আমরা যেরকম (পর্ব – ১)

শীর্ষেন্দু দত্ত
উপন্যাস, ধারাবাহিক
Bengali
আমরা যেরকম (পর্ব – ১)

মোমবাতি চলেছে কাতারে কাতারে। নিস্তব্ধ,সারিবদ্ধ কিন্তু চলমান। দায় এড়ানোর নতুন বাঙ্গালীয়ানা।

-তাওতো এতোগুলো ছেলে ছোকরা মোমবাতি প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা তো বাসে চেপে আপিস চলেছি।

-আমরা মোমবাতি নয়, পেটো মেরে প্রতিবাদ করেছিলাম ছোকরা বয়সে। সত্তর সাল . . .

দুই মাঝবয়েসী বাস যাত্রীর কথোপকথন ঢেকে গেল কলেজ গেটে পরপর পেটো চার্জে।

সরস্বতী পুজোর বাজেট স্যাংশন নিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে ইউনিয়নের বাওয়াল। অতএব ক্লাশ বন্ধ। পায়েল রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে পড়তে সায়নকে ফোন করল,

-শোন, গিরিশে চলে আয়। কলেজ হবেনা আজ…

ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওরা জনাচারেক জড়ো হয়ে গেল শ্যামবাজার গোলবাড়ির সামনে।

-তোদের কলেজে কি কিছু হলেই বোম পড়ে?

সায়ন বিড়িতে হনুমানের ল্যাজ ধরাতে ধরাতে বলল,

-ইউনিয়ানের তো এখন ওটাই শেষ অস্ত্র। ভয় দেখিয়ে কাজ আদায়।

পায়েল মুখ গোমড়া করে বলে,

-আজকে অনেকগুলো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাশ ছিল হলনা। ধুস।

সব বাড়ি পালালো নাকি?

-না রে।প্রিন্সিপাল কে নিয়ে সব মিটিং করছে। বলছে বাইরে থেকে এসে গুণ্ডামি করা বন্ধ না হলে কলেজ অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ করে দেবে।

টুকাই ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলল,

-আমাদের ক্যাম্পাসে বাইরের কেউ এসে চুদুরমুদুর করার হিম্মত দেখায় না। সেঁকে রেখে দেব।

শিঞ্জিনী মোবাইল টিপতে টিপতে বলল,

-তোরা সব আঁতেলের দল। হোক কলরবেই কেলিয়ে যাস। বোম মারবি কি?

টুকাই পনিটেল ঠিক করতে করতে বলল,

-যাতো, মাথায় উকুন শালা।

-বাতেলা ছেড়ে যাবি? সব হাউসফুল হয়ে যাবে।

-গ্রুপ থিয়েটার আবার হাউসফুল কবে থেকে হচ্ছে? তাও গিরিশের অত বড়ো হল।

পায়েল ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে বলল।

টুকাই ট্রাম রাস্তা পেরোতে পেরোতে বলল,

– পুস্করদা এখন থাকলে বলত,বাঙ্গালীবাচ্চা লিটিল ম্যাগ পড়েনা,গ্রুপ থিয়েটার দেখেনা,জাতটার এক্কেবারে পোয়া মারা গেচে।

ওর বলার ধরনে সবাই হেসে উঠল। আশপাশের চলমান জনতা ক্ষণেক থমকে দেখতে লাগল উচ্ছল এই বাহিনীকে।

রাত বেড়ে চললেও পায়েলের চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানলা দেখে চলেছে সে। নাটকটা দেখতে দেখতেই চিন্তাটা মাথার মধ্যে ঢুকে পড়ে। একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে সব। সেই একই রুটিন,একই কাজ। যার কোনো ভবিষ্যতও চোখে পড়েনা। কলেজ থেকে বেরিয়ে আরো কিছু এটাওটা ঘষলে চাকরি একটা পেয়ে যাবে হয়ত। কিন্তু শুধু চাকরির জন্য এই যৌবনটা ইনভেস্ট করে ফেলবে? বড়োরা তো চাকরি অবধিও ভাবে না। মেয়ে। মোটামুটি একটা পাস দিলেই ভাল দেখে পাত্র ধরে বসিয়ে দাও। তারপর বাচ্চা বিয়াও। আর তাদের মানুষ করো। ধুসস! কিন্তু লাইফটা যেন সেদিকেই চলেছে। ব্রীজ থেকে নামার সময় গাড়ির যেমন স্পিড বেড়ে যায়,ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও। ওরও তেমন মনে হচ্ছে। লাইফটা তেমনই একটা ডাউন রোড ধরে হুড়হুড়িয়ে চলেছে ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে। স্পিডব্রেকারও কাজ করছেনা।

ফাঁকা শুনশান রাস্তা। গোটা শহরটা জাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। এমনকি স্ট্রিট লাইটগুলোও কেমন নিভু নিভু! কুকুরগুলোও আর ডাকছেনা! শুধু পায়েল একা একা জেগে আছে। বিছানা ছেড়ে উঠে একটা সিগারেট ধরালো। ঘরের দরজাটা একবার দেখে নিল বন্ধ কিনা। যদিও কেই বা আসবে আর। আসার মধ্যে তো মা। সে এখন ঘুম ওষুধে চেপে ঘুমের দেশে।

পায়েলের বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গেছে। বাবা আবার বিয়ে করেছে। ফোন করে রোজ। মাঝেমাঝে কলেজ ছুটির সময় গেটে মিট করে।

মা পায়েলের কিছুতেই নাক গলায় না। এমন কি সিগারেট খাওয়াতেও না। জানে। বাবা মিস্টি করে কায়দা করে নিজের মতটা শুধু জানিয়ে দেয়। একবারই সরাসরি বলেছিল,

– এসব ইলেকশন-টিলেকশনে দাড়াস না মিমি। মার্কড হয়ে যাবি।

কালকে শিওর কলেজ হচ্ছেনা। প্রফেসররা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছে এই সন্ত্রাস বন্ধ না হলে তারা ক্লাশ করাবে না। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি কাল প্রতিবাদ মিছিল করবে। পায়েলকে বারবার থাকতে বলেছে। পায়েল মুখে কিছু না বললেও যাবার প্রশ্নই নেই। অথচ একসময় ও ছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সব থেকে এগিয়ে থাকা কর্মী। গতবছর কলেজ ইলেকশনের আগেই ওর মাথা ফেটেছিল এগেন্সট পার্টির লাঠির ঘায়ে। বাইরের গুন্ডাবাহিনী এনে কলেজের দখল নিয়ে ভোটে জিতল সেবার। কিন্তু পায়েল এখন এসবের ধার ঘেষেনা।

 

.

-মা আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা দাও না প্লিজ।

-কেন রে ? এতো টাকা কি করবি?

শিঞ্জিনীর আবদারে ওর মা বিশেষ অবাক হয়না। কারণ ওর মা সব জানে।

-সামনের মাসে থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল। অনেক টাকার দরকার। আমরা সবাই মিলে টাকা তুলছি। দাও না মা, প্লিইইজ।

মা এসে শিঞ্জিনীর মাথায় হাত রাখে।

-এভাবে ঘরের টাকা দিয়ে কতদিন গ্রুপকে টানবি রে খুকু?

শিঞ্জিনী দুধের গ্লাশে মুখ ভেটকে চুমুক মেরে বলে,

-বেশিদিন না মা,শুরুতে একটু দিতে হয়। একটু দাঁড়িয়ে গেলে ,নাম-টাম হলে কল শো আসবে,গ্রান্ট আসবে তখন অসুবিধা হবেনা।

মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

-না রে খুকু,ভর্তুকি আর ধার খুব খারাপ নেশা। একবার ধরলে আর ছাড়েনা।

-তুমি দেবে কিনা বলোনা? মাআআ…

মা বলে,

-দুধটা শেষ করে উঠবি। কবে লাগবে?

শিঞ্জিনীরা হীরকদার গ্রুপে ছিল আগে। অয়নের সাথে হীরকদার ক্ল্যাশ হতে অয়ন দল ছাড়ে। সাথে শিঞ্জিনী,আরো দুচারজন। হীরকদা বলে যে,এখানে যারা মাল বইত তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী,তারাই অয়নের সাথে দল ছেড়েছে। অয়নের বক্তব্য,যারা তেল মারত তারাই হীরকদার কাছে গুরুত্ব পেত।

পুষ্করদা সব শুনেটুনে বলেছিল,

-এই হীরক,অয়ন সবই এক ডাইসের মাল। আসল কোথা ক্ষমতা। ক্ষমতা কে কন্ট্রোল করবে। অয়নও হীরক চ্যাটার্জিই হতে চায়। তোরা গায়কের পিছনে বসা হ্যান্ডস হয়ে থাকবি চিরটা কাল।

শিঞ্জিনীর সব উৎসাহে ভাটা ফেলে দেয় পুষ্করদা।

-তাহলে আমার কি করা উচিত পুষ্করদা?

পুষ্করদা বিড়ি ধরাতে ধরাতে বলে,

-পড়াশুনাটা ভাল করে শেষ কর। না হলে আমার মতো গাঁড় মাড়াবি। ফিল্ম স্টাডিজে কেউ সিরিয়াস হয়না। হলে অনেক দূর যাওয়া যায়। সঞ্জয়দা তোদের পড়ায়?

-হুম্ম

শিঞ্জিনী গুম হয়ে থাকে।

পুষ্করদা বলে,

-পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে চলে যা। এখানে বসে ম্যাক্সিমাম সিরিয়ালে ঝিয়ের পার্ট করবি। লিটিল ম্যাগ,গ্রুপ থিয়েটার সব শালা একেকটা গুরুর আখড়া। তুই কে বাল?

শিঞ্জিনী বাবা-মায়ের আদুরে সন্তান। বাবা ডাক্তার। পয়সার অভাব নেই। শিঞ্জিনীর বায়নারও শেষ নেই। ওদের বাড়িটা বন্ধুদের আড্ডা সহ্ল। শিঞ্জিনীর বাবা খুশি হয় ওদের দেখলে।

-যা চিকেন রোল নিয়ে আয় গোটা ছয়েক। পাঁচশো টাকার নোট…

এরকম মাঝে মধ্যেই বের করে দেয় ওর বাবা,ওদের আড্ডায় ঢুকে। আর সায়নটার কি সাহস! বলে কিনা,কাকু সাথে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসি? আপনি খাবেন!

শিঞ্জিনীর বাবা ডাঃ আশিষ দত্ত,ছদ্ম গাম্ভীর্য দেখিয়ে বলে,

-আনিস। প্রসাদ করে দেবখন।

মা ওর বন্ধুদের ভালবাসেনা এমন নয়। তবে একটু সাবধানি,সচেতন।

 

৩.

-এই টুকাই শোন।

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ায় টুকাই। বাবলাদা বসে। পাড়ার কাউন্সিলর।

-আমায় ডাকছ বাবলাদা?

টুকাই সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

-হা,তোকেই ডাকছি। রাস্তায় আর কে আছে?

-বলো।

-বলি কি শুরু করেচিস মাইরি? রোজ সকালে তোর চিৎকারে শালা পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছেনা!

টুকাই মুখটা বাংলার পাঁচ করে বলে,

-গান প্র্যাকটিস করি বাবলাদা।

-গান! ওটা শালা গান! রাতে মালঝাল খাই বলে নিতে পারি। নাহলে শালা হার্ট ফেল করে যেত। কি গান ওটা?

-বাংলা রক। আমাদের একটা ব্যান্ড আছে।

-আশপাশে অনেক বুড়ো হাবড়া পেশেন্ট পার্টি আছে,মাধ্যমিক ক্যান্ডিডেট আছে। কমপ্লেন আসছে। গলা নামিয়ে যা করার কর। এটা ধাপার মাঠ না। বুঝলি?

টুকাই কিছু বলেনা। শুধু মাথা নাড়ে।

-আর শোন, পড়শু শহিদ দিবসের প্রচার সভা হবে। থাকিস। রাতে খাওয়া দাওয়াও হবে।

বলে বাবলাদা চোখ টিপলো। মালের লোভে টুকাই দু একবার যায়নি এমনটা নয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে ঝাড় খাবার পর থেকে ঘেন্না ধরে গেছে অমন মালে। -চেষ্টা করব বলে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে টুকাই। শালা সকালবেলায় মুডটা খারাপ করে দিল। তবে ওদের দোষ দিয়ে আর লাভ কি! নিজের বাড়িতেই বাবা বলে।

-চিৎকার করিস না,সুরে গা…

এরা আসলে নিজেদের টাইম ছাড়া কোনো কিছুকেই রেজিষ্টার করেনা।

বেলঘরিয়া স্টেশনে সায়ন অপেক্ষা করছিল টুকাইএর জন্য। বাপের সাথে ঝগড়া করে টুকাই আসছে। খানিক আগে ফোন করেছিল। রাতে থাকবে সায়নের মেসে। আগে কখনো আসেনি। রান্নার দিদিকে কষে মুরগির মাংস রাঁধতে বলেছে সায়ন। এমনিতে আজ ওর রুম খালি। রুম পার্টনার গোবর্ধন আজ সকালেই দেশে গেছে। দুদিন পর ফিরবে।

সায়ন জামশেদপুরের ছেলে। বাবা ইঞ্জিনীয়র। মা খুব ছোটবেলাতেই মারা গেছে। বাবা আর বিয়ে থা করেনি। পরিচিত লেখক। লেখালিখি আর চাকরি নিয়েই থাকেন। বাবার কাছেই মানুষ সায়ন। লেখালিখি,ম্যাগাজিন এসব বাবার থেকেই পাওয়া।

বাবারা কম বয়সে একটা পত্রিকা করেছিল জামশেদপুর থেকে। নাম কৌরব। জামশেদপুরের পৌরাণিক শিল্প-সাহিত্য ভাবনার মূলে আঘাত হেনেছিল ওরা। প্রতিদিন গাছতলায় বসতো কবিতার আড্ডা। এসব গল্প বাবার মুখে শোনা সায়নের। ও যেদিন প্রথম ম্যাগাজিন করবে জানালো সেদিন বাবার মুখ খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। বলেছিল,

-আমাদের সেই তরুন জীবনের বটতলা বন্ধুবান্ধবদের কারো ছেলেমেয়ে লেখালিখি বা ম্যাগাজিন করেনা। তুই প্রথম। সবতো ইঞ্জিনীয়র বা আইটি সেক্টরে।

-তুমি লেখা দেবেতো বাবা?

সায়ন জিজ্ঞেস করেছিল।

-নিশ্চয় দেব। টাকাপয়সা লাগলেও বলিস।

বাবা গলা চড়িয়ে বলেছিল। সায়ন বলে,

-তোমাকে লেখাও জোগাড় করে দিতে হবে। নতুন কাগজ তো। সিনিয়র লেখকদের সাথে কনট্যাক্ট নেই।

-সে বলিস কাদের লেখা চাস। কিন্তু নিজেরা কলম ধর,তোরা যারা কাগজটা করছিস আরকি। এই এজটা ইম্পর্টান্ট। এই এজকে দিয়ে লেখা। এই এজকে পাঠক বানা। কাগজে যুক্ত কর। আমাদের নিয়ে বেশি টানাটানি করিসনা। আমরা তো বুড়োর দল। বাতিল ঘোড়া। বার্ধক্য,ধান্দাবাজি,আত্মপ্রচারে জর্জরিত।

সায়ন তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,

-না না।সবাই নিশ্চয় তা নয়। এই এক্সপিরিয়েন্স,জীবনটাকে এতদিন দেখা- এসব ফ্যাক্টর করে। তোমাদেরও চাই।

বাবা হেসেছিল শুধু।

কাগজের নাম দিয়েছিল চিরে চ্যাপ্টার। প্রথম সংখ্যাতেই বাবা এনে দিয়েছিল কমল চক্রবর্তি,সমীর রায়চৌধুরি,মলয় রায়চৌধুরি,সুবিমল বসাকদের মতো অন্যধারার লেখকদের লেখা। সবাই মিলে জোর করে সায়নকেই সম্পাদক বানিয়ে দেয়। আর মেস মালিক শংকরদাকে প্রকাশক হতে রাজি করানো হয়। সম্পাদকীয় দপ্তর তো মেসই।

শংকরদা আর দশটা কলোনীর বাড়িওয়ালার মতো নয়। ওদের সব ব্যাপারে হাসিমুখে প্রশ্রয় দেন। নিজের সন্তানের মতোই ওদের খোজখবর নেন। আগলে রাখেন সব কিছু থেকে। শুধু মেস ভাড়াটা দুদিন দেরি হলেই চাইবেন।

-ওটা নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়…

শংকরদা বলেন। একসময়ের নকশাল নেতা শংকরদা আনন্দবাজারে চাকরি করেন।

সায়ন ছাড়াও আরো চারজন আছে চিরে চ্যাপ্টারে। ঈশিতা,সোমনাথ,কালিদাস আর পায়েল। পায়েল ছাড়া বাকিরা বেলঘরিয়ার।

-চিড়ে চ্যাপ্টার কবে বেরোচ্ছে রে?

টুকাই গীটারটা কাঁধে ঝোলাতে ঝোলাতে জিজ্ঞেস করে।

-প্রেসে গেছে। তুইও আমাদের কাগজে চলে আয় টুকাই।

সায়ন বলে,

-আরে আমিতো আছিরে।

-না না। ওরকম না,সিরিয়াসলি থাক। এডিটোরিয়াল বোর্ডে আয়,লেখ।

-দ্যাখো বস,যার যেটা কাজ।আমি কলম ধরতে পারব না। যেটুকু ধরি পরীক্ষার হলে। পত্রিকার জন্য গীটার বাজাতে বল,আছি।

সায়ন হেসে ফেলে টুকাই এর বলার ধরনে।

-চল কেষ্টোদার দোকানে লিকার মারি আগে।

চায়ের দোকানের কেষ্টোদা সায়নকে চোখ টিপে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,

-মালটা কে?

যেকোনো জায়গাতেই টুকাই সবার নজরে চলে আসে। চল্লিশ কেজির মুরগি খাঁচার মতো ফিগার। একমুখ দাড়িগোফ,চার ফুট ছ’ইঞ্চির হাইট। তালি মারা জিন্সের সাথে গেঞ্জি। যার গায়ে লেখা “বিগ বয়েজ প্লে অ্যাট নাইট” ! ওর কাঁধের গীটারটা ভারে ও সাইজে প্রায় ওরই সমান।

টুকাই কিন্তু চিরে চ্যাপ্টার জন্য অনেক সার্ভিস দেয়। অনেক কপি বেচে আর কভার করে। ওর একটা আর্টিস্টিক সেন্স আছে। প্রথাগত  আঁকা না শিখলেও ভাল কভার করে নানা আইডিয়া থেকে।

চা শেষ করে একটা লম্বা সিগারেট ধরায় টুকাই। সায়নের দিকে প্যাকেট এগিয়ে দেয়। সায়ন দেখে বেন্সন হেজেসের প্যাকেট!

-এটা কোথায় পেলিরে?

প্যাকেটটা উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে সায়ন জানতে চায়। টুকাই গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়,

-আমার গার্লফ্রেন্ড দিয়েছে ওর বাবার ঝেড়ে।

দুজনে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রুমে ঢোকে। টুকাই গীটারটা বেডে নামিয়ে  রেখে বলে,

-তোর বাবার লেখা চিরে চ্যাপ্টারে নিসনা কেন বলতো?

-সেটা স্বজনপোষন হয়ে যায়।

-বাল। কবি জীতেন ঘোষাল এই কাগজে লিখলে কাগজের নাম ফেটে যাবে। স্বজনপোষন কি বে!

সায়ন হাসে। বলে,

-সেটাও তো স্বজনপোষন। জীতেন ঘোষাল যেকোনো কাগজে তো লেখা দেয়না। এখানে দিলে ছেলের কাগজ বলেই দেবে।

টুকাই খিস্তি করে,

-যত শালা প্যাচোয়া চোদা কোথা।

শীর্ষেন্দু দত্ত। লেখক ও ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৬৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের ইস্পাত নগরী জামসেদপুরে। পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বাবাকে চার বছর বয়সে হারান পথ দুর্ঘটনায়। মায়ের সাথে কলকাতায় চলে আসেন। মেজমামা অরুন আইন একজন পরিচিত লেখক ছিলেন। তার কাজে প্রাণিত হয়ে লেখা...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ