প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
– কিরে বাবু, কাল তো তোদের সবার ছুটি, আমি কিন্তু কাল দেরি করে ঘুম থেকে উঠবো।
– উঠো, এটা আবার বলার কি আছে।
– না সেতো উঠবোই আর তুই কাল সকালে আমাদের সবাইকে ম্যাগী করে খাওয়াবি।
– কি বলছো ঠাকুরঝি! বাপ্পা আমাদের জন্য ম্যাগী করবে?
– হ্যা, কেন কি হয়েছে?ও খুব ভালো ম্যাগী বানায়
– কি সব বলছোনা ঠাকুরঝি, আমাদের বংশের বড় ছেলে, সে নাকি ঘুম থেকে উঠে আমাদের জন্য রান্না করবে? কেন আমরা কি মরে গেছি? তুমি ঘুমিও ঠাকুরঝি আমি উঠে রুটি তরকারি বানিয়ে নেব
– না! তুমি কেন বানাবে? রান্না করবে মানে? ম্যাগী বানানোটা রান্না নাকি? আর ম্যাগী বানানোর সাথে বংশের বড় ছেলে হওয়ার কি সম্পর্ক বৌদি?
– ওমা বলবো না, আমরা অসুস্থ থাকলে তখন না হয়… কিন্তু সুস্থ সবল আছি,তাহলে ও করবে কেন?
পূরবী সমাদ্দারের বাড়িতে আজই তার বৌদি এসেছেন। কয়েকদিন থাকবেন উনি। অবশ্য ঠিক কদিন থাকবেন তা জানা যায় নি, ওরকম তো কাউকে জিজ্ঞেস করাও যায় না। পূরবীর, স্বামী আর তার একমাত্র সন্তান নিয়েই সংসার। সংসারে সুখ খুব একটা না থাকলেও শান্তি ছিল। পূরবী কখনোই ছেলেকে, সে ছেলে বলে অতুপুতু করে মানুষ করেন নি। ছুটির দিন ছেলেকে দিয়ে কখনো চা করানো, কখনো ম্যাগী করানো, গরমকালে স্কোয়াশ বানানো, মুড়ি মাখানো এগুলো পূরবীর ছেলের বা স্বামীর কাছে নতুন কিছু নয়। তবে যেহেতু আমাদের সমাজে এসব সচরাচর দেখা যায় না তাই স্বভাবতঃই ওনার বৌদি শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন। কারণ ওনারও আর পাঁচ জনের মতোই মানসিকতা যে ছেলেরা রান্না ঘরে কাজ করবে? তাই মতবিরোধ চলতেই থাকলো…
– কেন বৌদি শুধু আমরা অসুস্থ হলেই ছেলেরা কাজ করবে কেন? সপ্তাহে যদি একদিন ম্যাগী করে বা চা করে তাতে কত সময় নষ্ট হয়? ও তো এখন ছোট নয়, কলেজে পড়ে। বাবু তো মাঝে মাঝে করে, আর তুমি তো ওর রেজাল্টের কথা জানো, তোমার কি মনে হয় এসব করে ওর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে?
– না আমি সময়ের কথা বলি নি ঠাকুরঝি। এটা খুব দৃষ্টিকটু যে বাড়িতে মেয়েরা শুয়ে আছে ছেলেরা রান্না ঘরে যাচ্ছে
– দৃষ্টিকটু কেন লাগে জানো কারণ আমাদের মানসিকতা এখনো উন্নত হয় নি। অনেকেরই অভিযোগ থাকে আমার স্বামী কিচ্ছু করে না কিংবা আমার ছেলে কিচ্ছু করে না, কিন্তু এর জন্য দায়ী ছেলেরা নয়, দায়ী আমরা মেয়েরা। অবশ্য মেয়েরা বলা ভুল। দায়ী একমাত্র ছেলের বাবা মায়েরা। আজকালকার ছেলে মেয়েদের দোষ দেওয়া হয় যে তাদের কারোর প্রতি ফিলিংস নেই, কোনো ভালোবাসা নেই, বড়দের সম্মান করতে পারে না। কেন?তার জন্য দায়ী কি সম্পূর্ণ ওরা? না গো, দায়ী আমরা। দেখো বৌদি, ছোট্ট বেলা থেকে আমরা বাচ্চাদের কি শেখাই… “নিজের টিফিন কাউকে দেবে না কিন্তু, পুরোটা খেয়ে নেবে”
“তোকে কিছু করতে হবে না, তুই শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা কর”
“ও যখন যেতে চাইছে না, ও ঘরে থাকুক”
কেন আমরা শেখাই না, যে অন্যরা যদি তোমার টিফিন খেতে চায় তাদেরও একটু দেবে, তুমিও তাদের থেকে একটু খাবে কারণ খালি পেটে না থাকলেই হলো। কেন আমরা ছোটবেলা থেকে শেখাই না যে পড়াশোনা করাটা যেমন, স্কুল, খেলতে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা করি, তেমন খুব ছোট ছোট কাজও আমাদের করা উচিত। আমরা কেন সমাজে নিজেদের খুব ভালো বাবা মা প্রমাণ করার জন্য বাচ্চাদের সব কাজ করে দিয়ে বলি “তোমায় কিছু করতে হবে না, শুধু মন দিয়ে পড়ো”। আপনজনের শরীর খারাপ হলে আমরা বড়রা দেখতে যাই, ছোটদের নি না কারণ ওরা ছোট, ওরা গিয়ে কি করবে? কিন্তু ওরা যদি আপনজনের কষ্টটা না দেখে, ওদের মনে দয়া মায়া আসবে কোথা থেকে? বাচ্চারা কিছু কিনতে চাইলে যদি আমরা কখনো এটা না বলি যে এখন বাবার বা আমাদের একটু অসুবিধা আছে কদিন পরে কিনে দেবো তাহলে তারা “না” শব্দটার সাথে অভ্যস্ত হবে না। সেজন্যই বড় হওয়ার সাথে সাথে কখনো কিছু চাওয়ার পর না পেলে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়
– বাব্বা ঠাকুরঝি তুমি তো কত কিছু বলছো। এগুলো পরে সবাই শিখেই যায় তার জন্য আলাদা করে শেখানোর কি আছে?
– ওটাই তো আমরা ভুল করি, আমাদের শিক্ষার গোড়াতেই ফাঁক থাকে আর পরে আমরা সন্তানদের ওপর দোষ দি। দেখো বৌদি সবই অভ্যাসের ব্যাপার। আজ বাবুকে ম্যাগী করতে বললাম ওর এটা অস্বাভাবিক লাগে নি, কারণ এটা ও করে কিন্তু এখন যদি তুমি দাদাকে করতে বলো তখন?
– বাব্বা, কার কথা বললে! তোমার দাদা করবে কি গো, তোমার দাদা তো গ্যাস জ্বালাতেই জানে না
– জানি তো। তাই তো বললাম। মা তো দাদাকে দিয়ে কখনো কিছু করায় নি। পুরুষ মানুষ নাকি রান্না ঘরে ঢুকলে মেয়েলি স্বভাব হয়ে যায়। যত আজে বাজে ধারণা। আচ্ছা বলো তো বৌদি, কখনো তোমার শরীর খারাপ হলে মনে হয় না, যে দাদা যদি একটা দিন সামলে নিতো তাহলে কত ভালো হতো
– এটা ঠিক বলেছো ঠাকুরঝি। কি আর করবো সবই কপাল। আমার জামাইবাবু দিদির জন্য কি না করে
– ছেলেদের একটু কাজ জেনে রাখা মানে এই না যে সে বাইরেও করবে আবার রোজ ঘরেও করবে। আমি তো একজনকে চিনি তার বউ সন্ধ্যে বেলা একটার পর একটা সিরিয়াল দেখে। বর অফিস থেকে ফিরে নিজে চা করে আবার বৌকেও চা করে খাওয়ায়
– সেকি!
– (হাসতে হাসতে) হ্যা গো
হঠাৎ বেল বাজায়…
– এখন আবার কে এলো, বাবু কোথায় গেল?
– বাপ্পা তো রান্না ঘরে গেল
– ও! দাঁড়াও আমি দেখি কে এলো
দরজা খুলে…
– আরে শংকর, কি ব্যাপার?
– কাকিমা একটু পরে ক্লাবের মাঠে চলে এসো
– কেন কি হয়েছে?
– ওই যে আগের বছর মেট্রোতে সেই হলো না, ওই সব। তারপর অনেকে মিলে প্যাঁদালো ছেলেটা আর মেয়েটাকে
– হ্যা
– আজ ওটার ব্যাপারে নিউজ চ্যানেল থেকে ওরা আসছে। একটা ডিবেট টাইপের হবে
– ও, আচ্ছা। একটু পরে বাবুকে পাঠিয়ে দেবো
– না, বাপ্পাদা গেলে হবে না। ওরা বলেছে মাঝবয়স্ক বারো তেরোজন লাগবে
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি একটু পরে আসছি
ঘরে সমস্ত কাজ সেরে পূরবীর যেতে একটু দেরি হয়ে গেল। গিয়ে দেখলো ডিবেট শুরু হয়ে গেছে। পাড়ার ক্লাবের মনোজবাবু ইশারা করে নিউজের লোককে বলায়, নিউজের লোক পূরবীকে ডিবেটে জয়েন করতে বললেন। দুটো টিম ছিল। বিষয় ছিল গত বছর মেট্রো ট্রেনে দুই প্রেমিক প্রেমিকার কিছু অসংযত ভঙ্গিতে থাকা আর তারপরে কিছু মানুষের তাদের মারধোর করা। পক্ষ আর বিপক্ষের মধ্যে, পূরবী দেবী বিপক্ষের দলেই গিয়ে দাঁড়াল, বিতর্ক চলছিলোই…
– আরে মশাই আগে আমাদের সময় কি প্রেম ছিল না? আগেও প্রেম ছিল, নয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এত প্রেমের গান লিখলেন কি করে?
– যারা মেরেছেন, তারা ফ্রাস্ট্রেশানে নিজেরাই ভুগছিলেন তাই এসব করেছেন
– কোনো ফ্রাস্ট্রেশানে কিছু করে নি, যা করেছে বেশ করেছে
– (পূরবী বলে উঠলো) না! ওনারা মেরে ঠিক করেন নি, ওনাদের কোনো অধিকার নেই কারোর গায়ে হাত দেওয়ার
– অধিকার আবার কি? আর কদিন পর যদি আপনি আপনার বাড়ির সামনেও এরকম জায়গায় জায়গায় প্রেমিক প্রেমিকা কে দেখেন তখন?
– পরে কি হবে ছেড়ে দিন বরং যা হয়ে গেছে সেটা একটু মনে করিয়ে দি। আপনারা কি মনে করেন পাবলিক অসংযত কিছু দেখলে গণধোলাই করতে পারে, আইনের সাহায্যের দরকার নেই?
– আইনের দরকার আছে তবে তার আগে পাব্লিককেই পরিস্থিতি সামলাতে হবে, তারপর তো আইন
– তাই বুঝি, তাহলে তো খুব ভালো। তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে, যদি আমাদের সমাজ এত সচেতন তাহলে যে এত জায়গায় এত রেপ হচ্ছে তখন অপরাধীরা কি করে বেঁচে যায়, তাদের কেন গণধোলাই দেওয়া হয় না? এই ছেলে মেয়েরা কি ওদের থেকেও বেশি অপরাধ করেছিল?
– এই বিষয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনে আনলেতো হবে না
– অন্য বিষয় কোথায়? আমি শুধু জনসাধারণের কতটা ক্ষমতা, সেটা বুঝে নিতে চাই
– এটা আলাদা করে জানার কি আছে, ছোট খাটো ব্যাপার পাবলিক সামলে নেয় কিন্তু বড় কিছু হলে তখন আইনের সাহায্য নিতে হয়
– আসলে কি জানেন, আমরা নিজেরা জানিই না যে কোনটা সামান্য আর কোনটা বড়। যখন অন্যের মেয়ের রেপ হয়েছে শুনি, আহা উহু তো করি কিন্তু তাদের পরিবারের কি মানসিকতা তা বুঝি না, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি না, তখন তাদের দুঃখ দেখে, তাদের অসহায়তা দেখে আমাদের রক্ত গরম হয় না। কিন্তু ভগবান না করুন, যদি আমাদের পরিবারে কারোর এরকম হয় তখন? তখন মনে হবে রেপিস্টকে খুন করে ফেলি। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক।এটা শুধু আপনাদের বলছি না, আমার ক্ষেত্রেও একই হবে। কিন্তু সেদিনের ঘটনাতে মারধোর করাটা মোটেও ঠিক হয় নি
– অন্যের ছেলে মেয়ে করেছে তো তাই অন্যায় মনে হচ্ছে না, আপনার নিজের ছেলে মেয়ে করলে?
– আমার? আমার ছেলে করে যদি?
– হ্যা হ্যা, বলুন এবার!
– আমার ছেলে যদি এরকম করে বুঝবো, শিক্ষাটা হয়তো ঠিক করে দিতে পারি নি
– এইবার পথে আসুন, এবার কেন সুর বদলে গেল?
– সুর বদলাবো কেন? আমি আমার শিক্ষার কথা বলেছি, তাই বলে যদি আপনারা ওর গায়ে হাত তুলতেন, তাহলে উল্টে আমি আপনাদের নামে থানায় রিপোর্ট করতাম
– এই যে, ঠিক এই সব প্রশ্রয়ে ছেলে মেয়েগুলো উচ্ছন্নে যাচ্ছে। আপনার ছেলে অন্যায় করবে আর আপনি উল্টে আমাদের নামেই রিপোর্ট করবেন?
– করবোই তো। সেদিনের ছেলে মেয়েগুলোকে সবাই মিলে একটু ভয় দেখিয়ে, তাদের বাবা মার ফোন নম্বর নিয়ে বাড়িতে জানিয়ে দিলে হতো না কি? নিজেদের হিরো প্রমাণ করার জন্য, নিজেরা খুব সৎ, জীবনেও তাঁরা কোনো মহিলাকে কু-নজরে দেখেন নি প্রমাণ করার জন্য, মেরে দেখালেন যে, দেখো আমরা কত ভালো তাই, মন্দের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছি
এদিকে পূরবীর বৌদি…
– ও বাপ্পা! কই রে তুই?
– কি হয়েছে মামী, তুমি মাঠের থেকে চলে এলে কেন?
– তুই শিগগির চল ওখানে, তোর মা সবার সাথে কী ঝগড়া করছে
– হা হা! মামী ওটা ঝগড়া না। ওটা ডিবেট হচ্ছে
– আরে তুই দেখিস নি বলে বলছিস, ওখানে দুটো টিম করেছে। কিন্তু তোর মার টিমে, তোর মা একাই অন্য টিমের সবার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে
– সে তো জানি, মা একই একশো
– তুই চলনা বাবা, ওখানে সব ক্যামেরা ট্যামেরা আছে, তোর মা কি বলতে কি বলবে
– আচ্ছা, দাঁড়াও যাচ্ছি
ওদিকে ডিবেটে…
পূরবীর বিপক্ষ দল থেকে- কিন্তু শুধু আপনিই বলছেন কেন, অন্যদেরও বলতে দিন পূরবীর দলের তন্ময় বাবু-আমাদের দল থেকে কে বলবে সেটা আমরা বুঝবো, আপনারা আপনাদেরটা দেখুন পূরবীর বিপক্ষ দল থেকে একজন বললেন-আমাদের সময় প্রেম ভালোবাসার মধ্যে কত মাধুর্য ছিল আর এখন ছিঃ! পার্কে যাওয়া যায় না, সব জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে। আসলে সব দুদিনের। কোনো ভালোবাসাই টেকে না এদিকে…
– ওই দ্যাখ বাপ্পা! মাকে ডেকে নে তুই
– না না ডাকবো কেন, দাঁড়াও না একটু শুনি
ওদিকে ডিবেটে…
পূরবী বলে উঠলো- আপনার যুগেও ভালো খারাপ ছিল আর এ যুগেও ভালো খারাপ আছে
– আমাদের সময় এসব অসভ্যতামি ছিল?
– দেখুন, আমার আর। মুখ খুলাবেন না
এদিকে…
– ও বাপ্পা, ওই দ্যাখ, কি সর্বনাশ, এতক্ষণে ও নাকি মুখ খোলে নি, তাহলে এবার কি বলবে কে জানে
– হা হা!
– তুই হাসছিস?
ওদিকে…
– মুখ খুললে খুলুন না, আমরাও শুনি একটু
– আপনাদের যুগে অসভ্যতামি হতো না? ট্রেনে, বাসে, ট্রামে যেখানেই যাও, ইচ্ছা করে মহিলাদের, গায়ে হাত দেওয়া, গায়ে গা লাগিয়ে বসা, আর হাতের কুনুইটা তো পুরুষদের সব থেকে বড় মাধ্যম ছিল, কুনুই দিয়ে শুধু এখানে ওখানে… যাক গে ছাড়ুন, আমার বলতেও মুখে বাঁধছে। একটা কথা বলবো? এটা আজ শুধু ডিবেটের বিষয় নয়, সত্যিই আমাদের ভাবা খুব দরকার।
কোনো ছেলে-মেয়েকে কিংবা নারী-পুরুষকে আমরা হাগ করতে দেখলে, মানে জড়িয়ে ধরতে দেখলে, যাকে শুদ্ধ ভাষায় বলে আলিঙ্গন করতে দেখলে খারাপ ভেবে নি। ভাবি এরা নির্লজ্জ, এদের হয়তো সেক্সটা বেশি, এরা এতটা ডেসপারেট যে লোকজন, স্থান কাল কিছু মানে না, বাড়ির শিক্ষা পায় নি আরো কত কি। যেগুলো বললাম, সেগুলো কারোর কারোর ক্ষেত্রে হয় না তা নয়। কিন্তু নারী পুরুষের আলিঙ্গন মানেই খারাপ তা নয়। কখনো আলিঙ্গন করা হয় ভালোবেসে, কখনো আবার খুব কষ্টে, মনের মানুষের বুকে মাথা রেখে খুব কাঁদলে মন হালকা হয়, এটাও এক প্রকার আলিঙ্গন, যখন নতুন প্রেমে আলিঙ্গন করে তখন তার মধ্যে উত্তেজনা থাকে, সেটাও আলিঙ্গন। কাউকে স্নেহ করেও আলিঙ্গন করা হয়, আবার কেউ শারীরিক চাহিদা থেকেও আলিঙ্গন করে। তাই কাউকে আলিঙ্গন করতে দেখলেই ভেবে নেবো যে তাঁরা নোংরামি করছে তা নয়।
আর তাছাড়া অন্য কারোর ছেলে মেয়েকে মারা বকা, অপমান করা অনেক সহজ কিন্তু সেখানে নিজের সন্তানকে বসিয়ে দেখুন। ভুল তো আমাদের নিজেদের ও সন্তানেরাও করতে পারে। ঘরে ছেলে মেয়েরা একরকম থাকে কিন্তু বাইরে তারা। বাবা মার আড়ালে কি করছে তা গ্যারান্টি দিয়ে কেউ বলতে পারে না। এর তখন যদি অন্য কেউ আপনার সন্তান কিংবা আপনার বাড়ির কোনো বাচ্চাকে মারে তখন আপনি সহ্য করতে পারবেন?
এদিকে…
পূরবীর বৌদি-বাহ্, ঠাকুরজি কি সুন্দর করে বোঝালো রে
– হ্যা মামী, মা এসব ব্যাপারে খুব উদার
– তাই বলে আবার ওসব করতে যাস নে বাবা
– না মামী, ওসবের তো দরকারই পড়বে না। কারণ আমি তো জানি আমার মা এসব ব্যাপারে খুব ব্রড মাইন্ডের, তাই লুকিয়ে করার বা রাস্তাঘাটে এসব করার কোনো ইচ্ছাই মনে আসবে না। যারা এসব করতে যত বাধা পাবে, তাদের এসব লুকিয়ে করার ইচ্ছা তত হবে। জানো মামী, মা আমাকে একদিন বলেছে, যে আমার যদি কখনো সিগারেট, মদ, গাজা- এগুলো যা-ই কৌতূহল বসত খেতে ইচ্ছে করবে, মানে সেটা কিরকম খেতে হয় সেটা জানতে ইচ্ছা করবে, আমি যেন মাকে বলি। মা ঘরে এনে দেবে আমায় একবার টেস্ট করে দেখার জন্য। কিন্তু কোনো বন্ধু বা অন্য কারোর সাথে যেন আমি বাইরে এসব কখনো না খাই
– তোর মার চিন্তা ভাবনাটাই আলাদা, আমি তো ভাবতেও পারবো না যে তোর ভাই পিকলুর সাথে, আমি এসব নিয়ে আলোচনা করবো
ওদিকে ডিবেট শেষের পর…
আমরা গত বছরের এই টপিকটা নিয়ে অনেক পাড়ায় পাড়ায় শুট করেছি, কিন্তু এই পাড়ার মতো এত সুন্দর ডিবেট কোথাও হয় নি। এর জন্য আপনাদের পাড়ার ক্লাবকে আমাদের “মন খুলে কথা হোক” এর তরফ থেকে একটা শ্রেষ্ঠ পাড়ার মোমেন্টো দেওয়া হবে। এছাড়া আপনারা যারা এই ডিবেটে ভাগ নিয়েছেন, তাঁদেরও প্রত্যেককে মোমেন্টো দেওয়া হবে। আগামী উন্ত্রিশে আগস্ট এটা টিভিতে টেলিকাস্ট হবে, বিকাল পাঁচটা থেকে ছ’টা
পূরবী তাঁর বৌদি আর ছেলের কাছে এসে…
– কি রে বাবু, তুই কখন এলি?
– আমি একটু পরে এসেছি
– কেমন বললাম রে? ঠিক ঠাক ছিল তো!
– বাব্বা ঠাকুরঝি তুমি যা বললে…
এসব কথা বলতে বলতেই, পূরবীকে পিছন থেকে চ্যানেলের এক লম্বা চেহারার, চোখে চশমা দেওয়া ভদ্রলোক বলে উঠলেন…
– এক্সকিউজ মি, আপনার সাথে একটু কথা বলার ছিল
পূরবী পিছন ফিরে ভদ্রলোককে দেখে, ওনার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল…
– হ্যা বলুন
– নমস্কার, আমার নাম সংকল্প চ্যাটার্জি। আপনার স্পিচ শুনে আমি তো আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম
সামান্য একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পূরবীর বৌদি, চোখ গুলো বড় বড় করে…
– ও বাপ্পা, এ কি বলছে রে! এ তো কেলেঙ্কারি
– মামী তুমি যে কি সব ভাবো না!
– দাঁড়া দাঁড়া শুনি কি বলছে
একটু লজ্জা হাসি দিয়ে পূরবী বলল…
– কি যে বলেন
– সিরিয়াসলি, ভাববেন না আমি স্বভাবত এরকমই যে কোনো মহিলাকে দেখলেই তার ফ্যান হয়ে যাই
– এমা না না, আমি ঠিক তা মিন করি নি
– এবার কাজের কথাটা বলি
– হ্যা বলুন
– আপনার যুক্তি, আপনার কথা বলার ধরণ, আপনার মধ্যে একটা এমন এক্স ফ্যাক্টার আছে যে আপনার কথা বলার প্রতি লোকে আকৃষ্ট হবেই
– এবার কিন্তু আপনি আমায় লজ্জা দিচ্ছেন
– একদমই নয়। আমাদের এই “মন খুলে কথা হোক” ছাড়াও আরেকটা প্রোগ্রাম হয় “মুখোমুখি আমরা”। এটায় সিরিয়ালের জগতে যাঁরা কন্ট্রোভার্সির মধ্যে পড়ে, তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, মানে নানা প্রশ্ন করা হয়। সেটার জন্য আপনার মত অ্যাঙ্কার পেলে খুব ভালো হয়
– আমি?
– ইয়েস! ইউ
– কিন্তু
– টাইম নিন, বাড়িতে ডিসকাস করুন। এই নিন আমার কার্ড, কল করে দেবেন। তারপর টার্মস এন্ড কন্ডিশন বলে দেবো। ও! ওদিকে আপনাদের এবার মোমেন্টো দেবে, সবার নাম ডাকছে
– ঠিক আছে আমি জানাবো আপনাকে। এ..ই বাবু ওদিকে চল, মোমেন্টো দেবে। ছবি তুলিস কিন্তু
একে একে সবাই কে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে মোমেন্টো দেওয়া হবে। একদিকে পক্ষ আর একদিকে বিপক্ষের সবাই দাঁড়িয়ে। মোমেন্টো দেওয়া শুরু হলো, পূরবী অবাক হয়ে গেল, কারণ মোমেন্টো সবার হাতে তুলে দিচ্ছিলেন সংকল্প চ্যাটার্জি। সবাইকে মোমেন্টো দেওয়ার পর সংকল্প চ্যাটার্জি বললেন যে সবার পারফর্মেন্স ভালো হয়েছে তবে পূরবী সবথেকে ভালো বলেছে। পূরবীকে দু’চার কথা বলতে বললেন। পূরবী মৃদু হেসে বলল “পক্ষ আর বিপক্ষের সবার মধ্যে একবার আলিঙ্গন হয়ে যাক!”
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..