকে পরতে চায়…

আমি কেউ না, আমি বলিও নি। নদীর জলে একটা টান আছে। যেমন থাকে। চলে যাওয়ার পরে, কাল লম্বা একটা উদয় হবে। ফুটে উঠবে গ্রামগুলো। ফুটফুট করবে নেতার বাইক। বুলবুলিরা আবার স্কুলে যাবে। বাদশাভোগ, গোবিন্দভোগ হেসে উঠবে। সে ফিরে আসবে। আমিতো আর নেই, তার দুঃখ হচ্ছিল না এমন নয়। আবার খিদেও পেয়েছে। সে খাচ্ছে এখন, যে খায় তারও দুঃখ আছে। ধানের বুকে দুধ জমেছে, সে দেখে, এও তার আরেকটা দুঃখ…

দুই. 

দিঘিটা মজে যাচ্ছে, চোখ হয়নি শেষ পর্যন্ত। দীঘল, এবার কি করবে? বেড়াতে বেড়াতে শাল্মলীকেও বলি তুলোর খবর কী? বস্তা কিছু বলেছে? এই রেখাটা বাজার হয়ে যায়। চাহিদা আমার, সেও অটোরিক্সাবাহিত যোগাড়ে। বিন্দুতে তুমি জলের পাস্টটাইম, দিঘি হবে হবে, চোখে আয়তাকার রাখছ। আমি মেনে নেই। সীমান্তে রক্ত গড়ায়, তুলো ভালবাসার কথা বলে, মুছতে মুছতে। চোখ দিঘি হলেই কি সেই সারসটা মাছ তুলবে, একেকটা স্ট্রোক, একেকটা মাছ। মীণাক্ষি তবু দিঘির জলেই বিনা পাওয়ারের চশমা বানালো। ভালবাসল জল ঢালার শব্দে, মাছ ওঠাবার মুহুর্তে বা সেই চঞ্চলতাকে যা পাথর ফেললেই দিঘিতে হয়, কাজল ফেললে চোখে

তিন. 

এও জানা কথা যে বাঁ দিকের রাস্তায় অদ্ভুত আছে। সেই রাস্তার ছিপছিপে ছায়া আর ছায়ামি। শিকড়ে ওষুধের গল্প। রেলিং আছে, হেলান দেয়ার অপেক্ষা আছে। সব মিলিয়ে আবার একটা ছিপছিপে ফিসফাস। আমি ভয় না পেলেও, এক ইঞ্চি মত ছায়াদুরদুর দেখে অবাক। এও হয়, রঙের ব্যাপারটা এত সহজ এখানে। চোখের রঙ। মুখের, গ্রীবার রঙ। পোষাকের রঙ। না-পোষাকেরও। বুকটুকও আছে। কোথাও শব্দ নেই। কেই কিছু বলছে না। কিন্তু রঙ এভাবেই দুরদুরকে শুমশুম করল। দেখলাম হাসছে। মুখ কোথায়? অদ্ভুত!

আমি ভয় পাচ্ছি। ভাল লাগার ভয়। বাইকের চাকা নেই। তবু যাচ্ছি। লাইসেন্স নেই, দেখে ফেলল কেউ। ভয়ে আমার হাড়ের ভেতর হিম, হিম নয়, কে যেন আসতে চাইছে। কে যেন বলছে, আর কি হবে, নিশ্বাসটা এখানেই ফেলে দাও

দিয়েছিলাম, বাঁ দিকের রাস্তাটা ফিরিয়ে দিল, অদ্ভুত…

চার.

বিছানা যখন ভোরের, সকাল ছোকরা তখনই। কিসব ভাবতে ভাবতে আঁকে, বোলায়, গরম হয়। নড়ে ওঠে, বিহ্বল পর্দার খুশ্‌ আর খুশি। নশীনা পাশ ফেরে, পোহায়, রোদ-দাঁড়ানোকে স্পর্শ করে, বলে, ওঠো ছড়িয়ে দাও।

সে ধরে রাখে, সারারাত অপেক্ষা। সারাদিন পড়ে আছে কিন্তু ওই দিনের ফোঁটায় কি মন্দ্র সবকিছু। আলো, ছুঁয়ে থাকল যতক্ষণ মনেই হয়নি কিভাবে হয় এমন, ফলের সমস্যা হয়না?

সকাল নিজেকে দেখতে পায়না। পেলে আঁচ টের পেত, বিছানা ছেড়ে যাওয়ার আগে খাটের সামান্য কেঁপে ওঠা, প্লেটের বিগঠনে উড়ু চুল, ভূমিকম্পও হতে পারে। সকালের হাত নেই, পা নেই। আছড়ে পড়া, ছড়িয়ে পড়া আছে। এখন লুটিয়ে পড়ল

দেহি পদপল্লব মুদারম, না বলেই।

স্বপন রায়। কবি। জন্ম ১৯৫৬। ভারতের দুটো ইস্পাতনগরী জামশেদপুর এবং রাউরকেলা স্বপন রায়ের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রথমটি জন্মসূত্রে। দ্বিতীয়টি বড় হয়ে ওঠার সূত্রে। নব্বই দশকের শুরুতে 'নতুন কবিতা'র ভাবনায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পুরনো, প্রতিষ্ঠিত ধারাকবিতা ত্যাগ করে কবিতাকে নানাভাবে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ