সুমনদা ও মাসির কথা
সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু ভবরঞ্জন,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস…..
ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হতেই ক্রেতাগণ দুড়দাড় করে যারযার ফ্ল্যাট দখল নিতে শুরু করে। তখনো সবার ওঠানামার ভেতর হুলুস্থুল ভাব। এই অবস্থার ভেতর লিফটের সামনেই দেখা হয়ে গেলো শামসের সাথে শাওনের। তাও আবার দুজনেই সেখানে সস্ত্রীক। আর সেটাই বড় কথা!
নামের আদ্যাক্ষরের মিল মেসজীবনে দশজন মেসমেটের ভেতর ওদের দুজনকে ঘনিষ্ঠ করে রেখেছিলো। তারই জের ধরে, সঙ্গতি বাড়লে তারা দুজনে একসাথে বসবাসের জন্য একটি রুম খুঁজতেই পেয়ে যায় এক বহুতল ভবনের নতুন চিলেকোঠা! সুখে শান্তিতে বছরখানেক বসবাসের ভেতর এক ছুটির দিনে লোপা নামের কলেজপড়–য়া একমেয়ে এসে ওঠে শাওনের কাছে। শাওন তখন চিলেকোঠায় ছিলো না। ছিলো শামস্ একা। লোপার বিষণ্ন মুখ দেখে তার আগমনের কারণ শামস্ বুঝতে পারে। কারণ শাওন একবার বলেছিলো, গ্রামে পাশের বাড়ির একমেয়ের সাথে তার সম্পর্ক বেশ কিছুদূর গড়িয়েছিলো। কিন্তু ভিন্নধর্মের মেয়ে, পারিবারিক সচ্ছলতাও শাওনদের চেয়ে কম হওয়াতে শাওনের অবস্থাপন্ন কৃষিজীবী মা-বাবার আপত্তি তো আছেই, কিন্তু সে নিজে থেকেও ভাবছে, ও বিয়ে করবে না। ঢাকাতেই বাড়িগাড়ি আছে এখন সে এরকম কাউকে খুঁজছে…।
শাওন-শামস্ দুজনেই দুইটি জেলাশহর থেকে এসে প্রাইভেট এক ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ করছে। তারা দুজনেই বাবার টাকায় লেখাপড়া করেছে। ভার্সিটিজীবনের শেষের দিকে নিজেরা কিছু রোজগার করা শিখলে সেই তারা চিলেকোঠায় উঠেছিলো।
লোপা শাওনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ভদ্র-আদর্শবাদী পরিবারের সন্তান শামস্ কারো উপকার করার মনেবৃত্তি নিয়ে আগবাড়িয়েই বলতে থাকে, ‘আপনার কথা আমি শুনেছি শাওনের কাছ থেকে…।’
শামসের কথা শেষ না হতেই লোপা বিমর্ষভাব কাটিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বলে, ‘তাই!’
শামস্, একটু চটা মেজাজেই বলে ওঠে, ‘উৎফুল্ল হবেন না। ও আপনাকে বিয়ে করতে পারবে না, সেটাই শুনেছি…।’
শামসের কথায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে লোপা। সে বলতে থাকে, ‘গ্রামের মানুষ ওর সাথে আমার সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। শাওনের মা-বাবাই যা নয়, তাই চাউর করেছে। এখন আমরা খুব ছোট হয়ে যাবো। আর এরকম অসম বিয়ে যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়! বিশ^াস করেন আমি আর গ্রামে ঢুকতে পারবো না! ’
শামস্ এতে খুব রেগে যায়! বলে, আচ্ছা, একজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিলো, এখন সে যদি রক্ষা করতে না চায়, তার গায়ে পড়ে রক্ষা করবেন? তারচেয়ে ভালো হয় না, লেখাপড়াটা চালিয়ে গেলে! নিজে চাকরিবাকরি করুন, তখন শাওনের মতো পাত্রের আপনার অভাব হবে না!’
লোপা বললো, ‘কিন্তু আমার মা-বাবা যে মানতে চাইবেন না! আমাকে মেরেই ফেলবেন। কারণ আমি তাদের অবাধ্য হয়েছি। বাবার ইচ্ছে আমাকে অনেক লেখাপড়া করাবেন। কিন্তু লেখাপড়াতে মনোযোগী হতে পারিনি!’
শাওন বললো, ‘ এবার থেকে মনোযোগী হোন। এখন মেয়েদের লেখাপড়া করাতে কেউ পিছপা হয় না!’
লোপা বললো, ‘শাওন যদি অন্যখানে বিয়ে করে, আমার কথা বাদ দেন, আমার মা-বাবা কত ছোট হয়ে যাবে। বাবা গ্রামে হাইস্কুলের মাস্টার…।’
‘আপনি ঢাকাতেই থাকেন। আমি কিছু মেয়ের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবো। আমার ছোটবোনও তাদের একজন। ওদের সাথে ঢাকাতে থেকে লেখাপড়া করেন। মাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে বাড়ি থেকে প্রতিমাসে কিছু টাকা আনেন।’
লোপা সেদিন চলে গেলে, শামস্ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। একটি আদর্শহীন মানুষের সাথে পাশাপাশি খাটে শুতে, ভাব বিনিময় করতে, সময় কাটাতে সর্বোপরি বন্ধু ভাবতে গা ঘিনঘিন করছিলো।
একটি মেয়েকে কুলহীন করে, নিজে এত আশায় বুক বাঁধতে যে পারে, তাকে মানুষ মনে হয় না শামসের! হঠাৎই শাওনকে শামস্ সেদিন রাতেই বলেছিলো, তুই একজন পার্টনার খুঁজে নে। আমি কাল সকালেই চলে যাবো। তবে পুরো মাসের টাকা দিয়ে যাবো।’
চিলেকোঠা থেকে বেরিয়ে কেন শামস্ আবার পুরনো মেসে, পুরনো বন্ধুদের কাছে ফিরে গেছিলো, শাওন কেন, বন্ধুরা কেউ এর কারণটি কোনোদিন খুঁজে পায়নি।
যথাসময়ে শামসের চাকরি হয়ে যায়। ক’কছর পার হতে পরিবারের দায়দায়িত্বগুলোও শেষ হয়ে যায়। নতুন জয়েন করা ক’জন অফিসারের সাথে একদিন লোপাকে দেখে চমকে যায় শামস। পুরনো পরিচয়টি আন্তরিক হয়ে উঠতেই শামস্ই লোপাকে প্রস্তাব দেয়, মা-বাবা তাদের ছেলের জন্য বউ খুঁজছেন, আমি কি আপনার কথা বলতে পারি?
শাওন সেই পুরনো পরিচয়ের জের ধরে লিফটের সামনে থেকে শামসকে একটু টেনে সরিয়ে ফিসফিস করে বললো, লোপার সাথে তোর পরিচয় কী করে? যাকে আমি বিয়ে করিনি! আর তোরা এখানেই বা এলি কী করে?
শামস্ যতটা শান্ত নয়, তার থেকে শান্তস্বরে বললো, ‘লোপাকে তুই বিয়ে করিসনি, তুই ওকে চিনতে পারিসনি তাই! আর ও এখন লোপা শামস্। অন্যের স্ত্রীর নামটি অবশ্যই ঠিকঠাক উচ্চারণ করিস। আর এখানে আমরা দুটো ফ্ল্যাট এক করে নিয়েছি। আমার মা-বাবা, দু’টি বোন আমার সাথেই আছেন।’ বলে শাওনের গাট্টাগোট্টা সুন্দরী স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে স্মিতহাস্যে বললো, ‘একই ভবনে আছি যখন, না চাইলেও এরকম হরহামেশা দেখা হয়েই যাবে!’ বলে শাওনের হাত থেকে শামস্ নিজের হাত ছাড়িয়ে লোপার পাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর এতক্ষণের ভাবলেশহীন চোখে গাঢ় অনুভূতি এনে যেন ডুবোচরে হাবুডুবু খাওয়া লোপাকে বললো, ‘লিফটে ওরা আগে যাক আমরা পরে…। আর শোনো, তোমার এই সাজগোজহীন, চটপটে, অকপটভাবটিই কিন্তু আমাকে মুগ্ধ করেছিলো, সেটি হারালে চলবে না! ওকে দেখলে তুমি না চেনার ভান করো না। চেনো এমন দৃষ্টিতেই তাকাইও। তাতেই ওর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে…।’ শামসের এইসব কথার পর লোপা শুধু তার স্বামীর চোখের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো।
সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু ভবরঞ্জন,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস…..
গোয়েন্দা সুমন বাবু শুধু গোয়েন্দা নন। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী,গোয়েন্দা বিচক্ষণ ব্যক্তি।তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আপডেট সংবাদ…..
মফিজ সাহেব বসে আছেন। অভি মনে মনে ভাবে হয়তো তিনি বড় ধরনের কোনো সমস্যার…..
অসীম ও মাসির কথা সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু চিনু, ভব,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম…..