প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
আমার কাছে কবিতা একটা আধ্যাত্মিক বিষয়। আমি কবিতা পড়ি না, লেখি না। আমি দু’টোই হৃদয় দিয়ে অনুভব করি।যখন কবিতা লিখি সেটা কি ভাবে লিখি তাও জানি না। মনে যে অনুভূতি ঢেউ তুলে, তা লিখতে না পারলে মনে কষ্ট হোতো বা হয়। হাতের কাছে কাগজ কলম না থাকলে তা অনুভব করতাম। অনেক সময় নিজের জামার ভেতরের দিকে টিস্যু পেপারের কবিতা লিখতাম। হয়তো কোথাও ফেলেও দিতাম তা। কিন্তু লিখার পর এক ধরনের মুক্তি মিলতো। যদিও এখন মোবাইল মুক্তি দিয়েছে সে কষ্ট থেকে। মুক্তির জন্য কবিতা লিখি।
কেন আধ্যাত্মিক মনে হয়? যখন খুব ছোটবেলা গ্রামের বাড়ি যাই তখন আমি সে গ্রাম নিয়ে কবিতা লিখি। দু’চারটা পাঠ্য বইয়ের কবিতা ছাড়া তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। শহরে জন্ম হওয়া আমার কাছে নদী, শাপলা, নৌকা এসব ছিল মুগ্ধতা! তাই এটা বলতে পারি যে কোনোকিছুর প্রতি অপার মুগ্ধতাই আমাকে কবিতা লেখায়। বড় হতে হতে বুঝলাম সে মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেলে তা কবিতা হয়। তবে সব মুগ্ধতা যে কবিতা হয় তা কিন্তু নয়। দুঃখ বিরহের কবিতাও আসে। আসে প্রেমের কবিতা আবার সামনে না থাকলে আসে বিরহের কবিতা। কিন্তু মূল স্পর্শে থাকে মুগ্ধতা প্রেম, ভালো লাগা, বিহব্বলতা, নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। কখনো কখনো সে বিলিয়ে দেয়াটা বাস্তবে হয় না বলে, কবিতায় উঠে আসে।
সবাইকে নিয়ে কবিতা লেখা যায় না। জীবনে অনেক মানুষ পেয়েছি যাঁরা পাগলের মত ভালোবাসে কিন্তু তাঁদের নিয়ে কোনো কবিতা আসেনি। আবার কখনো হয়তো কোনো মানুষের চেহারা দেখেও মনে হয়েছে সে আমার শত জন্মের চেনা। তাঁকে নিয়ে কখন কোন লাইন কবিতা হয়ে এসেছে ভাবনায় আমি ঠিক নিজেও জানি না। তবে এমন আত্মার মানুষ অতি ক্ষুদ্র সংখ্যায়। তাই মনে হয় কবিতা একটা আধ্যাত্মিক বিষয়। আমি যাঁকে এমন করে কবিতায় আমার আত্মায় অনুভব করেছি, কেন জানি তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধার অগাধ। এ আত্মার বিষয় ছাড়া আর কিছু নয়। একজন মানুষের অতি ক্ষুদ্র বিষয়গুলো যখন হৃদয় নাড়িয়ে দেয়, তখন তা কবিতা হয়। তাই তো লিখেছিলাম-
“কেউ একজন ঈগলের মত তীক্ষ্ণ চোখে আমায় দেখছে বলে কবিতা লিখি
তাঁর গাঢ় ঠোঁটের তৃপ্তি আস্বাদন কাঙাল করে বলে
কবিতা লিখি
তার বাবড়ি চুল মনের আঙ্গিনায় ঝড় তুললেই –
কবিতা লিখে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় –
আমার বড় সাধ হয় একবার ছুঁয়ে দেখি ঐ চুল
ঐ কপোল মায়াময় বুকের সীমানা যত ভুল!
এমন পাগলামীগুলো মুখে বলা যায় না বলেই –
কবিতা লিখি।”
এবার ছোট্ট একটা কথোপোকথন বলি! তা হচ্ছিল এক বিদেশিনী সহকর্মীর সাথে। তাঁর নাম ক্লারি বেল-
–ওহ মাই গড I get goosebumps!
–কেন কেন?
–সেলিনা তোমার কথায় কি একটা ছিল! যা আমাকে শিহরিত করেছে! দেখ আমার হাত।
–ও মাই গড।
দেখলাম তাঁর ফর্সা হাতের নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত দানাদানা লোমকূপ এবং হাল্কা লোমগুলো সোজা হয়ে আছে। আমি কী বলছিলাম?
–আমিতো অনেক কথা বললাম ক্লারি, ঠিক কোন কথাটায় তোমার এমন শিহরণ হলো?
–ঐ যে,”আমার কাছে যদি কবিতা আসতে পারে তবে তাঁর কাছেও কেউ ধর্মীয় বাণী পাঠাতে পারে”! এই কথাটা…
–ওহ তাই? শুরুতে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল ইভ এডাম এবং আদম হাওয়ার এ পৃথিবীতে আগমন নিয়ে। যেখানে দু’জনেই সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছিলাম ধর্মীয় বিষয়ে। সে থেকে ধ্যানরত নবী (সা:) এর কাছে ওহি আসার গল্প। তাঁর সাথেই তুলনা ছিল কবিতার লাইন কবিতা আসে কোথা থেকে? নিশ্চয় অদৃশ্য সে মহান ক্ষমতাধর ঈশ্বর কিছু কিছু মানুষকে কিছু ক্ষমতা দেন। আমরা হয়তো ঠিক জানি না সেটা কী? তিনি কে? নতুবা সবাই কবিতা লিখতো। জিজ্ঞেস করেছিলাম-
–তুমি কবিতা লিখতে পারবে?
–নাহ!
–এখানে তোমার আমার মাঝে পার্থক্য! আমি যখন আকাশে তাকাই তখন মুগ্ধ হয়ে দু’লাইন কবিতা লিখে ফেলি। আমার মনে আসে। এটাই হয়তো মিরাকল। কোথা থেকে আসে? নিশ্চয় সে একজন অদৃশ্য ঈশ্বর পাঠান। “আমার কাছে যদি কবিতা আসতে পারে তবে তাঁর কাছেও কেউ ধর্মীয় বাণী পাঠাতে পারে”! এ কথাটা আধ্যাত্মিক অনুভূতি। এক বিদেশিনীর গায়ে কাঁটা দিয়েছে।
চাঁদের চাঁদনী, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত নদীর জল, পাহাড়ের নীরবতা, ঝর্ণার বয়ে চলা কিংবা সাগরের ঢেউ মনে আলোড়ন তুললেই কবিতা হয়, তাই কবিতা লিখি। ভালোবাসার প্রিয় মানুষটা যত দূরেই থাকুক না কেনো কবিতা হৃদয়ের খুব কাছে জুড়ে রাখে। হয়তো এজন্য কবিতা লিখি। কবির হৃদয় যেখানে মুগ্ধতায়, ব্যথায় কাতর হয় সেখানেই শুধু কবিতা হয়।
কবিতা কেন পড়ি? সাহিত্যপ্রেমি কাব্যপ্রেমি মানুষের জন্য এটা বলা খুব মুশকিল। প্রয়োজনে যেমন পড়তে হয় তেমনি নিতান্ত মনের খোরাকের জন্যও পড়তে হয়। কবিতার সাথে ছড়ার সাথে পরিচয় পাঠ্য বইয়ে। আমি স্কুলে যেতাম না ১ম ও ২য় শ্রেণী পর্যন্ত, তবে কবিতার প্রতি এক মোহ অনুভব করতাম। পড়াশোনা না করলেও ছোটবেলায় কবিতা পড়া আমার শখ ছিলো। রেডিও অফিসে প্রতি রবিবার ছড়া বলতাম। সেইথেকে ভালো লাগা।
খুব অল্পবয়সে, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনান্দ, সুনীল গঙ্গোধ্যায়ের কবিতা প্রিয় হয়ে উঠেছিল। ঘরে বইপড়ুয়া বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে কিছু সংস্পর্শ ছিল। আম্মা সুর করে পুঁথি পড়তেন। সবকিছু মিলিয়ে কবিতার প্রতি দুর্বলতা ছিল বলা যায়। তবে কবিতার ভেতর দিয়ে যাওয়া শুরু করলাম সঞ্চয়িতা পড়ে। আমি খুব ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়েছিলাম। আমাদের এক শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের বীজ আমার মাথায় বপন করে দিয়েছিলেন। ক্লাস এইটে থাকতে সঞ্চয়িতা কিনেছি। বুঝে না বুঝে অনেক কবিতা তখন মুখস্থ করেছিলাম। দুইবিঘা জমি, বাঁশি, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, ক্যামেলিয়া সবছিল মুখস্থ। পড়ার জন্য নিদৃষ্ট তেমন কোন কারণ ছিল না। লেখার প্রতি তখনো তেমন কোনো বিশেষ তাড়না ছিল না। তবু পড়তাম। এক ধরনের ভালোবাসা, মোহ কাজ করতো হয় তো।
এখন প্রয়োজনে পড়ি। কবিতা লিখলেও কবিতার যে কিছু ছন্দপতন হয় এসব আমার জানা ছিল না। পড়াশোনা করেছি বিজ্ঞান নিয়ে। চর্চা বলতে যা বোঝায় তা আমার নেই। পড়তাম মনের খোরাক হিসেবে। কবিতা কাব্য সে শুধু আমার মনের বিলাস। তাই নিয়ম কাকে বলে জানি না? সামাজিক মাধ্যমে গুণীজনদের সংস্পর্শে এসে জানলাম কবিতা লিখতে গেলে ছন্দ জানতে হবে। পড়তে হবে তাই পড়ি। কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক অনেকবার পোস্ট করেছেন –
“ছন্দ শেখার প্রথাগত পদ্ধতিটা একটু কঠিন। খুব সহজ ভাষায় সহজ কথায় ছন্দ শেখার একটা ফন্দি হলো সহজ পাঠ।”
তাই পাঠ করি। বলা যায় এখন শেখার জন্য পড়ি আধুনিক কবিতাগুলো।
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..