উন্নয়নের গণতন্ত্র

ঋতো আহমেদ
কবিতা
Bengali
উন্নয়নের গণতন্ত্র

অবশেষে গরিব দেশের বদনাম ঘুচলো আমাদের
আসুন এবার একটু প্রাণ খুলে হাসুন
অযথা হবিগঞ্জ অথবা লক্ষ্মীপুর ধর্ষণ নিয়ে মন খারাপ
করবেন না
ওগুলোও আর দশটা ঘটনার মতোই এক‌একটা রটনা মাত্র
যেমনটা তনু কিংবা রূপা-র ক্ষেত্রে হয়েছে
ভাববেন না-
আমাদের পুলিশ বাহিনী তৎপর আছে
আর যদি প্রয়োজন হয় তো আরো উচ্চ পর্যায়ের
বাহিনীও আছে
আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে
তাছাড়া এগুলো তো আর রেইনট্রি-র মতো মুখরোচক ও
কৌতুহল উদ্দীপক‌ও নয়
শুধুই সেন্টিমেন্ট
তারপরও
যদি প্রয়োজন হয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হবে

আপনারা আসুন এবার একটু আমোদ করুন-

“হাওয়া মে উড়তা যায়ে মেরা লাল দোপাট্টা মল মল..”

 

দুই.

আমি যুদ্ধ দেখিনি
’৭১ এর অনেক পরে আমার জন্ম
প্রথম চোখ মেলে স্বাধীন বাংলাদেশকেই দেখেছি
বড়দের মুখে
শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের গল্প
আর
যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করতে শিখেছি
জেনেছি ১৬-ই ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল
১৬-ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিন
আর কোনো যুদ্ধ করতে হবে না আমাদের এর পর থেকে
আমরা স্বাধীন
আমাদের সকল দুঃখের অবসান ঘটেছে এই দিনে
এখন কেবল উন্নয়ন আর উন্নয়ন আর
সুখ ও শান্তির বসবাস

পরম্পরায় আমার ছেলেকেও তা জানিয়েছি ও শিখিয়েছি

অথচ আজ একটি প্রশ্ন আমাকে আশ্চর্য ভাবে বিব্রত করেছে
আমি কোনো সদুত্তর দিতে পারিনি

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর‌ও এই দেশে
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে মানুষের মতো দেখতে কিছু প্রাণী
যাদেরকে আমরা ভাই বলে জানি সন্তান বলে জানি
বন্ধু বলেও জানি-
তাহলে যুদ্ধের শেষ কোথায়
এইসব প্রাত‍্যহিক যুদ্ধের অপরাধী আসলে কে
কারা-ই-বা রাজাকার আল-বদর আল-শামস এইখানে

এদের‌ও কি ফাঁসি চাইতে হবে আমাদের

 

তিন.

শেষ পর্যন্ত কয়জন ছাত্রের মাথা ফাটালেন আমাদের

মহান পুলিশ বাহিনী‌

কতোজন ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

রয়েছে

কতোজন প্রিজন সেলে

কতোজনের নামে মামলা হোলো‌

কতোজন গুম হোলো- আর পাওয়া যাবে না যাদের-

তাদের সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই

আপনার কাছে কি আছে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আপনি এবং আপনার পুলিশ বাহিনীর তৎপরতায় আমরা

মুগ্ধ

সেইসাথে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পরিষদ-এর ওই

বেজন্মাটাকেও-

ব্রাভো পাওনা হয়েছে আপনাদের

সঠিক পরিসংখ্যানটা জানাতে পারলে বিশেষ আয়োজনে

মেডেল‌ও প্রদান করা যেতে পারে আপনাদের

সবাইকে

উন্নয়নের গণতন্ত্রের অব্যাহত ধারায় আপনারা অনন‍্য দৃষ্টান্ত

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সূর্য সন্তান

স‍্য‌ালুট আপনাদের

 

০৪.

রসুল মিয়া কোনো কাটাছেঁড়ায় যাননি

বিচ্ছিন্ন পা আর মেয়ের লাশ নিয়ে ফিরে গেছেন গ্রামে

আর

ধিক্কার দিয়েছেন

আমাদের এই অভিশপ্ত মেট্রোপলিটন-কে

রাসেল হাসপাতালে শুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে

অবশিষ্ট জীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে কী-করে বাঁচবে

আর রাজিব.. রাজিবের হাত.. রাজিবের স্বপ্ন.. এখন দীর্ঘশ্বাস

এইভাবে

রাজিব রাসেল আর রোজিনারা আমাদের সড়ক ব‍্যবস্থার

ব্যাপক উন্নয়নের বেপরোয়া মাইলফলক হিসেবে প্রতিয়মান

হয়েছে

এবং

আমাদের চালক ভাইয়েরা অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে

এইসব মাইলফলক অতিক্রম করে যাচ্ছেন

বীরবিক্রমে

তাদেরকে রুখতে পারে এমন আইন আর তার প্রয়োগ কি আছে

এই দেশে

উন্নয়নের অপার গতির মুখে

কোন হালায় রাজিব আর কে-ই-বা রোজিনা

অত‌এব আসুন আমরা সারিবদ্ধ হ‌ই

উন্নয়নের গণতন্ত্রের অব্যাহত ধারায় নিজেকে সংযুক্ত করি

একের পর এক সিল মারি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়

 

পাঁচ.

চমৎকার

সুন্দর

উৎসবমুখর পরিবেশে

‘ড‍্য‌াস’ হয়েছে আজ।  আমরা মুগ্ধ, উৎফুল্ল ও আনন্দিত।

অন্ধকার রাতে

চাঁদকে বিদীর্ণ করে

চা’য়ের দোকানেও ‘ড‍্য‌াস’ হয়েছে গতকাল। এতেও আমরা

অবাক হ‌ইনি।

এইরকমই হয়; হ‌ওয়ার‌ই কথা।

উন্নয়নের গণতন্ত্রের আশ্চর্য এই দেশে ‘ড‍্য‌াস’ হচ্ছে এখন।

আপনারা আসুন দেখুন এবং উপনীত হ‌উন-

গোলযোগ

অনিয়ম

বাধা

ভাঙচুরের ঘটনায় সিদ্ধ এইসব ‘ড‍্য‌াস’-এ আমরা সত্যিই গর্বিত কী না

দেখুন

আর

পর্যবেক্ষণ করুন

আর দেখুন

আমরাই পারি নিজ দায়িত্বে ভরে দিতে

ওইসব অপরূপ বাক্সগুলোয় আমাদের

নির্লজ্জ

আখাম্বা ‘হ‍্য‌াস’।

 

 

ছয়.

আজকের সনেট : সংক্ষিপ্ত সংবাদ

সব সড়ক খানাখন্দে ভরা

সেবা, নেই বললেই চলে

নির্মাণের আট মাসের মধ্যেই ফুটপাত দখল

বাড়িতে বাড়িতে ডাকাতি

ছিনতাইয়ের অভিযোগ

আধিপত্য বিস্তারের উত্তেজনা, ক‍্য‌াম্পাস বন্ধ

নেতা পরিচয়ে জমি দখল

স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের শিকার

গণশৌচাগার পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে

ধাক্কাধাক্কির বিবাদ, সেই ক্ষোভে খুন

গ‍্য‌াস সংকট, নগর জুড়ে দূর্ভোগ

ইয়াবাম‍্য‌ান আমিন হুদা

বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরও আট

পতনের শেষ কোথায়

 

সাত.

হঠাৎ করেই জানতে পেরেছি আজ

হঠাৎ করেই জানা- মাদক, এক ভয়ংকর সর্বনাশ

এই দেশে; কে আর অন্ধ কে আর কানা

মারো, মেরে ফ‍্য‌ালো নির্বিচারে গুলির পর গুলির বিনিময়ে

সব-ই বৈধ

কথিত বন্দুকযুদ্ধের দোহাই-এ

আমরা আছি মিছিলে মিছিলে এ-সব মৃত্যুর আগে ও পরে

আমার আছি শয়নে স্বপনে

উন্নয়নে

উন্নয়নে

 

ঋতো আহমেদ। কবি ও প্রকৌশলী। পৈতৃক বাড়ি মুর্শিদাবাদ। জন্ম ময়মনসিংহ শহরের কালিবাড়ি বাইলেন, কর্মসূত্রে ঢাকায় বসবাস। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট থেকে শিল্প প্রকৌশলে স্নাতক। বর্তমানে একটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: 'শতাব্দীর অপার প্রান্তরে', 'ভাঙনের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..