আল্ট্রাসাউন্ড

বল্লরী সেন
কবিতা
Bengali
আল্ট্রাসাউন্ড

জরায়ু

এক দিন আগেও যে বীজমন্ত্র ছিল, ফেলছি তাকেও
জরায়ু থেকে খুরের পা ঝুলিয়ে সে বল শুট করছে
একটা আতাকেলানে মেয়ে হয়ে আমি পাশ ফিরে শুতে শুতে পদ্মনাভ ঈশ্বরকে কতবার মেরে ফেলছি ইয়ত্তা নেই
কী পাপ করেছি বলে রোজ রোজ বেসিনময় বমি সাফ করি আর ছাত্রী পড়াই। বেসিনের মুখ খুঁচিয়ে তবে একটা উদ্গার ঘটানো হয়। মাটির সরা ভাঙা পান্তাভাত, পরীক্ষামূলক কুচোমাছ, শসার মতো জানু ভেঙে নামছে বিষাদ। প্রতিদিন পরীক্ষা চলে, কতটুকু বাড়লো তার নাক মুখ পেখম দুখানা। লাইন দিয়ে সারিবদ্ধ পোয়াতিবর্গ
গাইনি ডাক্তারবাবুর কাছে বসে থাকে। কেবল হার্টবিট শুনবে বলে।

গর্ভপাতগুলি

বাসাংসি জীর্ণানি বলে মেথর মেয়েটাকে
জামাকাপড় দান। বাসি দেহখানা নাকি নবকলেবর পেল
আঁতুড় থালায়। আমি শেষ পাতে ওর চিহ্ন সরিয়ে রাখি
মৌরলার পেটের ভেতর, ওর নাম মুখে আনতে নেই। ৫ মাস দেখিনি তাকে, একবার ও ফোন করেনি। কেবল ওষুধ দিয়ে চলে যায় বৃষ্টির মাস। ফলিক এ্যাসিডের কৌটোয় গর্ভপাতগুলি রোজ একটা করে খাই।

 

আল্ট্রাসাউন্ড

আল্ট্রাসাউন্ড করবে বলে সকাল থেকে না খেয়ে আছি।
আর ঐদিন, বিকেলের কিছু আগে শুনলাম, সে আসেনি।
কোজাগরী নাম রেখেছিলাম, কিভাবে মেরেছি তাকে…শালুক পাতায় মুণ্ড ঘষে তবে কি হাসতে হাসতে সতর্কতাব্রত, তার ই জন্য বাঁজা আমি। মেয়ে বিয়োনো হল না কখনো।

 

বারদুয়ারি

সাঁজের বেলায় কুপি জ্বালিয়ে পেটে কেউ তেল মালিশ করছিলো, আজ পূর্ণিমা। চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে জল খেলাম, মেয়ে হলে টুকটুকে হবে।
আমার মেয়ে হল না। কুমকুমের দাগ লাগা এক দেবদূত বেরোল। তবু ছেলে তো। মদ্দা পছন্দ ছিল না কোনকালেই।সয়ে নিলাম।

পহলা রাতে নিশিতে পেল, হাসপাতালে রেখে এসে আমার বর কি নিশ্চিন্ত। মা রুক্ষ, বললেন- পাড়া মাথায় কোরো না। গরীব গুর্বো ঘরে হামেশা হচ্ছে। পরদিন থেকে ওরা কাজে যোগ দেয়।

মিল্স এ্যান্ড বুন্স পড়া ইংরেজিমাধ্যম, আমি ব্যথা খাচ্ছিলাম
আমার শিয়রে তখন কেউ ছিল না। একটু করে সে লাথির পর লাথি চাপিয়ে আমার দেহের পাঁচিল পেরোচ্ছে। হুমড়ি খেয়ে ব্যথা গিলে নিচ্ছি। প্রতিবাদ নেই। মারের পর মার। কানের ভেতর গরম বায়ু পাকিয়ে উঠছে। টনটন ঝনঝন, হা হা ব্যস। আর টাটানো কষ্ট কী ভাষায় পুষবো বলো। আমি আমার ইস্কুলের নাম আর উচ্চারণ পারছি না। আনন্দ আনন্দ। আমি নাকি মা হচ্ছি।

পোয়াতির পো, শয়তান। সবুর কর্। দম নিতে দে।
আমি শ্বাসের ভেতর পরমায়ু গুনছি। মাংস দলা পাকানো অন্ধকার কালোতে মুড়িয়ে

বল্লরী সেন। গবেষক, কবি। প্রকাশিত বই বাংলায় ৫ টি ইংরেজি ২ টি। 'বিহান রাতের বন্দিশ' কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০১০ এ কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১২ থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ভাষার নানা গবেষণায় যুক্ত। 'নারী বীক্ষায় পুরুষের কবিতা' তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণা গ্রন্থ।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..