আলোর আবির্ভাব

শাহীদ লোটাস
কবিতা
Bengali
আলোর আবির্ভাব

বাড়ি ফেরা

যেখানে মরণ নেশায় মৃত্যু খেলা করে রজনীর মতো
সেখানে প্রশান্তি আমার মরনজাত
পৃথিবীর সমান বেদনার পথে।
আমি তাকিয়ে আছি মৃত্যুর নগরীতে !

যারা ছিলো আপন, বন্ধু, স্বজন, হারিয়েছে বহুদিন হলো
সেখানে রোগ অবসান সেজেছে রূপবান
সেজেছে তারকাময়ী,
এই নক্ষত্রশোভিতা মিলিয়ে আছে ঐ সরাব নগরে!
ঐখানে শান্তি নক্ষত্রদান অথবা যন্ত্রণার পাড়,
ঐখানে সুদীর্ঘ যৌবন জেগে আছে সমুদ্রবহ্নি যৌবন নিয়ে
ঐখানে মিলনস্থল তোমার, আমার, প্রিয়তমার,
ঐখানে বহু অচেনা মুখ সমুদ্রে বিন্দুপাত।
ঐখানে অফুরন্ত সমুদ্র বুক, অবরোধ কারাগার,
ঐখান তোমাদের পদতলে পারি হয় শত সহস্র বছর,
শত সহস্র কাল।

আমি জেগে আছি তোমরা তা জানো না!
গৃহ লক্ষ্মী মায়াবী করুণ বনে মধ্যবিত্ত পাওয়া গুলো
বাঁশ বনে ডোম করে রাখে ফাল্গুন ও চৈত্রমাসে।
আর আমার ইচ্ছে গুলো লোকান্তরিত প্রেমে
হাওয়ার শূন্যতায় ছোয়ে যায় তার শুষ্ক মরু বুক,
এ অন্য লোক!
এ মহা জীবনে সমস্ত জীবন এসেছে একাকার হয়ে
অকিঞ্চিৎকর মূল্য অথবা কঠোর পরিশ্রম করা অনশ্বর,
অতি জাগতিক মুদ্রার আড়ালে যে ক্ষুধা আন্ধার করে রাখে
আরম্ভ আকাশে সেই ঈশ্বর।

আজ,
ঊর্ধ্ব স্থিত এক শান্তি এক বেদ-মন্ত্রদ্রষ্টা এক ঋষী
এখানে কেও একাকিনী নয়,
এক ঘরিয়া জীবন কাল জাগানিয়া
তবোও তোমাদের অন্তরে থাকে আমাদেরেই ভয়!
একগুঁয়ে এক পার্শ্ব হে বন্ধু, এ তোমারো বাড়ি
এসে দেখো সবুজ ঘাসের আড়ালে আমরা জেগে আছি।

অন্যকালে আমিও সহজে ভীত ছিলাম তোমাদের মতো
সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রক্তিম আলোকছটায়
যাকে তুমি সমাধিক্ষেত্র বলো বলো সাদা কাপড়.
ফাঁপা শূন্যতায় শোকোচ্ছ্বাস অদৃশ্য কলেবর।
শয্যা গত শরীরী বিহীন আত্মা নিয়ে রাতবিরেতে
এখানেই সন্তুষ্টির জলোচ্ছ্বাস এখানে আগ্নেয়গিরি তীব্র বেদনা,
মৃতক মারেফাত এখানেই শত কোটি মাজার।

মুন্সী ভয়ঙ্কর ভয়ংকর বলে যার বেদনায় ভয় ছড়ায় বেলা অবেলায়
সময় বিছানার চাদরে পাপ মোচনার্থে নেয় জরিমানা।
তোমরা যাকে নিষ্প্রাণ বলো, সে আসলে কি নিষ্কাম? নিঃশেষ নয়!
ধ্যান বেঁচে থাকার যৌবন নিয়ে চির যৌবনেই সে বেঁচে রয়,
এই মানুষ সেই মানুষ তোমার অদেখায় তোমাদেরেই হয়।

তোমারো আজ বাড়ি ফেরার সময় হলো
সে করুন অশ্রু ভেজা বিদায়ের দ্বারে,
হে স্বজন, হে বন্ধু, তোমার অভ্যর্থনায় আমিও জেগে আছি
বেদনার ক্লান্ত মরুমায়া এই একাকী অন্ধকারে।

ওখানে অনেক সুন্দর

শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণ বিহিত সারা রাত ধরে
সাদা সিধা কান্নাগুলো সমাধিমগ্নে কেটেছে বহুবার,
কেটেছে ঢেউ-খেলানো বন্ধনমুক্ত রুপালী আকাশে
ফন্দি-ফিকিরে যে অশ্রু আসে, আসে করুন পদতলে
আসে ঈশ্বরের ভাবে ।
বিশ্বাস করো গৃহকর্মে সুনিপুণা এই,
আমি সন্ধ্যাবেলায় জ্বলিত দীপ
শক্তি, শ্বাসের আয়ত্তে ঘুমের সামর্থ্যে
আলো আকাশের যৌবন কাল,
তোমাদেরেই চোখের ইশারায়
শয্যাশায়ী হওয়া আর রাত্রি থাকতেই ত্রাসে
চিরদিন জেগে ছিলাম,
ছিলাম যামিনী দিবায় মৃত্তিকা হয়ে,
মূর্ছিতের মতো নীরব নিঝুম মুক্তর নাড়ি ছেঁড়া ধনে,
মৃতকল্প যাকে নিয়ে করনি কোন দিন
আত্মজ আকাংখায় সুখের পায়রায়।

ভয় ভাঙ্গা বেদনায় সাগরতীরে বিছানা চাদরে
আর পূর্ণভাবে সমাহিত হওয়ার স্থানে
নিদ্রায় মগ্ন থেকে আড়াল করে ত্রিসন্ধ্যায় বহু বেদনায়
তুমি আজ !

বিশ্বাস করো এখানে অনেক সুন্দর!
মনোরম আকাশ নেই তবোও জেগে থাকে আকাশের বুকে
মনোজ্ঞ আকাশ, রমণীয় মহা-প্রেম তৃষ্ণা জাগানিয়া
জেগে আছে মনোমুগ্ধকর শত প্রিয়তমা, সবুজ সাদা সাত রঙ
চিত্তহারিণী নির্ণয়ে আনে প্রাণ, জন্মজন্মান্তর চিতা বেদনায়
এ জন্মের মতো মায়াবী রূপে হে বন্ধু, চির বিদায়।

সুন্দরের পথে কালক্ষেপ নিঃসঙ্গ উল্লাসে
এখানে এক মুষ্টি অন্ধকারে নির্মলসলিলা,
এখানে এক পত্নী বৈচিত্র্যহীন শত বৈচিত্র্য দীর্ঘকাল স্থায়ী,
এখানে অতি রূপ নিয়ে সরাব নহর, সুস্বাদু পাখির কাবাবে
গান করে স্বর্ণের পাতা বৃক্ষ ডাল।
আমি ঘোরায় আরোহী হয়ে ভাবি তোমাদের জীবন জন্মান্তর,
গায়ত্রী উঠানে, যেখানে আজ কিছুই নেই, শূন্যের ঘরসংসারসর্বস্বা,
অতিজীবিত তোমাদের হাহাকার
আর
এখানে অনেক সুন্দর।

মহা লগ্ন

গন্তব্যস্থানে পৌঁছেছি !
তোমার তীক্ষ্ণ চক্ষু অথবা পঞ্চেন্দ্রিয় দেখে না কিছুই
আমার এই উত্তীর্ণ হওয়া অথবা পুরাতন জীবন নতুন করে পাওয়া।
পৃথিবীর যত প্রেম যত ব্যথা আছে আজ
যত স্বপ্ন যত না পাওয়ার কোলাহল
সবে যেন মিথ্যে মরীচিকা আর মর্ত্যলোক,
তুমি তো দেখ না কিছু।

এ কি উপগ্রহ ? অন্ধকার বিবেকের মতো রুপালী ছায়া?
মাটির কদমে সাজানো দেয়াল?
শ্রুতির আড়ালে সত্য কলরব?
খানিকক্ষণ আমার চোখ স্থির হয়ে আছে!
তুমি আলতো করে চেপে দিলে পৃথিবীর সম্পাতি সন্ধ্যায়
আমার গন্তব্য মরু বহুদূর!
নির্জনতার মতো নীরস!
নিঃসঙ্গতায় স্থির হয় অনন্ত যতকাল!
পাষাণে পাষাণে ঘুটঘুটে পথ আমার!
তুমি তাকিয়ে আছ আমি সাদা পোশাকে রয়ে গেছি যেই আমিতে?

কাটখোট্টা পালকী সে শুষ্ক ও নীরস
শতেক শতেক লোকের সমাগমে
আজ যদিও অশ্রু প্লাবন, তবোও এইতো আমার
আমার গন্তব্যে পৌঁছানোর মহা লগ্ন।

আলোর আবির্ভাব

পর্দার আড়ালে অবতরণ যার
সে এক স্ফুরিত নির্ণয়,
ঘুণিত এক ধাঁধার সমাপ্তি
আর
অন্ধকারময় আমার ঘরের প্রদীপ।
সাংঘাতিক বেদনা নিয়ে এসেছে কাছে,
আমার পরিচিত শরীরের ভেতর
মগজে
মননে
সর্বত্রই সে ধীরে ধীরে এসেে যাচ্ছে,
আমার জীবন কে পূর্ণতা দিতে,
আমি তা বলতে পারছি না তোমাদের।
তোমরা দেখছ আমার নিথর দেহ
চলে যাচ্ছে অন্ধকারে ভূগর্ভে,
অথচ এ আলোর আবির্ভাব।

বিদায়

তুমি-তো জানো
প্রাচীন সর্প মানে জীন;
আর আমরা বয়স্ক হলে হয়ে যাই বৃদ্ধ।
যেখানে নক্ষত্রের মতো উল্কা উরে আসে কাছে
অন্ধকারে জেগে উঠে সুপারি অথবা আমের ডাল
সেখানে মৃত্যু আমাদের চোখে চিঠি দিয়ে যায়
অপক্ব চোল কারো বৃথা যায়না।

যে ঘরে জন্মেছে বাবা
সে ঘরে আমার মৃত্যু নাও হতে পারে
তবোও তো আমি মৃত্যুর কাছে পরাজিত,
জন্ম থেকে মৃত্যু আর আমার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।

কখনো কি সন্ধ্যা দেখেছ তুমি?
চঞ্চলচিত্ততা নিয়ে তাকিয়ে দেখেছ কি
কি ভাবে দিনের আলোটুকু নীরব আধারে শেষ হয়?
আম বাগানের পুকুর ঘাটে কেমন আধার
ভয় জাগানিয়া জেগে ওঠে?
জেগে উঠে জীন পরি শয়তান?
পাখিদের ঘরে ফেরায় যদি কলরব হয়
আমার ঘরে ফেরায় তোমাদেরও কান্নার কলরব
তা তো হতেই পারে!
এ যে পৃথিবীর শত্রু মিত্র সখা থেকে চির বিদায়।

 

নীরব প্রাণ

দেখেছিতো আমি দেখেছি!
মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রাণ
কি করে ঘাস হয়,
ঝরনায় ঝরে যায়,
মাটির কদমে কদমে কি করে
হয় শুষ্ক মরু বুক
নোনা প্লাবনের বেদনায়,
এক রাশ অভিমানী দীর্ঘ শ্বাস
কি করে ধীরে ধীরে হয়ে যায়
প্রশান্তি ফাঁপা শুণ্যতা।

আমি দেখেছি তোমাদের
সূক্ষ্ম মাঠের পাশে,
উপড়ে কিছুই নেই
কিছু জারুল হিজল বেতবন ঝুপ
আর তোমাদের অদৃশ্য নীরব প্রাণ।

মায়াজাল

ইচ্ছে ছিলো জমজমাট যজ্ঞ হবে আমার,
ইটের গুঁড়া গুঁড়া তাসের চিহ্নবিশেষ
চিংড়ি মাছের মতো বিড়বিড় করে আসবে কাছে,
আসবে লাল মণি নকল দালান,
খাজনার চালানে চালানে কলাবন সাজবে বিয়ে বাড়ি সাজ,
আমি জানি সেখানে বিদ্যুৎ নেই নেই আলো অথবা আঁধার
আমাকে সংস্কারের জন্য যারা আগমন করবেন তারা সবাই অপরিচিত,
কখনো কোন কেটলির পাশে ধোয়া উড়া দুপুরে আমরা চা খাইনি
অথবা কফি-সপেও কখনো বসা হয়নি আমাদের
তাদের হাতেই থাকবে স্মারকলিপি আমার নোট বই ডায়েরি,
ছপছপ দীর্ঘ চাটাই গঠন পারিপাট্য এক নির্ভুল বর্ণনা
আমি তরল পদার্থের ন্যায় পতন হয়ে গেছি ততদিনে
আবার পানিভাঙা বেদনায়। আমার আর স্তনের আকর্ষণ নেই
নেই জলখাবার, ফুলের দাগে দাগে আমি বেসে বেড়াই,
স্বপ্নে যেভাবে পুরুষ হই, হই পৃথিবীর বাইরে অন্য পৃথিবীর মানুষ,
সেই পৃথিবীই সত্য হয় এই পৃথিবী মিথ্যে করে।

আমি বা আমরা জানিনা কোন পৃথিবী সত্য
কোন পৃথিবী সত্যের মতো মায়াজাল।

শাহীদ লোটাস। বাংলা ভাষার লেখক, বাংলাদেশ-এর নেত্রকোনা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায় ৩০ মে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শাহীদ লোটাস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে উৎসাহবোধ করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..