ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
এবারের পানি আসতে খুব বেশি দেরী নাই। তাই গিন্নিরে বলে সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা লোন উঠিয়ে জাল কিনে রাশেদ। জালে কাঠি আর পাথর বাঁধছে রাশেদ সেক। তাকে সহযোগিতা করছে ছেলে মামুন। মামুন তার বাপরে বলল প্রত্যেকবারেই বড় বড় ইলিশ মাছ বেইচ্যা ফেলাও; এবার কিন্তু বেচবা না। আমরা বড় ইলিশ মাছের ভর্তা খামু। ‘ছাওয়াল’ মামুনের কথা ফেলতে পারে নাই রাশেদ। গতকাল অনেক গুলো ইলিশ মাছ পেয়েছিল। সোয়া কেজি ওজনের ৪ টা ইলিশ রেখে বাকিগুলো চোরাইভাবে বিক্রি করে ১৭শ টাকা পেয়েছে রাশেদ। আজকে আবারও যাবে নদীতে। আজকেও কিন্তু আমারে নিয়ে যাবা, মামুনের আবদার। এখন আর আগের দিন নাই। দেখস না ম্যাসট্রেট (ম্যাজিস্ট্রেট) আসে, পুলিশ আসে, বিডিআর আসে। একলা ধরা খাইলে একজনেরই জেলে যাওন লাগবো। তোরে নিয়ে আবার বিপদ হইবো ছেলে মামুনকে বলল রাশেদ। মামুন নাছোড় বান্দা। বলল, আমি নাও বাব্যের পাড়ি, ট্রলারতো কোনো বিষয়ই না। ম্যাসটেট আসলে জোরে ট্রলার চালায়ে আমরা পালামু।
মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ এর ৩ ও ৪ ধারা মোতাবেক সরকার ০৭ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখ থেকে ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে। পুরো আইন সম্পর্কে না জানলেও রাশেদ সেক বুঝতে পারে এ সময় ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ। কিন্তু তাতে কি? বছরে সব সময় তো আর ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। আশ্বিন মাসের দিন পনের গত হওয়ার পর থেকেই পদ্মায় ইলিশ আসতে থাকে। ইলিশ থাকে কার্তিক মাসের প্রায় ১৫ তারিখ পর্যন্ত। পদ্মায় ইলিশের এই আসা যাওয়া কখনো কখনো দু-চার দিন আগ-পিছ হয়। এ সময় প্রচুর ইলিশ আসে। জাল পাতলেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। এর বাইরেও পদ্মায় কখনো কখনো দু চারটি ইলিশ মাছ জেলেদের জালে দেখা যায়। তাই মনে একটু ভয় নিয়েই লুকিয়ে আইনের চোখ ফাকি দিয়ে এই সময়ে যেটুকু মাছ ধরা যায়।
জেলার সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নর্থ চ্যানেল। শুধু প্রত্যন্তই নয় দূর্গম এলাকাও বটে। যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌকা, ট্রলার বা যান্ত্রিক নৌযান। এই এলাকারই একটি গ্রাম জলির মোল্যার ডাঙ্গী। রাশেদ সেক-রওশন আরা দম্পতির ৯ বছরের ছেলে মামুন আর ৪ বছরের মেয়ে জুথি মিলে ৪ জনের পরিবার। পরিবার প্রধান রাশেদ সেক টুকটাকি সংসারী কাজ করে। কামলাও দেয়। আর শখের বশে বর্ষা কালে মাছ ধরে। মাছ ধরা পেশা নয়, তবে কিছুটা নেশা। অবশ্য বর্ষাকালে আর কোন কাজ থাকে না। গৃহিনী রওশন আরা বেশ গোছানো। বাড়িতে আট দশটা মুরগি, ৪/৫ টি ছাগল আর একটি গাভীর দেখাশোনা করে। পালানে এক চিলতে জমিতে স্বামীর সাথে শাকসব্জি চাষাবাদেও অংশ নেয়। একটি এনজিওতে গ্রামের আরো মহিলাদের সাথে মিলে একটি সমিতিও করেছে। সেখানে সপ্তাহে ৫০ টাকা করে সঞ্চয় করে। মামুন স্থানীয় নর্থ চ্যানেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। পড়ালেখায় ভাল। জুথি এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেনি।
আজ সকাল হওয়ার আগেই নদীতে যাবে রাসেদ সেক। ফজর নামাজের আজানও এখন দেয়নি। ঘুম থেকে উঠে দেখে গিন্নী ভাত আর ইলিশ ভর্তা করেছে। একমুঠ খেয়ে নেয়। ছাওয়াল মামুনকে ডাক দিয়ে বলে ওই যাবি বোলে? ধরমরিয়ে উঠে মামুন। হ, যামু। তায় খায়েনে, বলে রাশেদ সেক।
গত বছর ২ বিঘা জমিতে বাওরা (হিজল দিঘা) ধান পেয়েছিল প্রায় ৪০ মন। সারা বছরে চাল কেনা লাগেনি। এবার দশ কাঠা বাড়িয়ে আড়াই বিঘা করছে। বাওরা চালের ভাত ভালই লাগে। দেখতে লালচে কালার। আর খেতেও সুস্বাদু। দু-বাপবেটার খাওয়া শেষ হলে রওনা দেয়। রওশন আরা পিছন থেকে ডাক দেয়। ‘ভাতের গাট্টিডা নিয়ে যাও, নাস্তার বেল হইলে খাইয়ো’। ‘পাছে থ্যে ডাক দেওক্যে? বিপদ-আপদের লক্ষণ’ একটু গরমের সুরে বলে গাট্টি নিয়ে দু বাপবেটা নৌকার দিকে এগুয়।
প্রমত্না পদ্মা, চারিদিকে পানি আর পানি। ট্রলার নিয়ে বাপবেটা পদ্মার কলা বাগান এলাকা পাড় হয়ে চলে যায় তিন নদীর মোহনা এলাকায়। জাল ফেলে; একটু পরে উজালা দেয়। বাপ জাল টানে ছেলে মাছ ছাড়ায়। এক উজালায় প্রায় ৭ কেজির বেশি মাছ উঠে।
–‘আব্বা আর দুই উজালা দিয়ে আমরা চইল্যে যাবানি। আমার স্কুলে যাওয়া লাগবি।’
–‘আচ্ছা, যাবানি’, বাপের উত্তর।
শেষ উজালা চলছে, হঠাৎ ছেলের চিৎকার…
–আব্বা ওইযে ম্যাসটেটের স্পীডবোট …
–‘তুই জাল কাইট্যা দেয়, আমি মেশিন ইস্টার দেই’ বাপে উত্তর দেয়
ট্রলারের ‘হাল’ ধরেছে ছেলে মামুন আর বাপ ‘আগা নায়’। ভ্রাম্যমান আদালতবাহী স্পীডবোট প্রায় ওদের একেবারে কাছাকাছি। সোজা পথে তীরে ছুটলে ধরা পড়ে যাবে, তাই ট্রলারটাকে একটা বাক দেয় মামুন, স্পীডবোর্ট পিছনে পড়ে যায়। দ্রুত তীরে ভীড়ে দু বাপবেটা একসাথে লাফ দিয়ে তীরে নেমে পাড়ের কাশবনে ঢুকে পড়ে। ভ্রাম্যমান আদালতের লোকজনও ওদের ধাওয়া করে, কিন্তু কাশবনে সাপের ভয়ে আর বেশিদূর যেতে পারেনি। ভ্রাম্যমান আদালত ওদের জাল, মাছ আর নৌকা জব্দ করে; স্পীডবোট স্টার্ট করে চলে যায়…
চলে যাওয়ার শব্দে কাশবন থেকে বেড়িয়ে আসে বাপ বেটা। নদী পাড়ে দাড়িয়ে দেখে ওদের সব নিয়ে যাচ্ছে। মুখ শুকনো করে বাড়ির দিকে হাটতে থাকে দুজন। হঠাৎ মামুন বলে, আব্বা আমাগো ভাত আর ইলিশ ভর্তা কি হবে?
ওরা হয়তো কোনদিনও জানবে না ভাত আর ইলিশ ভর্তা কি হয়েছিল! অধম লেখক জানে !! আর জানে!
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..