ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
ধিরেন মাঝি এককথার লোক। জান গেলেও কথার নড়চড় করেন না। ওদিকে গাঁয়ে চলছে হুলস্থুল অস্থিরতা। গাঁয়ের প্রায় বিঘা বিশেক বসতবাড়ির জায়গাজমি, কয়েকগুন চড়া দামে উত্তরপাড়ার হাফিজুদ্দিন খরিদ করে, নিজের দখলে নিয়েছেন। হাফিজউদ্দিনের মেয়ে, বিদেশের বাড়িতে লটারিতে এক মিলিয়ন ডলার পেয়ে তার মাথায় ভূত ভর করেছে। মেয়েমানুষ, স্বভাবতই বিচার-বিবেচনা কম। তা-না হলে এই গণ্ডগাঁয়ে, কেউ পাঠাগারের কথা ভাবনায় আনে! ধিরেন মাঝির বসতভিটের দাগে, পুরো জায়গাজমির একক স্বত্বাধিকারী এখন সেই নির্বোধ মেয়ে। একমাত্র ধিরেন মাঝির ভিটেটা, বলাবাহুল্য হাফিজুদ্দিনের গলার কাটা হয়ে আটকে আছে। তাঁকে বিভিন্ন প্রলোভনেও টলানো যায় নাই।
ধিরেন মাঝির বসতভিটে হাল সময়ের নয়। সাতপুরুষের ঘামের গন্ধমাখা এই ভিটেখানা। ভিটের গা ঘেঁষা ইছামতি নদী, নদীর জল- সাতপুরুষের হাসিকান্নার স্বয়ং দ্রষ্টা।
বহুকাল আগের কথা। প্রকাণ্ড ইছামতীর বুকের ওপর চড়া জাগল। দূরদূরান্ত থেকে দলেদলে লোক এসে বসত গড়ল। ধিরেন মাঝির পূর্বপুরুষ সে-দলের লোক। সাথের লোকেরা চরের পলিমাটিতে চাষাবাদ শুরু করলেও ধিরেন মাঝির পূর্বপুরুষ গেল ভিন্নপথে। তারা নদীতে নাও নামাল, খেয়া পারাপারের কাজ বেছে নিল। সেই থেকেই নামের শেষে- মাঝি’ শব্দটা জুড়ে বসল। ধিরেন মাঝির সাতপুরুষের জাত ব্যবসা-নাও পারাপার। এতকাল পরে নদীচর ছেড়েছুড়ে ভিনগাঁয়ে গিয়ে বসতের চিন্তা করাও মহাপাপ।
হাফিজুদ্দিনের মেয়ে শহুরে, পড়াশুনা জানা। কৃষক বাবা কষ্টেসৃষ্টে মেয়েকে শিক্ষিত করেন। মেয়ে একসময় বিদেশে পাড়ি দেয়। বিদেশে পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে দোকানে কাজ করে। এক খরিদদার তার হাতে একটা লটারির টিকির ধরিয়ে দিয়ে যান। কিছুদিন পড়ে সেই লটারির নামে এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের জিত আসে। গাঁয়ে এই উটকো-সংকটের শুরুটা হয় সেই লটারি থেকে।
হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে নিচু লোকালয় জলের তলে তলিয়ে গেলে যেমন হয়, গাঁয়ের শান্তশিষ্ট মানুষগুলোর বহুকালের জীবনযাপনের ধারায় তেমন একটা টালমাটাল দশা চলে আসে। অগাধ অর্থের টোপে পড়ে- বাপদাদার ভিটে ছেড়ে ভিন্গাঁয়ে গিয়ে ঘর বাঁধে। কুড়েঘর ছেড়ে ইটবালুর ঘরে কর্মহীন জীবনে চরম অস্থিরতায় ডুবে থাকে। হাতে টাকা আছে কিন্তু কাজকর্ম নেই, কোনোরকম কর্ম ব্যস্ততা নেই। অসার জীবনযাপন !
হাফিজুদ্দিনের মনেও যে স্থিরতা আছে তা কিন্তু নয়। তার এখন দিন-রাত কাটে চরম উৎকণ্ঠায়। মেয়ে জেদ ধরে বসে আছে-দেশবিখ্যাত পাঠাগার তার গাঁয়ের পরে সে দেখতে চায়। কিন্তু এমন ঘন বসতি তলে এক দাগে জায়গা জোটানো চাট্টিখানি কথা নয়। ‘টাকায় সব হয়’ এমন আপ্তবাক্য আদতে অন্তঃসার শূন্য। হাফিজুদ্দিন তা কড়ায়গণ্ডায় টের পাচ্ছে। সোনাদানায় মোড়ানো টাকাকড়িতেও ধিরেন মাঝিকে সম্মত করা যায় নাই। তাঁর কাঠা চারেকের ভিটেখানা, তাও পড়ল হাফিজুদ্দিনের কেনা-তল্লাটের মধ্যিখানে।
ধিরেন মাঝি আধপাগলা আশাবাদি মানুষ। একসময়ের প্রকাণ্ড ইছামতী এখন শুকিয়ে মরাখাল। বর্ষাকালে যার পরে হাঁটুজল থাকে। উন্নাকালে ছেলেরা নদীর খড়খড়ে বুকে ফুটবল খেলে বেড়ায়। নদীর ওপর গুইসাপের পিঠের মতো শহুরে পুল, দখল করেছে বাঁশের সাকোঁর স্থান, সেও বহুকাল হয়ে এলো। তারপরও ধিরেন মাঝি প্রতিবছর উন্নাকালে বাপ-দাদার শালতিটাকে গাবের রসে মেখেজুকে রোদে পোড়ায়- খেয়া পারাপারের যোগ্য করে। নদীর দু’পাড়ের গ্রামগুলো নদী গিলে পুরোটাই প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েছে। কিন্তু আজও ধিরেন মাঝি স্বপ্ন বেঁধে রেখেছে, একদিন নদী ভরে উঠবে ডুবুডুবু জলে। খেয়াঘাটে জমায়েত হবে ইছামতীর এপার-ওপারের লোক। ধিরেনমাঝি’ নাম ধরে উচ্চস্বরে হাঁক আসবে, বৈঠা হাতে সে ছুটে যাবে নদীরপাড়ে।
ধিরেন মাঝির বাড়িটা এককালে নদীর মধ্যচরে ছিল। এখন নদী নেই, তো চর থাকার জো কোথায় ! পুরোটাই জনপদ। তার প্রতিবেশিরা চড়াদামে ভিটেমাটির স্বত্বত্যাগ করে ভিনগাঁয়ে সরে পড়েছে। তাদের ঘরদোরও সরে গেছে। মধ্যিখানে বয়োবৃদ্ধের ফাঁকামাড়িতে নড়বড়ে শেষদন্তটার মতো বেখাপ্পা হয়ে তাঁর দু’চালা বাঁশেরঠেকা দেওয়া ঘরখানা রয়ে গেছে। বাড়ির উঠান থেকে নদীরপাড় ঘেঁষা উঁচু পাহাড়ের মতো রাস্তাটা স্পষ্ট চোখে পড়ে। রাস্তাপাড় ভেঙ্গে আরও নিচে, জলকাদায় মাখামাখি করে ইছামতীনদী’ নামে একখণ্ড সরু খাল বহু কষ্টেসৃষ্টে টিকে রয়েছে। সকাল বিকাল ধিরেন মাঝি ছুটে যায় মরাখালে জোয়ারের খোঁজে। মাঝেমধ্যে বাদলা দিনে রাস্তার ঢলের পানি নদীর তলে যেয়ে যেই মিশে, ধিরেন মাঝি খুশিতে পাগলের মতো ছুটে, সারাগাঁয়ে সে খবর ছড়িয়ে বেড়ায়। নদীতে জোয়ার এসেছে। তাঁর পাগলামিতে গ্রামসুদ্ধ লোক হাসাহাসি করে।
হাফিজুদ্দিনের তর সয় না। মেয়ে মাস দু’য়ের মধ্যে দেশে ফিরবে। বাদবাকি আয়োজনও প্রায় শেষের পথে। শহর থেকে প্রসিদ্ধ ডিজাইনার আসে। সকাল-বিকাল গজফিতায় জায়গা-জিরাত মাপঝোক করে। ধিরেন মাঝি, লোকমুখে শুনেছে- এখানে মস্ত বড়ো দালানঘর উঠবে; মোটা মোটা বই, দেওয়ালের থরে থরে ঠাঁসা থাকবে। সারাদেশের লোক পড়াশুনা করতে ভিড় জমাবে এ তল্লাটে। কিন্তু তাঁর মাথায় একটা সহজ প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরেফিরে, ‘যে গাঁয়ের লোকেরা আস্ত-নদীটাকে গিলে সাবার করল, সে গাঁয়ে এসে মানুষ মোটা বই পড়ে আদতে শিখবে কী!’ প্রশ্নটা সে অনেককে করে বেড়ায় কিন্তু যুতমতো উত্তর খুঁজে পায় না।
অবশেষে উপায়ন্তর না পেয়ে হাফিজুদ্দিনের কাছে সে তাঁর আর্জি নিয়ে যায়। একসময় তারা দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলো, খেয়াঘাটে বসে কতো গল্প করেছে। নদীর কথা, গাঁয়ের কথা। সেসব সময়ের অধিকার নিয়ে একসন্ধ্যায় হাফিজুদ্দিনের বাড়ি সে হাজির হয়- নদীটাকে যদি বাঁচানো যায়, যদি জোয়ার ফিরিয়ে আনা যায়। তারতো এখন মেলা টাকা, টাকায় তো শুনেছে নাকি সবকিছুই হয়। হাফিজুদ্দিন তাঁর কথা শুনে উচ্চস্বরে হাসে, শুধু হাফিজুদ্দিন না, গাঁয়েরলোকও তাঁকে পাগল বলেই জ্ঞান করে।
ধিরনে মাঝির এতকিছুর পরও ক্লান্তি আসে না। সে এলাকার মন্ত্রী সাহেবের কাছে ছুটে যায়। মাঝেমধ্যে মন্ত্রী সাহেব ছুটিছাটায় এলাকায় আসেন। মনমর্জি ভালো থাকলে সাধারণ মানুষেরে সাক্ষাত দেন। তবে এও সে শুনেছে- ইদানিং নাকি মন্ত্রী সাহেবের মনমেজাজ কড়া থাকে। এলাকায় এসে দলের লোকদের সাথে কীসব মিটিংসিটিং করেন তারপর থানার অফিসারদের ডেকে এনে ধমকিধামকি দিয়ে শহরে চলে যান। তবে লোকের সবকথা শুনতে নেই। ধিরেন মাঝি শোনাকথায় কান দেওয়ার লোক নন। তিনি স্বশরীরে মন্ত্রী সাহেবের সাথে সাক্ষাত করতে মনস্থির করেন।
মন্ত্রী সাহেবের বাবাও ছিলেন মন্ত্রী তবে তিনি ছিলেন অতি ঠাণ্ডাগোছের মানুষ। একবার খেয়াঘাটে এসে ধিরেন মাঝিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সে কথা আজও মনে পড়লে ধিরেন মাঝির বুকটা ফুলে ফেঁপে একসার হয়। বড়ো ভালো লোক ছিলেন। যদিও এমন সব ঘটনা ইলেকশনের কিছুকাল পূর্বে অহরহ ঘটত। তারপরও ধিরেন মাঝির জীবনে সে ঘটনা সেরা হয়ে রয়ে গেছে। তবে ছেলে মন্ত্রী ইলেকশনের ধার ধারে না। তার দলের লোকেরা সেসব ঠিকঠাক করে দেয়। সেবার খুব শখ করে ধিরেন মাঝি ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়। মন্ত্রীর দলের লোক তাঁকে কেন্দ্রের কাছে যেতে লাঠি হাতে তেড়ে আসে। এরপর অবশ্য তাঁর আর ভোট দেওয়ার শখ জাগে নাই।
ধিরেন মাঝি যখন মন্ত্রীবাড়ি পৌঁছে তখন মধ্যদুপুর। ভাদ্র মাস। চটচটে, ভ্যাপসা গরম। আকাশে ধূসর মেঘ জমেছে। ধিরেন মাঝি মাথার উপর আকাশটাকে তাকিয়ে দেখেন। না, বাদল নামার লক্ষণ নেই। তিনি বহুপথ হেঁটে এসেছেন, শরীর থেকে টপাটপ ঘাম ঝরছে। কাঁধের গামছাটা মন্ত্রীর বাইর বাড়ির চাপকলে ভিজিয়ে গা মুছে নেন। বাইর বাড়ির বৈঠকখানায় বহুলোক ঠাঁসাঠাসি করে বসে আছে। বেশিরভাগ চেংরা- বয়সী। ধিরেন মাঝি মন্ত্রীর অপেক্ষায় বাড়ির শেষ কোনার আম গাছটার তলায় যেয়ে বসেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, মন্ত্রীসাহেবের দেখা মেলে না। সে বারকয়েক মন্ত্রীর তালাশ করেছে, প্রতিবার শুনেছে সে ব্যস্ত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। মন্ত্রী সাহেবের ব্যস্ততা কমে না। একসময়ে মন্ত্রী সাহেবের গাড়িটা ধিরেন মাঝির সামনে দিয়ে ধুলো উড়িয়ে শহরে যাওয়ার পথে অদৃশ্য হয়ে যায়।
পাঠাগার-ডিজাইনার গত প্রায় সপ্তাহখানেক হয়, গাঁয়েই থাকছেন। সাদা চামড়ার চীনালোক; বেঁটেখাটো শরীর, সংকীর্ণ চোখজোড়ার মধ্যিখানে পাতিহাঁসের ঠোঁটের মতো চ্যাপ্টা একটা নাক। সাদা একখানা টুপি পরে, সঙ্গীদের নিয়ে হাফিজুদ্দিনের নয়াতল্লাটে ঘুরঘুর করেন। ধিরেন মাঝির বুকটা কেঁপে ওঠে। শেষমেশ বুঝি শহুরে দালানটা এমন অজ পাড়াগাঁয়ে বাসা বাঁধবেই। তবে তিনি তার ভিটে ছাড়বেন না। মন্ত্রী মিনিস্টার অনুরোধ করলেও না।
ধিরেন মাঝি, প্রায়ই দু’চালা ঘরের সাথে লাগোয়া বাঁশেরমাচায় তুলে রাখা সেই দাদার কালের সবুজরঙা টিনের জংধরা ট্রাঙ্কটা, রাতদুপুরে কুপিবাতির আলোতে আলগোছে খুলে বসেন। বড়দাদা কিংবা তারও আগের আমলের নথিপত্র যত্ন করে এর ভেতরে তোলা আছে। কাগজ গুনেগুনে দেখেন, দলিলপত্র ঠিক আছে। নিজের অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও এসব নথিপত্রের ব্যাপারে সে তার বাপের মতো সতর্ক। বাপের কাছ থেকে দলিলপত্র দেখার জ্ঞান তাঁর শেখা আছে। অক্ষরগুলোর গায়ে যত্নের হাত বুলান, অক্ষরের সংখ্যা গুনেন। মোট অক্ষর তার গোনা আছে এবং স্মরণেও আছে। সে শক্ত করে নথিপত্র বুকের কাছে ধরে বাকিরাত বসে থাকে। নিজের ভিটেটা সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না, শালতিটাও না।
সেদিন উত্তরপাড়ার রহিমগাজীর রেডিও-সংবাদ সে নিজকানে শুনে এসেছে। তবে আফসোস! সংবাদের শুরুতে সে ওখানে ছিল না। তবে শেষমেশ যেটুকু শোনার সে শুনেছে এবং বাকিটা যারা ওখানে উপস্থিত ছিল, সবিস্তারে বলাকওয়া করছিল, সেসব কথা তাঁর খুব মনে ধরেছে। সরকার নাকি দেশের সব নদীতে বিদেশি দৈত্যাকার কলের মেশিন নামাবে। সেই মেশিন চারপাশের বসতবাড়ি ভেঙ্গেচুরে খুঁড়েপেড়ে আগের নদীগুলোকে উদ্ধার করবে। নদীর উপরের অজগরের মতো পুলগুলো জোয়ারের স্রোতে থাকবার কথা নয়। তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর খোঁজ করবে। শালতিটাকে সেদিন থেকে সে গাব-রসের প্রলেপ দিয়ে রোদের পোড় মাখছে। খুশিতে তাঁর চোখে জল আসে। এরমধ্যে হাফিজুদ্দিনের মেয়ের মাথায় ভূত চাপল। তাঁর প্রতিবেশিরা ভিনগাঁয়ে গেল। সবকিছু কেমন উল্টাপাল্টা হয়ে গেল!
সাদা টুপির চীনালোক একদিন ধিরেন মাঝির বাড়ির পরে এলো। ধিরেন মাঝির বাড়ির চারপাশটা প্রতিবেশি-শূন্য হওয়ায়, এখন খোলামেলা বহুদূর দেখা যায়। ভোরসকালে ঘোর অন্ধকার কাটতে শুরু করলে, সে বসে থাকে বাড়ির পূবকোণায়। সূর্যটা তার আস্তশরীরটাকে আলসেমী ভঙ্গিতে টেনেটুনে তুলে নিয়ে পূবের আকাশে জেগে উঠে- বড়ো চিত্তাকর্ষক সে দৃশ্য। ধিরেন মাঝি একদৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে থাকে। কখন এসে চীনালোক তাঁর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে, কে জানে। পেছন ঘুরতে তাঁর হুঁশ ফেরে। এক ঝটকায় সে দূরে সরে যায়। চীনালোক, দুর্বোধ্য ভাষায় এবং হাতের ইশারায় তাঁকে আশ্বস্ত করে। মুখের হাসি অবশ্য ধিরেন মাঝি পড়তে পারে। পৃথিবীর সকল জাতের হাসির ভাষা বোধহয় একই হয়।
হাফিজুদ্দিনের মেয়ে দেশে ফিরে আসে। গাঁয়েরলোক ভেঙ্গে পড়ে তার দেখা পেতে। শুধু ধিরেন মাঝি সারাদিন একলা ঘরে চুপচাপ বসে থাকে। তবে মেয়েটার ওপর তাঁর কোন রাগ-ক্ষোভ নাই। রাগ যা হয় তা সেই লটারির আর সেদেশের সরকারের উপর। এত টাকা যাদের কাছে তারা কেনো তাঁর নদীটাকে ফিরিয়ে দিতে পারছে না! আবার মেয়েটাকে বিনা পরিশ্রমে এত টাকা দিল! এসবের কিছুই ধিরেন মাঝির মাথায় ঢোকে না।
মেয়েটাকে সে স্কুলে পড়াকালীন সময়ে কতো দেখেছে। বড়ো লক্ষ্মীমেয়ে ছিল। সকাল- দুপুর স্কুলে যাওয়া-আসার পারাপার সে-ই করত। এক কানাকড়িও কখনো তার কাছ থেকে ধিরেন মাঝি নেয়নি। স্কুলের মাস্টাররা যখন খেয়াঘাটে আসত, নানারকম স্কুলের গল্পগুজব করত। ধিরেন মাঝি মন দিয়ে সেসব শুনত। তখন সে এই মেয়েটার নামডাক তাদের মুখে খুব শুনেছে। বিরাট পড়াশুনা জানা মেয়ে। এস্কুলে নাকি তাকে টপকিয়ে যাওয়ার সাধ্যি কারো নাই। ধিরেন মাঝি নিজে, দরিদ্রতায় পড়াশুনা করতে পারে নাই কিন্তু যারা স্কুলে পড়ত তাদের সে বিনেপয়সায় খেয়া পারাপার করে দিত।
দু’দিন পর হাফিজুদ্দিনের মেয়ে ধিরেন মাঝির বাড়ি আসে। নিজ-বাবার মতো করে তাঁকে জড়িয়ে ধরে, বুকে টেনে নেয়। ধিরেন মাঝি অবুঝ বালকের মতো ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে, কিছু বুঝে উঠতে পারে না। ভিটেটা বুঝি বাঁচানো গেল না ! আতঙ্কে তাঁর পাঁজরের গহীনে শীতলস্রোত বয়ে যায়। চায়না-বেটা ধিরেনের মনের কথা বোধহয় পড়তে পারে। ধীরেনকে পিঠ চাপরে নির্ভয় দেয়। হাফিজুদ্দিনের মেয়ের সাথে ইংরেজ ভাষায় কী-যেন বলে। ধিরেন মাঝি কিছুই উদ্ধার করতে পারে না।
বহুকাল পরে- দেশজুড়ে হাফিজুদ্দিনের মেয়ের পাঠাগারের নাম ছড়িয়ে পড়ে। নানানপ্রান্ত থেকে বহুলোক ছুটে আসে-অনবদ্য পাঠাগারের সৌন্দর্য একনজর দেখতে। দেশি- বিদেশি হাজারো বইয়ের দুর্লভ ভাণ্ডারে বই পড়ুয়াদের ভিড় জমে ওঠে।
ইছামতী নদীর চিহ্ন পুরোদস্তুর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দালানকোঠার লোকালয়ের ভিড়ে ধিরেন মাঝির সেকেলের-বাড়িটা, পাঠাগারের মধ্যিখানে নদীবিধৌত এঅঞ্চলের বিগত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..