ঋতো আহমেদের সাতটি কবিতা

ঋতো আহমেদ
কবিতা
Bengali
ঋতো আহমেদের সাতটি কবিতা

অগোছালো

কী অগোছালো
তুমি
না তোমার চোখ কপালের লাল টিপ জুলফি
না তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া সেইসব নিহিত নক্ষত্র অপার অন্ধকার

কী অগোছালো
জীবন
না তোমার শরীর বেয়ে বেড়ে ওঠা গহিন আত্মজল যার
গভীরতায় দাঁড়িয়েছে আজ এই মেট্রোপলিটন এক‌একটি মৌন বিকেল মায়া

কী অগোছালো আমাকে বলো

আমিও পাঠ করি নিবিড়তায় পৃথিবীতে অন্তর্জালে ধারায়

 

বিগ্রহ

বুকের ছাতির ঠিক নিচেই কোথাও যুদ্ধ ঘটে যাচ্ছে আজ

হয়তোবা ফেরার পথে নাম ধরে ডেকেছিল কেউ
তারপর থেকে
যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছে বুকের ভেতরে আবার

বিগ্রহে বিগ্রহে ব্যাথার বিধুর ছাপে
দেয়ালে ও পিঠে
মহাকাল ব্যাপী হেলে আছে যেই রাত

কেউ কি সত্যিই ডেকেছিল তাকে

বুকের ছাতির ঠিক নিচেই

কবেকার বৃষ্টির জলে কবেকার আকস্মিক ভুলে
সহস্র বছরের পর ফিরে এলো
কবেকার অনুনাদ কবিতার স্নান ফিরে এলো দেয়ালে আমার

বুকের ছাতির ঠিক নিচে কোথাও শুয়ে থাকা পথ ফিরে এলে
কেউ বুঝি নাম ধরে ডাকে

 

ঘা

চোখের ভেতরে অতলান্তের ঘা শুকিয়ে গেলে কেমন
দেখতে হয় যদি জানতে চাও
আমাকে দেখো

এইটুকু লিখা চেয়ে আছে শুষ্ক মৌসুমের ম্লান নদের মতো আমার দেয়ালে

কেউ ভাবলো ভর দুপুরে কাঠ-ফাটা রোদের মধ্যে
সোনালী আলোয়
কারো হয়তো চোখ ধাঁধিয়ে গেছে
কেউ বললো
জীবনের তীব্র তাপে ও তেষ্ঠায় ভেতরকার প্রবল প্রবহ উবে গেছে প্রাণে

আর আমি দেখছি পরিশেষ ফেলে এমন এই শব এখন আমার খেয়ালে

আমি কি বিশ্বাসের তোড়ে ভাসিয়ে দেবো পাহাড়
গড়িয়ে দেবো দুঃখ
রাতের উঠোনে

 

বিশ্বাস

গাছ মরে গেলে সেখানে রাতের জন্ম হয়
কেওড়া জলে ধোয়া গহীন ও কালো জঙ্গি পতাকার মতো
রাত
বাতাসে ওড়ে
গাছ মরে গেলে বেঁচে থাকা ভ্রষ্ট সময় ধুঁকে ধুঁকে পচে
আগুনে আগুন লেগে অঙ্গার হ’য়ে ঘোরে
পৃথিবীতে বিষুবরেখায় ও
মানুষের বনে

গাছ মরে গেলে সেখানে পাপ এসে মেশে কালের মোহনায়

অত‌এব, এসো, সারিবদ্ধ হ‌ও, হাত তোলো
ঈশ্বর এখানে আছেন

 

পাহাড়

হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি পাহাড়ের দিকে

পাহাড় মানে আগুন-পাহাড়
এবং তার উদ্ধত ত্রিকোণমিতি নক্ষত্রের মতো জ্বলছে
অন্তরীক্ষের ওপারে
যেখানে প্রবাহিত হয় দুগ্ধ-নহর

আর শান-বাঁধানো ঘাট যেখান থেকে তুমি ও তোমরা চেয়ে আছো
টানা টানা চোখে
আর হাসছো আমার কীর্তিকলাপ দেখে

আমি যে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমার স্মার্টফোন ক‌ই
আমি যে আগুনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমার ফেসবুক ক‌ই

শুধু কি হাত ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে কোথাও পৌঁছানো যায় আজকাল

কিন্তু তুমি হয়তো জানো না যে বহমান মেঘের আকার ধারণ করেছে
পৃথিবীর সমূহ মায়ারা
আর একটুখানি কষ্ট ঘন হলেই ঝরে পড়বে তুমি ও তোমার ঘাট
বিদ্যুৎ হ’য়ে
বজ্র-বিদ‍্যুৎ হ’য়ে স্বপ্নপাহাড়ের চূড়ায়

যেখানে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেই আগুন আকাশকে ছুঁতে পায় এখন‌ও

 

সংসার

লাল ও নীলের মধ্যে এক বিন্দু হরিৎ রাখো
তারপর অস্ফুটস্বরে বলো ভালোবাসি
কেননা
তোমার জন্যই গড়ছি আমার চারদেয়ালের ফাঁসি

 

বাবার অসুখ

মনে আছে গত বছর যখন আমি খুব
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম
তখন অনেক রাত
আমার আট বছরের ছোট্ট ছেলেটা ঘুমিয়ে ছিল
কিচ্ছু টের পায় নি
পরদিন স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে আমাকে দেখতে এসে
বললো “আম্মু তাঁর কী হয়েছে? সে কি মারা যাবে?”

বাড়ি থেকে খবর এসছে
বাবার খুব অসুখ
আজ কয়েকদিন যাবৎ জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছেন
হাঁটুর ব্যাথায় উঠে দাঁড়াতে পারছেন না
খাওয়াও বন্ধ রেখেছেন
আমি ফোন দিচ্ছি মা-কে
জিজ্ঞেস করবো “মা, বাবার কী হয়েছে?..?”
একবার
দু’বার
তিন বার..

মা ফোন ধরছেন না

শুধু কে একজন মহিলা বারবার দুঃখিত হচ্ছেন
বলছেন এ মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না..

ঋতো আহমেদ। কবি ও প্রকৌশলী। পৈতৃক বাড়ি মুর্শিদাবাদ। জন্ম ময়মনসিংহ শহরের কালিবাড়ি বাইলেন, কর্মসূত্রে ঢাকায় বসবাস। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট থেকে শিল্প প্রকৌশলে স্নাতক। বর্তমানে একটি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: 'শতাব্দীর অপার প্রান্তরে', 'ভাঙনের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..