ইমেল নাঈমের তিনজোড়া কবিতা

ইমেল নাঈম
কবিতা
Bengali
ইমেল নাঈমের তিনজোড়া কবিতা

দুঃখবোধ

দুঃখবোধ চূড়ান্ত হলে ভাষারা মায়াবতী হয়।
সৃষ্টির খাতায় কিছুই নেই। যেন শূন্যতার পাঠে
হারিয়ে যাচ্ছে দূরবর্তী কোনো গানের অন্তরা

ব্যর্থতার লিপিতে লিখছি সমগ্র দিন
সুদূরের সংকেত ক্রমাগত ম্রিয়মাণ… অস্পষ্ট
অষ্টাদশীর কোলে মাথা রেখে
খেলে যাচ্ছে এক বিষণ্ণ বিকাল

নির্বাক কিছু মুহূর্তকে লিখছি রেডলিফ পেনে
সময় পিছিয়ে দিয়েছি — শহরকে দিলাম ছুটি
মাস্তুলে উঠে রাখি চোখ, কম্পাসে কাঁটা ঘুরে
যায় জটিল কোনো অংকে, ছুটে চলে জাহাজ
আরো কোনো দুর্বোধ্য গন্তব্যে।

ভাষারা মায়াবতী হলে দুঃখরা হয় ধ্রুপদী,
অপেক্ষার নামতা শেষে মিলিয়ে যাচ্ছে দৃশ্য
ভোরের আহ্বান মুছে যাচ্ছে

গুলিয়ে ফেলছি এক এক করে
ধ্রুপদী ব্যঞ্জনা…
ব্যর্থতার লিপি…
কম্পাসের দিকনির্দেশনা…
মাস্তুলের উপর দাঁড়ানো নাবিক…
কার কাছে গেলে দুঃখরা হয় মায়াবতী?

দূরত্ব

থেমে যেতে হয়। বিরহ বাগান থেকে এড়িয়ে যেতে হয়।
লুকিয়ে যেতে যেতে অদৃশ্যমান হবার পন্থা শিখতে হয়,
দৃশ্যত পরাজয়ের খুব সন্নিকটে, নাক কাটা যাচ্ছে,
বুঝতে দিতে চাইছি না তাই মুখের লাগাম ছাড়লাম।

দিনের হিসেবে কে, কতটা দূরত্ব মেপে নিয়েছে
সেটুকু অজানা থাকুক সবকিছুর আয়োজনে
মূর্ছনা ভেঙেছে, একদিন দুদিন করে বদলাচ্ছে
পঞ্জিকার পাতা, নিজের জন্য নেই কবিতা

প্রহসন এঁকেছি। রং-তুলির সন্নিবেশে ঝুলছে মায়া
অতিরঞ্জিত হয়ে ফিরে আসে দূরের সব পথ
নির্বাক সময়ের প্যাঁচগলে ফিরে আসে পুরোনো দিন
মায়ার ফানুশ কেবল মিলিয়ে যাচ্ছে প্রতারণার বৃত্তে।

অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে নিজেকে ফেলি আরো একবার
জীববিজ্ঞানের ব্যাবহারিকের মতো লণ্ডভণ্ড করি
নিজেকে ফুলের মতো করে, বিনিময়ে ব্যর্থ জীবন
উৎসর্গ করে দিই অর্ধ প্রেমিকার খাতে নিয়তি মেনে।

জোয়ারভাটায় দুলছে প্রেম-অপ্রেম সূর্যের সাথে সাথে
এরপরেও কেটে যায় প্রেমিকের দিন অপ্রেমের টানে
হিসাব করি কতটা দূরত্ব মেপেছে দিনযাপনের অংক।

প্রমাদ

ভাবতে পারো। আবার ছুঁড়তেও পারো।
কথার প্রাচীর টেনে ভাঙতেও পারো অবলীলায়
এরপর, নিজের জন্য কিছুটা সময় থাকে বাকী…
নিজেকে নিয়ে উড়ালসড়কে ভাসো কল্পনায়
প্রশ্নবাণে আটকে ফেলেছি সব প্রশ্নোত্তর,

কোথাও তো থেমে যাবার কথা ছিলো নাটকের,
শেষ দৃশ্যে ছুঁয়ে পড়ছিলো শিমুল ফুল,
দূর্বাঘাস মাড়িয়ে নীরবতা আঁকতে পারো,
আমি আসক্তি কাটিয়ে উঠছি গোলাপি ঠোঁটে

নেশা নয় ঠিক, আবেশের মতো, সমান্তরালে
উড়ে যাচ্ছে দুটো মন একই বৈজ্ঞানিক দূরত্ব মেপে
অপেক্ষার চাদর মুড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছি শুরুতে
প্রাত্যহিক কিছু ঘটনা বারবার সামনে এসে দাঁড়ায়
অক্লান্ত পরিশ্রম এঁকে দেয় বিপ্রতীপ কোণ,

জ্যামিতিক ভালোবাসাগুলো বড্ড সরল রৈখিক
সাসপেন্সের আড়ালে কিছুটা গোপনীয়তা খোঁজে
অভ্যন্তরে রেখে দিচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন
এভাবে রয়ে যাচ্ছে অনিচ্ছাকৃত কিছু প্রমাদ।

সময়

গুছিয়ে নিচ্ছি রোদ, বৃষ্টি অথবা প্রহসন…
ভুল বিশ্লেষণে আঁকছি কিছুটা রুক্ষতা
রঙ-তুলির সমাবেশ আঁকে বিশাল প্রশ্নবোধক
নিজের জন্য ছেড়ে দিতে হয় জায়গা
বড়জোর দু’মিনিটের নীরবতাই লিখতে পারো

দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে যেতে পারে চলমান
দৃশ্য, এরপর বখাটে যুবকের মতো চরিত্র
বিশ্লেষণে ব্যস্ত হয়ে ঢুকবো পুরনো আস্তানায়
পড়ন্ত সময়ের কথা শুনি পলেস্তারা খসা দেয়ালে

ক্ষয়ে যাওয়া ভালবাসার নামে যত স্তুতি
ক্রমাগত আঘাত বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি
প্রশ্নের পর প্রশ্ন, উত্তরহীন মুহূর্ত যাপনে
রোদ বৃষ্টির মিশেলে জাগে ঘুমন্ত প্রাচীর
বিনিময়ে লিপিবদ্ধ থাকে না কোনো প্রমাণ…

পুড়ে ফেলে দিতে হয় যত অর্গল, বধির
জীবন ডেকে যায় দূরের পথে আরো গভীরে
শ্রান্ত নদীর কাছে পাতি হাত, গোপনীয়তা
ভেঙে তাকিয়ে থাকে দিন বদলের ইতিহাস।

দিনান্তের সুর

চুপিসারে থেমে যাক প্রলয় কিংবা প্রতারণা
অপেক্ষায় থেকে যায় অজস্র ভ্রান্ত ধারণা
অলীক মুখ নেচে ওঠে, অবেলায় বইছে
লূ-হাওয়া, নিঃস্ব’র দেশে নেই নিজস্ব কোনো ভাষা।

হারিয়ে ফেলার আগেও রেশটুকু থাকুক
বুকপকেটে অম্লান স্মৃতির রঙিন ক্যানভাস
মুহূর্তগুলো গেয়ে উঠুক, দূরত্ব মাপছি
তোমার আমার মাঝের, সম্পূর্ণ মাপা হলে
থেমে যাবে সংগীত, অর্কেস্ট্রায় নীরবতা শুধু…

রক্ষিত জীবনের এক পশলা বৃষ্টি,
ভিজিয়ে দিচ্ছে আগামীর সকল পঙ্কিলতা
নিজের সাথে আলাপনগুলো ব্যর্থ হয় দিনের শেষে
মুখস্থ দিন ফেরি করে ফিরে যাই গোপন ডেরায়
ভুলের প্রাচীর টেনে নামছে অচিন অন্ধকার।

আমাদের দেখা হয় না— হতাশার মন্ত্রপাঠেই
মলিন পৃথিবীকে দেখে নিচ্ছি একপশলা
ভিজিয়ে দিচ্ছে গহীন শূন্যতা আপন মনে
জীবন কথা বলে অজস্র নৈঃশব্দ্য নিয়ে একাকী।

নাটক শেষে…

সময়টা কবিতার নয়, বরং কিছু বারুদ পুষে রাখো বুকে…
মিছিলের নগরী বেহাত হয়ে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত আবেশে
কে কাকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে, দেখো রক্ত কতটা জমা!
যে হাতে রক্তের দাগ, তার বুকেই পাতছে মাথা কে…

সময়টা মিছিলের। দৌড়ে চলা কিছু মানুষের স্বপ্ন’র শুরু
যদিও রাতবিরেতে বদল হয় চাওয়া-পাওয়া, স্পন্দন।
মিথ্যে হয়ে যায় যত বন্ধন, কেউ পালিয়ে যায় দূরে
কেউ মজা নিতে নিতে সমূহ পতন দেখতে পায় না।

দূরের আকাশ ঘোলাটে, কাছের মাটিতে বিষাক্ত গাছ,
শাখাপ্রশাখা সমেত দাঁড়িয়ে প্রেতের অট্টহাসি হাসে
ভুল পথে হাঁটছে তৃতীয় বিশ্বের মধ্যবিত্তের আবেগ
মিছিলে আসছে নতুন কিছু মুখ, বদলে যাচ্ছে লক্ষ্য

আদর্শ এখন পঞ্চম বইয়ের পাতায় নিশ্চিন্তে ঘুমোয়
মুখরিত ক্যানভাসে লাল রঙের গল্পটিও হয়তো মিথ
শুনছে না কেউ তারই ভাষা, পরাজয়ের দ্রোহ লিখা
নিজেকে নির্বাসন লিখে ক্লান্ত হয়ে ফিরছে রাজপথ

দ্রোহের আগুনে পুড়ছে পৃথিবীর সকল বন্ধন
মিলিয়ে নিচ্ছি কার বলীতে কেইবা হলো রুক্ষ
কৃত্রিম সবুজ কীভাবে মিলিয়ে যাচ্ছে দুঃসময়ে।

ইমেল নাঈম। কবি। জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬। বসবাস চট্টগ্রাম শহরের হালিশহরে। পড়াশোনা: বিবিএ, এমবিএ শেষ করে বর্তমানে সিএ পড়ছেন। তার পাশাপাশি কর্পোরেট জবও করছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি। প্রকাশিত বইঃ দেয়ালের ও'প্রান্ত পেরিয়ে (২০১৫, চৈতন্য প্রকাশনী), দূরবীন চোখ (২০১৮, চৈতন্য প্রকাশনী), সুদূরে শূন্যস্থান (২০১৯, স্বরচিহ্ন প্রকাশনী)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..