উজ্জ্বল রায়ের অক্ষর ও অন্যান্য

উজ্জ্বল রায়
কবিতা
Bengali
উজ্জ্বল রায়ের অক্ষর ও অন্যান্য

শেষ ফেরা: সেই’তো এলে

তুমি ফিরে এসো একদিন
তোমার জন্য এক কলম লিখে গেলাম প্রিয়

অনেকদিন উনুনে হাঁড়ি নেই,
আমি রোজ একটু একটু করে মাটি কুড়িয়ে রাখি বাবার পায়ে

এক সমুদ্র শব পুড়িয়ে ফিরে যাচ্ছি ঘরে
বাক্যগুলো রোজ আমায় কেড়ে নিচ্ছে চোখের বিছানা থেকে,

ওরা দু’হাতে রুটির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে
আমি জল খুঁজছি লবণাক্ত মুখে

বাড়িটা অনাথ শ্যাওলা দিয়ে ঢাকা
পাথর গুলো আজ মা হতে চায়

আজ শুধু পায়ের ছাপ রয়ে গেছে
আমার ছোঁয়াচে আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলন্ত প্রেমিকা

এই যে দূরে দিনসন্তান কোলে নিয়ে হাঁটছে
নিঃশব্দ অন্ধকার জড়িয়েছে চারপায়ের ফুটপাত

চলে যাওয়ার পথে তোমার জন্য লেখা হৃদয়
আমার কবর জুড়ে আজ বাবার পদচিহ্ন

 

অভিযোজন

দুই পৃথিবীর জাতক কে হত্যা করেছি
ঈশ্বর নামক অন্ধ হৃৎপিণ্ড থেকে ছোঁয়াচে মৃত্যু মাখি সময়ের ,

গাছের পাতায় ইচ্ছেরা খোঁজে কপল
চোখগুলি আগুনের আঁচ, প্রতিবিম্বিত আমিত্বে।

অনেকদিন বাদে তোমার বন্দরে পা ছুঁয়ে গেল, আর কোন প্রশ্ন নয় ,শুধু নীরব দৃষ্টিতে আমার অকাল চাতকের অপেক্ষার মাত্রাবৃত্ত।

আমি পুড়েছি এক অবুঝ পৃথিবীর কোলে, যেখানে জন্ম নেই বার্ধক্যের
অরণ্যের মতো উলঙ্গ স্পর্শকাতর শুধু অবাধ্যতা দাঁড়িয়ে !

হিসেব মেলেনা যখন কুঁজো অতীতে পুরুষ বোবা হয়ে যায়
তুমি অদূরে থেকে দেখছ একটি জ্বলন্ত দ্বীপপুঞ্জ

জোছনার আত্মবীক্ষণ নিঃস্ব হয়েছে
অঙ্গ চুঁইয়ে পড়ে শেকড়ের স্তনপদ্মে।

 

অক্ষর

কবিতারা আর ফেরেনি,
সেদিন রাতের মৃত্যুটা আজ আমায় যন্ত্রণা দিয়ে গেল
আমি কবরের উপর ভালোবাসা বিছিয়ে অপেক্ষায় এক পৃথিবী কবিতার প্রেমী,
যখন নীরব অভিমানের কলম চুঁইয়ে ভিনদেশী মুখোশের উপেক্ষা পোড়ায় অস্পৃশ্য পৃথিবীর মহাকাব্য

কলঙ্কিনী-

ওরা চারপায়ে ফিরে যাচ্ছে অবৈধ শস্যের খোঁজে
ভাতের মতো মানুষ হয়না, ঐ আগুনের আঁচের নদী সংকীর্ণ পথে।মাটির গন্ধে পা’গুলো এলোমেলো গোলকের ওপর দাঁড়িয়ে

চারপাশ চুষছে পিচ্ছিল নারীবলয়
পাথরের অভ্যাসে চরিত্র ব্যক্ত
সে এক অভিনয় খুঁজে নিঃস্ব অতিরিক্ত।

সন্ধ্যা জড়িয়ে থাকা অনুভব আজ বোবা কুঁড়ি নয় রক্তস্রাবে,অপরিণত লজ্জা ওই বৃদ্ধ জলের শ্যাওলা আঁকে দিগন্তরেখায়। মানুষগুলোর হাতে পোড়া অঙ্গের অসতী মোহনা যাঁরা ইচ্ছের কখনও বিল্পব করেনি। আটপৌরে উঠোনে এক বন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একমুঠ খিদে।

এঁটো বাসন গুলো মেজে দে তুই ,
সন্মান বাড়ছে আমার তোর গর্ভে
ছেঁড়া শাড়ির ভাজে ঘৃণার স্পর্শবিন্দু
অবাধ্য চরিত্রের দৃষ্টিপাত ফেরি।

আঁস বটি তে পোয়াতি মেয়ের রক্তাক্ত হাত থেকে ঝরা ক’ফোটা অশ্রু,
পাঁচ বছরের ছেলেটা জোরে বই পড়ছে
মা, একমুঠ ভাত দে থালায়
লোকে বলে তুই নাকি বেশ্যা
রুবিনা শুধুই অপলকে চেয়ে দেখে নিজেকে, আর কতো দিন শরীর চলবে
নিষিদ্ধ পল্লীতে খদ্দেররাও আসেনা আগের মতো
অসুস্থ মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু টাকা হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলে মর্যাদার সাথে
তবুও কবিতার মতো ধর্ষণ করে যাচ্ছে সৃষ্টিতত্ত্ব

আমি কোন প্রেমিক নই যে ভালোবেসে যাবো তোকে ,
এক থাবা মাংস দিয়েছিলাম তুই প্রতিদিন কেটে নিয়ে যাচ্ছিস ফুটপাতে।

কতগুলো শব্দ নিয়ে বাসরঘর করেছিলাম নির্লজ্জের মতো
তোর যৌবন ক্ষতবিক্ষত করেছি কলমে লেখা ‘পুরুষলিঙ্গ’ উপন্যাসে
তোর যোনি চুঁইয়ে পড়া রক্তস্রোতে অসহায় কবির বীর্যপাত

একবার ফিরে আয় অন্তঃসত্বা নদীতে
আমার অবৈধ সন্তানের হত্যাকারী হতে চাই মহাকাব্যে
দুর্গন্ধ ডেকে আনুক আবার নর্দমাকে

আজো চল্লিশের রুবিনার হাতে উলঙ্গ কলমের চিৎকার
রক্তে চোবানো কলম লিখে যাচ্ছে সভ্য মানুষের দরজায় একজন ধর্ষক অপেক্ষায় রয়েছে ।

বেনামী পৃষ্ঠায় লিখে যাও কলঙ্কিত ইতিহাস
ধ্বংসাবশেষ থেকে বৃত্তের নিষিদ্ধ দলিল
একবার পড়ে দেখিস।

 

মদ

কতদিন খুঁজিনি রাতের প্রসবের রক্ত
মাটির জরায়ু থেকে খসে যাচ্ছে আয়ুরেখা,

রমণীর শরীর দাহ হবার পর অক্ষরূপ সহবাস যেখানে মাতৃহীন
আঠালো বীর্যবৃক্ষ আর প্রেমিক স্তনে পিচ্ছিল সংসার হত্যা হয়,

প্রাক্তন হত্যা করছে সিঁদুরে
যখন দুটি সাপ জড়িয়ে ছিল ইতিহাস

নিঃস্ব নিম পাতার স্বাদ মরে যায় মানুষের জিভে
নৌকার কি মৃত্যু নেই? যখন দাঁড়হীন বন্ধ্যা চাঁদ অশ্লীল

কেড়ে নিচ্ছি প্রেমিকার ঈশ্বর
আমি মানুষ নই শুধু ওই কলমের উলঙ্গ সহবাস ,

তোমরা ঘুমিয়ে থাকবে আলোয়,
দেখ! আমার নারীর যোনি থেকে পৃথিবী বেরিয়ে যাচ্ছে

 

সভ্যতা

দুটি হাত সরে সরে যাচ্ছে,আঙ্গুল খোঁজে দূরত্ব
কথারা সব নদী হয়ে যায় যখন আমি জীবন লিখি

পায়ে পায়ে পার্থক্য, একটি পাথরে খসে আগুন
যখন আমরা উলঙ্গ হয়ে হেঁটে যাচ্ছি পায়ের ছাপ রেখে

যতবার ফিরে আসি,একটা রাত অন্ধ পথিকের হাত দুটি খেয়ে নেয়।

ওরা জন্মান্ধ তাই লাঠি হাতে কুঁজো রান্নাঘরে চলে যায়
একটাও হাত নেই যে কুড়িয়ে দেবে আমাদের মাটি

বিছানাটা শুধুই লজ্জাহীন সঙ্গমের শরীর,
আজও মায়ের খাওয়া হলো না।

উজ্জ্বল রায়। কবি। জন্ম-১ নভেম্বর, নিবাস -শিলিগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ; ভারত। কবিতানদী, শব্দ কুড়িয়ে রাখেন সাদা কাগজের নৌকায়। মনের কুঠুরিতে অজস্র মৃতদেহের শয্যা একটি শব্দ অনেক গভীর প্রশ্নের বুকে অখণ্ড জরায়ুর ক্ষতচিহ্ন তাঁর। লেখালিখি ভালোবাসেন ও গান তাঁর প্রিয়। তিনি মনে করেন শিক্ষাগত যোগ্যতা বলে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..