আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
স্বরস্বতী সরস্বতী
সারবছর চোখ থাকতো মায়ের শাড়ির আলমারিতে |
কমলা রঙা মুর্শিদাবাদী , বাসন্তী পিংক বেনারসী ,
অথবা বেশ জমকালো সেই আকাশ রঙা জামদানী|
মোটকথা খুব প্রিয় ছিলো রামধনু সেই আলমারী |
মাগো আমায় দেবেতো ঠিক ? স্বরস্বতী পুজোর দিনে ?
দিন পনেরো আগের থেকে লক্ষী মেয়ে কথা শোনে |
কেমন যেনো গা শির শির ,বড়ো হওয়ার অনুভূতি
এনে দিতো মায়ের শাড়ী জড়িয়ে গায়ে চুপি ,চুপি |
তারও আগে বাচ্চা বেলায় |
ছিলো আমার ছোট্ট শাড়ী |
পরিয়ে দিয়ে বলতো বাবা ,এই তো আমার রাজকুমারী |
অন্ধকারে অবছায়াতে ফুল তুলবো সাজি ভরে
আলপনা আর ধুপ ধুনো স্বরস্বতীর আসন জুড়ে |
খিচুড়ী ভোগ ,পাঁচ ভাজা , পায়েস মিষ্টি তারই সাথে
ইস্কুলেতে দেদার ভোজ স্বাধীনতার গন্ধে ,স্বাদে |
তারপরে সেই রামধনু রঙ হঠাৎ কখন লাগলো চোখে
স্বরস্বতীর বীণার তারে তখন ইমন ,ভৈরো বাজে |
রঙ বদলায় জীবন ধীরে প্রতি বসন্তে পঞ্চমীতে |
শাড়ীই যখন জড়িয়ে ধরে প্রতি বসন্তে পাকে ,পাকে
স্বপ্নরা সব আড়ি করে কোথায় লুকায় একে ,একে
স্বপ্নে যখন ইস্কুল গেট অনেক দূরে অবছায়াতে
স্বরস্বতীর বিসর্জনের বাজনা ঘুমে কানে আসে |
দারোয়ান তফাত যাও বলে জোরে ,জোরে হাঁকে |
রামধনু রঙ আলমারীটা বদলে গেছে কোন সে ফাঁকে |
আমার এখন রামধনু রঙ ,মায়ের শ্বেত মেঘের চাদর |
স্বপ্নরা সব ছুটি নিলো পাড়ি দিলো তেপান্তর |
আর বলিনা মাগো আমায় বিদ্যা দাও ,বুদ্ধি দাও |
অনেকগুলো চাওয়া কেমন আপনা থেকে পাল্টে গেছে |
পুষ্পাঞ্জলির দু একটা ফুল আর পড়ে না গায়ে এসে |
লাজুক চোখে তাকিয়ে কেউ আর ফেলেনা মুচকি হেসে |
একটা নৌকা চাই
একটা নৌকা চাই বোঝা গুলো রাখবো |
লম্বা শ্বাস নেবো তারপর |
ঝুঁকে যাওয়া পিঠটাকে একটু টান করে
না হয় বইবো আবার |
সেই কত দূর থেকে একা একা পথ চলা |
একে একে বাঁকে বাঁকে কত বোঝা পিঠে ফেলা |
নুয়ে পড়ি ভারে তবু পাইনি
নৌকো খানি |
যেখানে নামিয়ে বোঝা –
একটু বিশ্রাম নেবো |
নদী বুকে ভেসে যাবো |
পরম আশ্রয়ে যার মায়ায় নিবাস আমার
তার ছায়া ছায়া ঘেরা মায়াজালে ঢেলে দেবো ক্লান্তি |
তারপর ক্লান্ত চরণ দুটো আপনিই ভেঙে গেলে
আপন বুকের মাঝে মিশিয়ে আশ্রয় দেবে
কে সেই নাবিক ? সেকি তুমি ?
আমি সেই মেয়ে
আমি সেই মেয়ে যে ভালবেসেছিলো |
ভালোবাসা চেয়েছিলো দুহাত ভরে |
দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিলো যে
ইচ্ছে ডানায় ভর করে |
কখনো শ্রান্ত বসেছে কোথাও কখনো দিকভ্রষ্ট |
আবার ফিরেছে লক্ষ্যে ,
জীবনের ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেতে ,খেতে !
আমি সেই মেয়ে যার লক্ষ্য সুনিশ্চিত ,
অথবা লক্ষ্যহীন ভেসে চলেছে স্রোতের টানে |
ভালোবাসার কারবারী |
লাভ লোকসানের হিসেবে অপটু ,অচঞ্চল |
হার মানেনি হৃদয় |
যুদ্ধ অবিরত |
ভালবাসা ,করুণা ,মায়া ,মমতার বর্মে সুরক্ষিত দুর্ভেদ্য |
আমি সেই মেয়ে যে জয় করেছে নিজেকে,
ক্ষমা দিয়ে ,ভালবাসা দিয়ে |
আমি সেই মেয়ে যে বেড়ে উঠেছে অবহেলায় ধীরে ,ধীরে ,
মাধবীলতার মত তোমার জানলায় |
রাতের সুগন্ধ বাতাস হয়ে মিশেছে তোমার নিশ্বাসে অজান্তেই
অথবা স্বইচ্ছায়
আমি সেই মেয়ে যার চলে যাওয়া হয়তো বেদনার নয় |
তবু একফোঁটা বাতাস হয়তোবা কম হবে তোমার নিশ্বাসে |
শুকনো মাধ্বীলতার !
আমি সেই মেয়ে যারা জয়ী হয়
চিরকাল শুধু ভালোবেসে |
সুর সম্রাজ্ঞী লতা মাঙ্গেশকর স্মরণে
গন্ধর্ব লোকে আজ বাজছে মঙ্গল গীত ,
আসন পূর্ণ করে স্বরস্বতী পুত্রী
বিরাজে বহুকাল পর |
কিছুদিন আগে নিয়েছেন স্থান স্বয়ম শিবাংশ
নটরাজ |
বিরজু মহারাজ |
গন্ধর্ব লোকে মহানন্দ আজ |
আরও যারা নিয়েছেন স্থান
ছেড়ে কায়া,ভুলে মায়া ,মিথ্যা অপবাদ ,
সুরে সুরে বাঁশি পুরে ইমন ,বেহাগ |
তাক ,তেড়েকেটে ,দুম ,তাক তেড়েকেটে দুম ,
দ্রিম তা না ,না ,দ্রিম তা না ,না দ্রিম
স্বরে ,তালে ,সুরে ,সুরে আনন্দ বিলীন |
মিথ্যা এ মোহ মায়া ,মিথ্যা আলোচনা ,
মিথ্যা এ অশ্রুর ভার |
জীবন শুধু রেখে যাওয়া মিশ্র কর্মের ভার
প্রতিদিন মঞ্চে |
ভালো মন্দে ,বিষে ,নির্বিষে ,হাততালি ,ধূৎকার |
গন্ধর্ব লোকে উৎসব তাই আজ |
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..