যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কাজুবাগানের মধ্যিখানে গাঢ় কোনো ঘুম তোমাকে পায়। পৃথিবী, অতিকায় জিগজ্যাগ পাজল, তার মধ্যে ঘুরছ, থামছ, ঘুরছ —একদিন লুপ্ত হবে সব কারুআয়োজন, মিটে যাবে শব্দপিপাসা, আজ তবু তোমার পাশে চুপ করে আছে বীণা।
দুই
আমার ইস্তেহার নাই, বহু শব পেরিয়ে শুধু একটি শিউলিগাছের কাছে পৌঁছতে চাইছি। বিত্ত, মোক্ষ, ধ্যান —কিচ্ছু নাই, কেবল রিক্ত যত শব্দের কায়া আগলে দীর্ঘতর কিছু প্রতীক্ষা। ধূসরতম মার্জিনে, আরেকটু বিবর্ণ হতে থাকা। পাঠকের আঁত, আতাত, আমি বুঝতে চাই না কখনো। গভীর বন, কামশাস্ত্রের গভীর—অগম্য থেকে গেল। আর তুমি, যেন ভৌতিক কোনো ক্যালাইডোস্কোপ, রশ্মিচ্ছটা ফেলো না আমার মুখে। শিউলিগন্ধটুকু আসতে দাও। ততক্ষণে আমার সমস্ত পঙ্ক্তি থেকে দেখো ক্রমে ফুটে উঠছে এক সন্ত-ড্রাগন।
তিন
যখন আমি তাকে হারিয়ে ফেললাম, সচেতনতার মুহূর্তটি এল। বজ্রগর্ভ মেঘের আড়াল থেকে সে বেরিয়ে এসেছিল, এখন তাকে গ্রহণ করছে আরেকটা কোনো সিঁদুরে মেঘ। আমি পথের মানুষ পথেই দিব্যোন্মাদ পড়ে রইলাম। কত রকম চেনা অচেনা ভাষার মানুষ দেখা হল। রসিক, বিদগ্ধ পাঠকের দেখা যেমন পেলাম, তদুপরি, সাহিত্যজগতের হরফুনমৌলা, চালিয়াত পাঠক আর ঘেঁটো সংস্কৃতির পাণ্ডাদেরও দেখলাম অনেক। চারপাশে মোটা মোটা বই হাতে ঘুরছে লুম্পেনসুন্দর! তারা হ্যাংলামি জানে, নৃশংসতা পারে—এদের প্রত্যেকের স্ব স্ব নিশান আর নিশানা আছে, ঘরে ফিরে গেছে তারা, এখন মেঘেদের সংঘর্ষ, একটা ঘাসফুল কাঁপছে আসন্ন ঝড়ের প্রারম্ভে, মেঘ সরে গেলে তুমিও আর নাই তখন, কালপুরুষ শুধু জ্বলছে।
চার
কিছুক্ষণ, চেনা লজিকগুলো রাখো, এই ময়দানে, আজ fuzzy logic! এমন একটা বটগাছের নিকটে আমরা পৌঁছলাম যার সারা দেহে ফুটে আছে যৌনঘড়ি। অসংখ্য খরগোশ একটি চূড়ান্তবাক্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তার সামনে। কবিতার রসদ আর জালালি কবুতরগুলো এখন কারা যেন পাচার করতে চাইছে এই ময়দান থেকে অন্য কোনো অচেনা লোকালয়ে। দূরে, অ্যালেন গিন্সবার্গের ভঙ্গিতে উটপাখির পিঠে যিনি ন্যাংটো হয়ে বসে আছেন, উনিই কি এসবের মন্ত্রণাদাতা?
পাঁচ
কোনো একটা কবিতা রচনার মুহূর্ত যখন আসে, সেই সুপ্তিপর্ব থেকে ক্রমে উদ্ভাসন অব্দি যে-অভিজ্ঞতাটুকু অর্জন হয়, পরবর্তী কোনো লেখায় সেটা খুব একটা কাজে এল না দেখতে পেলাম। অজস্র কবিতা লেখা হল পৃথিবীতে, শোনো, আজও তবু এর সার্থক কোনো ম্যানুয়েল নাই। যখনই কোনো তত্ত্ব বা ম্যানুয়েল ধরিয়ে দিতে চাইবে কোনো সাহিত্যনীতিপুলিশ, উপস্থিত হয় কবিতার নামে ব্লাশফেমি। আবার এও স্বীকার করা যাক, there is a method in this madness, এই উপায়নৈপুণ্য, তিমির-মথিত হর্ষ আর বিষাদ থেকে উত্থিত এই বাকফসল, তখন নিজত্বে দুর্মর।
ছয়
কবিতার কাজ এমন নয় যে তা বাজিমাত করতে এসেছে, তার একটা অন্তশ্চারী যাতায়াত আছে, তা কোথাও নীরব তীক্ষ্ণ সংবেদী কোনো প্রান্তবাসী মনের সমর্থন খুঁজে ফিরছে মাত্র, আর এই জন্যে তার মধ্যে দিশেহারা হওয়ার কোনো ব্যগ্রতা নাই। অ্যাপেলেসের আঁকা মাদি ঘোড়ার ছবি দেখে বাস্তব জগতের একটা ঘোড়া সঙ্গমোদ্যত হয়েছিল, রসানুসন্ধানীর তরফে, কবিতা কখনো কখনো সেইরূপ যুক্তিহীন আকর্ষনীয় পথ পরিক্রমা করতে চায়। divine commands থেকে উৎসারিত হয় কবিতার পঙক্তিমালা, এইরূপ তত্ত্বে আমার সায় নাই তত, কেননা কবিতার তথাকথিত অ্যাঞ্জেলিয়মে আমি আস্থা রাখি না। পরিবর্তে, লৌকিক এক স্বরপ্রবাহকে আমি কবিতা ভাবি। ঐ একই কারণে, শব্দপুঞ্জ নয় ঈগলের ক্রুদ্ধ চোখ, তারা আছে ডানা হয়ে। শিকারের নিষ্ঠুরতা নিশ্চয় আছে জগতে, আমি তবু প্রথম পক্ষপাত রাখি তার ধীর উড়ে চলায়। তার রাজসিক একাকীত্বের অদ্ভুত লীলাই আমার অভিপ্রায়।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..