পাগল
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
পাড়ার মোড়ে যেদিন প্রথম বাঁশ পড়ে সেদিন আকাশটা বড্ড নীল লাগে। কে যেন রবিন ব্লু বালতিতে গুলে চুবিয়ে দিয়েছে আকাশটাকে। বুকের ভিতর পাখির পালক বুলিয়ে দেয় কেউ। আর সাদা তুলোর মেঘগুলো, ওগুলো বুড়োবাবার সেভিং ক্রিমের ফেনা, স্বর্গে বসে তিনি দাড়ি কামান এই শরতের মাসগুলোয়। নইলে বাকি সময় গাঁজাটাজা টেনে কোথায় যে পড়ে থাকেন তা কি কেউ জানে?! আবার সেই চত্তিরের গাজনের সময় কল্কেয় দম দিয়ে তাকে ডাকতে হয়। এ মাস বুড়োবাবার নয়। মা ফি বছর বাপের বাড়ি আসেন। তালনবমী পেরোনোর পরপরই গাঁয়েগঞ্জে প্যান্ডেল আর ডেকরেটারদের মালগাড়ির মত আস্তে আস্তে মণ্ডপ তৈরী শুরু হয়। পুজো যত এগিয়ে আসে কাজ বাড়ে। ওই মহালয়ার পর তো একেবারে বডি ফেলে দেবার সময়।
তবে কিনা এ হলো গাঁ-গেরামের কথা। শহরে তো মহালয়াতেই সব বিগবাজেটের পুজোর উদ্বোধন হয়ে যায় দুদ্দাড় করে। তখনও প্যাণ্ডেলের পিছনে তিরপল আটকানোর কাজ চলে যদিও। থিমের পুজোর চল হয়েছে এখন। সে আবার কি গো?! পুজোর আবার থিম কি! ওমা, কথা দ্যাখো, জানোনা বুঝি? যাদের থিম আপ-টু-ডেট, মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা, পরিবেশ এইসব যত আধুনিক, তত পুরষ্কার জোটে। তা ওইসব ক্লাব-ফ্লাব, বারোয়াড়ির লোকজনও তো কম খাটনি করে না! তার দাম দিতে হবে না! তা এত লোকজন, আলো, রোশনাই, বাজি, ওই ক’টা দিনে এত্ত খরচ-খরচা, বালুচরী, কাঞ্জিভরম, ধাক্কাপাড় ধুতি, তসরের পাঞ্জাবী, টুনি-বাল্বের মালায় সাজানো পথঘাট, এতসব উৎসবের আঙ্গিক। সেন্টিমেন্টাল বাঙালি মেনকাকে দিয়ে গিরিরাজকে বলে ঘরের মেয়ে দুগ্গা আর তার ছেলেপুলেদের বাড়ি আসার ব্যবস্থা করলেন,ওইসব বাপের বাড়ি ইস্যু টিসু দিয়ে। তখন তো আর স্কুল-সার্ভিস কমিশনের চাকরি ছিল না আর ইউনিভার্সিটিতেও এত তন্ত্র-টন্ত্র, ব্ল্যাক-ম্যাজিকের রেওয়াজ ছিল না, তা না হলে কি আমাদের জামাই-বুড়ো আর মায়ের একটা হিল্লে হত না! তা হত বৈকি।
বঙ্গে এবার অনশনের হিড়িক চলছে, পুজোর থিমে না অনশন ঢুকে পড়ে, তাহলেই হয়ে গেল! পুজোর খরচ আদ্দেক হয়ে গেল, খাওয়া নেই দাওয়া নেই কাঠামোয় ছটফট করে মরো আর কি! আবার কারা যেন বলছে ‘জলসঙ্কট’ থিম জোরদার করতে ভক্তরা নাকি জল বয়কট করেছে। অসুর বেচারার একে সেদিন নেই, টি-শার্টের নিচে বাইশেপ ফুলিয়ে যা সব অসুরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে তাতে আর ওর প্রেস্টিজ বলে আর কিছু নেই, ভোরের দিকে দু এক বোতল মিনারেল ওয়াটার ম্যানেজ করতে গেলে না গণধোলাই খায়!
“সেদিন আর নেইরে হাবল
চিনি খাবিরে খাবল খাবল।”
আমাজনে দাবানল, শুনেছি নাকি কঙ্গো আর এ্যঙ্গলায় আগুন লেগেছে, জ্বলছে পৃথিবীর ফুসফুস, প্যান্ডেলে যদি আগুনের এফেক্ট দেয়, তাহলেই তো ফুটি ফরসা, সবসময় ঘেমেনেয়ে মরো আর কি! মা গো ভেবে দ্যাখ একবার, মর্ত্যের ভক্তরা সব জ্বালিয়ে ছেড়ে দেবে। ঋণের দায়ে কৃষকেরা আত্মহত্যা করেছে, বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, কর্মসংস্হান নেই, আদিবাসীরা গৃহহীন এতকিছু সত্ত্বেও শুধু বঙ্গে নয়, তোমার মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে সুদূর মার্কিন মুলুকে,আরও হেথা হোথা। ভক্তরা ধেই ধেই করে নাচছে, ঢালাও ফূর্তির লাইসেন্স।
উৎসব চলছে চারদিকে, চার-পাঁচদিনে কোটি কোটি টাকার বিজনেস। বুড়ো পটুয়ার চশমার ডাঁটি আজও ভাঙা, রেললাইনের দুধারের জলার দাম ঠেলে যে আদিবাসী বালকটি মায়ের পুজোর পদ্মফুল তুলে এনেছে ক’টা, তার দাম বেড়েছে সামান্যই,বারোমাস মুড়ি ভাজতো যে তার কাছেই কুসুমবীজ ছোলা-মটর-বাদাম দিয়ে চালভাজা তৈরি করাতো গেরস্তের গিন্নিবান্নিরা, সেসবের পাট কবেই চুকেছে, শপিংমলের হিমায়িত তাকে প্যাকেটজাত সব নাড়ুরা। মুড়ি-মুড়কিরও আর ক্রেজ নেই রে ভাই সব গিলে খেয়েছে চাউমিন মোমো আর নুডুলসে। সেতো যুগের চাহিদা, বদলাবে না? বদল হচ্ছে বলেই না সভ্যতা এগোচ্ছে। আজব তো! আদ্যিকালের ধ্যানধারণা নিয়ে কচকচ কোরো না তো বাপু। বদলে আর কোথায় যাবে, বৃত্ত তো সেই গোলই, তেকোনা বা লম্বা তো হবে না বাপ। ঘুরেফিরে সেই শুরুতেই যে আসতে হবে সকলকে। ঠাকুরপুজো কোথা থেকে এলো বলো দিকিনি! মানুষ আগে বনে-বাদাড়ে থাকতো ঘরবাড়ি ছিলনা, রোদ-বিষ্টি মাথায় করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতো। প্রকৃতিকে প্রেডিক্ট করা যায় না বলে মানুষ ভয় পেতে আরম্ভ করলো, শুরু হলো প্রকৃতিপুজো, প্যাগানিজম। তারপর যে কত কি কল্পনা করলে! কতরকম ভাবনা। ঠাকুরদেবতা সব নিজের মনেই গড়লে, পুঁথিপত্তর লিখে জামাকাপড় পড়ে মানুষ সভ্য হলো। বাড়ি-ঘর হলো। মন্দির-মসজিদ গীর্জা হলো। অরণ্যের গভীর গোপন গহ্বরে স্যাঁতসেতে পাথরের গায়ে যে কল্পনার মূর্তি খোদাই করেছিল সেই নিভৃত অন্তরাল থেকে সমস্ত শুদ্ধাভক্তি সমেত সে চলে এল মন্দিরে,গেরস্তের ঘরে। তারপর সে হলো সবার, বারোয়ারীর, পাঁচজনের। ভিন্ন-ভিন্ন মানুষ, ধর্মমত গড়ে উঠলো আলাদা আলাদা। পুজো-পাঠ, যাগ-যজ্ঞ শুরু হলো। যত দিন যায় তাতে নিয়মের নিগড়ে প্রান কাঁদে, ভক্তি কই? আয়োজনের বহর শুধু। বিশ্বাস কই?
ন্যালাখ্যাপা এলেবেলে লোকের ভাবনা বই তো নয় কিন্তু ভেবে বলো দেখি এত ঢাকঢোল বাজিয়ে, হইহই করে উৎসব হয়, পুজো করা যায়? তবে যে সব দুগ্গাপুজো বলে? পুজোর সাথে নির্জনতার যে নিবিড় নৈকট্য তাতে পুজো হারিয়ে গেছে… মিলিয়ে গেছে…আমরা উৎসবের আনন্দনাড়ু হাতে ধেইধেই নাচছি।
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
১৮ মার্চ ২০১৯ মধ্যরাত! চারদিক অন্ধকারে ঢেকে আছে শুধু বাড়ির চারিপাশে বিদ্যুতের বাল্বগুলো জ্বলছে তাদের…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..
পাঠকদের প্রায় জনেই হয়ত জানেন, সমকাম কি ? সমকামী কারা ? সমকামীর প্রকারভেদ, কেন…..