উদ্বাস্তু শব্দেরা

অনুশ্রী তরফদার
কবিতা
Bengali
উদ্বাস্তু শব্দেরা
উদ্বাস্তু শব্দেরা
চারিদিকে নৈশব্দ!
নাকি শব্দের শব্দ শুনতে কান নারাজ
ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ, বারুদের গন্ধে বাতাসেরও ফুসফুসে সংক্রমণ।
মাটির উপরে রক্তের চাদর বদলেছে বর্ণ
জ‍্যান্ত পুতুলের বুলেটভেদী লালফোটা আসল পুতুলের ফ্রকে,
পড়ে আছে মালিকানাবিহীন মৃত‍্যুস্তুপের পাশে।
সেফকরিডোরে রিফিউজি মিছিল সীমান্ত পথে, সাময়িক বিরতিও অভিশপ্ত প্রতিক্ষণে, সাম্রাজ‍্যবাদ কিংবা ছককষা অঙ্কে নাচছে শিকারী ও শিকার, সমাজতন্ত্রের দেশও দাম্ভিক একনায়কতন্ত্রের নাগপাশে,
শাসকের ঔদ্ধত‍্যের মাশুল গুনছে পৃথিবীর রুটি।
কৌতুক নেতা বা অভিনেতা, দাদাশক্তির পরিচালনায় বিধ্বংসী শুটিং সারছে, সিনেমাশহর যেন পুরো দেশ।
পৃথিবীর সব ভাষা গোপনে লিখে চলেছে ভূবনায়ন কুরূক্ষেত্রের চিত্রনাট্য।
শব্দ পৌঁছায়না মস্তিষ্কের বিবেকশালায়, শব্দগুলো উদ্বাস্তুর প্রতিনিধি হয়ে নিরাপত্তা খোঁজে।
ঘর
একটা ঘরের ভেতরে ছোট ছোট অনেক ঘর, চারতক্তার ঘেরাটোপে বইয়ের ঘর, কাঠ, কাঁচ সমাবেশে কাপড়ের ঘর,
প্লাস্টিক, ফাইবার, প্লাইউড সব মিলে পুতুলের ঘর।
কংক্রিট পলেস্তারা মারবেল- ঝকঝকে হাঁড়ি পাতিল উনুনের ঘর, ভিন্নধর্মী বস্তুর মোড়কে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঠান্ডা ঘর, অত‍্যাধুনিকতার মডিউলার রান্নাঘর।
কোথাও মুলিবাঁশ টিন ঘেরা ল‍্যাপাপোছা সুখের ঘর, পোয়ালের ছাদ বা টালির খোলা সজ্জিত একচালা-দোচালার নীচে সাতমাথা সহবাসে নিরাপদ ঘর।
সব ঘর ভর্তি সব ঘর শূন্য,
ঘরের লালন-পালনে আলো অন্ধকার কেটে যায়, প্লাস্টার খসে, টিন ফুটো হয়, মাটি তোলে অঙ্গুরীমাল জীব।
রঙ চড়ে, টালি সরে, পুটিংয়ের তাপ্পি-
ফুটো ছাদ, নীচে গেরস্থালীর বাসন।
ঘর জোড়ে ঘর ভাঙে ঘর পোড়ে, তবুও ঘর টানে,
দিনের শেষে বা রবির আলিঙ্গনে।
ছেড়ে যেতে হবে সব ঘর ,
পুতুলনাচের আটপ্রহর।
বইমেলা
প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে,ডানদিকে মুখরোচক টক ঝাল নোনতা শখগুলো বিকিকিনি আর-
অফিসঘরের দু’পাশের দোকানে বই, ছবি, কেক আচার মোরব্বা সহচরী
বাঁশ কাঠ কাপড়ে মুড়ে সেজেছে জ‍্যামিতিক বইমেলা।
স্বাদ নিয়ে যতটা বিশ্বাসী আচার
টপটপ ফোটে সান্ধ‍্য পপকর্ণ-
শিউলির স্মৃতি শীতের বাক্সে,
গাঁদার গন্ধে  বই ও রঙিন প্রচ্ছদ…
বইকিনি না খইকিনি ভাবতে ভাবতে! পকেটে হাত দেয় বেকারত্ব
টিকিটে দশ, খই প‍্যাকেটে বিশ
হাতখরচা উপুড় করে।
বই কাঁদে, পাঠকের পরিমিত দৃষ্টি
পেছন পাতায় নম্বর চোখ,
দামাদামি হাতাহাতি, নেবে নেবে মুহুর্তটা, কলমযোদ্ধার চোখে খুশি,
পাঠক- দর্শকরূপে ধিরে পায়ে মঞ্চাভিমুখে।
চিকেনের রকমারি, কাটলেট হতে ফিঙ্গার বল- গরম তেলে,
ধৈর্য্যলাইনে- খাদক,
ফুচকা, চাট, ধোসা, পিঠেপুলি,
বইমেলার অন্তর্জলি যাত্রা।
নাচে গানে বেসুরো কলতানে মঞ্চ মেতে  চলছে অণু অণু প্রেরণায় সংস্কৃতি উল্লাস।
ভাগের মা গঙ্গা পায়না সত‍্যি!
মাটির উপরে কদিনের বাসা,
মাথায় স্বচ্ছ পাতলা প্রতীকী নিবারণ রিফিউজি ক‍্যাম্পের দৃশ‍্য, কিংবা-
বারো ঘর এক উঠোনের মতো গা-ঘেঁষা কটা টেবিল।
সামনে পরিচিতি ফ্লেক্স, আবেগ আর ভালোবাসাকে অস্ত্র করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে সাজানো সংগ্রাম,
ক্ষুদ্র পত্রিকা।
প্রিয় লিটল ম‍্যাগাজিন।

অনুশ্রী তরফদার। কবি ও সম্পাদক। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের শিলিগুড়ি। দ্রোহকাল নামক ছোট কাগজ সম্পাদনা করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..