প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
অনেকদিন যাবত আমাদের দেখা নাই। এইবার দেশে গেলে ওর সাথে দেখা হবে। মজিদ আর আমি একই সাথে বেড়ে উঠেছি। বাবা যখন চাকরি বদল করে স্থায়ীভাবে সাভার ফিরে এলো। আমরা ফিরে এলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে। নদীর পাশের ঈদগাহতে শিমুল ফোটে, আমরা গোল্লাছুট খেলি। বৈশাখে বিশাল আমগাছের মগডালে বসে মরীচের গুঁড়া আর লবণ দিয়ে আম খাই। এক সাথে বসে কবরে ফুলের বাগান করবার প্লান করি। সে আমাকে বিলাই চিমটি গাছের সন্ধান দেয়। সেই মারণাস্ত্র কোথায় কীভাবে প্রয়োগ করা যায় এই নিয়ে আমাদের বিস্তর চিন্তা-ভাবনা হয়। প্রায় বছর পাঁচেক হলো ওর সাথে দেখা নাই। গতবার যখন দেশে যাই তখন এতো বেশি তাড়া ছিল যে গ্রামের বাড়িতে একটু বসবার সময়ও করতে পারিনি। একটা উপরযুপরি পরিকল্পনাও হলো। তাই যাবার আগেই বেশ লম্বা একটা চেকলিস্ট করে চিঠি পাঠিয়ে দিলাম ওর ঠিকানায়। আমি ফোনে সাধারণত আজকাল আর কাউকে কল দিই না। ও আবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কের কিছু বুঝে না। তাই নেটওয়ার্কের বাইরের মানুষ সে। চিঠিটার কোন উত্তর পাইনি এখনও।
ছোটবেলার স্বপ্নে প্রায়শই কথা হয় ওর সাথে। আর যেন দেরি সইছে না গ্রিস্মের বন্ধের। টিকেট কেনা হয়ে গেছে দেশের। আমি ফিরে যাচ্ছি বারবার শৈশবে। সারাদিন টইটই করে ঘুরাঘুরি। বিকেলে নদী পার হয়ে বিশাল ক্ষেত- সেইখানে বসে সূর্যাস্ত দেখতে কি যে এক আনন্দ! অনেকদিন পাইনা সেই আনন্দ- কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সব। বউকে জানিয়ে দিয়েছি এইবার তার সাথে কোন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া হবে না। এইবার মজিদকে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াবো আমার শৈশবে। বউয়ের মুখ ভারী হয়ে গেছে এই কথা শুনে। প্রতিবারই নাকি আমি সময় দিই না- আমার পরিবার পরিজনদের। তাই এইবার মনে মনে একটা পরিকল্পনা এঁটে মাকে ফোন দিই। মা´র সাথে অবশ্য কালই পরিকল্পনাটা ব্যাপারে কথা হয়েছে একবার- দেশে আসলে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো। তাই মাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, মজিদকে বলেছো? মা উত্তরে বললেন, না।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ওকে ছাড়া আমি যাচ্ছি না।
– পাগলের মতন কথা বলিস না।
– কেন কি করলাম?
– মজিদ মারা গেছে বছর দেড়েক হলো।
– মারা গেছে?
মা এইবার আমার সাথে দুষ্টুমি করছে। আর মজিদও কেমন! আগে প্রতি সপ্তাহে একবার আসতো, আমি বাইরে চলে আসার পর সে আর যায় না। মা তাই বেশ ক্ষেপে ছিল ওর ওপর। বেশ আদর করত ওকে। আমাকে আগে বেশ কয়েকবার এই নিয়ে খোঁটা দিয়েছে চোখের আড়াল মানে মনের আড়াল বলে। আমি বললাম, আমি ওকে আচ্ছা মতন বলে দিবো যেন এরকমটা আর না করে।
মায়ের কণ্ঠ ভারি- বলল, হঠাত স্ট্রোক করেছিল। তোকে বলা হয়নি।
-কেন বললে না মা? আমার শরীর কাঁপছে। আমি চিৎকার করছি, কেন আমায় জানালে না মা?
– তুই তখন তোর ছেলে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছিলি। তাই আর তোকে ওর মধ্যে জানাইনি।
– কিন্তু আমি যে ওকে প্রায় প্রতিদিনই স্বপ্নে দেখি। কথা বলি। মা ওকে নিয়ে যে আমার ঘোরা হলো না।
আমি চুপ করে রইলাম। মার ওপর হঠাত করে প্রচণ্ড রাগ জন্ম নিলো। আমি ফোন কেটে দিলাম। মজিদ তো এই কিছুক্ষণ আগেও আমার মাথায়, আমার স্মৃতিতে, আমার ছেলেবেলায় কি জীবন্ত ছিল! এই মাত্র আমার মা আমার মজিদকে মেরে ফেললেন। যদি না জানতাম কখনও- তবে তো সে বেঁচে থাকতো আজীবন। আর আমি স্বপ্ন দেখতাম তাকে নিয়ে একবার ঘুরে আসবও।
মজিদকে ছাড়া ছেলেবেলায় আমি আর হাটতে পারি না। মজিদ ছাড়া আমার ছেলেবেলা শূন্য। আমার ছেলেবেলা এখন এক শূন্য মজিদকে নিয়ে ঘুরে ফিরে সেই লাল সুর্যাস্তের আভায়। মজিদ হারিয়ে যায় সেই আভায়। আমি আর ফিরতে পারি না- একাকী পথ। মজিদ- তুই এখনও জীবিত। তুই ছাড়া যে আমাদের শৈশব নেই; তুই নাই, আমিও নাই।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..