আশির্বাদ

আশরাফুল হক
অণুগল্প
আশির্বাদ

এই উপত্যাকায় যারা থাকে তারা খুব বেশিদিন আগের থেকে এইখানে থাকে না। ঠিক কত আগে থেকে এসেছে তাও জানা নাই কারও। কিন্তু ঘরদুয়ারগুলো দেখলে মনে হয় খুব একটা পুরাতন হবে না। বড়জোর যুগ পাঁচেক হবে। প্রতিঘরে দুটি করে  বাচ্চা -একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। পুরুষেরা ক্ষেতে কাজ করে আর ঘর তৈরি করে। মেয়েরা কাপড় বুনতে জানে আর রান্না করে। ছোটরা ১২ বছর পর্যন্ত এগুলোই শিখে তাদের পরিবার থেকে। এরপর থেকে ছেলেরা ক্ষেত-খামারে আর মেয়েরা রান্নাবান্না, সন্তান লালনপালন করে।

পাহাড়ের গা বেয়ে অনেকগুলা ঝর্না। ঐটাই পানির উৎস এই জনপদের। পাহাড় কেটে জুম চাষের মতন করে সেখানে ধান আর সবজি ফলানো হয়। উপত্যকার বিশাল সমতলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা খাল। আর ঐখানেই একটা খামার। মা ভেড়াটি সপ্তাহের ৬  দিন দুধ দেয় আর বাকি ১ দিন সন্তান প্রসব আর সন্তান পরিচর্যা করে। এই একটি মা ভেড়া ছাড়া আর কোন স্ত্রী ভেড়া নেই এই জনপদে। জন্ম নেয় শুধু পুরুষ ভেড়া। খামারটির কোন যত্ন নিতে হয় না গ্রামের কাউকেই। খামারটি খোলা থাকে; বাচ্চাগুলা চরে বেড়ায় আর খালটিতে নেমে পানি খায়। প্রতি সকালে দুধ দোহন করতে যায় গ্রামের মহিলারা। যত খুশি দুধ দোহানোর পরও দুধ রয়ে যায় ঐ মা ভেড়াটির ওলানে।  ঐ দুধেই গ্রামের মানুষের দুধের অভাব পূর্ণ হয়। আর বাচ্চাগুলো থেকে আসে মাংস। প্রতি রবিবার সকালেই খামারটিতে  গিয়ে গ্রামের মানুষ দেখতে পায় ফুটফুটে নতুন বাচ্চার পাল। খোদার তরফ থেকে এই আশীর্বাদ কতদিন থেকে আসছে এই বিষয়ে কেউ কিছু জানে না।

এ গ্রামের সবচাইতে বয়স্ক লোকের বয়স ৩৯ বছর। বয়স ৪০ হলে তারা সবাই খামারের পুরাতন ঘরটিতে একত্রিত হয়-প্রার্থনার জন্য। প্রতিবছরের এইদিনটাতে মা ভেড়াটিও যায় ঐ ঘরটিতে। সবাই যখন প্রার্থনারত গ্রামের মানুষ তখন গভীর এক ঘুমে আচ্ছন্ন। সকালে উঠে তারা দেখতে পায় শুধু ঐ মা ভেড়াটিকে; কিন্তু লোকগুলা ফিরে আসে না। সবাই খুশিমনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়-তাদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে বলে- ঈশ্বর খুশি হয়ে ঐ মানুষগুলাকে উপরে  তাঁর কাছে টেনে নিয়েছেন এই তাদের বিশ্বাস। তাঁর পরের এক সপ্তাহ মা ভেড়া কোন ঘাস খায় না- শুধু পানি খায়; কোন দুধ দেয় না। মা ভেড়াটির চোখ থেকে পানি ঝরে এই একসপ্তাহ।তাই এই এক সপ্তাহ গ্রামের মানুষ উপোস করে।উপোসের পরের দিনে যেদিন মা ভেড়াটি আর কাঁদে না- সেদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে কচি ভেড়ার মাংস ঝলসে উৎসব পালন করে।

জন্ম ২৬শে মার্চ টাঙ্গাইলের আকুরটাকুর পাড়ায়। কথা বলতে শেখার আগেই গান গাওয়া। জীবনের প্রথম গান একটি শব্দ দিয়ে- মাটি, মাটি, মাটি। পড়ালেখা - পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন, আর সিস্টেম ব্যবস্থাপনায়। স্থায়ী নিবাস- সাভার।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..