যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
আমিই সব
কান পেতে শুনছে সে তোমাদের আলাপ-সংলাপ
দলবদ্ধ আলোচনার মধ্যমণি-সে নয়! অন্য কেউ
তোমাদের অর্জন-প্রাপ্তিতে বাড়ছে বুকের ধুকপুক,
অ্যাড্রেনালিন উচ্চে
থামছে না, মানছে না, কেন তুমি-তারা
কেন নয় সে?
এভাবেই যাচ্ছে বিরক্তিকর যতসব-দিনকাল
অচেনা আক্ষেপ আত্মোপলব্ধিকে ছুঁড়ে ফেলে ডাস্টবিনে।
কেন নয়?
তার কলম, যা পোক্ত তরবারি হুঙ্কার
সেরা কাব্য, অনুশীলন, সৃষ্টি-কেবল তার-ই
সবটাই পেতে হবে-মনোযোগ, ভাগ, উপহার
জাদুকরীতে সমস্ত খেলা জিতে যাওয়ার অভিপ্রায়ে
একটি ঘুষি কিংবা একটি প্রচার।
এভাবেই চলছে দিনকাল
আর এভাবেই মেডুসার দৃষ্টিতে হারিয়ে ফেলছি আমরা-
একটি জীবনের রূপান্তরমূলক ভিন্নতা।
পথ পেরোতে ভয়
সবুজে ঘেরা উঠোন, তার উপর গা ঘেঁষে পড়ে আছে-
সরু ছোট দূর্বা ঘাস
ওপারে-যেখানে দিগন্ত মাথা লুকায় জমিনের বুকে,
একটি স্তম্ভ-আমার অপেক্ষায়।
পা বাড়াতেই লাল পিঁপড়ার দলের মতো
বৃষ্টি শুরু হলো
লম্বা, নলাকার কেঁচোদের দল নিরাপদ দূরত্বে
গড়াগড়ি খেয়ে ছুটতে লাগলো।
রোদের তাপ ধরে রাখা গাঢ় বাদামী বর্ণ-জলে ভিজছে
তাই এখন কেঁচোর দল বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছে।
যেতে হবে আমাকে ওপারে- জলে ভিজে
শীতল রক্তবিশিষ্ট কেঁচোদের মতো।
অথচ মসৃণ সবুজ দূর্বা ঘাসেরা শেকলে বেঁধে দিচ্ছে
আমার পা’য়ের পাতা, আঙ্গুলগুলো-খুব সাবধানে।
পা ফেলছি। পা কাঁপছে
বুকের বাম পাশে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, নেচে যাচ্ছে বুকের লাব-ডাব প্রচন্ড গতিবেগে।
এখন, বৃষ্টির সাথে আমার শরীরে ঘাম ঝরছে।
মেজাজে মেজাজ
গতকাল তোমাকে হারিয়েছি
তীব্র মেজাজে মনে হয়েছিল, চিরশত্রু-তোমাকেই
কিছু মধুর শব্দ ছিল যা আমাকে পিছনে ফেলে যেতে হয়েছিল
এই যেমন-প্রেম, সৌহার্দ্য, প্রতিশ্রুতি এইসব।
বাগানের প্রিয় ফুলগুলো কাল কাঁটাযুক্ত ছিল
সবচেয়ে নিরাপদ ঘর, ঘরের দেয়াল, বিছানার সাদা চাদর
সব অনিরাপদ মনে হয়েছিল।
দেয়ালে টানানো স্টারি নাইট- চোখে পড়লো
রঙ, আলো এবং ব্রাশস্ট্রোকগুলো তীব্র ঝাঁঝালো ছিল
রাতের আকাশ, যেখানে আল্পস পর্বতমালা এবং
জলপাই গাছের মাঝখানে ছোট শহর-সব অবান্তর।
উজ্জ্বল হলুদ এবং সাদা বৃত্তাকার তারা, অর্ধচন্দ্রাকার
চাঁদের চারপাশে তীব্র নীলের ঝলকানি-
অপ্রতুল মনে হচ্ছিল।
আজ গির্জার চূড়া আকাশে পৌঁছাতে দেখে,
নিজেকে মেলানোর চেষ্টা করছি।
শিল্পীর সাথে ধর্মীয় শৈশবকে স্মরণ করছি।
নীলরঙ, ঘূর্ণায়মান ব্রাশস্ট্রোক- এ যেন আমার-ই
মানসিক অবস্থার নির্দশন।
আজ তোমাকেও আপন মনে হচ্ছে-খুব আপন
নিরাপদ কাছের কেউ।
শূন্য কোঠায় কে তুমি
আজকাল এক নতুন সঙ্কট শুরু হয়েছে।
ঘুমাতে গেলেই মাকু আকৃতির আরশোলাগুলো দলবদ্ধ হয়ে
হাঁটতে থাকে আমার বিছানায়।
তাকাতেই, ওদের চোষ্য মুখাংশে টুপটুপ করে লালা ঝরতে থাকে
যেন কার্বনিফেরাস যুগ থেকেই ওরা ক্ষুধার্ত রয়েছে।
তারপর প্রচণ্ড তাপে আমার গা গুলিয়ে উঠে।
সেই প্রণয়ের চোখ, আভা ছড়িয়েছিল যা একদিন লাল-হলুদে অ্যাস্টারের মতো,
আজ রক্তপিঙ্গল বর্ণে ভীষণ ভয় জাগায় মনে।
মনে হয়, উলঙ্গ-মদ্যপ, মদ-মাংসে ক্ষুধার রাজ্যে কেউ
চুপিচুপি আমার অপেক্ষায়।
মনে হয়, ও চোখ বহুবার আমায় খুন করেছে।
মাঝে মাঝে চলতি পথে নিজের ছায়া দেখেও চমকে উঠি।
ভাবি, একি আমার প্রতিচ্ছবি নাকি কেউ পিছু নিচ্ছে –
চুপিচুপি!
এক সময় এসপ্রেসো’র সাথে লরেন ডেগলের ‘ইউ সে’
গানের সুর-বেশ লাগতো
সেই
আমি সব ভুলে যাই
আমাকে সব মনে রাখতে জোর করো না
আমি সব ভুলে যাই।
এইখানে ক্ষণে-ক্ষণে মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হয়-না চাইলেও
বিভ্রান্তি নিয়ে স্নায়ুকোষের প্রাণবন্ত ভাবনাগুলো পাখির ডানায় উড়ে যায়
আবার থমকে যায় হুটহাট।
আমার মনের স্বচ্ছতা আজ ম্লান হয়ে গেছে
এইখানে স্মৃতিগুলো দূরে সরে যায়-প্রতিদিন।
তোমাদের বুঝতে হবে, আমি এখন শুকিয়ে যাওয়া
লাল গোলাপের মত কেউ
এবং তোমাদের ধারণা থেকে বিচ্ছিন্ন এক ছায়ামূর্তি।
অন্ধকারের মতো আমার জীবন এখন বিভ্রান্ত, অস্পষ্ট
তোমাদের প্রেমময় মুখ, প্রিয় নামগুলো-অপরিচিত
তোমাদের মনে রাখতে হবে, এ আমার বেছে নেওয়া
জীবন নয়।
তোমরা আমাকে সবকিছু মনে রাখতে বলো না
সেদিন কে কাঁদিয়ে ছিল, কে কেঁদেছিল?
তুমি না আমি- তাও মনে নেই
ভুলে যাওয়া কখনো কখনো মন্দ কিছু নয়।
আমাকে সব মনে রাখতে বলো না
আমি সব ভুলে যাই।
আমার এখন বিশ্রাম ও কপালে একটি চুমু দরকার
খুব করে তোমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দরকার
কেন না, তোমাদের বুঝতে হবে-
আমি এখনো তোমাদের ভালোবাসতে ভুলে যাই না।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..