ইসাবেলা

মালবিকা লাবণী শীলা
গল্প, পডকাস্ট
ইসাবেলা

অফিস থেকে বাসায় ফিরতে প্রায়ই অনেক রাত হয়ে যায় মাহমুদের। ক্লাস নিয়ে, অন্যান্য কাজ সেরে ও বসে যায় লাইব্রেরিতে। ঘরে ফেরার পথে বাস থেকে নেমে কয়েক মিনিট হাঁটতে হয় ওকে, প্রায়ই হালকা বৃষ্টি থাকে, ইচ্ছে করেই মাথায় কিছু চাপায় না ও। এতোগুলো ঘন্টা লাইব্রেরিতে পার করার পর, বৃষ্টির এই আলতো আদর ও খুবই উপভোগ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় যেতে আধঘণ্টার মতো লাগে। নর্থওয়েস্ট প্যাসিফিকের গায়ে জড়াজড়ি করে থাকা সিয়াটল শহরটাকে কবে যে এতো ভালোবেসে ফেলেছে, তা ও নিজেই জানেনা। অল্প বয়েসে দেশ ছেড়েছিল মাহমুদ। বৃত্তি নিয়ে পড়তে এসে, ভালো রেজাল্টের জন্য ওর এখানেই কাজ হয়ে যায়। শুরুতে দেশের জন্য ভীষণ মন কেমন করত ওর। মামনির ওপর অভিমানও হতো খুব! মাত্র উনিশ বছর বয়সেই ওকে বিদেশ পাঠিয়ে দিলেন মামনি! অভিমানটাকে মাহমুদ খুব যত্ন করে পুষে রাখত! অভিমান না থাকলে সেই কবেই যে “দুত্তোরি” বলে সব ছেড়েছুড়ে দেশে চলে যেত!

অবশ্য মামনিরই বা দোষ কোথায়! মাহমুদ কলেজে ওঠার পরপরই এক উগ্রপন্থী মৌলবাদী দলের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছিল। নতুন রিক্রুট হিসেবে ওদের প্রত্যেকের কাজ ছিল আরো দশজনকে দলে টানা। হাতখরচ বাবদ ওরা বেশ ভালো টাকা পেত। এসব করতে গিয়ে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ফাইন্যালে রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায় ওর। বাবার সাথে মাহমুদ বড় হওয়ার পর হাতে গোণা কয়েকটা কথা হয়েছে মাত্র, বাবা ওদের সবার কাছেই কিরকম দূরের একজন মানুষ রয়ে গেছেন আজীবন।

এই লেখাটির অডিও শুনুন এখানে:

মাঝেমধ্যে বাবা বাড়ি ফিরতেন না। মামনি বলতেন অফিসের কাজে বাবা বাইরে গেছেন। তবু কেন জানি মাহমুদের মনে হতো কোথাও কোনো একটা ঝামেলা আছে! ক্লাস এইটে পড়ার সময় বাবার অনুপস্থিতির এক রাতে মামনির রুম থেকে ভেসে আসা শব্দ লক্ষ্য করে মাহমুদ আলতো করে দরোজা খুলে বুঝেছিল, মামনি কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন ও জিজ্ঞেস করেনি। ও মনে মনে ভাবে, “আমি বড় হলে মামনিকে আর কখনোই কাঁদতে দেবো না।

আরো অনেক পরে ছোটখালার কাছে মাহমুদ জানতে পেরেছিল, বাবার নাকি আরেকটা সংসার আছে। সেখানে ছেলেও আছে দুটো। আচ্ছা, বাবার ছেলেগুলো কি ওর মতো দেখতে! এতো কিছুর পরেও মামনি ওদের দুই ভাই বোনকে ঈগল মাতার মতো ডানা ছড়িয়ে আগলে রেখেছিলেন। বাবার দেওয়া টাকায় ওদের সংসার চলত না। মামনি একটা মেয়েদের স্কুলে পড়ান। মাহমুদের যা কিছু আহ্লাদ আব্দার সবই ছিলো মামনির কাছে। আর ছিলো খুব আদরের ছোট বোন জয়া। মাহমুদের চেয়ে জয়ার বয়সের পার্থক্য প্রায় একযুগের।

কলেজে রেজাল্ট খারাপ করার পর মামনি একদিন ওকে ডেকে পাঠালেন, মামনির চোখ ছিলো লালচে আর কিছুটা ফোলা, মানে মামনি কাঁদছিলেন! মাহমুদের বুকের ভেতরটা টনটন করে ওঠে। কীভাবে ও মামনিকে কাঁদাতে পারল! মামনি ওদের জন্য, ওদের পরিবারের জন্য কী না করেন! মাহমুদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, মামনি যা-ই বলুন ও মেনে নেবে। কিন্তু ও আর আগের মতো মামনির বিছানায় গিয়ে বসতে পারল না, কোথায় যেন একটা অলিখিত দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে ওদের মধ্যে! মাহমুদ দরোজার কাছে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মামনি একটু গলা পরিষ্কার করে বললেন,

– মহী, তুই বড় হচ্ছিস। হয়ত সংসার সম্পর্কে তোর বুদ্ধি এখনো খোলেনি। তবুও আমি আজ তোকে কিছু কথা বলবো, শুনে তুইই সিদ্ধান্ত নিস, কী করবি। আয়! কাছে এসে বোস!

মাহমুদের খুব কান্না পেতে থাকে, মা কেন ওর রেজাল্ট নিয়ে একটুও বকলেন না! ও বড় হচ্ছে বলে কি পর হয়ে গেছে! মামনির এই পরাজিত চেহারা দেখতে ওর মোটেও ভাল লাগে না। মাহমুদ বিছানায় মামনির পায়ের কাছে চুপ করে এসে বসে। মামনি একে একে অনেক কথাই বলেন। বাবার ঘটনাটাও বলেন। আশ্চর্য! মামনির কোনো রাগ অথবা ঘৃণা নেই বাবার প্রতি! হয়তো ভালোবাসা না থাকলে রাগ, অভিমানও কমে আসে, কে জানে!

এরপর মামনি আসেন আসল কথায়। ওদের দুই ভাই বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে মামনি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। মাহমুদ বড় হয়ে জয়ার দায়িত্ব নেবে, মামনি একাই চলতে পারবেন। কিন্তু সেই শক্ত ভিত তৈরি করতে হলে মাহমুদকে পড়াশোনা করতে হবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরকালের লোভ দেখালেও ইহকালে মামনি আর জয়া এদের পাশে তো মাহমুদকে নিজের যোগ্যতা নিয়েই দাঁড়াতে হবে!

মাহমুদ ভেবে দেখল, ঠিকই তো! বাবা ওদের নামেমাত্র আছেন, আসল অভিভাবক তো মামনি, কিন্তু এই যুদ্ধ কি মামনির একার! এটা কি মাহমুদের যুদ্ধও নয়! সেদিনের পর থেকে মাহমুদ বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করে দিলো। বিশেষ করে ওদের গ্রুপের কয়েকটি ছেলে আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধরা পড়ার পর ও আরো সাবধান হয়ে গেল। দলের ছেলেরা রিগ্রুপিং করার জন্য ওকে প্রায়ই ডাকতো, কিন্তু ওদের পাশের ফ্ল্যাটেই একজন পুলিশ অফিসার থাকায় ওরা বাড়ি পর্যন্ত হানা দিতে পারতো না।

চোখকান বুজে পড়াশোনার ফল হলো আশাতীত। মামনির ইচ্ছেয় মাহমুদ দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে। দেশে থাকলে ওর গ্রুপের ছেলেদের সাথে দেখা হবেই। ওকে ম্যানেজ না করতে পেরে ওরা যদি মামনি অথবা জয়ার ওপর হামলা করে! তাহলে মাহমুদ কোথায় যাবে!

কাজেই সিয়াটল থেকে ডাক আসার সাথে সাথেই মাহমুদ চলে এসেছিলো। পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশনের পর একবার দেশে গিয়ে দেখে জয়া বড় হয়ে গেছে অনেক, মামনি অনেকটা বুড়িয়ে গেছেন। দেখে বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে ওর। মায়ের ওপর জমিয়ে রাখা অভিমানটা আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে। অভিমানটুকু জিইয়ে না রাখলে ও এতোদিন দেশের বাইরে থাকতে পারতো না।

অবশ্য অভিমানের পাশাপাশি আর একটি কারণ ছিলো, সেই সুন্দর কারণটির নাম ইসাবেলা। ইটালিয়ান এই মেয়েটিকে হুট করে দেখলে বাঙালি অথবা বড়জোর ভারতীয় মনে হতে পারে! কুচকুচে কালো চুল, ব্রাউনিশ চোখের তারা আর অলিভ গায়ের রঙ! আর ফিগার! মনে হয় সালমা হায়েকের যমজ বোন! এরকম মারকাটারি মেয়ে কেন যে মাহমুদের প্রেমে পড়তে গেলো, কে জানে! ইসাবেলার পরিবারের সবাই নিউজার্সিতে থাকে। নিজের বাবামায়ের বৈবাহিক অবস্থা দেখে মাহমুদের বিয়ের ইচ্ছে একেবারেই ছিলো না। ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রী অনেকেরই প্রেম ছিল। কিন্তু ওদের মধ্যেও অলিখিত একটা বিয়ের কথা থাকেই। আজ না হোক, দশ বিশ বছর পরে হলেও ওরা বিয়ে করবে।

মাহমুদ যেহেতু সেই কথা কাউকে দিতে পারবে না, তাই আর সম্পর্কের দিকেও জড়ায়নি। পড়াশোনার কাজ ছাড়া ও মেয়েদের সাথে তেমন মিশতোও না। উইকএন্ডে সবাই যখন জোড়ায় জোড়ায় ক্লাব, বার অথবা শহরের বাইরে চলে যেতো, মাহমুদ তখন ডর্মরুমে একা বই আর ওয়াইন নিয়ে কাটাতো। অবিশ্বাস্যভাবে ইসাবেলাও প্রায়ই একা থাকতো। কেন কে জানে! এক উইকএন্ডের বিকেলে কাপড়চোপড় ধুয়ে ড্রায়ারে দিয়ে এসে, মাহমুদ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। হঠাৎ দরোজায় নক। মাহমুদ ধড়মড় করে উঠে দরোজা খুলে পুরো ভোম্বল ব’নে গেল!

ইসাবেলা! এক বোতল দিজারোনো নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে! মৃদু বৃষ্টির ছাট ওর চুলে হীরের অলংকারের মতো লেগে আছে। হাঁটু অব্দি লম্বা বোল্ড ফ্লাওয়ার প্রিন্টেড ড্রেসে ওকে ফুলের মতো দেখাচ্ছে। লম্বা চোখের পাপড়িতেও বৃষ্টির ছাট, চোখে দেওয়া কাজলে ওর চোখের গভীরতা আরো বেড়ে গেছে। ঠান্ডা বাতাসের তোড়ে ও মৃদু কাঁপছে, সুন্দর ঠোঁট দুটো ঈষৎ নীলচে। মাহমুদের দ্বিধান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে ও একটু হেসে বলে,

– বাঃ গেস্টকে দরোজায়ই দাঁড় করিয়ে রাখবে? Vuonna 2024 uudet kasinot https://uudet-kasinot.eu/ tarjoavat pelaajilleen jännittäviä pelikokemuksia ja huikeita bonuksia. Ole valmiina tutustumaan uusiin peleihin ja nauttimaan kasinoviihteestä täysillä!

সাথসাথে সম্বিৎ ফিরে পায় মাহমুদ। দরোজা ছেড়ে ইসাবেলাকে ভেতরে আমন্ত্রণ জানায়। সাথে সাথে নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় ওর কেঁদে ফেলার অবস্থা হয়! হায়! আজকেই সব ধুতে দিয়ে লুঙ্গি পরে আছে ও! ইসাবেলা ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,

– তোমরাও কি স্কটিশদের মতো কিল্ট পরো! জানতাম না তো!
মাহমুদ কী করে ওকে বোঝায়! অন্যের সামনে ঘরে পরার পাজামা থেকে জিন্স পরতে গেলেই শুধু ও লুঙ্গি পরে!

ইসাবেলা বলে, বড্ডো শীত লাগছে, এসো দিজারোনো খাই! মাহমুদ ওকে বলে কয়েক মিনিট বসতে। বলেই ছুটে চলে যায় লন্ড্রি রুমে। ড্রায়ার থেকে জিন্স বের করে ওখানেই পরে নিয়ে ঘরে আসে! উঃ বেইজ্জতির আর সীমা রইলো না!

লন্ড্রি নিয়ে এসে সহজ হতে ওদের কিছুটা সময় লাগে। এটা সেটা কথা হওয়ার পরে মাহমুদ বুঝতে পারে এই মেয়েটিও ওর মতোই একা। যদিও ওর বিশাল ফ্যামিলি থেকে কেউ না কেউ নিয়মিতই ওকে দেখে যায়! এর পর থেকে প্রায়ই ওরা একসাথে সময় কাটাতো।

বেশ কয়েক সপ্তাহ পর ওদের ক্লাসের একটি ছেলে মাহমুদকে ডেকে নিয়ে বলে,

– তুমি আর ইসাবেলা কি ডেইট করছো?

– তা জানিনা, তবে মিশছি।

– হুম! তা তোমার কোনো ধারনা আছে, ইসাবেলার সাথে কেউ ডেইট করে না কেন?

– না তো!

– কারণ, ওরা সবাই ভয় পায়! ইসাবেলার ঠাকুরদা নিউজার্সির নাম করা ড্রাগ লর্ড ছিলেন। বাবা, জ্যাঠারা ফ্যামিলি বিজনেস চালু রেখেছে। পুরো রাবণের সংসার! তোমার নাম ওদের কানে হয়তো এর মধ্যেই চলে গেছে! তোমাকে হাপিস করতে ওদের একটা হাতের তুড়িই যথেষ্ট!

মাহমুদ মনেমনে চিন্তায় পড়ে যায়। হায়! এতো সুন্দর একটা মেয়ে, ওর দিকে কেউ তাকালেই বিপদ! পরের কয়েকটা দিন মাহমুদের খুব ভয়ে ভয়ে কাটল। কখন যে গড ফাদার অথবা গুড ফ্যালাজ স্টাইলে রবার্ট ডি নিরো অথবা আল পাচিনো ওর সামনে এসে দাঁড়াবে, আর স্কারফেইসের আল পাচিনো যদি এসে বলে, “সে হ্যালো টু মাই লিটল ফ্রেন্ড!” তাহলে ও নির্ঘাত হার্টফেইল করবে! ইসাবেলার সাথে নিজের এই ভয়ের কথা ও শেয়ার করতে পারে না। জন্ম থেকে সব সাহসী বাঘের মতো পুরুষ দেখে বড় হওয়া ইসাবেলার সামনে মাহমুদ কিভাবে বেড়ালের মতো মিউমিউ করে বলবে যে, “আমি ভয় পাই!”

ইসাবেলাকে ও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু কী এক অমোঘ টানে মাহমুদকে ইসাবেলার কাছে যেতেই হয়। ওরা মানসিক, শারীরিক দিক থেকে অনেকটাই কাছে এসেছে। মাহমুদের মাঝেমাঝে মনে হয়, ইসাবেলা ওকে বিয়ে করতে চাইলে ও হয়তো না করতে পারবেনা। কী যে এক অলঙ্ঘ্যনীয় আকর্ষণ! কী প্রচণ্ড টান! অথচ পদে পদে হারানোর ভয়!

তবে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এ পর্যন্ত ইসাবেলার পরিবারের কেউই মাহমুদের সামনে আসেনি। এলে যে কী হতো ও নিজেও জানে না। তবে ও শুনেছে প্রচণ্ড ভয়ে নাকি নিতান্ত ভিতু লোকও সাহসী হয়ে ওঠে! অবশ্য পিস্তলের সামনে সাহস দেখালেই কী, আর না দেখালেই কী! ইসাবেলা অনেক কথা বললেও ওর ফ্যামিলির কথা বলতে চায় না। মাহমুদ নিজেও আগ্রহ দেখায় না। কে হায় খাল কাটতে বসে কুমিরের গল্প শুনতে চায়!

এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকবছর। ওদের ফাইনাল পরীক্ষার পরে মাহমুদ পরিকল্পনা করছে মামনি আর জয়াকে এখানে নিয়ে আসার, এমন সময় ইসাবেলা হঠাৎ করেই মাহমুদের রুমে আসে। হাসিখুশি মেয়েটির আজ কি হয়েছে! মাহমুদ টেবিলে বসে ইমিগ্রেশনের কিছু ফর্ম ফিল আপ করছিল। ইসাবেলা এসেই ওকে হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে যায়। কয়েক মুহূর্ত মাহমুদের চোখের দিকে তাকিয়ে ইসাবেলার চোখ ছলছল করতে থাকে।

মাহমুদ ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– হোয়াট’স রং বেলা! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই! টেল মি!

মাহমুদের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে ইসাবেলা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলতে থাকে,

– ইউ নো মেহমুদ দ্যাট আই লাভ ইউ।

– ইয়েস বেইব, আই ডু।

– সো, তুমি নিশ্চয়ই আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে আমি কিছু না বললেও শুনেছো।

– হ্যাঁ।

– তুমি কি একটুও অবাক হওনি যে, এরকম ওভারপ্রোটেক্টিভ ফ্যামিলির কেউই তোমাকে কিছু বলেনি দেখে! অথচ আগে যে কয়জন ছেলে আমার সাথে মিশতে এসেছিলো, তাদের সবাইকে আমার কাজিনরা এসে রীতিমতো হুমকি দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে, অবশ্য ছেলেগুলো ছোঁকছোঁক করতো খুব। তোমাকে আমার শুরু থেকেই খুব ভালো লেগেছে! শান্ত একটা ছেলে, কারো সাতে পাঁচে নেই, ইচ্ছে করে তোমার গা ঘেঁষে আমি হেঁটে গেছি, কিন্তু তুমি কখনোই অন্যদের মতো করে তাকাওনি। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেই তোমার সাথে মেশার। হয়তো বন্ধু হয়তোবা তারচেয়েও বেশি! কিন্তু তোমার সাথে মেশার আগে আমাকে তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়েছে, নইলে ওরা তোমাকে মেরেও ফেলতে পারতো। বাড়িতে গিয়ে আমি পাপু, মানে আমার গ্র‍্যান্ড ফাদারের সাথে কথা বলেছি। তাঁর কথা ছিলো একটাই, আমি তোমার সাথে মিশতে পারি, কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে হবে ওদের পছন্দেই। সব শর্তে রাজি হয়েই আমি সেদিন তোমার দরোজায় এসে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন বাবার এক বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।

এটুকু শুনে মাহমুদের বুকের ভেতর তোলপাড় করতে থাকে। কিন্তু ও নিজেও তো বিয়েতে আগ্রহী নয়। তবুও কেন এই বেদনা! এর পরে ইসাবেলা মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– বাট মেহমুদ..আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে গেছি, তার কী হবে? এতো হিসাব করার পরেও আমার এই হিসাব যে কিছুতেই মিলছেনা! আমি কী করবো! বলো না!

মাহমুদ আর কি বলবে! ইসাবেলার পরিবার বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ওকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলবে, সাথে ইসাবেলাকেও।

মাহমুদ একটু ভেবে বলে যে, ও নিজে বিয়েতে আগ্রহী নয়। সারাজীবন ও বিয়ে না করেই থাকবে। আর ইসাবেলার উচিত হবে পাপুকে দেওয়া কথা রাখা। অনেকক্ষণ পর ইসাবেলা ওঠে। বিদায় নেওয়ার আগে ছলছলে চোখে মাহমুদের দিকে তাকায় ও।

এর কয়েক মাস পরের ঘটনা। মামনি আর জয়া চলে এসেছে। মাহমুদকে বিয়ের কথা বলে বলে ওরা এখন ক্লান্ত। ইসাবেলার বিয়ে হয়ে গেছে নির্বিঘ্নে। এরা কেউই জানে না, প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইসাবেলার বিদায়কালীন ছলছলে চোখের কথা ভেবে মাহমুদ নিজেও আকুল হয়ে কাঁদে।

ইসাবেলা।

মালবিকা লাবণী শীলা। কবি, লেখক ও সংগীত শিল্পী। বাংলাদেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, বর্তমানে কানাডার নাগরিক। বাঙলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে। শাস্ত্রীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ভক্ত ও সাধক।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..