আমি নয় অন্য কেউ

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
কবিতা
Bengali
আমি নয় অন্য কেউ

এক একটা শূন্যতা

না পাওয়া গুলোকে অনেকে শূন্যতা বলে
এরকম অনেক শূন্যতা আছে আমার,
সেগুলো মিলেমিশে এক একসময় এক একটি কবিতা হয়ে যায়।

এক একটি কবিতা মুখে অনুরাগ মেখে থাকে,
হুবহু তোমার মতো, শীত শেষে একটু একটু করে বসন্তের হাওয়া
যখন জামা কাপড়ে জড়িয়ে যায়, বুকের ভিতরে গিয়ে ঢোকে,
তখন জমে থাকা সব কথাগুলি ফুলের কুচি হয়ে উড়ে যায়।

এক একটা শূন্যতা কেমন আকুল হয়ে ডাকে,
অনাবৃষ্টির জন্য যে জমিতে চাষ হয়নি, এক ফাল্গুনের দিনে
আমি সেখানে গিয়ে দাঁড়াই, পলাশের আগুন দেখে ভুলে যাই
কার পাশে কে কখন দাঁড়াতে পারেনি।

এক একটা শূন্যতা আকাশকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়।

 

এরকম হয়

এরকমই হয় মাঝেমাঝে
যখন মনে হয়ে পাতার পর পাতা ঝরঝর করে লিখে ফেলতে পারি
তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয় চুপচাপ,
মনে মনে প্রচণ্ড তৎপর হতে চাইলেও
একটি শব্দও খুঁজে পাইনা কোনোদিক থেকে।

এরকম হয়। খুব কাছে কেউ আছে ভেবে যখন খোলা মনে ডেকে উঠি,
সে ডাক ভেসে যায় বন্য হাওয়ায়, কেউ সাড়া দেয়না,
বুঝতে পারিনা যে মাঝাখানে অদৃশ্য দেওয়াল উঠে গেছে।

এরকম হয়। যে হাতের মায়ায় আঁকড়ে ধরতে চায় বারান্দার খুঁটি
তাকে আচমকা চলে যেতে হয় বহুদূর পথে।

 

আমি নয় অন্য কেউ

আমি আর কতটুকু দূরত্ব রাখতে পারি
প্রবল উচ্ছ্বাসে যখন ফুলে ফেঁপে ওঠা নদীর পাড় ভাঙে
তখন এমনি এমনিই বেঁচেবর্তে থাকা মানুষ ভেসে যায়।

পথের সাহায্য নিয়েই এদিক ওদিক চলাফেরা আমার
নেহাত পথ নিয়ে যায় তাই ঠিকানাগুলো সামনে আসে
নইলে আমি আর কতটুকু খুঁজে যেতে পারি।

ভালোবাসার জন্য কিছুই তো করিনি কোনোদিন
ঠিক সময়ে প্রিয় নারীটির পাশে দাঁড়াতে পারলে
পাতার বাঁশী টি আপনিই সুরে বেজে ওঠে।

এই যে মনের মধ্যে ঘরের মধ্যে উপচে পড়ে আলো
তাতে আমার আর কি করার আছে
দরজা ভেঙে আসে বলেই তো সে জ্যোতির্ময়।

 

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি ও গদ্যকার। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বাঁকুড়া জেলায়। এবং কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। লেখালেখি শুরু সত্তরের দশক থেকে। প্রকাশিত বই: ‘মার্কিন মুলুকে, মফস্বলে’(২০২০)। যৌথভাবে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘রক্তাক্ত চন্দনের বনে’(১৯৭৭) এবং ‘সপ্তর্ষির আলো’(২০১৫)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..