এই শতকে নারীদের অবস্থান

মৌসুমি চৌধুরী
নারী, মুক্তগদ্য
Bengali
এই শতকে নারীদের অবস্থান

বাইবেলে আছে বিশ্ববিধাতা প্রথমে সৃষ্টি করেনপৃথিবীর দৃশ্যমান বস্তু এবং তাদের আত্মদানের নিমিত্তে তিনি স্বেচ্ছায় পুরুষ ও নারীতে দ্বিখন্ডিত হয়ে যান। তাদের মধ্য থেকে যে আদি পুরুষের সৃষ্টি হয় তিনি ‘আদম নামে পরিচিত হন এবং আদিনারীর প্রিচিতি ঘটে ‘ইভ’ নামে । ইভের আত্যন্তিক অনুরোধেই আদম জড়ানবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করেন। তখুনি পৃথিবীতে দেখা দেয় দুঃখ_বেদনা-হতাশা ও বৈরাগ্য। আবার তাঁর সাথে দেখা দেয় সুখও। তবে নারীর কথায় পুরুষ বশিভূত হলেও পুরুষ কিন্তু তাঁর পৌরুষকে প্রভুত্বের মধ্য দিয়ে জাহির করতে ত্রুটি করেনি। নারীর সাথে ঘর বাঁধলেও সমাজে তাকে (নারীকে) সম্মান দেয়নি।

প্রাচিন সাহিত্যে নারী ছিল পুরুষের কাছে ছলনাময়ী এবং বশীকরণে অদ্বিতীয়া। পুত্র কন্যার জন্মদানের নিমিত্ত সমাজে ছিলতার স্বীকৃতি, বুদ্বিতে নারী নিকৃষ্টমানের এবং বিদ্যাবত্তায় সে নিম্নশ্রেণীর।

ইংরেজী সাহিত্যেও নারীরা অসম্মানিত। প্রখ্যাত নাট্যকার শেক্সপীয়ার নারীকে গৌরবের অধিকারীকরেননি বরং সুন্দরী নারীর মুখছবির মধ্যে তিনি তুলে ধরেছেন বিষাক্ত ও কুটিল সর্পকে।

ঠিক সেভাবে বাংলা সাহিত্যেও নারীকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বঙ্কিমচন্দ্র সংসারের ক্ষেত্রে নারীর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও তাঁর অবাধ গতি-বিধিকে মেনে নিতে পারেননি যেমন-“কৃষ্ণকান্তের উইল”-এ রোহিনীতে তিনি ক্ষমা করতে পারেননি, ফলে তিনি রোহিনীকে পিস্তলের আঘাতে চিরতরে বিনাশ করে দিয়েছেন। একইভাবে ”বিষবৃক্ষের” কুন্দকে তিনি বিষভক্ষণ করিয়ে সংসার থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ্ব তাঁর উপন্যাস গুলোতে পুরুষের পাশে নারীকে সংযোজিত করলেও নারীকে দুর্বার গতি দিতে রাজি হননি। তিনি বলেছিলেন-“অন্যরি নাহি ডরি, নারীরে ডরাই।“

শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ভাবশিষ্য হলেও  নারীর প্রতি সংবেদনশীলতায় তিনিছিলেন এক ব্যতিক্রম। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যে অবলা নারীর ওপর তাদের দুর্বলতা ও অসহায়তার সুযোগে চরম অবিচার করে তা তিনি অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলেন, তাই সমাজের অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে নারীর অনুচ্চারিত বেদনাকে শরৎচন্দ্র শুধুমাত্র রূপ দেননি তাদের পক্ষে মুক্তির পথ নির্দেশও করে দিয়েছিলেন। তাঁর রচিত প্রতিটি উপন্যাসে নারী প্রাধান্য পেয়েছিল এবং তাদের সুখ_দুঃখ-হাসি-কান্না, মিলন-বিরহে এমন চিত্ত-চমৎকারী রূপ দেখে শরৎচন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন্নারীদরদী ত্রানকর্তা।

সমগ্র বিশ্বে ভারতই প্রথম রাষ্ট্র যে নারীকে পুরুষের সঙ্গে সমমর্যাদা সহ ভোটাধিকার প্রদান করেছিল। তবুও নারী এখনও নানা নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার। নারী সমাজের মানসিক পরিবর্তন হলেও নারীমুক্তি সার্থক রূপ পাবে। তাই চাই প্রকৃত শিক্ষার আলো, যা নারী সমাজকে আলোকিত  করে তুলে তাদের মনের পরিধিকে আরও প্রসারিত করে তুলতে পারে। এরজন্যে আলোকিত করে তুলে তাদের মনের পরিধিকে আরও প্রসারিত করে তুলতে পারে। এরজন্য প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের নারীদের , যারা তাদের সহজাতও স্বাভাবিক বুদ্ধি নিয়ে জীবনর সাথে এগিয়ে যাবীবং তাদের কাছে নারীবর্ষের স্লোগান হবে, কবির কথায়-‘জাগো নারী বহ্নিশিখা’।

মৌসুমি চৌধুরী। লেখক ও শিক্ষক। জন্ম ১৯৬৫ সালে কোলকাতা শহরে হলেও লেখাপড়া করেছেন অসম রাজ্যের হাইলাকান্দি শহরে। পেশাগত জীবনে তিনি হাইলাকান্দির গ্লোবাল পাবলিক সেন্ট্রাল স্কুলের শিক্ষিকার পদে কর্মরত।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ