ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
হিমেল পত্রিকা প্রতিদিন তার রুমেই রাখে।কিন্তু আজ কি হলো কে জানে পত্রিকা কোথায় রেখেছে খুঁজে পাচ্ছেনা।মাকে বলে, তুমি কি পত্রিকা দেখেছো?
নারে।তুই পড়ার পরেই তো আমরা পড়ি।
হিমেল আবার তার রুমে গিয়ে পত্রিকা খোঁজে।সবখানে ঘাটাঘাটি করে কোথাও পত্রিকা পেলনা।হয়রান হয়ে বারান্দায় দাড়ায় সে।রাস্তায় চোখ পরতেই দেখে একটি ছেলের সাথে একটি মেয়ে বাড়াবাড়ি করছে।মেয়েটির বয়স একুশ হতে পারে আর ছেলেটির ছাব্বিশ এমনি হবে।তাদের বাড়াবাড়ি চরম পর্যায়ে গড়ায়।ছেলেটি একটি চুরি বের করতেই হিমেলের ঘুম ভেঙ্গে যায়।হিমেল শোয়া থেকে উঠে চারপাশ তাকায়।কেউ নেই।চোখ- মুখ ঘামে ভেজা।গলা শুকিয়ে গেছে।ভাবে স্বপ্নইতো।
হিমেল নাস্তার টেবিলে দেরি করে এলে মা বলে,আজ এতো দেরিতে উঠলি?পত্রিকা পেয়েছিস?হিমেল চমকে গেলো।
জানি না মা আসলে…।
মা তার কথাটা শেষ করতে না দিয়ে বলেন ঠিক আছে।মাঝে -মধ্যে এমন হয়। কি খাবি বল?
ইচ্ছে করছে না।
সেকি একটা কিছু…।
একটু পর খাই তুমি সব রেডি করে রাখো।মা তাকে আর খেতে জোড় করলেননা। হিমেল তার রুমে চল গেলো।তার মাথাটা ঘুম থেকে উঠার পর খুব ভারী লাগছে। চোখ ব্যথা।বমিবমি ভাব।অস্বস্তি লাগছে। কিছু হয়েছিল আমার সাথে?মেলাতে পারছিনা কেন?
মা চা পাঠিয়ে দিলেন কাজের মেয়েকে দিয়ে। জানে আজ আর নাস্তা করবে না সে। চা খেতে খেতে ভাবে, একটা মেয়ে…কি হয়েছে তার সাথে?সত্যি কি একটা ছেলে একটা মেয়ে ছিল রাস্তায়? আর পত্রিকার বিষয়টা?
হিমেল চা শেষ করে ঘর থেকে নিচে নামলো।মা বিচলিত ছেলের অবস্থা দেখে।কিন্তু তাকে বুঝতে দেয়নি। যা ইচ্ছে করুক বাধা দিলে আরও আগ্রহের প্রশ্রয় পাবে।খতিয়ে দেখবে। এই সময় বাধা না দেওয়াই শ্রেয়।
বাড়ির নিচে নামতেই পাশের বাড়ির হাশেম চাচার সাথে দেখা হলো হিমেলের।
কেমন আছ,শরীর কেমন?
আমার শরীরের কি হলো হয়তো সৌজন্যতা মনে মনে বলল হিমেল।
আমি একদম ঠিক আছি চাচা।
গুড।বেশ বেশ ইয়াং বয়। সুস্থতা অনেক বড় নেয়ামত সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে।আমাদের উনি যেভাবেই সুস্থ রাখেন শুকরিয়া আদায় করা দরকার।
এই মুহূর্তে চাচার নীতি কথা ভালো লাগছে না তার। সময়টা ট্যারা যাচ্ছে।একদম উল্টো। সোজা করতে হবে। হিমেল উনার কথা কিছু শুনল কিছু শুনলনা উনি চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার পর একটা টোকায় এসে হিমেলের কাছে হাত পেতে বলে,কিছু দেন ভাই।
কি দিবো?
যা দেন।
কিন্তু আমার কাছে তো কিছু নেই।
ঘর থেইক্ষা আইনা দেন।
হুম।
কি করিস তুই?
ছেলেটি হা হা হা করে বেশ উচ্চস্বরে হাসল হিমেলের কথা শুনে।
ভেংচি কেটে বলে,থইলা লইয়্যা, ময়লা জামার-কাপড় পইড়া ভিক্ষা করলে তারে কি মনে অয় আফনের?
কি মনে হবে?
আহারে আফনে দেখি চোড পোলার লাহান?বাদ দেন কিছু দেন।
আচ্ছা তুই কি এখানে রোজ আসিস।
নাহ আজই আইছি।
তাই?
হ।
হুম। বেশ।
এখন যা পরে আবার আসিস।এখন থেকে এই এলাকা তোর জন্য। এইখানে তোর রাজত্ব চলবে।
মাইনে?
তুই হবি এই এলাকার ফকিরদের রাজা।
ছেলেটি হে হে হে করে আবার হাসে।
গরীবের লগে মশকারা?
বাহ! তুই দেখি মশকারিও বোঝোস?
সত্যি তাইলে মশকরা করেন?
আরে নাহ আমার কথা বিশ্বাস কর আমি তোকে কথা দিলাম একটা রাজ্য বানিয়ে দেবো।
ধুরু কি কন আমার আবার রাজত্ব কিয়ের?
আছে না এক এক জায়গায় এক এক জনের রাজত্ব। এক এক মালিক।
হিমেলকে ছেলেটির পাগল মনে হলো।
আমি যাই।
কেন, কিছু নিবিনা।
নাই বললেন তো কিছু। কাল আসিস তাহলে।
আইচ্ছা।ছেলেটি যেতেই হিমেলের মনে পরল ছেলেটি যদি এলাকায় নতুন তাহলে সে হাত দিয়ে আমার ঘর দেখিয়ে বলল কিভাবে ঘর থেকে কিছু নিয়ে আসতে।ছেলেটির পেছন পেছন যেতেই ছেলেটি হাওয়া। যাক কালকের অপেক্ষা করতে হবে। যদি না আসে?আসতেও পারে আমি তো বলেছি আসতে। হিমেল তার বাড়ির ডানে ছোট্ট একটি মুদীর দোকান আছে হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গিয়ে বসল।
হিমেল কিছু বলবে এমন সময় দোকানদার হিমেল কে বলল,
কাল মেয়েটি এতো ঝগড়া করছিল কেন আঙ্কেল?
হিমেল ভ্রু কুচকালো একটু? হালকা কাশী দিলো।ভাবল শোনায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে এই মুহূর্তে জিজ্ঞেস না করে। হ্যাঁ না কিছুই বলা যাবে না। হুম। বেশ তারপর?
তারপর আর কি তাকে থাপ্পর মেরে আপনি বাসায় চলে গেলেন।মেয়েটিওঁ চলে গেলো। সবই তো জানেন।
মন দিল ভালো না থাকলে চাচা যা হয় আর কি। শুরু হলো হিমেলের অভিনয়।
আপনি গোসল করেননি?
কেন কি হয়েছে?
এই শার্ট এ কাল অনেক ময়লা লেগেছিল।
শার্ট?
হ্যাঁ।
হিমেল ঢোক গিলল।
হিমেল কথা ঘুরিয়ে ইয়ে মানে ভুলে গিয়েছিলাম।হিমেলের ভেতরে উতাল পাতাল শুরু হয়ে গেলো শার্টের কথা শুনে।সর্বনাশ আমার শার্ট গায়ে দিয়ে কে…?
প্রেমের বিষয় হলে চুকিয়ে ফেলুন।এসবের একটা রফাদফা করতে হয়।নইলে অশান্তি আর অশান্তি। এসবে এখন জড়ায় কে।
প্রেম -ভালোবাসা কি অপরাধ?
দেখুন প্রেম ভালোবাসার কথা বলছেন? মেয়েদের যা অবস্থা গা গিন গিন।
কি হয়েছে?
এই দেখুন নেটে ক্লিক করলেই একটা ছেড়ে একটা দেখবেন।কাকে রেখে কাকে নিবেন। হো হো হো দোকানদার খুব মজার হাসি হাসছেন। এমন বিদঘুটে হাসি দেখে হিমেলের ইচ্ছে করলো একটা খসে চড় মারতে।ব্যাটা নিজে যেন কত আল্লাহ্র অলি রসুলের উম্মত। বদমাইশ।
দোকানদার দেখতে ভিলেনের মতো,বড় বড় গোঁফ তার।এই গোঁফটাই তার শরীরের উত্তম অংশ। গায়ের রং কালো,উচ্চতা পাঁচ ফিট হবে।এই অবস্থায় নিজেকে নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই।শালা। আরে একে শালা বলছি কেন, এই লোকের যা কথাবার্তা আর চরিত্র কারো শালা হওয়ারও জায়েজ নাই।কিন্তু বিয়ে তো করেছে কেউ না কেউ তারে।শালা নিশ্চয় আছে। থাকুক আমার কি।
কিন্তু চাচা সবাই কি এমন হয় ,ছেলেদের বুঝি দোষ থাকেনা?
সুযোগ দিলে কোন পুরুষ লুফে নিবে না ভাই?
হুম। বুঝলাম। খানিক চুপ থেকে হিমেল যে প্রশ্নটা করলো দোকানদারকে, দোকানদার মনে হয় আকাশ থেকে পরল।
আপনার ছেলে-মেয়ে আছে?
কথাটা শুনে দোকানদার একটু গলা খাঁকারি দিলো।একদম বরাবর জায়গায় বিধল মনে হয়।নিশ্চয় প্রস্তুত ছিলনা এমন কথার জন্য। ভেবেছিলেন হিমেলও তাল মিলিয়ে নারী জাতিকে গালি দিয়ে গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলবে।এমনি ঘটে দোকানগুলোতে। শুধু দোকান কেন অফিস আদালতেও কম কি।তাদেরই বা দোষ কি?সঠিক উপদেশ সঠিক কথাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া লোকের অভাব।তারা বলতে থাকে আর সবাই শুনে বাহবা দিয়ে আরও মজা লুঠে। পরিবর্তন যারা শুনে তাদেরকে আনতে হবে। বলতে হবে ভাই হয়েছে থামুন আর না নারী প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলুন।পর্ণ সাইট আর নারীর যৌনতা নিয়ে ট্রল বন্ধ করুন।
হিমেল এইবার তার দিকে ভালো করে তাকিয়ে রইল। দোকানদার তথমত খেয়ে বলল, জী দুটো মেয়ে আছে।
বাহ! ভালো তো মেয়ের বাবা মানে ভাগ্যবান জানেন তো?
জী। অন্য মেয়ের বাবারাও আপনার মতো ভাগ্যবান সেটা জানেন তো?
জী।দোকানদার এইবার মুখ কালো করে শার্ট- লুঙ্গি ঠিক করতে অভ্যস্ত হয়ে গেলেন।
হিমেল এবার অন্য প্রসঙ্গে গেলো। মেয়েটি কি প্রায় আসে।
কেন আপনি জানে না?
জানি।তবে আমি ছাড়া অন্য সময় এসে কারো সাথে কথা বলতে দেখেছেন কিনা?
তোমার ভাইকে দেখলাম একবার।
হুম। কতক্ষণ ছিল? হিমেল মোবাইল টিপতে টিপতে ভাব যেন আড্ডা দিচ্ছে দোকানদারের সাথে এমন।
দোকানদারও তাই ভাবছে আর বলেই যাচ্ছে। সব কথা শুনে হিমেল ফোন আসার নাম করে অহেতুক একটা ব্লেড কিনে ফোন কানে লাগিয়ে দোকান থেকে কেটে পরল।বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই আশিকের সাথে ধাক্কা লাগলো তার।আশিক দাড়িয়ে গেলো।হালকা হিমেলকে ঝারি দিয়ে বলে,দেখে চলতে পারো না,অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে কি করছ?
হিমেল তার সাথে কোন কথা না বাড়িয়ে উপড়ে উঠে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে মাথায় হালকা পানি দিলো।আয়নায় কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে কি অসুখ আমার কেনই বা অসুস্থ করে রাখছে কি এমন করেছি আমি।খাওয়ার টেবিলে মা সবাইকে ডাকলেন। আশিক খাবে না বলল।
মা হিমেল কে জিজ্ঞেস করে,শরীর কেমন এখন?
দেখছনা খারাপ তো নেই।
ভালো ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে আনন্দে থাক।
হিমেল মায়ের কথা শুনে অবাক হচ্ছে না মোটেও। এখন নিশ্চিত কাল একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেটা কার সাথে আবছা দ্বিধায় আছে সে। তার জন্য স্পষ্ট প্রমাণ লাগবে এখন শুধু।
হিমেল হালকা খেয়ে উঠে যাওয়ার সময় মা বলে,সেকি দুধ খেয়ে যা।
পাঠিয়ে দিও মা।
ঠিক আছে আশিককে দিয়ে পাঠাচ্ছি।
আশিক একটু পর দুধ নিয়ে হাজীর।বলে, নাও খাও।
ঠাণ্ডা হোক।
ভুলে যাবে।এখুনি খাও।
আশিকের হাতে কিছু কাগজপত্রর দেখতে পেয়ে হিমেল বলল,তোর হাতে কি?
পাসপোর্টের কপি।
কি করবি?
একটু দেখছিলাম।
হিমেলের এবার মনে পরছে ধীরে ধীরে সব। কালকেও তার চাচাতো ভাই জোর করে দুধ খেতে বলেছিল।ওহ নো। ভেবেছিলাম আদর করে সে প্রচুর।কিন্তু এই মিথ্যে আদরে গণ্ডগোল বহুত।
খাও।
আমি সত্যি খেয়ে নিবো তুই যা।
প্রমিস?
হুম।প্রমিস।
আশিক যাওয়ার পর হিমেল দুধ ফেলে দিয়ে শুয়ে যাওয়ার ভান করলো।সারারাত ঘুম এলোনা তার। কিছু একটা আশিকের মাথায় চলছে তা দেখার অপেক্ষায় সে অস্থির।অস্থির মনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল হিমেল।মধ্যরাত, চারপাশ থমথমে। ঝি ঝি পোকারা দল বেঁধে থেমে থেমে সূর করে ডাকছে।হালকা বাতাস গা ছুঁয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে বার বার।একটু পর যা দেখা গেলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা এখুনি হিমেল।
বাড়ির সামনে একটা কড়ই গাছ আছে।এতো রাতে ওখানে কেউ যায়না। গায়ে চাঁদর জড়িয়ে একটি মেয়ে দাড়িয়ে।রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের হালকা আলো তার চেহেরায় পরেছে।কে সে?ফোন করতে ব্যস্থ।বার বার নাম্বার ডায়াল করছে সে।সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার যে টোকাই হিমেলের সাথে কথা বলেছিল সে মেয়েটিকে সঙ্গ দিচ্ছে।প্রায় বিশ মিনিট পর গায়ে চাঁদর জড়ানো এটি লোক এলো।
এতো বার ফোন করছি ধরছনা কেন মেয়েটি বলল।
সুযোগ খোঁজা লাগবে তো।
দেখো হিমেল তুমি যা বলছ আমি তাই করছি।
সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মা সুস্থ হলেই সব ঠিক করে দিবো।ছয় মাস ধরয ধরো।
দেখো তিন মাস শেষ হতে চলেছে আমার।
এসব আমাকে এখন বলনা প্লীজ। এখন যাও। আমি হাসপাতালে সব ঠিক করে রাখবো। বিদেশ থেকে এসেই সব ওকে করে দিবো। আমি এখন গেলাম।
আশিক দ্রুত বিদায় নিয়ে পালালো মেয়েটির কাছ থেকে। আর হিমেলের কাছে সব প্রমাণ রেখে গেলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হিমেল মনে মনে হাসল।
সত্য কি কখনো লুকিয়ে থাকে বাচা? তুমি গোলটা ঠিক মতো পরিচালনা করতে জাননি।এইবার গোল আমি দিবো তুমি শিখে নিবে।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..