উস্কানি

বিকাশ দাস
কবিতা
Bengali
উস্কানি

শেষমেশ

তোমার আলতা মাখানো দু’পায়ের ছাপ
দিনানুদিনের অলিন্দ পেরিয়ে সিঁড়ির ধাপ।
কাজলপোড়া সাঁঝ বেলা, চোখ জুড়ানো ছন্দ খেলা ।
তোমাকে ভালোবাসি সোজাসুজি বলতে কেনো যে ঠোঁট কাঁপে
যদিও বৃষ্টি এসে ধুয়ে গেছে সমস্ত আকাশ অন্ধ মোহের প্রলাপে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
রেখেছি বক্ষ চিরে তোমাকে ‘ভালোবাসা’ দেখাবো বলে
রক্ত ঝরায় ।
শেষমেশ মূর্ছা আমার দু’চোখ এক শ্বাসে বাকি কথা বলে
নিস্তব্ধতায়।

 

যখন ধরো হাত

যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি,শরীরে আছে প্রাণ। ধ্বংস নির্মাণ এক সমান।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি,বর্ষার ডুব অবাধ বন্যা। আদুরী রূপসী অনন্যা ।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি,জীবন পূর্ণতার শূন্যবাস। আনন্দ লগ্ন অধিবাস।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি, চোখের দেখায় পর্যটন। বুকভরা খুশির দর্পণ।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি, দোলে নিঃশ্বাস গভীরে। ভালোবাসার সমীরে।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি,সবুজ সুবাসে সুফলা ধরণী। শ্বাস প্রশ্বাসে ঘরণী।
যখন তুমি ধরো হাত
বুঝেছি,স্পর্শের স্পর্শে নিশ্চুপতা। গন্ধময় স্বস্তির কবিতা।

 

আমার মৃত্যু হবে সেদিন

আমার মৃত্যু হবে সেদিন
দু’চোখ এড়িয়ে যাবে দূর্বার ডগায় শিশিরমুখ।
ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে খুঁজতে যাবে রমণসুখ।

আমার মৃত্যু হবে সেদিন
ঘরবাড়ি ভোরের সকাল ছুঁতে পাখির শিসে
ভুলে যাবে দু’হাত মেতে।
বৃষ্টি ফোঁটা তুলে মাটির মাধুর্য ধানের শীষে
ভুলে যাবে ভিজে যেতে।

আমার মৃত্যু হবে সেদিন
শহুরে টাওয়ারের ঝুলবারান্দার রেলিং ধরে
খুঁজতে যাবে গ্রাম্য আকাশ।
মাথার বালিশে ঘুমের পিলের সৌন্দর্য ভরে
ধরতে যাবে রম্য আভাস।

আমার মৃত্যু হবে সেদিন
মায়ের হাতের স্বর্গ পায়ে ঠেলে পৌঁছে দিতে
ছুটতে যাবে দূরের বৃদ্ধাশ্রমে।
বেচেবুচে বাপের রক্তঘাম ব্যক্তিত্ব কিনে নিতে
রেখে যাবে শ্বাপদ লজ্জাস্রমে।

আমার মৃত্যু হবে সেদিন
উড়ে এলে একঝাঁক প্রজাপতি পাখা মেলে জ্যোৎস্নার
অন্ধকার শরীর আর উঠবে না জেগে খুলে দিতে দুয়ার।

 

উস্কানি

চিঠি লেখো
খামখেয়ালীর কথার কথা ভাসিয়ে পাতায়
কোন নিশীথের অন্ধকারে ভালোবাসার জ্বালায়
তোমার আঙুল পুড়েছিলো।
দেওয়াল ঝোলা ক্যালেডারের কোন পাতায়
তোমার ছোঁয়ার মুখর ছিলো।

চিঠি লেখো
কোন দুর্লভ লোভে, কোন ঋতুর ফুলের পল্লব ছিঁড়ে
তোমার হাতে যত্ন মেখে ভালোবাসা উস্কানির ভিড়ে
বুকের কষ্ট ধুয়ে আরও কষ্ট পেতে চেয়েছিলো।

চিঠি লেখো
কোন দুর্দিনে তোমার বুকে শুয়ে
সুদিন দেখেছিলাম তোমায় ছুঁয়ে।

 

নজির

তুমি আকাশ হলে
আমি মেঘ হবো
বৃষ্টির আদরে মাটির উরোজ শস্য তোমায় দেবো।

তুমি বাতাস হলে
আমি ঝড় হবো
গাছ গাছালির অরণ্য ভরা সবুজ তোমায় দেবো।

তুমি নদী হলে
আমি নৌকো হবো
দু’পার আশ্লেষতোলা স্বজন সুখ তোমায় দেবো।

তুমি চাঁদ হলে
আমি রাত্রি হবো
মায়াজালের বাস্তবের আদল তুলে তোমায় দেবো।

তুমি শরীর হলে
আমি শান্তি হবো
রক্ত জল ঘাম শ্রমের বৈভব তুলে তোমায় দেবো।

তুমি মৃত্যু হলে
আমি চিতা হবো
আগুনের বিভোর শুয়ে ভালোবাসার নজির দেবো।

বিকাশ দাস। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মালদহ শহরে। পড়াশোনা করেছেন প্রথমে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে, এরপর কলকাতায়। বর্তমান নিবাস মুম্বাই। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ এখন আমি একা, জরায়ুজ, নিকুচি করেছে কবিতা, কবির শেষপাতা, তবু ভালো দুঃখ দিও, জীর্ণ ব্যথার মুখবন্দী কথা, নির্বাচিত কবিতা, ঈশ্বর...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..