একটি অসমাপ্ত জীবন

তীর্থপতি গুপ্ত
কবিতা
Bengali
একটি অসমাপ্ত জীবন

সুন্দর এবং

“সুন্দর এবং আরও কিছু….. “, বলতেই বড় বড় চোখে তাকালে তুমি,
অমনি শীত বলে উঠল, “এর নাম বসন্ত”।
অমনি সমস্ত মনখারাপ একঘেয়েমি ঝাপসা দৃশ্যরা
পড়িমরি করে ছুটে পালাতে লাগল।
আমি কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলাম।
ওদিকে নদীর জলে তিরতিরে হাওয়া,
বিলের জলে শীত শীত ভাব
দীঘির জলে আলপনা আঁকা কাঁপন
সব্বাই বলল, ” যা পাখি, ফিরে যা”।
আমি কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলাম।
আকাশে তখন গোলাপী রোদ হাসছে
রোদের রঙে কিশোরী গন্ধ,
কিশোরী পায়ে ব্যাথার দুপুর,
দুপুর জুড়ে এলোমেলো হাওয়া,
আর তখনই সব্বাই একযোগে বলে উঠল, “তারপর? ”

আমি বললাম,
“মৃত্যু ”
“এবং”
“প্রেম”

 

নির্বাচন

যে পাতা গুলো ঝরে গেল গত ঝড়ে,
এই নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনই মাথাব্যথা ছিল না।
যে পাখিদের গায়ে গজিয়েছে নতুন পালক,
এই নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাদেরও।
ওই অজয় যার জল কমই থাকে সারাবছর, সেও অপেক্ষায় থাকে বর্ষার, নির্বাচনের নয়।
শুধু মানুষের এত ভয় এত আনন্দ এত উন্মাদনা,
কেন? বুদ্ধি আছে বলে? না নির্বুদ্ধিতা ঢাকতে চায়?
ওদের ঘরে প্রয়োজনের নাম যৌনতা
আমাদের ঘরে বিলাসিতা তার নাম।
ওদের ঘরে সততার নাম বেঁচে থাকা।
আমরা পথে সততা বেচে খাই।
ওদের ঘরে বুদ্ধির নাম খাবার জোগাড়।
আমাদের ঘরে বুদ্ধির নাম সাপ লুডো।
তুমি কি প্রকৃতির নও?
কে তোমায় বাঁচাবে মানুষ?
নির্বাচন?

 

এই বসন্তে

আধখানা চাঁদ আকাশ জুড়ে বসন্তে
ও মেয়ে তোর মনের কাঁপন বসন্তে
পথভুলো পাখি রাত্রে ওড়ে বসন্তে
ও ছেলে তোর নিশি জাগরণ বসন্তে

বসন্ত কি হারানো এক বন্ধুর নাম?
বসন্ত কি বাঁধন ছেঁড়া রাখালের সুর?
বসন্ত কি হঠাৎ পাওয়া পুরানো খাম?
বসন্ত কি মনকেমনের হঠাৎ দুপুর?

দুপুর কি আজ ডাক দিলো কুহু, বসন্তে
সখি বুঝি আজও খুঁজছে পলাশ, বসন্তে
পুরানো খাতায় আঁকিবুঁকি বহু, বসন্তে
চোখ ভিজে কেন, আমাকে জানাস, বসন্তে

বসন্ত ঝড়ে ঝরেছে মুকুল ব্যাথার হৃদয়
বসন্ত, কেন আয়ান কেঁদেছে? জলহীন চোখ
বসন্ত কি তবে বিচ্ছেদ প্রিয়? সামলানো শোক?
বসন্ত কি তবে ভুলে ভরা এক ব্যার্থ সময়?

সময় তবুও নতুনকে খোঁজে বসন্তে
কচিপাতা দলে হাওয়া খেলে যায় বসন্তে
রঙে ফাগুয়ায় প্রকৃতিও সাজে বসন্তে
বারুদ গন্ধ আজও তবু হায় বসন্তে

বসন্ত আজ সেরে যাওয়া সব মনের ক্ষত
বসন্ত আজ খুশির ঝিলিক ভালবাসা যত
বসন্ত আজ নতুনের ডাক। আবাহনী গান।
বসন্ত আজ অমলিন এক উদার পরান।

 

একটি অসমাপ্ত জীবন

একটা সকাল
বাজারের থলে
স্বপ্নের চোখ
দেওয়াল কি বলে?

আধখোলা দোর
আধুনিক বাড়ি
হাঁটতে কষ্ট
আমিও আনাড়ি

টবের বাগান
তুলশি মঞ্চই
বৈশাখে জল
স্বল্প সঞ্চয়

ফেরিওয়ালা হাঁক
হাঁপানির শ্বাস
ওষুধ জীবন
হৃদয়ে বাইপাস

এখনও চিঠি লেখা
এখনও ফাঁকা সুখ
এবার বেচে দেব
দক্ষিনী ফ্ল্যাট বুক

ওই যে শেষ দড়ি
ওখানে যাবো থেমে
যতটা বেঁচে আছি
বেচেছি কম দামে

তুমি কি সাথে যাবে
ছবিটা নেওয়া যায়
ওম ত অনুভুতি
এখানেই রয়ে যায়

আজ শেষ বৃষ্টিরাত
আজ শেষ শিলদুপুর
কালকে বুলডোজার
ঠিকানা? অচিনপুর

নদী ওই বয়ে যায়
জীবন চলে থামে
ঠিকানা পাল্টিয়ে
ছাইয়ে এসে নামে

গ্রাম ছেড়ে শহরবাস
নিকোন উঠোন মারুলিহীন
শহর আজ বিশ্বগ্রাম
পাশের দেওয়াল সম্পর্কদীন

কিভাবে সকাল হয়
কিভাবে রাত্রি আসে
দীনতা মনের নাম
বিত্ত ভালবাসে

ঠোঁট ত গ্লাসের নাম
বীষেই নেশা ধরে
আজও রাত্রি হলে
চোখের জল ঝরে

সুখ এক শীতপাখি
জলেই বাসা তার
ঢেউয়ের সংসার
ফিরতি পথে যার

আজও রেল বাঁশি
বুকে যা সুখ আনে
রঙিন জীবন খুঁজে
পথে সে পথ বোনে

জীবন পথের নাম
আজও ব্যাগ কাঁধে
অজানা সুরে তাই
ওরা যে গান বাধে

একটি বিন্দু খুঁজি
যেখানে যাব থেমে
ভালবাসা পেলে আজও
ওখানে যাব নেমে

নামতে যদিও পারি
থামা যে যায় না
জীবন ধরে রাখে
সময় না আয়না

তবুও দিন আসে
দীনতা থেকে যায়
বছর ঘুরে ঘুরে
সময়ই থাকে হায়

আজও সকাল হলে
বাজার থলে হাতে
পকেটে ইনহেলার
অভ্যাস সময় পাতে

সময় আগুন হাতে
ক্ষণিক জীবন শেষে
কিভাবে ছাই এসে
জীবন নদীতে মেশে

জীবন সন্ধ্যা হলে
গল্পেরা থেমে থাকে
স্মৃতির ছাপ পড়ে
পথের প্রতিটি বাঁকে

এখনও প্রতিটা পাখি
বাসায় ফেরেনি
যে আজ উড়ে গেল
সে যেন থামেনি

থামা মানে মৃত্যু নাম
জন্মের লেখা ছবি
তবুও ভুলে থাকা
লুকানো যত চাবি

ভুলতে চেয়ে ভোলা
বাঁচতে চেয়ে মরা
মরতে চেয়ে বাঁচা
অসমাপ্ত সব ছড়া
==============

তীর্থপতি গুপ্ত। কবি ও চিকিৎসক। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট হলেও নেশায় কবিতা, ক্যামেরা, কালার। নিজেকে যখন দমবন্ধ লাগে তখন কবিতাই প্রাণ দেয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরেই জন্ম কর্ম ও বেড়েওঠা। তাঁর মতে, একটু ভালো থাকা একটু ভালো রাখার জন্যই বেঁচে থাকা,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..