প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
কান খাড়া, কান খাড়া। কানে কানে কানাকানি। চোখগুলো ইতি উঁতি করে। একটা গোঙানির শব্দ মনে হয় কানে এলো! হ্যাঁ ঠিক তাই। কোঁয়া…। এরপর সব চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর আবার… আবার আবার…।
সবাই নিশ্চিত হয়। কারো কারো হাত ওঠে ওপরওয়ালার অনুকম্পা পাওয়ার আশায়। কার মুখ থেকে যেন আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারিত হল। কেউ একজন দৌঁড়ে এসে বলল আজান দেও আজান দেও। একজন গম্ভীর গলায় বলে ‘ভেতর থাইক্যা খবর আসুক আগে’।
খবর আসবে, খবর আসবে। দরজার ওপাড় থেকেই একটা খবর আসবে। খবরের জন্য সে কি ঔৎসুক্য। খবর নয় যেন বোমা পড়বে, বোমা ফাটবে। কচ্ছপের মত গলা বাড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে।
শব্দ করে কপাট খোলে। পুরনো শাড়ির তেনায় পেচানো মাংসপিণ্ডটার দিকে কারো কোন আগ্রহই নেই। সবার আগ্রহ যিনি এটা নিয়ে এলেন তার দিকেই। খবর কী? খবর কী?
কোন খবর তিনি বললেন না। তবে মুখ গোমড়া করে ইউ টার্ন নিলেন যেপথে এসেছিলেন সে পথে। মুখ ফুটে কিছু না বললেও একটা বোমা যেন ফাটলো। বোমা, মানুষ মারার বোমা।
দুই.
বাবা, হাদিয়া তো কম দেই নাই। যা বলছেন তা অক্ষরে অক্ষরে মানছি। বিশ্বাসের কোন ঘাটতি নাই, ছিলওনা। তারপরেও কেন আমার ঘরে আজাব নাইমা আসলো বাবা?
বাবার কথায় এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে ওই নারীই যত নষ্টের মূল। তারে যেমন যেমন নিয়ম পালন করতে বলছে তিনি তা একিনের সাথে করেন নাই। ছিলনা, ছিলনা, একিন ছিলনা। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তর্ক চলতেই থাকে, তর্কে তর্ক বাড়ে। বাবার কাছে হাসেমালী বিবি তালাকের ফতোয়া চায়। বাবা পাতার পর পাতা ওল্টান। কোথায় যেন চোখ আটকে যায়।
কিছু পাইলেন বাবা ?
বাবা একটা কিছু পেয়েছেন। তার ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন কেতাবে আছে স্বামীর কথা না মানলে তালাক দেয়া যায়।
আহা বাবা সে তো আমার সব কথাই শোনে, কেবল আপনার কথাই শোনে নাই। আইজ আপনার কথা শুনলে আর একটা…
মুখের কথা মুখেই থাকে। বাবা তাকে আর একবার এরাদা করার পরামর্শ দেন। পর পর চার বার মেয়ে জন্মানের অপরাধে বিবি তালাকের কোন ফতোয়া না পেয়ে হাসেমালী কিছুটা হতাশ হয়। চোখে আগুন ঝরিয়ে বলে ‘বাবা, এইবার কিন্তু শেষ’।
তিন.
বট গাছের পাতা, ছাতিম গাছের ছাল, উল্টো নদীর পানি, তিন রাস্তার ধূলো,সাত কুপের পানি, কবরস্থানের মাটি এ জিনিসগুলো তিন দিনের মইধ্যে হাজির করতে হইব।
বাবা এতো দেখতেছি একেবারেই অসম্ভব।
অসম্ভব? কেন কেন অসম্ভব কেন? আমি কি মদিনা শরীফের মাটি আনতে কইছিনি?
না মানে কই পামু, কেমনে পামু, কেমনে তিন দিনের মইধ্যে হাজির করমু! মাথাডা ঘুরতাছে।
নিজে পারবানা মানুষ দিয়া আনাও।
মানুষ পামু কই?
হ, কথাডা মিছা না। মানুষ পাইবা কই। আর যারে তারে পাঠানও যাইবোনা। একবার ভুল কইরা ফালাইলে এক আনারও কাম হইবোনা। তহন বদনাম তো হইব আমার।
তয় আমি অহন কী করমু ?
আমার কাছে তিনজন মানুষ আছে। এগ কামই হইল মাইনষের উপকার করণ। আমি কইলে অমত করবনা।
তাইলে তো ভালাই হয় , বাবা আপনে একটু খবর দেন তাগো।
খবর তো দিলেই হইবনা হাসেমালী, ওগো তো পেট আছে পেটে কিছু না পড়লে কাম করবো কেমনে ?
হ, কথা তো ঠিকই কইছেন। হেগ কত দেওন লাগবো?
বহুত কষ্টের কাম, বিপদও আছে পায়ে পায়ে। এইসব কাম করবারই চায়না। তয় আমি কইলে না করেনা।
আপনে একবার কইয়া দেখেন না বাবা।
হোন মিয়া, তিনজন মানুষ কম কইরা হইলেও পাঁচশ কইরা পনেরশ টেকা চাইবো। আমিতো আর এত দিমুনা। তুমি মিয়া হাজার খানেক টেকা দিও।
এক হাজার টেকা!
চইমকা গেলা মনে হয়? তুমি নিজে কইরা দেহ, কাউরে দিয়া করাই দেহ। খালি খালি এগো টেকা দিবা কেন?
আইচ্ছা আইচ্ছা আপনের কথাই হইব। আপনে ওগোরে কামে লাইগা যাইতে কন।
চার.
হাজার টাকা গেছে যাক, হাসেমালীর তাতে কষ্ট লাগছেনা। বাবা কথা দিয়েছেন এবার কোন মতেই মিস হবেনা । এ হাজার টাকা কোন হারামের টাকা না। একেবারে গায়ে গতরে খাটা, ঘাম বের করা টাকা। যাকে বলে হক হালালী টাকা। এ টাকার বরকতই আছে আলাদা। বাবাওও তাই বলেছেন।তিনি আগেই বলে দিয়েছেন কারো কাছে ধার নেয়া টাকা, ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, সম্পত্তি বিক্রি করা টাকা, মানুষকে ঠকিয়ে কামাই করা টাকা এমনকি ভিক্ষে করে কামাই করা টাকা দিয়েও কাজ হবেনা। একেবারে গায়ে গতরে খেটে কামাই করার টাকা হাদিয়া হিসেবে দিতে হবে, তাইতো দিয়েছে।
পাঁচ.
চল্লিশ দিন গত হয়েছে। বাবা বলেছেন বিবি এখন পবিত্র। তবে পবিত্রতা শতকরা একশ ভাগ অর্জনের জন্য বাবার তাবিজ আর কিছু নিয়ম কানুন পালন করতে হয়েছে। অনিচ্ছা সত্বেও বিবির পাশে শোয় হাসেমালী। এখনও শরীরে কাাঁচা আর সোঁদা একটা গন্ধ আছে।
আপনের দেলের মইধ্যে কোন রহম নাই।
হাসেমালী চমকে ওঠে, এটা কি কোন গায়েবি আওয়াজ? না না নিজের বুকের নিচ থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বউটা। হাসেমালীর হিংস্রতা আরো বাড়ে
ওই খানকি মাগী তোর দিলে আমার লেইগ্য কোন মহব্বত আছে? বছর বছর খালি মাইয়া পয়দা করস। একটা পোলা দে, একটা পোলা দে। একটা বাত্তি দে। কথা কইস না। বাবার কথা একিন কর। এইবার তোর ভুল না হইলে বাত্তি পামু।
ছয়.
খবর আসবে, খবর আসবে। দরজার ওপাড় থেকেই একটা খবর আসবে। খবরের জন্য সে কি ঔৎসুক্য খবর নয় যেন বোমা পড়বে, বোমা ফাটবে। কচ্ছপের মত গলা বাড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে। কারো মুখে কোন রা নেই। অস্ফুট গোঙ্গানীর শব্দ একটা শোনা গিয়েছিল বটে সেও অনেকক্ষণ হয়ে গেল। সবাই অপেক্ষা করছে একটা কান্নার শব্দ শোনার জন্য। কান্নার শব্দ নেই, হাসির শব্দ নেই, কথা নেই, খবর নেই। আরো পরে ক্যাঁচ… শব্দ করে দরজার কপাট খোলো। একজন মধ্যবয়সী নারী ঘর থেকে বের হয়। সবার চোখ তার হাতের দিকে তাকায় কিন্তু হাতে কোন তেনা পেঁচানো কোনো মাংসপিণ্ড ছিলনা। অস্ফুট কণ্ঠে সেই নারী শুধু বললেন
‘ওঠেন মাইনষেরে খবর দেন, দুইডা কবর খুড়তে কন’।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..