করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু সেই গদ্যই সেরা যার বুনোটের ভিতর কবিতার ঝলকানি। আবার বলেছিলেন, কেউ কেউ যায় পুরোহিতের কাছে, কেউ যায় কবিতার কাছে, আমি যাই আমার বন্ধুদের কাছে। তার সঙ্গেই তিনি বললেন, গোটা ইতিহাসে মেয়েদের অবদানের স্বীকৃতি কেউ দেয় নি। বললেন, একজন মেয়ে হিসেবে আমার কোনো দেশ নেই, একজন মেয়ে হিসেবে গোটা দুনিয়াটাই আমার দেশ।
তেরো বছরের একটা মেয়ে, যে সময়টা একটা মেয়ে নারী হয়ে উঠছে, শরীরের থেকে বেশি করে গড়ে উঠছে তার মন, সেই সময় ১৮৯৫ তে সে মা হারাল। আমি ভার্জিনিয়া উলফ এর কথা বলছি। মায়ের নাম ছিল জুলিয়া জ্যাকসন। জ্যাকসন মায়ের পুরোনো পদবি। মায়ের আগের একটা বিয়ে ছিল। সেই স্বামী মারা যেতে বিয়ে করেছিলেন লেসলি স্টিফেন কে। লেসলি স্টিফেন এরও আগে একটা বিয়ে ছিল। বাবা লেসলি আর মা জুলিয়া নতুন করে ঘর বাঁধার পর দ্বিতীয় সন্তান ভার্জিনিয়া উলফ। উলফ অবশ্য লেনার্ড উলফের সঙ্গে বিয়ের পর নেওয়া পদবি। প্রথমার নাম ভানেসা।
মা জুলিয়া মেয়েদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বাড়িতেই যেন বাবার আগের বিয়ের সন্তানদের হাতে, যাদেরকে দাদা বলার কথা, তাদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল বালিকাকে। সেটাই কি সারা জীবন তাকে একটা অদ্ভুত দোলাচলের মধ্যে ঠেলে দিল?
১৯০০ খ্রিস্টাব্দ, যখন আঠারো বছরের দুঃসহ বয়স, তখন থেকেই সিরিয়াস লেখালেখির মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন ভার্জিনিয়া। কেনই বা হবে না, উচ্চবিত্ত বাবা যে সুপরিচিত সম্মানিত সম্পাদক ছিলেন। সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর খাতির ছিল। মেয়ের পড়াশুনা শুরু হয়েছিল বাড়িতেই। বাবা যেমনটি ভাল বুঝতেন, সেই সব সাহিত্যপাঠের মধ্য দিয়ে মাথা তোলার চেষ্টা।
বড় হবার দিনে ব্লুমসবেরি গ্রুপ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র একজোট হয়ে সাহিত্যের আন্দোলন শুরু করলেন। পড়াশুনা করা, চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছাত্ররা যতদূর একজোট হতে পারে আর কি। এর পরে বিয়ে করলেন ওই সঙ্গেরই বন্ধু লেনার্ড উলফকে। সে সময় বয়স ত্রিশ। সময়টা ১৯১২। তারপরেই ১৯১৩তে গড়ে উঠতে থাকে ভার্জিনিয়ার প্রথম উপন্যাস দি ভয়েজ আউট। প্রকাশিত হয় ১৯১৫-র ছাব্বিশ মার্চ। প্রকাশ করে দিয়েছিলেন দাদা। ১৯১৭ তে লেনার্ড উলফ মশায় একটা ছাপাখানা কিনলেন, তৈরি করলেন হগার্থ প্রেস, আর স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে মহা উৎসাহে নিজেদের লেখা ছাপতে লাগলেন। ভার্জিনিয়ার একটি একটি উপন্যাস বেরোতে থাকল। ১৯২৫এ মিসেস ড্যালোওয়ে, ১৯২৭এ টু দি লাইটহাউস, ১৯২৮ এ অরল্যান্ডো, আর ১৯৩১ এ দি ওয়েভস। এর মধ্যে ১৯২৯এ একটি দীর্ঘ প্রবন্ধের বই এ রুম অফ ওয়ানস ওন। একজনের নিজস্ব ঘর। ভার্জিনিয়া বলেছিলেন একটি মেয়ে যদি ফিকশন লিখতে চায়, তাহলে অতি অবশ্যই তার অনেক টাকা থাকতে হবে, আর নিজের জন্য একটি নিজস্ব ঘর। নারীবাদ, নারীত্ব, নারীর লেখা সাহিত্য, সাহিত্যের নারী চরিত্র, নারীদের শিক্ষা, অনেক রকম ভাবনা ঢেলে দিলেন ১৭২ পৃষ্ঠা ব্যাপী, ছয়টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই দীর্ঘ প্রবন্ধে। আসলে ২০ আর ২৬ অক্টোবর, ১৯২৮ এ দু দুটি কলেজে দেওয়া বক্তৃতার ভিত্তিতে এই প্রবন্ধ। প্রকাশিত হয়েছে ১৯২৯ এ।
ভার্জিনিয়া বলেছিলেন জীবনকে এড়িয়ে গিয়ে তুমি শান্তি খুঁজে পেতে পার না। আরো বলেছিলেন, নিজের সম্বন্ধে নিখাদ সত্যটাকে তুলে ধরতে না চাইলে অন্যের জীবনসত্যও তুমি ছুঁতে পারবে না।
একটা অসুখী কৈশোরের স্মৃতি তাড়া করে ফিরত মাঝে মাঝেই। মানসিক সমস্যা হত। একটা নিরাপদ, নিজস্ব, নিভৃত ঘরের জন্য কান্না গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে উঠত। বললেন, একজন ভাল করে পেটভরে না খেতে পেলে ভাল করে চিন্তা করতেই পারে না, ভাল করে ভালবাসতেও পারে না। এমনকি ভাল ঘুমটাও আসে না।
স্ট্রিম অফ কনশাসনেস, কথাটা এনে দিয়েছিলেন মনস্তত্ত্ববিদ উইলিয়াম জেমস। এ বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন তাঁর প্রিন্সিপলস অফ সাইকোলজি বইতে। সেটা ১৮৯৩। ভার্জিনিয়া তখন দশ বছরের শিশু। তারপর সেই স্ট্রিম অফ কনশাসনেস একদিন হয়ে উঠল ভার্জিনিয়ার পরিচয়। নদীর স্রোতের মতো নির্বাধ চিন্তার উচ্ছ্বাস। চিন্তাকে চেতনাকে তার নিজস্ব ছন্দে বহে যেতে দিতে দিতে লেখা।
তারপর একদিন পকেটে অনেকগুলো পাথর নিয়ে নদীজলের গভীরে ডুবে যাওয়া। পাথর, কেননা, আর ভেসে উঠতে হবে না। আজ আঠাশ মার্চ সেই দিন। ১৯৪১এর আঠাশ মার্চ। তখন বয়স ৫৯। দেহ অবশ্য পাওয়া গেল অনেক দিন পর, আঠারো এপ্রিলে। নদীর বুকে কি কেউ ঘর খুঁজে পায়?
আঠাশ মার্চ ছিলো ভার্জিনিয়া উলফের মৃত্যুদিন।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..
কেতুগ্রামে যেখানে চন্ডীদাস বাস করতেন সেইস্থানটি চন্ডীভিটে নামে লোকমুখে প্রচারিত। চোদ্দপুরুষের ভিটে বাঙালির মনে…..