উদাসীন মল্ট

স্বপন রায়
কবিতা
Bengali
উদাসীন মল্ট

রোদের আগে যারা চলে গেছে, ১৯০০
রোদের পরে যারা চলে গেছে, ২০০০

কত দিন আগে , কত পরে পরে যে রোদের মনে হবে
অন্ধকার দিয়ে যা মোছা যায়
তার সামান্যই কাজে লাগে
মজুরিতে লাগে
গানভাঙা একচিলতে ব্রাশে লাগে আর বাঁক এলেই নেমে যায়
হাল্কা রোঁয়া ওঠা জঙ্গলে
আগে রোদের পিপাসা যার
পরে প্রার্থনা
সেই কিশোর ছেলেটা যার বেল্টে চামড়ার গন্ধ ছিল

 

দুই.

দেখলেই নাকি জ্বলে ওঠে
তাই দেখছি
না দেখলেও হিলকার্ট রোড তৈরি হত
সে যাবে ব’লে
আমি দেখবো ব’লে কোটি কোটি ঘাম মাথা থেকে পায়ে পড়েনি
তবে জ্বলে ওঠাটা ঠিক
দেখলে
তারাও দেখে জ্বলে ওঠার ফাঁকে সে অটোয় উঠছে
পায়, সামান্য গন্ধ বেল্টের

 

তিন.

চশমা নামিয়ে মুছে দিলাম গরম কাচ
ঠাণ্ডা বা গরম কাচ দূর থেকে একইরকম মনে হয়
মনে হয় আলগোছে তুলে রাখলেই হত
চোখদুটো

 

চার.

ঠিক মরে যাবো
ঠিক বেঁচে আছি ব’লে

আমি ঠিকই পৌঁছে যাবো
বৃষ্টি হোক বা না-হোক

মরে বাঁচা
আর বেঁচে মরার ভেতরে আমার ঠিকানা ছিল ২২ শ্রাবণ, চৌমাথার মোড়
রাস্তা আছে, নাম নেই
নম্বর নেই ঘরের, ঘরই তো নেই, আমি বেঁচে ছিলাম কিনা
খুব বড় কথা নয়
কেন বেঁচে ছিলাম এটাও কোন তর্ক হতে পারেনা

আমি মরে গেছি, ব্যস
আমি বেঁচেছিলাম কলার উঁচিয়ে, ব্যস….

 

পাঁচ.

ছুঁয়ে দেখা বাহানাই তো
টোকা মারাও

রোদছেয়ে আসার পরে মেঘেরা
মেঘের পাশের বাড়িতে থাকা রিয়া বা শার্লিন
বোন বা বান্ধবী যাইহোক বাড়িভাড়ার কুপন নিয়ে হৈ চৈ করছে
মেঘ কিন্তু ছিল
আর রোদও, মেয়েদের হল্লা পেরিয়ে শুকনো মাঠের দক্ষিণে এক তরুন নেতা
সানগ্লাস নামালো
কিন্তু বাহানা কোথায়?

এমনকি পুঁচকে ফড়িংও হাসছে
শালপাতা, আগাড়িপিছাড়ি জ্যোৎস্নারাও
রিয়া, শার্লিন, নেতা, রোদ, মেঘ
হতে পারে কিন্তু
আজ হতেই পারে ছুঁয়ে দেখার টোকা মারার ব’লে ওঠার আগে
হানা
বাহানারা

 

ছয়.

সামান্য শীতে রোদ ফেরা ফেরা
ছায়াগুলো বীমা
আছি, মনে করিয়ে দেয়
আর আমি তো ছিলাম
আরে আমিই তো ছিলাম তার দাগ ওই ছায়া
আর প্রমাণ
প্রমাণ কি গন্ধে থাকে, দাউ দাউ গন্ধে

শীতে তাপ কমলেই
ছায়ার দাগে হাত বুলিয়ে ভাববে সেক্স হবে রেসকোর্সে গেল
নাকি যায়নি, এখনো বাদাম খাচ্ছে?

আমি ছিলাম
সামান্য শীতে অসামান্য আগুনে বাদাম ভাঙার মুহূর্তে
দাগ যখন ছায়াকে
ছায়া যখন শাল্মলীকে
শাল্মলী যখন বলল, কন্ডোম আর ফুডস্টক নিয়ে লেখাটা আটকে আছে
আমি বললাম, কোথায়
ও অনেকদূরে গোল হয়ে বসা কিছু ছায়ার দিকে আঙুল তুলল
ওরা গান গাইছিল
মাঝখানের দাউ দাউ নিভে আসছে যখন

স্বপন রায়। কবি। জন্ম ১৯৫৬। ভারতের দুটো ইস্পাতনগরী জামশেদপুর এবং রাউরকেলা স্বপন রায়ের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রথমটি জন্মসূত্রে। দ্বিতীয়টি বড় হয়ে ওঠার সূত্রে। নব্বই দশকের শুরুতে 'নতুন কবিতা'র ভাবনায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পুরনো, প্রতিষ্ঠিত ধারাকবিতা ত্যাগ করে কবিতাকে নানাভাবে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ